X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘বিচারপতি খায়রুল হক আদালত অবমাননা করেছেন’

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১২ আগস্ট ২০১৭, ১৬:৩৮আপডেট : ১২ আগস্ট ২০১৭, ১৭:১৩

 

‘আইনের শাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় ব্ক্তারা সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক জাতির সঙ্গে প্রতারণা করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, ‘সংবিধানের ১৩তম সংশোধনী বাতিলের রায় প্রকাশের ১৬ মাস পর খায়রুল হক ওই রায় পরিবর্তন করে যে লিখিত রায় প্রকাশ করেছিলেন, তাতে তিনি জাতির সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। এছাড়া ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে দেওয়া আপিল বিভাগের রায় নিয়ে তিনি যে মন্তব্য করেছেন, তাতে আইনের লঙ্ঘন, আদালত অবমাননা করেছেন।’ শনিবার (১২ আগস্ট) ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে মৌলিক অধিকার সুরক্ষা কমিটি আয়োজিত ‘আইনের শাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

আসিফ নজরুল বলেন, ‘খায়রুল হকের মতো এই রকম একজন ব্যক্তিকে শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা আছে? প্রধান বিচারপতি কি তাকে শাস্তি দিতে পারেন? রাষ্ট্রের এই রকম সর্বোচ্চ ব্যক্তি যদি এমন করেন, তাহলে আপনি পুলিশকে কী বলবেন?’

আসিফ নজরুল আরও বলেন, ‘মানুষ তো গুম হয়নি, আইনের শাসন গুম হয়েছে, গণতন্ত্রের গুম হয়েছে। রাষ্ট্রও গুম হওয়ার পথে। তথ্য প্রযুক্তির ৫৭ ধারার আইন করা হয়েছে। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে কালো আইন। আইনের বৈষম্যমূলক ব্যবহার হচ্ছে। ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য, নির্যাতনের জন্য, মুখ বন্ধের জন্য  সর্বোচ্চ ব্যক্তিরা আইনের অপপ্রয়োগ করছেন।’

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা শীর্ষক আলোচনা সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রেদওয়ানুল হক মূল প্রবন্ধ পাঠ  করেন। তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্র ছাড়া আইনের শাসন হবে না, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও তাদের ভূমিকা পালন করতে পারবে না। নির্যাতন, বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতারের কোনও আইনগত ভিত্তি নেই। দীর্ঘদিন যাবত মামলার তদন্ত হয় না, হলেও ধীর গতি, মাইনরিটিদের নিরাপত্তার কোনও ব্যবস্থা নেই। বর্তমানে ঘরের ভেতর আলোচনা করলেও অনুমতি নিতে হয়, ৫৭ ধারার মতো আইনের বৈষম্যমূলক ব্যবহার হচ্ছে। এসব কারণে আইনের শাসন ব্যাহত হচ্ছে। দেশে জবাবদিহিতার অভাব রয়েছে। রাজনৈতিক কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যবহার যতদিন বন্ধ না হবে, ততদিন আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে না।’

সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘সম্প্রতি ঢাকা শহরে যেমন চিকুনগুনিয়া নামক রোগের প্রকোপ বেড়েছে, ঠিক তেমনি পুরো বাংলাদেশ যেন চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত। আপিল বিভাগ যে রায় দিয়েছেন, তাতে কেউ সংক্ষুব্ধ হলে রিভিউ করতে পারেন। কিন্তু সব পক্ষ যেভাবে এ রায়ের পিছু লেগেছে,  তাদের সঙ্গে সঙ্গে একজন সাবেক প্রধান বিচারপতি ক্ষমার অযোগ্য কাজ করেছেন। তার নিজের কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন আছে।’

সুব্রত চৌধুরী আরও বলেন, ‘এটা নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের অনাস্থা তৈরি হতে পারে। এই একটা জায়গাই আছে। এটা নষ্ট করবেন না। আমাদের মৌলিক অধিকার নিচে নেমে যাচ্ছে, সেটা নিয়ে আপিল বিভাগ পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন। আগামীকাল সাত খুন হত্যা মামলায় হাইকোর্টের রায়। এটাও তো হতো না। এই ঘটনায় জড়িতদের স্ব স্ব বাহিনীতে ফেরত পাঠানো হয়েছিল। হাইকোর্টে মামলা করে অভিযুক্তদের গ্রেফতারের ব্যবস্থা করতে হলো।’

সভায় জেসমিন নাহার নামে একজন ভিক্টিম জানান, ‘আমার স্বামীকে গুম করা হয়েছে। আমার স্বামীকে আমি ফিরে পাব কিনা, জানি না। তবে আমি এই জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি, যেন আর কোনও পরিবারকে এই ধরনের ঘটনার শিকার হতে না হয়।’

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ড. জাফরউল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দলীয়করণের কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। আমরা সবাই হতাশায় ভুগছি। একটা স্বাধীন কমিশন গঠন করে এই সমস্যার কিছুটা সমাধান করা যেতে পারে। সাবেক বিচারপতি খায়রুল হককে কে কি কিছু করা যায় না? আমি কিংবা আসিফ নজরুল তো আদালত অবমাননা করিনি। অবমাননা করেছেন খায়রুল হক।’
পরিবেশবাদী সংগঠন বেলা'র প্রধান নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, ‘ফ্যাসিবাদী  সরকারের সঙ্গে বর্তমান সরকারের কোনও পার্থক্য নেই। মানুষ এখন প্রতিবাদ করতে গেলে পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়, প্রতিবাদ করতে গিয়ে বিপদে পোড়ো না। জনগণের অনাস্থা, অবিশ্বাসের জায়গাগুলো শনাক্ত করে, আস্থা ও বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে হবে।’
আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ বিষয়ক আইনজীবী সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান, মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন প্রমুখ।

 আরও পড়ুন: ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে বিএনপি ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে: ওবায়দুল কাদের

ষোড়শ সংশোধনীর রায় অপরিপক্ব, পূর্বপরিকল্পিত ও অগণতান্ত্রিক: আইন কমিশন চেয়ারম্যান

/এমটি/এমএনএইচ/ 

 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ইউক্রেনের মার্কিন সামরিক সহায়তা আইনে স্বাক্ষর বাইডেনের
ইউক্রেনের মার্কিন সামরিক সহায়তা আইনে স্বাক্ষর বাইডেনের
নামাজ শেষে মোনাজাতে বৃষ্টির জন্য মুসল্লিদের অঝোরে কান্না
নামাজ শেষে মোনাজাতে বৃষ্টির জন্য মুসল্লিদের অঝোরে কান্না
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগে বৃষ্টির আভাস
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগে বৃষ্টির আভাস
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ৩০ মামলার বিচার শেষের অপেক্ষা
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ৩০ মামলার বিচার শেষের অপেক্ষা
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা