X
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

আগস্ট আন্দোলন: কবে বাস্তবায়িত হবে তদন্তের সুপারিশ

উদিসা ইসলাম
২৩ আগস্ট ২০১৭, ২২:৫৩আপডেট : ২৪ আগস্ট ২০১৭, ০১:০৭

আগস্ট আন্দোলনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর সেনা হস্তক্ষেপের আমরা প্রতিবাদ করেছিলাম। এর জন্য ২০ থেকে ২২ আগস্ট সারাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছিল সেনা নিয়ন্ত্রিত সে সময়ের তত্ত্বাবধায়ক সরকার, তাদের বিচার এদেশের মাটিতে হবে না, এটা কল্পনার বাইরে ছিল। বারো জন শিক্ষককে কারাভোগ করতে হয়েছে। কত শিক্ষার্থী যে অমানবিক মারধরের শিকার হয়েছে। তারপর হোতাদের বিদেশ যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হলো। যখন এসব  ভাবি এর চেয়ে হতাশ আর কখনও লাগে না ।’ কথাগুলো বলছিলেন সেসময় আন্দোলনে থাকা একজন শিক্ষার্থী।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, ‘আন্দোলনের কারণে নির্যাতনের শিকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে আলোচিত শিক্ষার্থী অ্যাঞ্জেল ডিন ঘটনার পর থেকে দেশের বাইরে। শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে গিয়ে এখনও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পার পেয়ে যায়।’ সেই বিষয়টি ভীত করে তুলে উল্লেখ করে এই শিক্ষার্থী টেলিফোনে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আটকের পর আমার গন্তব্য আমি বুঝতেও পারিনি। তিনটা দিন কিভাবে এলো-গেলো বুঝিনি। কারণ, চোখ বাঁধা ছিল।’

আগস্ট আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা (ছবি- সংগৃহীত)

শিক্ষার্থীদের এসব অভিযোগ আর শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জেল জরিমানার পেছনে তৎকালীন ফখরুদ্দিন ও মইনউদ্দিন সরকারের দায় উঠে এসেছিল সংসদীয় কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনেও। কিন্তু সেই প্রতিবেদনের সুপারিশগুলোর বেশিরভাগই বাস্তবায়ন হয়নি। তবে কমিটির প্রধান রাশেদ খান মেনন মনে করেন, ‘বাস্তবায়ন সম্ভব ছিল, হয়নি।’

২০০৭ সালের ওই হামলার ঘটনায় ২০১২ সালে সংসদীয় কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনে ১৩টি সুপারিশ দেওয়া হয়। যদিও দেশব্যাপী সেই সহিংসতায় পুলিশের গুলিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নিহত রিকশাচালক আনোয়ার হত্যার কোনও বিচার হয়নি। সেই হামলার সঙ্গে জড়িত মূল কুশীলবরা এখন দেশের বাইরে অবস্থান করছেন।

সংসদীয় কমিটির তদন্তে ঘটনায় সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ফখরুদ্দিন আহমেদ, তৎকালীন সেনাপ্রধান মঈন ইউ আহমেদ, সেনা গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইয়ের সাবেক কর্মকর্তা এটিএম আমিন, ফজলুল বারী, শামসুল আলম খান ও সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদকে বিচারের মুখোমুখি করার সুপারিশ থাকলেও তাদের কিছুই করা হয়নি।

পুলিশ ভ্যানে আগস্ট আন্দোলনে গ্রেফতার ব্যক্তিরা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসনে হস্তক্ষেপ করার বিষয়ে ফখরুদ্দিন-মইনউদ্দিন সরকারকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যায়নি। কিন্তু যারা গণতন্ত্র ধ্বংস করে দেশকে ভিন্নখাতে প্রবাহের চেষ্টা করেছিল, তাদের বিচারের মুখোমুখি করা জরুরি ছিল বলে মনে করেন আগস্ট আন্দোলনের পর কারাবরণকারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘যে নীল নকশা করা হয়েছিল, তা বাস্তবায়ন সফল হয়ে যেত, যদি না ছাত্ররা বিদ্রোহ করত। এরপর দেশব্যাপী ছাত্র-শিক্ষকদের নির্যাতন ও আটকের মাধ্যমে তারা ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করতে চেয়েছিল। তাদের শিক্ষা দিতে চেয়েছিল। এদের (ফখরুদ্দিন-মইনউদ্দিন) শাস্তি হওয়া জরুরি ছিল।’

আগস্ট বিদ্রোহ নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি যে রিপোর্ট দিয়েছিল,তার বাস্তবায়ন কতটুকু হয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে রাশেদ খান মেনন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তদন্ত কমিটির রিপোর্টের তেমন বাস্তবায়ন তো হয়নি। কয়েকজনের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলা ও ওয়ারেন্ট প্রত্যাহার হয়েছে বড় জোর,এর বেশি কিছু না।’ কেন সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করা যায়নি, সে প্রসঙ্গে না গিয়ে বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘ওই বিদ্রোহের মূল দাবি ছিল ডাকসু নির্বাচন, সেটি হয়নি৷ ডাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে আগস্ট বিদ্রোহকে সার্থক করা সম্ভব। আগস্ট আন্দোলনের পর সংসদীয় কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশে মুখ্য সুপারিশ ছিল- ডাকসুসহ সব ছাত্র সংসদ নির্বাচন৷ সেটি আজও হয়নি।’

আগস্ট আন্দোলনে অংশ গ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা তিনি আরও বলেন, ‘আমি জাতীয় সংসদের শিক্ষাবিষয়ক কমিটির তদন্ত পরিচালনার দায়িত্বে ছিলাম। ওই আন্দোলনে ছাত্র-শিক্ষকদের অংশগ্রহণ ছিল স্বতঃস্ফূর্ত, সেনাবাহিনীর কোনও কর্তৃপক্ষ কখনও সংসদীয় কমিটির সামনে হাজির হয়নি।’

উল্লেখ্য, ২০০৭ সালের ২০ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে ফুটবল খেলা দেখাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শিক্ষক ও আট শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করা হয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আটক হন আট শিক্ষক ও এক কর্মকর্তা। ২০ ও ২১ আগস্ট  দু’দিনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে অন্তত কয়েকশ লোক আহত হন। পরে ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে দণ্ড পাওয়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আট শিক্ষককে ২০০৭ সালের ১৪ ডিসেম্বর ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় তৎকালীন সরকার। ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে আটক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও শিক্ষকদের ছেড়ে দেয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার। এ ঘটনা তদন্তে সংসদীয় উপকমিটি গঠন করে দেওয়া হয়। দীর্ঘ তদন্ত শেষে কমিটি ১৩ দফা সুপারিশ প্রদান করলেও সেগুলো বাস্তবায়নে কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি আজও।

/ইউআই/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ঘুষ মামলায় আদালতের আদেশ লঙ্ঘন, ট্রাম্পের শাস্তি চান প্রসিকিউটররা
ঘুষ মামলায় আদালতের আদেশ লঙ্ঘন, ট্রাম্পের শাস্তি চান প্রসিকিউটররা
ইয়াবাসহ ইউপি চেয়ারম্যানের ছোট ভাই গ্রেফতার
ইয়াবাসহ ইউপি চেয়ারম্যানের ছোট ভাই গ্রেফতার
‘কত সাহায্য চাওয়া যায়? আমাকে এখন দেহ ব্যবসা করার কথাও বলে’
রানা প্লাজার ভুক্তভোগীর আক্ষেপ‘কত সাহায্য চাওয়া যায়? আমাকে এখন দেহ ব্যবসা করার কথাও বলে’
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
মাতারবাড়ি ঘিরে নতুন স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ
মাতারবাড়ি ঘিরে নতুন স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান