হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্ট (সিঅ্যান্ডএফ) প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে। শুল্ক ফাঁকি, কার্গো গুদামের পণ্য চুরি, বৈধ পণ্যের আড়ালে অবৈধ পণ্য আমদানি, তথ্য গোপন করে পণ্য আমদানি, চোরাচালানসহ নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়েছেন অনেকেই। তাদের অপকর্মে বাধা দিতে গিয়ে হেনস্তা ও হুমকির মুখে পড়ছেন শুল্ক কর্মকর্তারা।
কাস্টম ও বিমানবন্দর সূত্র জানায়, উড়োজাহাজে করে আনা আমদানিকারকদের মালামাল বিমানবন্দরের আমদানি কার্গো ভিলেজে সংরক্ষণ করা হয়। আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের হয়ে বিমানবন্দর থেকে শুল্ক পরিশোধ করে মালামাল খালাসের দায়িত্ব পালন করে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট প্রতিষ্ঠান। ঢাকা কাস্টম হাউসের অধীনে অন্তত এক হাজার ২শ’টি সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের নামে আইডি কার্ড (পাস) ইস্যু করে ঢাকা কাস্টম হাউস। এই কার্ড দেখিয়ে তারা আমদানি কার্গো ভিলেজে প্রবেশ করেন।
কাস্টম সূত্র জানায়, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের শুল্ক ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। শুল্ক ফাঁকি দিতে মিথ্যা তথ্য দেওয়া ও ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে সুযোগ নেওয়ার চেষ্ট করেন তারা। একই সঙ্গে নিজের পণ্য খালাসের সময় কার্গো ভিলেজ থেকে চুরির প্রবণতাও রয়েছে কিছু এজেন্টদের।
সর্বশেষ ৯ জুলাই শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আমদানি কার্গো ভিলেজ থেকে ল্যাপটপ চুরির দায়ে রাবেয়া অ্যান্ড সন্স ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠানের এক কর্মীকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। আব্দুল মোমিন নামের ওই কর্মী কার্গো ভিলেজ থেকে একটি ল্যাপটপ শার্টের ভেতরে লুকিয়ে চুরির চেষ্টা করেন। দায়িত্বরত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের নিরাপত্তাকর্মীরা তাকে হাতেনাতে আটক করে ভ্রাম্যমাণ আদালতে পাঠান। আদালতের সামনে মোমিন অভিযোগ স্বীকার করলে তাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর বিমানবন্দরের কুরিয়ার ইউনিটে মালামাল চুরির সময় দেড়শ কার্টন ফেব্রিক্স জব্দ করেন কাস্টম কর্মকর্তারা। একটি প্রতিষ্ঠানের মালামাল ফকরুল ইসলাম প্রিন্স নামের এক সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট বিমানবন্দর থেকে বাইরে নেওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় কাস্টম কর্মকর্তারা আমদানির বৈধ কাগজপত্র দেখতে চাইলে তিনি তা দেখাতে পারেননি। কাগজপত্র আনার নাম করে পালিয়ে যান ওই সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট।
এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা কাস্টসের এক কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কার্গো হাউসের নিরাপত্তা আরও বাড়ানো প্রয়োজন। কার্গো ভিলেজে যারা প্রবেশ করেন, তাদের যথাযথ অনুমতি আছে কিনা তা তদারকি প্রয়োজন। কাস্টম কর্তৃপক্ষ কোনও এজেন্টের অনিয়ম পেলে জরিমানা করে, লাইসেন্স স্থগিত করে, এমনকি লাইসেন্স বাতিলও করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রবেশের সময় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গেলে অপরাধের হার কমে যাবে।’
সূত্র জানায়, সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠানের আবেদনের ভিত্তিতে তাদের কর্মীদের নামে কার্ড ইস্যু করে ঢাকা কাস্টম হাউস। নিয়ম অনুযায়ী, কোনও কর্মী চাকরি ছেড়ে গেলে তার নামে ইস্যু করা কার্ড কাস্টম হাউসে জমা দিতে হয়। তবে অনেক প্রতিষ্ঠান এ নিয়ম না মানায় সেই কার্ড নিয়ে কার্গো ভিলেজে প্রবেশ করে অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন এজেন্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা কাস্টম হাউসের কমিশনার প্রকাশ দেওয়ান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘যে কোনও প্রতিষ্ঠান ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্ট লাইসেন্স নিলে লাইসেন্সের শর্ত মানার বাধ্যবাধকতা আছে। কোনও প্রতিষ্ঠান বা তার কর্মীরা লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গ করলে কিংবা অনিয়ম করলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়। প্রাথমিকভাবে লাইসেন্স স্থগিত রাখা হয়। কর্মীদের আইডি কার্ডও জব্দ করা হয়।’
কার্গো ভিলেজে চুরি প্রসঙ্গে প্রকাশ দেওয়ান বলেন, ‘কার্গো ভিলেজের নিরাপত্তার দায়িত্ব বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের। কাস্টমস হাউস শুধুমাত্র শুল্ক প্রক্রিয়া তদারকি করে। ফলে মালামাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করা বিমানের দায়িত্ব।’
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ বলেন, ‘কার্গো হাউসের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব বিমানের। তবে ওয়্যারহাউসটির সংস্কার, নিরাপত্তা ব্যবস্থা, অবকাঠামোগত কিছু সমস্যা রয়েছে। বিমানের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় কিছু সমস্যার সমাধান করা হয়েছে এবং বাকি সমস্যা দ্রুত সমাধানের জন্য সিভিল এভিয়েশন অথরিটিকে জানানো হয়েছে।’
ছবি:সাজ্জাদ হোসেন
/সিএ/এএম/এসএনএইচ/
আরও পড়ুন: