X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘চাপ থাকলেও সাধ্যমতো রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করি’

জাকিয়া আহমেদ
০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ০৮:০০আপডেট : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ০৮:০০

নার্স সুপর্না হালদারে কোলে রোগীর শিশু ছুটি ছাড়া হাসপাতালের এই ওয়ার্ডে সকালে নার্স থাকেন আট থেকে নয় জন। বিকালে চার থেকে পাঁচ জন। ঈদের দিন শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) সকালে ছিলেন তিন জন। দুপুর থেকে দুই জন। অল্প সংখ্যক নার্স সামলাচ্ছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এই ওয়ার্ডের রোগীদের।
ঈদের দিন হাসপাতালের পোস্টঅপারেটিভ ওয়ার্ডের দায়িত্বরত নার্স নিলীমা রায় বলেন, ‘সিস্টার কম থাকলেও খাতা ধরে সব রোগীদের ওষুধ খাওয়াচ্ছি। প্রত্যেককেই জিজ্ঞেস করে দেখতে পারেন, কারও কোনও অসুবিধা হয়েছে কিনা। আমার মনে হয়, কেউ অভিযোগ দিতে পারবে না।’ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই কথাগুলো বলছিলেন নিলীমা রায়। তার সঙ্গে একই সুরে কথা বলেন সুপর্না হালদার। দু’জনেই জানালেন, নিজেরা একজন তিন জনের কাজ করে যাচ্ছেন। কিন্তু রোগীদের তা টের পেতে দিচ্ছেন না।

হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, বছরের অন্যান্য দিনের মতো অ্যাম্বুলেন্স, সিএনজি বা রিকশায় করে রোগী আনা নেওয়ার সংখ্যা নেই বললেই চলে। জরুরি বিভাগের সামনে কেবলই হাতে গোনা কয়েকজন রোগীকে দেখা গেছে। হাসপাতালের ভেতরেও রোগী এবং দর্শনার্থীর সংখ্যা একেবারেই কম। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিরচেনা দৃশ্যের সঙ্গে যেন বেমানান। ঢামেক হাসপাতালের করিডোর যেন সুনসান নীরবতা।

ঈদের ছুটিতে হাসপাতালে চিকিৎসা চিকিৎসক, রোগীসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ‘গুরুতর রোগী ছাড়া হাসপাতালে রোগী নেই। বেশিরভাগ ওয়ার্ডেই বেড ফাঁকা রয়েছে। ঈদের সময় স্বাভাবিকের চেয়ে রোগীর সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে প্রায় এক তৃতীয়াংশে।’

ঈদের সময়ে রোগীর সংখ্যা কমে যাবার পাশাপাশি মুসলিম ধর্মাবম্বী চিকিৎসকদের একটা বড় অংশ ছুটিতে থাকেন। তবে মুসলিম চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্টরা ছুটিতে থাকলেও হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা কাজ করে যাচ্ছেন। হাসপাতালে মুসলিম কর্মকর্তা কর্মচারীর সংখ্যাও কম নয়। তাদেরই একজন বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের লিফটম্যান জিল্লুর রহমান। গত তিন বছর ধরে তিনি হাসপাতালের এই ভবনে লিফটম্যানের কাজ করেন।

ঈদের দিনে হাসপাতালে ডিউটির বিষয়ে জিল্লুর রহমান বলেন, ‘দায়িত্ব নিয়ে ঈদের জন্য বসে থাকা যায় না, কাজটা করতেই হয়। তবে মন তো একটু খারাপ হয়, পরিবারের সদস্যদের নিয়ে একইসঙ্গে ঈদ করতে না পারার জন্য।’

বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, “গত বিশ বছর ধরে কেবল ঈদের দিন নয়, পুজার দিনেও আমি হাসপাতালে ডিউটি করি। আমি মনে করি, একজন মানুষ যখন রোগী হয়ে হাসপাতালে থাকেন, তখন তার মানসিক অবস্থা খারাপ থাকে, মানসিকভাবে দুর্বল থাকেন। আর ঈদের দিনে পরিবার থেকে দূরে থাকা এই মানুষগুলোকে খুশি করতে খুব বেশি কিছু দরকার হয় না। চিকিৎসকরা যদি রোগীদের কাছে গিয়ে তাদের কাছে গিয়ে ‘কেমন আছেন’ কিংবা ‘আপনি ভালো হয়ে যাবেন’ কথাগুলো বললেই অনেক রোগী মানসিকভাবে স্বস্তি পান, মানসিক শক্তি পান।”

সামন্ত লাল সেন আরও বলেন, ‘ঈদ বা পুজার মতো সময়ে কর্তব্যরত যেসব চিকিৎসক থাকেন, তারা যদি প্রতিটি রোগীর কাছে গিয়ে কেবল কুশল বিনিময় করেন, তাতেও অনেক তৃপ্তি পাওয়া যায়। যেটা আর কোনও পেশায় রয়েছে কিনা আমি জানি না।’

ঈদের দিনে হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন যেসব চিকিৎসক ও নার্স  ঈদের এই সময় ৭২ ঘণ্টা টানা কাজ করছেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. গোবিন্দ চন্দ্র রায়। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আগামীকালও ডিউটি করবো। ঈদের সময়ে আমাদের মুসলিম বন্ধুদের ছুটি লাগবে, তারা ছুটিতে যাবেন, এটাই স্বাভাবিক। একইসঙ্গে কাজ করি, আমাদের এইটুকু দেখতে হয়। চিকিৎসক কম থাকার কারণে রোগীদের যেন কোনও ভোগান্তি না হয়। তাই চাপ আমাদের ওপর পড়লেও সাধ্যমতো রোগীদের সেবা দেওয়ার চেষ্টা করি।’

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. আব্দুল হানিফ টাবলু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গত রোজার ঈদে রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি থাকলেও এবারে রোগীর সংখ্যা কম। অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের চিকিৎসকসহ আমরা আজ পাঁচজন হাসপাতালে রয়েছি। রোগীদের কোনও সমস্যা হচ্ছে না।’

কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের ইমারজেন্সি মেডিক্যাল অফিসার ডা. নাহিদুজ্জামান রিমন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঢাকা ফাঁকা থাকার কারণে রোগীর চাপ এ সময়ে কম থাকে। খুব বেশি জরুরি না হলে রোগীরা এসময়ে হাসপাতালে আসেন না। কোরবানি ঈদের সময়ে পেট ব্যাথা, বমির রোগী এবং কোরবানির পশু জবাই করতে গিয়ে আহত রোগীদের হাসপাতালে আসার সংখ্যা বেশি।’

/এসএমএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় উদ্যোগ নিতে হবে: জাতিসংঘ
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় উদ্যোগ নিতে হবে: জাতিসংঘ
ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধে কোন কোন খাবার এড়িয়ে চলবেন?
বিশ্ব যকৃৎ দিবসফ্যাটি লিভার প্রতিরোধে কোন কোন খাবার এড়িয়ে চলবেন?
শিশু হাসপাতালে পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল না: ফায়ার সার্ভিস
শিশু হাসপাতালে পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল না: ফায়ার সার্ভিস
ভোট দিতে এসে কেউ উৎফুল্ল, অনেকেই ক্ষুব্ধ!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনভোট দিতে এসে কেউ উৎফুল্ল, অনেকেই ক্ষুব্ধ!
সর্বাধিক পঠিত
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!