X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

ছবি এঁকে দিন কাটছে মুক্তামনির

জাকিয়া আহমেদ
৩০ আগস্ট ২০১৭, ২০:৪৪আপডেট : ৩০ আগস্ট ২০১৭, ২০:৫০

হাসপাতালে ছবি এঁকে দিন কাটে মুক্তামনির ‘আমি তো কোনও কাজ করতে পারি না। বাড়িতে সারাদিন শুয়ে বসে  সময় কাটতো। আব্বুর টাচফোনে (স্মার্ট ফোন) ভিডিও গেম, টিভি দেখা, গান গাওয়া, আর ছবি আঁকা ছাড়া কিছু করতাম না। এখানেও ছবি আঁকি। ছবি আঁকার খাতায় রং পেন্সিল দিয়ে রং করতে আমার খুব ভালো লাগে। কিন্তু বেশি ভালো আঁকতে পারি না। খালি নষ্ট করে ফেলি।’ বলেই ভুবন ভোলানো একমুখ হাসি দেয় মুক্তামনি।

মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) প্রচণ্ড জ্বরের কারণে মুক্তামনির অস্ত্রোপচার পুরোপুরি শেষ করতে পারেননি চিকিৎসকরা। প্রায় ২০ শতাংশ অস্ত্রোপচারের পর অস্ত্রোপচার কক্ষ থেকে তাকে বের করতে বাধ্য হন চিকিৎসকরা। সঙ্গে সঙ্গে নেওয়া হয় আইসিইউতে (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র)। প্রায় দুইঘণ্টা পর মুক্তামনিকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়।

বর্তমানে মুক্তামনির শারীরিক অবস্থা ভালো বলে জানান ঢামেক হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়ক ডা.সামন্ত লাল সেন। তিনি বলেন, ‘মুক্তামনির জ্বরটা হঠাৎ করেই এসেছিল। কাল রাত থেকে ওষুধ খাওয়ার পর তার জ্বর নেই। সে এখন ভালো আছে।’

বুধবার (৩০ আগস্ট) ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের নির্ধারিত কেবিনে গিয়ে দেখা যায়, অস্ত্রোপচার করা হাতের ওপরে একটি ছবি আঁকার খাতা। আর বাম হাতে তাতে রং করছে মুক্তামনি। কাছে গিয়ে কেমন আছো জানতে চাইলে একমুখ হাসি দিয়ে বলে, ‘আমি ভালো আছি। জ্বর নেই।তাই ছবি আঁকছি।’

হাসপাতালের বিছানা শুয়ে ছবি আঁকায় ব্যস্ত মুক্তামনি পাশ থেকে মুক্তামনির মা আসমা খাতুন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গত তিন বছর ধরে মেয়েটা বিছানায় শোয়া। তখন থেকেই টিভি দেখা, মোবাইলে গেইম খেলা, গান গাওয়া, আর ছবি আঁকা ছাড়া কিছু করতে পারতো না। মেয়ের ছবি আঁকার শখ দেখে ওর বাবা সব সরঞ্জাম কিনে দিয়েছে মেয়েকে। এখানে আসার পর এক সাংবাদিক আপা কিনে দিয়েছে ছবি আঁকার খাতা। সময় পেলে আর মন ভালো থাকলে মেয়েটা ছবি আঁকে। 

আজ  কি মন ভালো? জানতে চাইলে আসমা খাতুন বলেন, ‘গতকাল (মঙ্গলবার) রাত থেকে জ্বর নেই। আজ  (বুধবার) সকাল থেকে খুব কথা বলছে। সময় করে খাচ্ছে।’ তবে মেয়েটা কিছুটা খামখেয়ালি জানিয়ে আসমা খাতুন বলেন, ‘মুড ভালো না থাকলে শত চেষ্টা করেও কথা বলানো যায় না। মন ভালো থাকলে ওর কথায় পাগল হয়ে যাই,এত কথা বলে মেয়েটা।’

এসময় মুক্তামনি ছবি আঁকা বন্ধ করে বলে, ‘আল্লাহকে কত বলেছি, আমি তো মাসুম বাচ্চা। আমাকে কেন এই রোগ দিছো। এত ব্যথা সহ্য করতে পারি না।’

অস্ত্রোপচারের পর থেকে হাতের পরিবর্তনটা বুঝতে পারছে মুক্তামনি জানিয়ে তার মা আসমা খাতুন বলেন, ‘অনেক বড় ব্যান্ডেজ থাকার কারণে ওপর থেকে কিছু বোঝা যায় না। কিন্তু মুক্তা বুঝতে পারে, এখন হাত আগের মতো নেই। হাতের তালু মুঠি করতে পারে। এ নিয়ে সে খুব খুশি।’

মেয়ের এমন খুশিতে বেশি আনন্দিত বাবা ইব্রাহিম হোসেন। মুক্তামনির পাশে বসে জলভরা চোখে তিনি জানান, মেয়েকে নিয়ে তার যুদ্ধের কথা। ইব্রাহিম হোসেন নিজে মেরুদণ্ডের ব্যথায় দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন। চিকিৎসা করাতে গিয়েছিলেন ভারতেও। কিন্তু সেখান থেকে ফেরত এসেছেন। দেশের চিকিৎসকরা বলেছেন, তার মেরুদণ্ডের অস্ত্রোপচারে খরচ হবে প্রায় দেড় থেকে দুই লাখ টাকার মতো। টাকার অভাবে নিজের চিকিৎসা করানো হয়নি তার। এরপর বাড়ির সামনে রাস্তার পাশে একটি মুদি দোকান চালান তিনি।তাতে কোনোভাবে টেনেটুনে সংসার চলে।

মুক্তামনিকে আদর দিচ্ছে জমজ বোন হিরামনি ইব্রাহিম হোসেন বলেন, ‘সব বিক্রি করে তখন ৫০ হাজার টাকা যোগার করলাম। কিন্তু সেই টাকা আমার জন্য খরচ করতে পারলাম না। মাথায় এলো, এই টাকা দিয়েই মেয়েকে চিকিৎসা করাবো। তারপর সেই টাকাসহ মেয়েকে নিয়ে ঢাকায় এলাম। সিআরপি, পিজি হাসপাতাল (বর্তমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়) সহ কত হাসপাতালে গেলাম, কেউ মেয়েটার চিকিৎসা করতে পারলো না। ভিটে বাড়ি ছাড়া এক কাঠা জমিও নাই। কিন্তু আমার মেয়ে দুটোর (মুক্তামনি ও হিরামনি,জমজ বোন) জন্ম যেদিন থেকে হলো, সেই থেকে আল্লাহ আমার রিজিক বাড়িয়ে দিয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘আমার এই মেয়ে যখন যা চেয়েছে, তার সামনে তাই হাজির করেছি। কামারপাইশা (সাতক্ষীরা কামারপাইশা) গ্রামে রেকর্ড আছে, মুক্তা যখন যেটা চায়, মুক্তার আব্বু তখনি সেটা হাজির করে। আমার মেয়েটা বিরিয়ানি পছন্দ করে। গ্রাম থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে সাতক্ষীরা সদরে গিয়ে রাতের বেলায় মেয়ের জন্য বিরিয়ানি এনে দিয়েছি। কিন্তু আমি এত অসুস্থ ছিলাম যে, আমার বাঁচার কথাই ছিল না। কেবল এই মেয়েকে সুস্থ করে তোলার জন্যই আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন।’

ইব্রাহিম হোসেন জানান, ‘মুদি দোকানটা এতদিন তার বাবা চালিয়েছেন। গতমাসে তার বাবা মারা যাওয়ায় দোকানটা এখন বন্ধ রয়েছে। বাড়িতে গিয়ে কী করবেন সেই চিন্তা হচ্ছে তার। পরক্ষণেই ইব্রাহিম হোসেন বললেন,‘আল্লাহ কপালে যা লিখেছে তাই হবে। আগে মেয়েটাকে সুস্থ করে বাড়ি নিয়ে যাই। সৃষ্টিকর্তার কাছে এটাই আমার চাওয়া। দরকার হলে দিন মজুরি করে মেয়েদের নিয়ে বেঁচে থাকবো।

আরও পড়ুন:

মুক্তামনি ভালো আছে, ভয়ের কিছু নেই’

 

/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
‘আমি কোনও ছেলেকে বিশ্বাস করতে পারি না’
‘আমি কোনও ছেলেকে বিশ্বাস করতে পারি না’
তাপদাহে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের গাউন পরিধানে শিথিলতা
তাপদাহে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের গাউন পরিধানে শিথিলতা
সারা দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা
সারা দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা
উপজেলা নির্বাচন: জেলা-উপজেলায় আ.লীগের সম্মেলন বন্ধ
উপজেলা নির্বাচন: জেলা-উপজেলায় আ.লীগের সম্মেলন বন্ধ
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া