X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

‘এত রোগী আসছে, তাদের ফাইল রাখবো কোথায়’

জাকিয়া আহমেদ
২৮ আগস্ট ২০১৭, ০৯:৫৭আপডেট : ২৮ আগস্ট ২০১৭, ১৯:৩০

 

চিকুনগুনিয়া জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের দেখছেন চিকিৎসকরা চিকুনগুনিয়া জ্বর সেরে গেলেও রোগীরা ভুগছেন তীব্র ব্যথায়। শরীরের প্রতিটি গিঁটে গিঁটে ব্যথায় ভোগান্তির শেষ নেই রোগীদের। চিকুনগুনিয়া পরবর্তী এই আর্থ্রাইটিস বা গিঁটের ব্যথায় ভুগছেন প্রায় ৮৫ শতাংশ মানুষ। এসব রোগীর চিকিৎসা দিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রিউমাটোলজি বিভাগ হাসপাতালের নতুন ভবনে বহির্বিভাগ-১ এ চিকুনগুনিয়ার রোগীদের জন্য গত ১৩ আগস্ট আর্থ্রাইটিস ক্লিনিক চালু করে। সেই ক্লিনিকের চিকিৎসকরা এখন রোগীর ভিড়ে চিকিৎসা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। একজন চিকিৎসক বলেন, ‘এত রোগী আসছে, তাদের ফাইল রাখবো কোথায়– সেটাই ভাবতে হচ্ছে।’

রবিবার (২৭ আগস্ট) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বহির্বিভাগের এক নম্বর ভবনের চারতলায় কথা হয় ফাতেমা রহমানের (৫৫) সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘রোজার ঈদের পরদিন রাত থেকে প্রচণ্ড জ্বর, সেই সঙ্গে তীব্র ব্যথা। মনে হচ্ছিলো হাত-পা ভেঙে ফেলি। তবে পাঁচদিন পর জ্বর কমতে শুরু করে, দু’দিন পর একেবারেই কমে যায়। কিন্তু ব্যথার কোনও কমতি নেই, সেই একই ব্যথা দিনের পর দিন সয়ে যাচ্ছি।’ নিজের পায়ের পাতায় হাত বুলিয়ে ফাতেমা বলেন, ‘রাজধানীর বেসরকারি একটি হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম বেশ কয়েকদিন। কিন্তু ব্যথা কেউ সারাতে পারছে না।’

কেবল ফাতেমা বেগমই নন, কথা হয় পশ্চিম জুরাইন থেকে আসা সেলিনা বেগম (৪২),সামিয়া খাতুন (৩৪) ও শরীফা বেগম কণার (৪৫) সঙ্গে। তারা সবাই এখানে এসেছেন চিকুনগুনিয়া পরবর্তী আর্থ্রাইটিস ব্যথার চিকিৎসার জন্য।

এক নম্বর ভবনের বর্হিবিভাগে গিয়ে দেখা যায়, ৪১০ নম্বর কক্ষটির সামনে রোগীদের লাইন লেগেছে। কক্ষের সামনের চেয়ারেও বসে রয়েছেন অনেকে। কথা বলে জানা যায়, তারা সবাই এখানে চিকিৎসকের পরামর্শের জন্য এসেছেন।

পশ্চিম জুরাইন থেকে আসা সেলিনা বেগম জানান, ঈদের এক সপ্তাহ আগে থেকে এ পর্যন্ত তার তিনবার চিকুনগুনিয়া হয়েছে। প্রতিবারই জ্বর সেরে গেলেও ভোগান্তি রেখে গেছে। এখনও তার পা ফুলে আছে, গিঁটে গিঁটে ব্যথা। তিনি বলেন, ‘সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর পা ফেলতে পারি না। কাপড় ধোয়ার পর পানি নিংড়াতে পারি না। হাত নাড়ানো, মুঠি করা যায় না। ফ্লোরে বসতে পারি না, বাথরুমে বসতে পারি না। অনেকক্ষণ বসে থাকার পর হাঁটা বা দাঁড়ানো যায় না–এ জ্বর যেন শত্রুরও না হয়।’

হাসপাতালটির নির্ধারিত কক্ষে ঢুকে দেখা যায়, সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা দু’টি টেবিলে ভাগ হয়ে বসেছেন। পুরো কক্ষ ভর্তি রোগী।

কর্তব্যরত চিকিৎসক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল সিগমা হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রোগী দেখে শেষ করতে পারি না– এত রোগী আসছে। প্রতি শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত এখানে অন্তত ১০ জন চিকিৎসক চিকুনগুনিয়ার রোগীদের ব্যথা পরবর্তী চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু এখন এত রোগী আসছে যে তাদের ফাইল কোথায় রাখবো– সেটাই ভাবতে হচ্ছে আমাদের।’

চিকুনগুনিয়া জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের দেখছেন চিকিৎসকরা সিগমা হোসেন বলেন, ‘আগে অনেকেই এ ক্লিনিকের কথা জানতো না, তাই রোগীর চাপ কম ছিল। কিন্তু যতই দিন যাচ্ছে, ততই এখানে ভিড় বাড়ছে। প্রতিদিন এমনও হয় সময়ে শেষ হয়ে যায়,  কিন্তু রোগী শেষ হয় না। তাই বাধ্য হয়ে প্রায় প্রতিদিনই আমাদের কাজ করতে হয় রোগী শেষ হওয়া পর্যন্ত।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চিকুনগুনিয়া পরবর্তী আর্থ্রাইটিসের ব্যথায় রোগীদের যদি ওষুধ সেবন করতেই হয়, তাহলে তাদের অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। নিজে নিজে কোনও ওষুধ খাওয়া যাবে না। আর ব্যথা খুব বেশি হলে বরফ দিয়ে সেক দেওয়া যায়। পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে পানি ও পানি জাতীয় খাবার খেতে হবে।’

চিকুনগুনিয়া পরবর্তী ব্যথায় রোগীদের করণীয় সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রিভেন্টিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চিকুনগুনিয়ার পরবর্তী ব্যথা কন্টিনিউ করতে পারে কিংবা কখনও কখনও সেটা গ্যাপ দিয়েও ফিরে আসে। এ ক্ষেত্রে ব্যথার জায়গায় গরম সেক দিতে হবে। হালকা কুসুম গরম পানিতে গোসল করতে হবে। আর ব্যথা যদি তীব্র না হয় তাহলে কেবল প্যারাসিটামল ট্যাবলেট খেতে পারে কিন্তু ব্যথা যদি তীব্র হয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।’

অনেকেই ব্যথার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই ফিজিওথেরাপি নিচ্ছেন উল্লেখ করে ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘ফিজিওথেরাপি নিতে হবে কিনা সেটা কখনই নিজে নিজে নির্ধারণ করা যাবে না। কারণ, অনেক ক্ষেত্রেই ভুল ফিজিওথেরাপি নিয়ে ব্যথা উল্টো বেড়ে যেতে পারে।’ ব্যথা হলে শারীরিক পরিশ্রম না করে বিশ্রামে থাকার পরামর্শ দেন ডা. লেলিন চৌধুরী।

 

/এএম/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জুড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে মারধরের অভিযোগ
জুড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে মারধরের অভিযোগ
দক্ষিণখানে ভবনের চার তলা থেকে পড়ে নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু
দক্ষিণখানে ভবনের চার তলা থেকে পড়ে নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু
ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল গ্র্যাজুয়েট হলেন ১৯ জ্যেষ্ঠ রাজনীতিক
ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল গ্র্যাজুয়েট হলেন ১৯ জ্যেষ্ঠ রাজনীতিক
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আপিল বিভাগে নিয়োগ পেলেন তিন বিচারপতি
আপিল বিভাগে নিয়োগ পেলেন তিন বিচারপতি