X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

তবুও হাতে মেহেদি পরছে মুক্তামনি

জাকিয়া আহমেদ
০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৮:৫০আপডেট : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ০৯:০০

হাতে মেহেদি পরছে মুক্তামনি ‘আগামীকাল মঙ্গলবার মুক্তামনির অপারেশনের প্রস্তুতি নিচ্ছি আমরা। আজ সোমবার (০৪ সেপ্টেম্বর) সকালে ওর কেবিনে যাই শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য। আমাদের চিকিৎসক দলের সঙ্গে আরও ছিলেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সাঈদা আনোয়ার। কেবিনে গিয়ে তো আমাদের চক্ষু চড়কগাছ! এ তো অসম্ভব। ডান হাতে বিশাল ব্যান্ডেজ, অথচ মুক্তামনি হাতে মেহেদি দিচ্ছে। মুখ দিয়ে টিউব চেপে বাম হাতে মেহেদি দিচ্ছে মুক্তা। এ তো অবিশ্বাস্য! চোখে না দেখলে বিশ্বাস করার জো নেই।’ এ প্রতিবেদককে ফোন করে উচ্ছ্বসিত, অবিশ্বাস্য কণ্ঠে কথাগুলো বলেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন।

তিনি আরও বলেন, ‘জীবনে অনেক কিছু দেখেছি, অনেক কিছু শুনেছি। কিন্তু আজ মুক্তার মেহেদি দেওয়ার এই দৃশ্য দেখে আমরা কিছু সময়ের জন্য হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম। মেয়েটির মানসিক শক্তি অবিশ্বাস্য, তার মানসিক শক্তি আমাদেরও শক্তি জোগায়।’ ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘নিজেকে সুন্দর রাখার জন্য তার যে প্রচেষ্টা– এ বিষয়টি আমাদের মুগ্ধ করেছে। তার এক হাত বন্ধ, কিন্তু সে মুখ দিয়ে টিউব ধরে হাতে মেহেদি দিচ্ছে, ও মনে করছে ও ভালো হয়ে যাচ্ছে– এই যে মানসিকতা, এটা আমাদের সাহস দিয়েছে।’  

পরে মুক্তামনির বাবা ইব্রাহিম হোসেন ফোনে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি একটা মুদি দোকান চালাই। ঈদের আগে টিউব মেহেদি নিয়ে যেতাম বিক্রির জন্য, কিন্তু কোনোবারই খুব বেশি একটা বিক্রি করতে পারতাম না, সবই আমার দুই আম্মুজান (জমজ দুই মেয়ে মুক্তামনি ও হীরামনিকে আম্মুজান বলেই ডাকেন ইব্রাহিম হোসেন) নিয়ে যেতো। এবারও ঈদের আগের দিন আমাকে মেহেদি কিনে আনার জন্য বলে আম্মুজান। কিন্তু ঈদের দিন থেকে হাতে ক্যানোলা থাকায় পরদিন মেহেদি কিনে আনি। আমার আম্মুজান আজ সকালে হাতে মেহেদি দেয়।’

মুক্তামনির মা আসমা খাতুন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই মেয়েটার সাজগোজের খুব শখ, সবসময়ই সে ভালো কাপড়, চুড়ি পরতো, চুল আচড়াতো সুন্দর করে। কিন্তু হাতের এ অবস্থার পর থেকে গত তিন বছর ধরে মেয়েটা আমার সবকিছু বন্ধ করে দিয়েছিল, কিন্তু আজ আবার ওকে মেহেদি দিতে দেখে চোখ ফেটে কান্না এসেছে, কিন্তু সামনে কাঁদলে ওর মন খারাপ হবে, মানসিকভাবে দুর্বল হবে ভেবে কাঁদতেও পারিনি। তবে একইসঙ্গে আমার খুব আনন্দ হচ্ছে, মেয়েটা আমার আগের মতো হচ্ছে, খুশিতে থাকছে-এর চেয়ে বড় পাওয়া আমাদের আর কী হতে পারে।’ আসমা খাতুন আরও বলেন, ‘আগে থেকেই সে বাম হাতে মেহেদি দিতো, কেউ দিয়ে দিলেও সেটা তার পছন্দ হয় না। বরং হীরামনিকেও সেই দিয়ে দেয়।’

কান্নাজড়িত গলায় তিনি বলেন, ‘আমরা স্বপ্ন দেখছি মেয়েটা আমার ভালো হয়ে বাড়ি ফিরবে। এর জন্য আমরা প্রধানমন্ত্রীসহ সব চিকিৎসক, সাংবাদিকদের কাছে কৃতজ্ঞ। কৃতজ্ঞ মুক্তামনিও। মেয়ে বলে, ভালো হয়ে গেলে সে একবার বাড়ি যাবে, বাড়িঘর সব ঠিক করে আবার ঢাকায় আসবে। আর তখন সে আপনাদের সবাইকে নিয়ে বাড়ি যাওয়ার পরিকল্পনা করছে। আপনারা সবাই আমার মেয়ের জন্য দোয়া করবেন–ওর স্বপ্ন যেন সত্যি হয়, আমার মেয়ে যেন সুস্থ হয়ে আগামী ঈদ বাড়িতে গিয়ে করতে পারে।’

 

/এএম/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ভ্যাটেই মিলবে রাজস্ব, অথচ ভ্যাট বাড়াতে অনীহা
ভ্যাটেই মিলবে রাজস্ব, অথচ ভ্যাট বাড়াতে অনীহা
বাংলাদেশে দক্ষতা উন্নয়নে বিনিয়োগের ফল দৃশ্যমান হচ্ছে
গ্লোবাল স্কিলস ফোরামে বক্তারাবাংলাদেশে দক্ষতা উন্নয়নে বিনিয়োগের ফল দৃশ্যমান হচ্ছে
ভারতের লোকসভা নির্বাচনে দ্বিতীয় দফার ভোট কাল
ভারতের লোকসভা নির্বাচনে দ্বিতীয় দফার ভোট কাল
তীব্র গরমে পানি চাইতে চাইতেই ট্রাফিক পুলিশের মৃত্যু
তীব্র গরমে পানি চাইতে চাইতেই ট্রাফিক পুলিশের মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা