X
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদে কমেছে উত্তরাঞ্চলের বাস, বেড়েছে দুর্ভোগ

শাহেদ শফিক
১৯ আগস্ট ২০১৭, ২৩:৪৯আপডেট : ২০ আগস্ট ২০১৭, ১৪:০১

 

টিকিটের জন্য গাবতলী বাস কাউন্টারে ঘরমুখো মানুষের ভিড় প্রতিবছর ঈদ উপলক্ষে পরিবহন মালিকরা ঘরমুখো মানুষের জন্য বাসের সংখ্যা বাড়িয়ে দেন। কিন্তু এবার দেশের উত্তরাঞ্চলগামী বাসগুলোর ক্ষেত্রে ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে। এ অঞ্চলের ১৭টি জেলার অধিকাংশ সড়কই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় পরিবহন মালিকরা তাদের বাসের ট্রিপ ও সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছেন। অথচ আর মাত্র ১২/১৩ দিন পরই ঈদুল আজহ। স্বজনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে কর্মজীবী মানুষ ঘরে ফেরার জন্য টিকিট কাউন্টারগুলোয় হাজির হচ্ছেন। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী টিকিট না পেয়ে প্রায় তাদের খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে ঈদ উপলক্ষে ঘরমুখো মানুষের দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে। শনিবার রাজধানীর গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের কাউন্টারগুলোয় এমন চিত্র পাওয়া গেছে।

বাস কাউন্টার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২ সেপ্টেম্বর ঈদের সম্ভাব্য দিন ধরা হলে ১, ২ ও ৩ সেপ্টেম্বর সরকারি ছুটি। সে অনুযায়ী ৩০ ও ৩১ আগস্টের চাহিদাই বেশি। শনিবার সকালের মধ্যেই এ দুই/দিনের সব টিকেটিই শেষ হয়ে গেছে। ফলে টিকিট না পেয়ে হতাশায় ও ক্ষোভ নিয়ে ফিরতে হয়েছে সাধারণ যাত্রীদের।

ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রির দ্বিতীয় দিন শনিবার রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, যাত্রীদের দীর্ঘ লাইন। টিকিটের চেয়ে চাহিদা বেশি থাকায় কাউন্টারগুলো চাপ সামলাতে পারছে না। কাউন্টার ম্যানেজাররা বলছেন, এবার বন্যার কারণে উত্তরাঞ্চলের সড়কের অবস্থা খুবই খারাপ। প্রতিবছর  ঈদকে সামনে রেখে বাসের সংখ্যা বাড়ানো হয়। কিন্তু এ বছর বাসের সংখ্যা বাড়ানোর চেয়ে কমাতে হচ্ছে। এরই মধ্যে কয়েকটি পরিবহন তাদের বাসের ট্রিপ কমিয়ে দেওয়ার কথা জানিয়েছে। এ কারণে যাত্রীদের চাহিদা অনুযায়ী টিকিট দেওয়া যাচ্ছে না।

গাবতলী বাস টার্মিনালে কাঙ্ক্ষিত টিকিট পেয়ে হাস্যোজ্জ্বল একযাত্রী

জানতে চাইলে হানিফ পরিবহনের সিনিয়র মহাব্যবস্থাপক আবদুস সামাদ মণ্ডল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘স্বাভাবিক সময়ে ঢাকা থেকে উত্তরাঞ্চলের প্রায় ১৭টি জেলায় যেতে ছয় থেকে আট ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছানো যেতো। কিন্তু এখন সময় লেগে যাচ্ছে ১৫ ঘণ্টারও বেশি। আগে একটি বাস দুই থেকে তিন ট্রিপ দিতে পারতো। এখন একবারের বেশি ট্রিপ দেওয়া যায় না।’

ধানমন্ডি থেকে গাবতলী বাস টার্মিনালে আসা শ্যামলী পরিবহনের নওগাঁ টিকিট প্রত্যাশী মুনাদ রহমান। বাড়ি ফিরতে টিকিটের জন্য ভোর ৫টায় গাবতলী টার্মিনালের বাসের কাউন্টারে এসে দাঁড়িয়েছেন। সকাল ৯টার দিকে কাউন্টার থেকে জানিয়ে দেওয়া হলো ৩০ ও ৩১ তারিখের টিকিট নেই। সব বিক্রি হয়ে গেছে। এরপর টিকিট না পেয়ে তিনি হানিফ পরিবহনের কাউন্টারে যোগাযোগ করেন। কিন্তু সেখান থেকেও টিকেট শেষ বলে জানিয়ে দেওয়া হয়। টিকিট না পেয়ে ফিরে আসতে হয়েছে তাকে। পরে ২৮ তারিখের টিকিটই নিতে হয়েছে তাকে।

একই অবস্থা দেখা গেছে ডিপজল পরিবহনের কাউন্টারে। সকাল থেকে এ কাউন্টারটিতে যাত্রীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার কতো। কিন্তু বেলা ১১টার দিকে কাউন্টারগুলো ফাঁকা হয়ে গেছে। সেখানেও টিকিট পাওয়া যায়নি। টিকিট ও অফিস থেকে অগ্রিম ছুটি না পেয়ে অনেকেই ঈদের দিনের টিকিট নিচ্ছেন।

বাস কাউন্টারের ম্যানেজাররা বলছেন, অগ্রিম টিকিট বিক্রির শুরুর দিকে কাউন্টারগুলোতে বেশ ভিড় ছিল। তবে নির্ধারিত সময়ের প্রথম দিনেই বেশির ভাগ রুটে ঈদের আগের কয়েকদিনের টিকিট হয়ে গেছে। ফলে এখন যারা টিকিটের খোঁজে আসছেন, তাদের কাঙ্ক্ষিত দেওয়া যাচ্ছে না।  

গাবতলী বাস টার্মিনালে তীব্র ভিড় উজিয়ে কাঙ্ক্ষিত টিকিট পাওয়ার পর তা দেখাচ্ছেন একজন যাত্রী

ঈদ উপলক্ষে ৩০ ও ৩১ আগস্টের বাহিদা বেশি থাকায় অতিরিক্ত দামে টিকিট বিক্রিরও অভিযোগ উঠেছে।

মহাখালী বাস টার্মিনালের চিত্রও গাবতলীর মতো। ঘরমুখো মানুষের মধ্যে টিকিট পাওয়ার জন্য রীতিমতো যুদ্ধ চলছে। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী কেউ টিকিট পাচ্ছেন না। ফলে ক্ষোভ ও হতাশা নিয়েই তারা ফিরে যাচ্ছেন। এই টার্মিনাল থেকে উত্তরাঞ্চলে ছেড়ে যায় এনা পরিবহনের বাস। পরিবহনটি কাউন্টারে গিয়েও মিললো একই চিত্র।

এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও এনা পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খোন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, ‘এ বছর বন্যার কারণে উত্তরাঞ্চলের অধিকাংশ সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আগে ঢাকা থেকে কোনও বাস ছাড়লে সাধারণত উত্তরবঙ্গে পৌঁছাতে ৬-৭ ঘণ্টা সময় লাগতো। এখন ১৫ ঘণ্টায়ও পৌঁছানো সমভব হয় না। এ কারণে মালিকরা বাসের সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছেন। এছাড়া এবারের ঈদে সরকারি ছুটি একেবারে কম। তাই ২৯, ৩০ ও ৩১ তারিখের চাহিদা খুব বেশি। এ জন্য কাউন্টারে ব্যাপক খুব ভিড়। কাঙ্ক্ষিত টিকিট না পাওয়ায় যাত্রীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। প্রতিবছর আমাদের বাসের সংখ্যা বারানোর পরিকল্পনা থাকে। এবারও ছিল। কিন্তু রাস্তা খারাপ হওয়ায় এবার আর তা বাড়ানো হয়নি।’

এদিকে সকালে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে টার্মিনালটি থেকে  উত্তরাঞ্চলগামী কোনও বাসের অগ্রিম টিকিট দেওয়া হচ্ছে না। তবে কাউন্টারগুলোতে দায়িত্বরত ম্যানেজাররা বলছেন, ঈদের আগের দিনগুলোতে যাত্রীরা এলেই টিকিট পাবেন। তাদের পর্যাপ্ত টিকিট রয়েছে। তবে তখন টিকিটের দাম বাড়বে। কারণ বাসগুলো যাওয়ার সময় বাসভর্তি যাত্রী পেলেও আসার সময় খালি আসতে হয়। ফলে ক্ষতি পুষিয়ে নিতেই প্রতিবছর টিকিটের দাম বাড়ানো হয়।  

ছবি: নাসিরুল ইসলাম

/এমএনএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জাহাজেই দেশে ফিরবেন এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিক
জাহাজেই দেশে ফিরবেন এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিক
তাপপ্রবাহের গেটওয়ে যশোর-চুয়াডাঙ্গা, টানা ৪ দিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
তাপপ্রবাহের গেটওয়ে যশোর-চুয়াডাঙ্গা, টানা ৪ দিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প বাংলাদেশের পর্দায়
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প বাংলাদেশের পর্দায়
১০ জন নিয়েও কৃত্রিম আলোয় ইয়ংমেন্সের উৎসব
১০ জন নিয়েও কৃত্রিম আলোয় ইয়ংমেন্সের উৎসব
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
৭ দফা আবেদন করেও প্রশাসনের সহায়তা পায়নি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট
৭ দফা আবেদন করেও প্রশাসনের সহায়তা পায়নি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট