X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নিষিদ্ধের পরও হোটেল ওলিওতে বোর্ডার থাকার কারণ খুঁজছেন গোয়েন্দারা

আমানুর রহমান রনি
১৬ আগস্ট ২০১৭, ২৩:২০আপডেট : ১৭ আগস্ট ২০১৭, ০০:১৩

 

বোমা বিস্ফোরণে বিধ্বস্ত হোটেল ওলিও’র পুরনো ভবন জাতীয় শোক দিবসে উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদন করতে আসার বিষয়টি পূর্বনির্ধারিত ছিল। সেই উপলক্ষে পুরো ধানমন্ডি ও আশেপাশের এলাকাগুলোয় কঠোর নিরাপত্তাবলয় সৃষ্টি করেছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এরই  অংশ হিসেবে ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধুর বাড়ির কাছাকাছি ধানমন্ডি, কলাবাগান, শেরেবাংলা নগর, হাজারীবাগ ও নিউমার্কেট থানার সব আবাসিক হোটেলে বোর্ডার তোলা নিষিদ্ধ করেছিল পুলিশ। সেই নির্দেশনা কঠোরভাবে অনুসরণও করেছে বিভিন্ন থানা। এরপরও কিভাবে কলাবাগান থানার হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনালে (আবাসিক) ১৫ আগস্টের আগের দিন সোমবার বোর্ডার তুললো, তা খতিয়ে দেখছে আইনশৃখলা বাহিনী ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা ও তেজগাঁও জোনের বিভিন্ন থানা পুলিশ ও আবাসিক হোটেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য জানা গেছে।

ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, ‘পূর্বঘোষণা অনুযায়ী ১৫ আগস্ট ভোরে রাষ্ট্রপতি  আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। সেই অনুযায়ী তাদের আসা-যাওয়ার পথ ও ৩২ নম্বরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। আগস্টের প্রথম দিন থেকেই সাদা পোশাকে ও ইউনিফর্মে পুলিশ কাজ করেছে। এছাড়া বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাও কাজ করেছে। ৩২ নম্বরের আশেপাশের ধানমন্ডি, কলাবাগান, শেরেবাংলা নগর ও হাজারীবাগ এলাকার আবাসিক হোটেলগুলোতে  ১৪ ও ১৫ আগস্ট; এই দু’দিন সব ধরনের বোর্ডার নিষিদ্ধ করা হয়। কোনও নতুন বোর্ডার তুলতে দেওয়া হয়নি। গুরুত্বপূর্ণ কাজে যারা রাজধানীতে এসে এসব এলাকার হোটেলে ছিলেন, তাদের ছবি, ভোটার আইডি কার্ড, বিস্তারিত ঠিকানা, হোটেলে থাকার কারণ জেনে নিয়েছে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ। যারা রোগী ছিলেন, তাদেরও সব তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছিল। যাদের কম গুরুত্বপূর্ণ কাজের কথা বলেছিলেন, তাদের হোটেল ছাড়তে বলা হয়েছে। ৩২ নম্বর, কলাবাগান বাসস্ট্যান্ড এলাকার কোনও হোটেলেই বোর্ডার থাকতে দেয়নি পুলিশ। প্রতিটি এলাকার সহকারী কমিশনার (এসি) ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা (ওসি) ঘুরেঘুরে হোটেলগুলো পর্যবেক্ষণ করেছেন। ব্লকরেইড দিয়েছেন নিয়মিত।

ডিএমপির রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মারুফ হোসেন সরদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা সব আবাসিক হোটেলকে নতুন বোর্ডার না তোলার জন্য অনুরোধ করেছি। নিয়মিত ব্লকরেইড দিয়েছি। যে হোটেলটিতে জঙ্গি সাইফুল ছিল, সেই হোটেলটিতেও এর আগে একবার ব্লকরেইড দেওয়া হয়েছিল। কয়েকজন রোগী ছিল এর আগে। তাদের অনেককে স্থানান্তর করাও হয়েছিল।’

এত সবের পরও কিভাবে এই হোটেলে ১৩ জন বোর্ডারসহ জঙ্গি আশ্রয় নিল? কলাবাগান থানা পুলিশের কোনও গাফিলতি ছিল কিনা? এর উত্তরে ডিসি বলেন, ‘আমরা সবকিছুই তদন্ত করে দেখবো। এটা আগে থেকেই বলা যাচ্ছে না, তদন্তে সবকিছু বের হয়ে আসবে।’

জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে পুলিশের নিরাপত্তায় হোটেলগুলো বাড়তি নজরে ছিল বলে এসব এলাকার পুলিশ কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন। বিভিন্ন ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করে ধানমন্ডি জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) আব্দুল্লাহিল কাফি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা হাজারীবাগ ও ধানমন্ডি এলাকার হোটেলে ১৪ ও ১৫ আগস্ট বোর্ডার তুলতে নিষেধ করেছি। যেসব বোর্ডার ছিল তাদের ভোটার আইডি কার্ড, ছবি ও বিস্তারিত পরিচয় নিয়ে এসেছি। হোটেলগুলো সার্বক্ষণিক নজরদারি করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা তৎপর ছিলাম যেন হোটেলে কোনও নতুন বোর্ডার না উঠতে পারে। সব অপরিচিত ব্যক্তির আমরা ফলো করেছি। যেন কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে।’

আবাসিক হোটেলে ১৪ ও ১৫ আগস্ট বোর্ডার না তোলার পুলিশের নির্দেশনার কথা জানা যায় হোটেল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকেও। পান্থপথের ৮/সি নম্বর এফআর টাওয়ারের ওলিও ড্রিম হ্যাভেনের ব্যবস্থাপক মুরাদ হোসেন বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশ কয়েকবার কথা বলেছে। আমাদের বোর্ডার তুলতে তারা নিষেধ করেছে। আমরা ১৪ ও ১৫ আগস্ট কোনও বোর্ডার তুলিনি। এত বড় হোটেলে মাত্র দু’টি কক্ষে বোর্ডার ছিলেন। তাদের একজন ক্যান্সারের রোগী অন্যজন বিদেশি। পুলিশ তাদের বিস্তারিত তথ্য নিয়ে গেছে। এরপর আর কোনও বোর্ডার তোলা হয়নি।’

শেরেবাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিজি বিশ্বাস বলেন, ‘আমরা নিরাপত্তার জন্য সব ব্যবস্থাই নিয়েছি। হোটেলগুলো আমাদের পর্যবেক্ষণে ছিল। নিরাপত্তার জন্য যা যা করতে হয়েছে, তার সবাই আমরা করেছি।’

হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভালো নয় বলে গোয়েন্দাদের জানিয়েছেন তারা। রাতে মাত্র একজন নিরাপত্তকর্মী থাকেন। সিসি ক্যামেরা অকেজো। এসব বিষয় জেনেশুনেই জঙ্গিরা এই হোটেলে উঠেছিল। লায়ন মোস্তাফিজুর রহমানের কাছ থেকে প্রথমে এজাহারভুক্ত এক ব্যক্তি এই হোটেলটি চুক্তিতে নিয়ে চালান। কয়েক বছর তিনি চালানোর পর মালিক মোস্তাফিজুর রহমান ভাড়া বাড়ান। ভাড়া বাড়ার কারণে আর ভাড়া নেয়নি। পরবর্তী সময়ে নূর ইসলাম নামে একজন ব্যবসায়ী মাসিক আড়াই লাখ টাকায় হোটেলটি ভাড়া নেয়। তিনিই হোটেলটি চালাচ্ছিলেন।

গোয়েন্দাদের ধারণা, কলাবাগান থানা পুলিশ এই বিষয়টি হয়তো কঠোরভাবে অনুসরণ করেনি বলেই হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনালে (আবাসিক) বোর্ডার ছিল। সেই সুযোগ নিয়েছে জঙ্গিরা। এত কড়াকড়ি থাকার পরও বঙ্গবন্ধুর বাড়ি থেকে মাত্র দুইশ মিটার দূরের এই হোটেলে বর্ডার থাকলো কিভাবে, তাই এখন খতিয়ে দেখছেন তারা।

গত সোমবার পশ্চিম পান্থপথে ৫৭/১/সি-এর হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনালের চতুর্থ তলায় ৩০১ নম্বর কক্ষে ওঠে সাইফুল ইসলাম। পরবর্তী সময়ে সোমবার মধ্য রাতে পুলিশের ব্লক রেইডে ধরা পড়ে সে। আত্মঘাতী বিস্ফোরণে তার মৃত্যু হয়। বুধবার ময়নাতদন্তের পর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের (ঢামেক) হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সোহেল মাহমুদ সাংবাদিকদের জানান, ‘বোমার বিস্ফোরণে তার মৃত্যু হয়েছে।’

এদিকে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ‘সাইফুল গত ৭ আগস্ট হিজরত করে। তার সঙ্গে পান্থপথের ওই হোটেলে আরও একাধিক জঙ্গি গিয়েছিল। যাদের গ্রেফতারে পুলিশ কাজ করছে।’

বুধবার সকারে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, ‘জঙ্গি সাইফুলের সঙ্গে একাধিক লোক ছিল। তার সহযোগীরা ঢাকায় থাকতে পারে। কাউন্টার টেরোরিজম ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা তাদের গ্রেফতারে তৎপরতা শুরু করেছেন। এই জঙ্গিদের বড় ধরনের নাশকতা ঘটানোর সক্ষমতা নেই। তবে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটাতে পারে।’

সাইফুল সম্পর্কে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘সে সম্প্রতি নব্য জেএমবিতে যোগ দিয়েছিল। তার পরিচয় আমরা নিশ্চিত করতে পেরেছি। কিন্তু রাজনৈতিক পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য আরও তদন্ত প্রয়োজন।’

প্রসঙ্গত, রাজধানীর পান্থপথের হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনালের পুরনো ভবনে মঙ্গলবার সকালে আত্মঘাতী হয় জঙ্গি সাইফুল ইসলাম। তাকে প্রতিহত করতে ডিএমপির সিটিটিসি ‘অপারেশন আগস্ট বাইট’ পরিচালনা করে। জাতীয় শোক দিবসে ৩২ নম্বরে আসা মিছিলে তার আত্মঘাতী হামলার পরিকল্পনা ছিল বলে জানিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক।

বুধবার রাত ১১টায় পর্যন্ত এ ঘটনায় কোনও মামলা হয়নি বলে জানান ডিএমপির রমনা বিভাগের উপকমিশনার মারুফ হোসেন সরদার।

ছবি: নাসিরুল ইসলাম

/এমএনএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
প্রতিবন্ধী শিল্পীদের আয়োজনে মঞ্চস্থ হলো ‘সার্কাস সার্কাস’ নাটক
প্রতিবন্ধী শিল্পীদের আয়োজনে মঞ্চস্থ হলো ‘সার্কাস সার্কাস’ নাটক
‘শো মাস্ট গো অন’
চিকিৎসা সুরক্ষা আইন জরুরি‘শো মাস্ট গো অন’
ছাদে আম পাড়তে গিয়ে নিচে পড়ে শিশুর মৃত্যু
ছাদে আম পাড়তে গিয়ে নিচে পড়ে শিশুর মৃত্যু
বেয়ারস্টো-শশাঙ্কে হেসেখেলে ২৬২ রান করে জিতলো পাঞ্জাব
বেয়ারস্টো-শশাঙ্কে হেসেখেলে ২৬২ রান করে জিতলো পাঞ্জাব
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!