X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

ছেলেটা রাস্তায় পড়ে থাকলেও কেউ এগিয়ে আসেনি

জাকিয়া আহমেদ
১৯ আগস্ট ২০১৭, ০৭:৫৯আপডেট : ১৯ আগস্ট ২০১৭, ০৭:৫৯

হাসিমুখের তায়েফ এখন অচেতন ‘আমার ছেলেটাকে প্রথমে একটি গাড়ি ধাক্কা দেয়, পরে আরেকটা গাড়ি পায়ের ওপর দিয়ে চলে যায়। প্রায় আধা ঘণ্টার বেশি সময় ধরে ছেলেটা উত্তরার মতো জায়গায় রাস্তার ওপর পড়ে ছিল, রক্তে লাল হয়ে গিয়েছিল পুরো জায়গা। কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেনি, কেউ ধরেনি, কারও মায়া হয়নি ছেলেটার জন্য। মানুষ এতো নিষ্ঠুর হবে কেন’- বলে হাতে থাকা ছেলের ছবিটা চোখের সামনে নিয়ে আসেন মিজানুর রহমান খান। আর ছেলের ছবিতে তখন টপটপ করে পড়তে শুরু করে  বাবার চোখের জল। পাশেই বসে কাঁদছেন চাচা মোস্তাফিজুর রহমান খান। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অনেক আশা নিয়ে আমি ওদের ঢাকায় নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু চোখের সামনে আমাদের সব শেষ হয়ে যাচ্ছে।’

শুক্রবার (১৮ আগস্ট) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেবিন ব্লকের আইসিইউর সামনে বসে কথা হয় মিজানুর রহমান খান ও মোস্তাফিজুর রহমান খানের সঙ্গে। আর ভেতরে আইসিইউতে আজ ২৮ দিন ধরে প্রায় অচেতন হয়ে বিছানায় রয়েছেন মিজানুর রহমান খানের ছোট ছেলে শাহরিয়ার খান তায়েফ। মারাত্মক এক সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে তায়েফ এখন এই হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি। ঘটনার পর তাকে উত্তরার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

শুক্রবার সকালে মোবাইল ফোনে এ প্রতিবেদকের প্রথম কথা হয় মিজানুর রহমানের সঙ্গে। আপনার সঙ্গে দেখা করতে চাই, আপনি কী থাকবেন প্রশ্ন করলে মিজানুর রহমান জানান, ছেলেটা অ্যাক্সিডেন্ট করার পর থেকে তার সঙ্গ ছাড়িনি আমি, ছাড়বোও না।

সকাল সাড়ে ১১টার দিকে হাসপাতালে গিয়ে আবার ফোন করলে দৌড়ে আসেন মিজানুর রহমান। তিনি জানান, উত্তরার আজমপুরে স্ত্রী এবং দুই ছেলেকে নিয়ে তার সংসার। বাসার পাশেই একটি মুদি দোকানের ব্যবসা করে সংসার চালান। আশা ছিল ছেরেদেরকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করবেন। বড় ছেলে বিজিএমইএ থেকে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে চাকরি করছেন। আর ছোট ছেলে তায়েফ উত্তরা হাইস্কুল থেকে মাত্র প্রিটেস্ট পরীক্ষা শেষ করেছে।

ছেলে তায়েফের ছবি হাতে বাবা মিজানুর রহমান খান কিভাবে দুর্ঘটনা ঘটলো জানতে চাইলে মিজানুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, গত ২২ জুলাই বন্ধুর সঙ্গে বের হয় তায়েফ। বাসায় ফেরার পথে মাইক্রোবাস তাকে ধাক্কা দেয়। ছিটকে কয়েক হাত দূরে গিয়ে পরে তায়েফ। পড়ে থাকা অবস্থাতেই তার বাম পায়ের ওপর দিয়ে চলে যায় আরেকটি গাড়ি। তারপর রাস্তায় অন্তত আধাঘণ্টা পড়ে ছিল রক্তাক্ত অবস্থায়। কেউ ধরেনি আমার ছেলেটিকে, কেউ এসে হাসপাতালে নিয়ে যায়নি। পরে এক সিএনজি চালক ছেলেকে রাস্তা থেকে তুলে উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নিয়ে যায়। আর সঙ্গে থাকা বন্ধুটি ঘটনার আকস্মিকতায় অনেকটা খেই হারিয়ে ফেলে। পরে সেই বন্ধুটি তার বাবাকে জানালে তিনি আমাকে জানান। ফোন করে বলেন, তায়েফ অ্যাক্সিডেন্ট করেছে, ক্রিসেন্ট হাসপাতালে রয়েছে। সেদিন রাতেই সেখানে তায়েফের চার ঘণ্টার অপারেশন হয় মাথায়। মাথার খুলি আলাদা করে রাখা হয়েছে। প্রায় ৫ লাখ টাকার বেশি বিল হয়েছিল সেখানে। তায়েফের স্কুল কর্তৃপক্ষ, বন্ধুদের সহযোগিতায় সে টাকা কিছু দেওয়া হয়েছে, বাকিটা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মওকুফ করেছে। এরপর সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ৭ আগস্ট মধ্যরাতে ছেলেকে নিয়ে আসি এখানে। ভাগ্য ভালো আইসিইউতে একটা সিট পেয়েছিলাম। অ্যাক্সিডেন্ট হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত তায়েফকে ১১ ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়েছে। তবে এখানে আসার পর কয়েকদিনের ছুটির ফাঁদে পরে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পাওয়া যায়নি।

সামনে তায়েফের চাচা ও পেছনে বাবা পাশ থেকে তায়েফের চাচা মোস্তাফিজুর রহমান খান বলেন, আসলে এক জায়গা থেকে আমরা তখন সবেমাত্র এখানে এসেছি। সবকিছু নিয়মের মধ্যে আসতে একটু সময় লেগেছে। গতকাল তার সিটিস্ক্যান হয়েছে। সব রিপোর্ট এখনও হাতে পাইনি জানিয়ে তিনি বলেন, তবে ফিল্ম দেখে চিকিৎসকরা বলছেন, তায়েফের অবস্থা উন্নতির দিকে, তবে সেটি খুব ধীরে। তবে সে ব্রেইন কতটুকু ফেরত পাবে সেটাও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না এই মুহূর্তে।  এখন তাকে ডাকলে চোখদুটো একটু খুলতে চেষ্টা করে, চোখ দিয়ে পানি পরে, পায়ে চিমটি কাটলে পা নাড়ায় কিন্তু কিছু বলতে পারে না এখনও।

তায়েফের বাবা মিজানুর রহমান বলেন, ‘ছেলেদের গায়ে জীবনে একটা টোকা পর্যন্ত দেই নাই। সেই ছেলে আমার কত কষ্ট পাচ্ছে। তাকে আমি  কখনও  একদিনে ৩০ টাকার বেশি দেইনি, কিন্তু আজ তার জন্য প্রতিদিন খরচ হচ্ছে প্রায় ৩০ হাজার টাকা। চিকিৎসকরা আমাদের জানিয়েছেন, তায়েফের চিকিৎসা হবে দীর্ঘমেয়াদী। তবে কতদিন লাগবে সে সম্পর্কে কিছুই বলেননি। আমি মুদি দোকান চালিয়ে সংসার চালায়। কিভাবে ছেলেটার চিকিৎসা করাবো তাও এখন জানিনা।’

ছেলের কথা বলতে গিয়ে কাঁদছেন মিজানুর রহমান খান চোখ মুছতে মুছতে মিজানুর রহমান বলেন, ‘ক্রিসেন্ট হাসপাতালে চিকিৎসকরা প্রথমে বলেছিল, ১২ ঘণ্টা না যাওয়া পর্যন্ত তারা কিছু বলতে পারবে না, তারপর বলেছে ৭২ ঘণ্টা, তারপর বলেছে ৩ সপ্তাহ, আর আজ ২৮ দিন হলো ছেলেটা বেঁচে আছে। এতো ধকল পেরিয়ে ছেলেটা যখন বেঁচেই আছে তখন মনে হয় সে বাবার বুক খালি করবে না, তবে আমি হাল ছাড়বো না। আমি আমার সবকিছু দিয়ে ছেলের পাশে আছি, কেবল আপনারা দোয়া করবেন যেন তার হায়াতটা থাকে।’

/এসএনএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বিএনপির বিরুদ্ধে কোনও রাজনৈতিক মামলা নেই: প্রধানমন্ত্রী
বিএনপির বিরুদ্ধে কোনও রাজনৈতিক মামলা নেই: প্রধানমন্ত্রী
চুয়াডাঙ্গায় মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা, হিট অ্যালার্ট জারি
চুয়াডাঙ্গায় মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা, হিট অ্যালার্ট জারি
জিমি নেই, তারপরও খেলতে নামছে মোহামেডান
জিমি নেই, তারপরও খেলতে নামছে মোহামেডান
বায়ার্নের কোচ হওয়া থেকে এক ধাপ দূরে জিদান
বায়ার্নের কোচ হওয়া থেকে এক ধাপ দূরে জিদান
সর্বাধিক পঠিত
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!