X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

‘সেদিন পুরো এলাকাটি ছিল মৃত্যুপুরী’

পাভেল হায়দার চৌধুরী
২১ আগস্ট ২০১৭, ১১:৪৫আপডেট : ২১ আগস্ট ২০১৭, ১৮:৩৪

 

একুশ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পর বঙ্গবন্ধু এভিনিউ (ছবি- ফোকাস বাংলা) ‘প্রথমে একটা ছোট্ট শব্দ শুনেছি, ভেবেছি রাজনৈতিক সভা-সমাবেশে এ ধরনের ছোটখাট দুই-একটি শব্দ আসবেই। সেটা হতে পারে ককটেল, চকলেট বোমা ইত্যাদি। পর মুহূর্তেই আরেকটি শব্দ একই ধরনের। তখন সতর্ক হই। এরমধ্যে আরও কয়েকটি শব্দ, কিছু সময় বাদে শোনা গেল বিকট শব্দও। ঘটনার ভয়াবহতা শব্দ শুনে বোঝা যায়নি। সেদিন পুরো এলাকাটি ছিল ভীতিকর একটি মৃত্যুপুরী।’ কথাগুলো বলছিলেন ২০০৪ সালে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার প্রত্যক্ষদর্শী গণমাধ্যম কর্মীরা। তারা সবাই ওই দিন সংবাদ সংগ্রহ করতে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে যান। সাড়ে ৩টা থেকে ৪টার মধ্যে সংবাদকর্মীরা সেখানে গিয়ে হাজির হন। সাড়ে ৪টার কিছু আগে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শোভাযাত্রায় বক্তব্য রাখতে ‘ট্রাকমঞ্চে’ এসে উপস্থিত হন তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তার ভাষণের এক পর্যায়ে ঘটে সেই নৃশংস ঘটনা।

প্রত্যক্ষদর্শী সংবাদকর্মীরা ২১ আগস্টের ভয়াবহতা যেভাবে দেখেছেন, তা তুলে ধরেছেন। সংবাদকর্মীরা সেদিন সেখানে দেখেছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিরাপত্তা ঘাটতি। দেখেছেন লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপের নির্মম ঘটনাও।

চ্যানেল আই থেকে সেদিন ২৩ নম্বর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে যান আশরাফুল আলম খোকন। তিনি এখন প্রধানমন্ত্রীর ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি। গ্রেনেড হামলায় আহত হয়েছিলেন তিনিও।

আশরাফুল আলম খোকন বলেন, ‘এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনা যে তৎকালীন সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে হয়েছে, তা ঘটনার পরমপরায় নিশ্চিত হওয়া যায়।  সাংবাদিক হিসেবে অনেক অনুষ্ঠান কভার করেছি। সেই অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, একজন বিরোধী দলীয় নেতার সভা-সমাবেশ মানেই বাড়তি নিরাপত্তা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাড়তি  উপস্থিতি। কিন্তু সেদিন দেখেছি, এত বড় একটি সমাবেশে পুলিশের কোনও উপস্থিতি নেই। নিরাপত্তার বালাই ছিল না বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে। এর থেকে প্রমাণিত হয়, সেদিনের ঘটনা বিএনপির নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে হয়েছে।’ 

সরকারের মদদে যে হয়েছে সেটি প্রমাণে আরও একটি উদাহরণ টেনে খোকন বলেন, ‘আমি গ্রেনেড হামলায় আহত হই। সহকর্মীরা আমাকে চিকিৎসাসেবা দিতে প্রথমে ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে যায়। সেখানে আহত-নিহতদের ভিড় দেখে আমাকে দেরি না করে নিয়ে যাওয়া হয় হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে।’ 

তিনি বলেন,‘প্রায় ৪০ মিনিট আমি হাসপাতালে পড়ে আছি। আমার চিকিৎসা শুরু হয়নি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়,ওপরের নির্দেশ নাই, তাই চিকিৎসা শুরু করা যাচ্ছে না। এর মধ্যে আমার শরীরের নিচের অংশ প্রায় নিস্তেজ। আমার সহকর্মীরা পীড়াপীড়ি করলে ৪০ মিনিট পরে শুরু হয় চিকিৎসা।’ খোকন বলেন, ‘অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে যাওয়ার পরও যদি ওপরের নির্দেশে চিকিৎসা নিতে হয়, তাহলে আরও স্পষ্ট হয়ে যায় সরকারের মদদের কথা।’  

সেদিন ‘ট্রাকমঞ্চ’ এর ওপরে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে উপস্থিত ছিলেন ফটো সাংবাদিক আবু তাহের খোকন। তিনি বর্তমানে কাজে করেন বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায়। তার দৃষ্টিতে সেদিন বিকালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ ছিল মৃত্যুপুরী। তিনি বলেন, ‘তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতার ভাষণ প্রায় শেষ। কিন্তু ভালো ছবি আমরা নিতে পারিনি। তাই চিৎকার করে আমিসহ অন্য ফটো সাংবাদিকরা নেত্রীকে  (শেখ হাসিনা) বললাম, আমাদের ভালো ছবি হয়নি। এরপরই তিনি ছবির জন্যে আমাদের খানিকটা সময় দিলেন। এরমধ্যেই  শব্দ হলো, মঞ্চের খুব কাছে এই শব্দগুলো। বিকট কোনও শব্দ নয়,  নরমাল। ভাবলাম অধিকাংশ অনুষ্ঠানে এ ধরনের ঘটনা ঘটে। সেটা হতে পারে ককটেল, চকলেট বোমা ইত্যাদি।পরেই আরেকটি শব্দ একই ধরনের। এরপর বিকট শব্দ পাই। তখন সজাগ-সতর্ক হই। সবগুলোই ট্রাকমঞ্চের আশেপাশে। আমি তখন ট্রাকমঞ্চে শুয়ে পড়ি। দু’হাত উঁচু করে ছবি তুলছি, পেশাগত দায়িত্ব পালন করছি। ততক্ষণেও ধারণায় আসেনি, ট্রাকমঞ্চের নিচে মৃত্যুপুরী রচনা হয়েছে। এরমধ্যেই দেখি, ট্রাকমঞ্চে থাকা আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের শরীর থেকে রক্তের ফিনকী। আমার পরনে থাকা জামা ভিজে গেছে। শব্দের মধ্যেই দেখি, ট্রাকমঞ্চে নেত্রীকে ঘিরে তৈরি হয়েছে নেতাদের মানবঢাল। সেখানে  মোহাম্মদ হানিফ, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী, কাজী জাফরউল্যাহসহ অন্য নেতারা আড়াল করে রাখেন শেখ হাসিনাকে। আওয়ামী লীগ নেতারাসহ শেখ হাসিনার নিরাপত্তাকর্মীরা তাকে মানবঢাল তৈরি করে ট্রাকমঞ্চের সন্নিকটে থাকা তার ব্যক্তিগত গাড়িতে তুলে দেন। এ সময় আরেকটি গ্রেনেড তার গাড়ির সামনে  বিস্ফোরণ ঘটে। সেখানে একজন  নিরাপত্তাকর্মী মারা যান। মানবঢাল তৈরি করা নেতারাও আহত হন। কিন্তু বেঁচে যান সন্ত্রাসীদের টার্গেট শেখ হাসিনা। তার গায়ে একটি স্প্লিন্টারও  লাগেনি। এটা আল্লাহর অশেষ রহমত।’

আবু তাহের খোকন বলেন, ‘ঘটনা যা দেখেছি তাতে শেখ হাসিনার বেঁচে যাওয়া মানে আল্লাহ তাকে নিজ হাতে বাঁচিয়েছেন। একের পর এক গ্রেনেডের শব্দ পেলেও ট্রাকমঞ্চ থেকে নামিনি। নেত্রীর গাড়ি যখন চলে গেল তখন  মঞ্চ থেকে নেমেছি। আর নেমেই হতবম্ব হয়ে যাই। চারদিকে আহতদের আহাজারী।  সেখানে পড়ে থাকা  সবাইকে মনে হয়েছে নিহত। আর একটাই শব্দ শুনেছি, আমাকে একটু ধরো, বাঁচাও, বাঁচাও। ’

তিনি বলেন, ‘এতবড় একটি ঘটনা ঘটে গেল। কিন্তু যতক্ষণ ছিলাম পুলিশ দেখিনি। সংবাদকর্মী হিসেবে মনে হয়েছে, নিরাপত্তার অভাব ছিল সেখানে। লোমহর্ষক এই ঘটনার খুব কাছে ছিলাম। কিন্তু আমিই একমাত্র ব্যক্তি বেঁচে গেছি এবং কোথাও কোনও কিছু (আঘাত)’ লাগেনি। ’ 

এস এম গোর্কী। তিনি যুগান্তরের ফটোসাংবাদিক। ২১ আগস্ট ২০০৪ সালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে সভায় যান পেশাগত দায়িত্ব পালনে। বর্বরোচিত এই হামলায় তিনিও সেদিন আহত হন।

শেখ হাসিনার বক্তব্য শেষ হয়ে গেলেও গোর্কী  ভালো করে ছবি তুলতে পারেন নাই, চিৎকার দিয়ে এমন আবদার করলে শেখ হাসিনা কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ছবি তোলার সুযোগ দেন, তিনিসহ অন্য ফটো সাংবাদিকদের। প্রচলিত আছে গোর্কীর আবদার রক্ষা করতে গিয়েই সেদিন প্রাণে বেঁচে যান তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী ও আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এ সম্পর্কে গোর্কী বলেন, ‘২১ আগস্ট গেনেড হামলা থেকে আল্লাহর রহমত ছিল বলে শেখ হাসিনা বেঁচে যান। প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে আমি যা দেখেছি, সেখান থেকে বেঁচে আসাটা ছিল আল্লাহর রহমত ।’

তিনি বলেন, ‘একটি রাজনৈতিক সমাবেশে এমন ঘটনা ঘটবে স্বপ্নেও ভাবতে পারি না আজও। এখনও মনে হয় দুঃস্বপ্ন। এত বড় একটি হামলা হলো পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে লাটিচার্জ ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে। এটা আরেকটি ন্যাক্কারজনক ঘটনা ছিল সেদিন।’ 

একাত্তর টেলিভিশনের প্রধান বার্তা সম্পাদক বায়েজীদ মিল্কী। ২১ আগস্ট ২০০৪ সালে কাজ করতেন এনটিভিতে। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শান্তি সমাবেশ কাভার করতে যান বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে।ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে তিনি বলেন, ‘সেদিন পুরো এলাকাটি ছিল ভীতিকর একটি মৃত্যুপুরী। ভয়াবহ এ ঘটনার বর্ণনা প্রকাশ করা হলো আরেকটি দুরূহ কাজ। অ্যাসাইনমেন্ট কাভার করতে গিয়েছি ঠিকই, ওই দিনের পুরো ঘটনা মনে হয়েছে অকল্পনীয়।’

তিনি বলেন,‘ওই দিন সেখানে এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে যে, নিশ্চিত হওয়া যায়নি কে জীবিত, কে মৃত। এমন অবস্থার মধ্যে পুলিশের আচমকা লাঠিচার্জ ও টিয়ারসেল আরেক ন্যাক্কারজনক ঘটনা হয়ে ওঠে।’

বায়েজীদ মিল্কী বলেন, ‘আমি তখন এনটিভিতে চাকরি করি। আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে সন্ত্রাসবিরোধী সভার আয়োজন ছিল ওই দিন। অসংখ্য নেতাকর্মী। ট্রাকমঞ্চের সামনে ক্যামেরা রাখতে না পেরে পাশে রমনা ভবনের দোতলায় উঠে ক্যামেরাম্যান তারেক ক্যামেরা তাক করেন। শেখ হাসিনা ভাষণ দিচ্ছেন। তার ভাষণ জয়বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু বলে শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে আমরাও ক্যামেরা গুটানো শুরু করি। নিচে নামার প্রস্তুতি নিতে গেলে শুনি একটি শব্দ। বুঝতে পারি নাই। পরে আরও কয়েকটি শব্দ পাই। তখন ক্যামেরাম্যান বলেন, কিছু একটা ঘটেছে। নিচে নেমে কয়েক মিনিট ছবি তোলার পর সেখানকার বীভৎস চিত্র। এক পর্যায়ে দেখি, সহকর্মী চ্যানেল আইতে কাজ করেন (বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি) আশরাফুল আলম খোকন আহত হয়ে রক্তাক্ত অবস্থায়। খোকন বলেন- বাঁচান। তখন ক্যামেরা ট্রাইপড রেখে তাকে রেসকিউ করি। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করলাম। তখন দেখি পুলিশের লাটিচার্জ ও টিয়ারসেল।’  

বায়েজীদ মিল্কী  আরও বলেন, ‘আমি ও আমার ক্যামেরাম্যান একটি বিশেষ ছবি পেয়ে যাই। একটি ভবন থেকে গ্রেনেড ছোড়া হচ্ছে। এ ধরনের একটি সমাবেশে গ্রেনেড হামলা হবে, সেটা জানতাম না। সেটা যে গ্রেনেড সেটাও জানি না। পরে জেনেছি।’    

ঘটনার বর্ণনায় বিডি নিউজের সাংবাদিক সুমন মাহবুব বলেন, ‘আমার জীবনে কয়েকটি না ভোলা ঘটনার মধ্যে একটি এটি। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট। এখনও চোখ বন্ধ করলেই দেখতে পাই- আইভী রহমানের সেই শূন্য দৃষ্টি, আদা চাচার নিথর দেহ, ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা লাশ, চাপ চাপ রক্ত আর মানুষের আর্ত চিৎকার। আমি তখন 'ভোরের কাগজ'-এর স্টাফ রিপোর্টার। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ২০০৪ সালের সেদিন আমি বঙ্গবন্ধু এভিনিউতেই ছিলাম। সেদিন আওয়ামী লীগের উদ্যোগে সন্ত্রাসবিরোধী শোভাযাত্রা হওয়ার কথা ছিল। বঙ্গবন্ধু এভিনিউ থেকে শোভাযাত্রা শুরু হয়ে শেষ হবে ধানমন্ডির রাসেল স্কোয়ারে। সাংবাদিকরা বিকাল তিনটা থেকে চারটার মধ্যে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন।’

তিনি বলেন,‘আগে থেকেই বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের মাঝখানে একটি ট্রাক এনে মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। শোভাযাত্রার আগে যথারীতি একটা সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। একসময় তা শুরুও হলো। আমরা সাংবাদিকরা অপেক্ষায় ছিলাম শেখ হাসিনার বক্তব্যের জন্য। বিকাল পাঁচটার কিছুক্ষণ আগে তিনি এলেন। বক্তৃতা শুরু করলেন অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই। বঙ্গবন্ধু এভিনিউ তখন লোকে লোকারণ্য। আমরা সাংবাদিকরা রমনা ভবনের সিঁড়িতে বসে শেখ হাসিনার বক্তৃতার নোট নিচ্ছিলাম। শেখ হাসিনা তার বক্তৃতা শেষ করেন 'জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু' বলে। কিন্তু শেষ কথা কথাটা শেষ করতে পারলেন না। এর মধ্যেই শুরু হয়ে গেলো প্রলয়। কাছেই বসে থাকায় প্রথমেই পরপর দু'টি আওয়াজ পেলাম। কান ফাটানো শব্দ না। টিয়ার গ্যাসের সেল মারলে যেরকম ধুপ্-ধুপ্ শব্দ হয়, সেরকম শব্দ। আমরা কী হচ্ছে দেখার জন্য দাঁড়াতেই শুনতে পেলাম বিকট শব্দ। তখনও কেউ জানি না যে, গ্রেনেড হামলা করা হচ্ছে। এরপর আরেকটি বিকট শব্দের বিস্ফোরণ শুনতে পেলাম। তারপর আরেকটি। আমরা তখন থেকে বিস্ফোরণের শব্দ গুনতে শুরু করি।’

সুমন মাহবুবের ভাষ্য,‘বিকট শব্দের মধ্যে কিছু গুলির আওয়াজও পেলাম। তবে ঘটনার ভয়াবহতা তখনও বুঝতে পারিনি। রমনা ভবনের সিঁড়িতে দাঁড়িয়েই দেখতে থাকলাম বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দাঁড়িয়ে ভাষণ শুনতে থাকা লোকজন জ্ঞানশূন্য হয়ে দৌঁড়াচ্ছে। নিচে নেমে আবার বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে যেতেই যা দেখলাম, তা বোঝানো যাবে না। শত শত জোড়া জুতো, স্যান্ডেল রাস্তায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। পড়ে রয়েছে মানুষের নিথর দেহ। রক্ত আর আহতদের আর্তনাদে এক ভয়াবহ পরিস্থিতি। বঙ্গবন্ধু এভিনিউর দিকে এগিয়ে গেলাম। এবার নিজেকে মানসিকভাবে তৈরিই করে নিলাম খারাপ কিছুর জন্য।’

তিনি বলেন,‘প্রথমেই দেখলাম শেখ হাসিনার বুলেট প্রুফ গাড়িটি নেই। ট্রাকের ওপর কয়েকজন নেতা পড়ে রয়েছেন। আব্দুল জলিলকে উঠে বসতে দেখলাম। তার সাদা পাঞ্জাবি জুড়ে লাল লাল ছোপ। কয়েকজন মিলে তাকে ধরে ট্রাক থেকে নামিয়ে আওয়ামী লীগ অফিসে নিয়ে গেল। এরপর ট্রাক থেকে নামানো হলো সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে । তারও পুরো শরীর রক্তে লাল। রমনা ভবনের সামনে দু'টি লাশ পড়ে রয়েছে। একজনের পা নেই। চারদিকে রক্ত। তার পাশেই আরেকটি মৃতদেহ পড়ে আছে। মনে হচ্ছে, তার পুরো শরীর কেউ থেঁতলে দিয়েছে। একটু সামনেই রমনা ভবনের এক দোকানের সামনে দেখতে পেলাম আদা চাচার নিথর দেহ। স্থির দৃষ্টি। দেখে মনে হচ্ছে, দোকানের শাটারে হেলান দিয়ে পা ছড়িয়ে বসে আছেন।’

‘আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের কী অবস্থা দেখবো বলে ট্রাকের পাশে যেতেই যা দেখলাম, তাতে নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। বীভৎস সে দৃশ্য। আইভী রহমান বসে আছেন। কিন্তু তার পা দু’খানি অদৃশ্য। মনে হলো, আমাদের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। কিন্তু চোখের কোনও ভাষা নেই।’ , সেই বিকালের ভয়াবহ দৃশ্য বর্ণনা করলেন সাংবাদিক সুমন মাহবুব।

আরও পড়ুন: 

‘জেনে বুঝেই গ্রেনেড হামলা মামলার আলামত নষ্ট ও তদন্ত ভিন্ন পথে নেওয়া হয়’

/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জনগণ এনডিএ জোটকে একচেটিয়া ভোট দিয়েছে: মোদি
জনগণ এনডিএ জোটকে একচেটিয়া ভোট দিয়েছে: মোদি
সোনার দাম কমেছে, আজ থেকেই কার্যকর
সোনার দাম কমেছে, আজ থেকেই কার্যকর
অতিরিক্ত মদপানে লেগুনাচালকের মৃত্যু
অতিরিক্ত মদপানে লেগুনাচালকের মৃত্যু
পূজা শেষে বাড়ি ফেরার পথে বাসচাপায় বাবা-ছেলে নিহত
পূজা শেষে বাড়ি ফেরার পথে বাসচাপায় বাবা-ছেলে নিহত
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ছুটি ঘোষণা
সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ছুটি ঘোষণা
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া