ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস বলেছেন, ‘সারাদেশে আজকে আন্দোলন চলছে। ষোড়শ সংশোধনীর রায়ের একটি জায়গায় যে উক্তি করা হয়েছে, তার একটি বক্তব্য আপনাদের সামনে তুলে ধরি। তাতে সংসদকে বলা হয়েছে, সংসদ নাকি ম্যাচিউরড না। আমি এ কথার নিন্দা জানাই। উদাহরণ দিয়ে বলবো, ওনারা কেমন ম্যাচিউরড। তিন বছরেও একজন যুদ্ধাপরাধী তার রায়ের কপি হাতে পায় নাই। এটা হলো তাদের ম্যাচিউরিটি।’
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে আপিল বিভাগের দেওয়া রায়ের কিছু পর্যবেক্ষণ বাতিলের দাবিতে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
তাপস আরও বলেন,‘‘তিন বছরেও একজন যুদ্ধাপরাধী তার রায়ের কপি হাতে পায় নাই। এটা হলো তাদের ম্যাচিউরিটি। প্রধান বিচারপতিও বলেছেন, ‘ছয় মাসের মধ্যে রায় লিখে দিতে হবে। ’ তাহলে একজন ভুক্তভোগী তার রায় পাওয়ার পরও ছয় মাস কি সুপ্রিম কোর্টের দুয়ারে ঘুরে বেড়াবে। এই হলো তাদের ম্যাচিউরিটি।’
তারা ম্যাচিউরিটির কথা বলে, আজকে বিভিন্ন ক্লাবে সন্ধ্যার পর গেলে দেখা যায়, আমাদের এই জাজেরা তাদের বিভিন্ন কার্যকলাপে লিপ্ত। আমরা এর নিন্দা জানাই। লজ্জার বিষয় হলো, এজলাসে না বসে তারা ঢাকা ক্লাবে ঘুরে বেড়ান। আরও কী করে, সেটা আমি এখানে প্রকাশ করতে চাই না। জনগণ সেটা জানে। সুতরাং এই হলো তাদের ম্যাচিউরিটি। তারা বলে কিনা সংসদ নাকি ম্যাচিউরড না। আজব।’
ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘যে রায় দেওয়া হয়েছে, যে উক্তিগুলো দেওয়া হয়েছে, আমি বলতে চাই এটা হলো পেনড্রাইভ জাজমেন্ট। তার মানে কোথা থেকে কোন পেনড্রাইভ থেকে কোন ল্যাবটপ থেকে এই রায়ের উৎপত্তি হয়েছে, সেটা আমাদের জানা আছে। এই ষড়যন্ত্রের মুখোশ আমরা অচিরেই জনগণের কাছে উন্মোচন করবো।’
তিনি আরও বলেন, ‘সময় থাকতে আপনাদের যদি সম্মানবোধ থাকে, তাহলে অবিলম্বে এই রায়ের অপ্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো অপসারণ করবেন এবং এই রায় বাতিল করবেন।’
সমাবেশে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস প্রেসিডেন্ট আব্দুল বাসেত মজুমদার বলেন, ‘আজ বাংলাদেশের আইনজীবীরা একত্রিত হয়েছে, ষোড়শ সংশোধনীর রায়ের বিরুদ্ধে। এ রায়ে আইনি কথার চেয়ে রাজনীতির কথা বেশি বলা হয়েছে। যে রায় আপনি (প্রধান বিচারপতি) দিয়েছেন, এই রায়ে জনসাধারণের প্রত্যাশা প্রতিফলিত হয়নি। আমরা আশা করবো, অনতিবিলম্বে এ রায়কে বাতিল করবেন।’
সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন বলেন, ‘আজকে যেভাবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে কটূক্তি করা হয়েছে, সেটা কোনোদিন বাংলার মানুষ মেনে নেবে না। মেনে নিতে পারে না। এককভাবে বঙ্গবন্ধুই এই বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়ে এদেশকে স্বাধীন করতে ৩০ লাখ লোক প্রাণ দিয়েছিল। সেই বঙ্গবন্ধু ও সংসদকে নিয়ে যেভাবে কথা বলা হয়েছে, সেটা সত্যিই দুঃখজনক। বাংলাদেশের সংসদও সবার ওপরে। সংসদ নিয়ে এভাবে মন্তব্য করা অত্যন্ত অসৌজন্যমূলক।’ সাহারা খাতুন আরও বলেন,‘আমরা আইনজীবীরা এটা সহ্য করতে পারি না। অবিলম্বে এটা প্রত্যাহার করে নেওয়া হোক। আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনাকে নিয়ে বিভিন্ন কটূক্তি করেছেন। আমরা আজ সব আইনজীবীরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। আইনজীবীরা জানে কিভাবে আপনাদের বক্তব্য বন্ধ করা যায়।’
সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, ‘ষোড়শ সংশোধনীর রায়ে ৯৬ অনুচ্ছেদ বাতিল করেছেন। সংসদের হাতে বিচারক অপসারণ ক্ষমতা থাকবে না, সেই রায় দিয়েছেন।কিন্তু সেই রায়ের সঙ্গে ৪শ’ পাতার যে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন সেটা আমরা মানি না,মানি না।’
তিনি বলেন, ‘আজকে অনেকে মুক্তিযুদ্ধের কথা বলছেন। তার (প্রধান বিচারপতি) প্রশংসায় পাগল হয়ে যাচ্ছেন। তাতে কিন্তু ওই অপরাধ ঢাকবে না। আমাদের দাবি, সংসদ নিয়ে এবং বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে পর্যবেক্ষণে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা বাতিল করতেই হবে। এটা নিয়ে কোনও আপস নাই। বাতিল না করা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। ’
বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ আয়োজিত এই সমাবেশে সুপ্রিম কোর্টের আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।
/এমটি/ এপিএইচ/
