X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাবি অধিভুক্ত ৭ কলেজে ফল প্রকাশের সময় নিয়ে অনিশ্চয়তা, দেওয়া হবে প্রত্যয়নপত্র

রশিদ আল রুহানী
১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ২০:৩০আপডেট : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ০৯:০৭

ঢাবি অধিভুক্ত সাত কলেজ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা রাজধানীর সাত কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্ত হয়েছে আট মাস আগে। তবে এখনও সংকট কাটেনি এসব কলেজের শিক্ষার্থীদের। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এই সাত কলেজের ২০১১-১২ সেশনের চতুর্থ বর্ষ ও ২০১৪-১৫ সেশনের দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষার বাকি কার্যক্রম সম্পন্ন হয় ঢাবির অধীনে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই দুই পরীক্ষার ফল কয়েক মাস আগে প্রকাশিত হলেও ঢাবি অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা এখনও সেই ফল পাননি। ফল প্রকাশের কোনও সময়সীমাও দিতে পারছে না ঢাবি কর্তৃপক্ষ। এ পরিস্থিতিতে শিক্ষর্থীদের পরীক্ষায় অবতীর্ণ হওয়ার প্রত্যয়নপত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ঢাবি কর্তৃপক্ষ বলছে, ওই প্রত্যয়নপত্র ব্যবহার করে চাকরির জন্যও আবেদন করা যাবে। তবে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন।
ঢাবি অধিভুক্ত কলেজের শিক্ষার্থীরা বলছেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে একই নোটিশে একইসঙ্গে পরীক্ষা দিয়েছিলেন তারা। ওই পরীক্ষার ফল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশ করলেও ঢাবির অধিভুক্ত হওয়া সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা সেই ফল পাননি। এ কারণে ৩৮তম বিসিএস পরীক্ষাসহ অনেক নিয়োগ পরীক্ষাতেই আবদেন করতে পারছেন না বলে ক্ষোভ জানাচ্ছেন এই সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। তাদের অভিযোগ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্কোন্দলের কারণেই এখনও ফল প্রকাশ হচ্ছে না।
অবিলম্বে ফল প্রকাশের দাবিতে শিক্ষার্থীরা রবিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনশন শুরু করেন। সেখানে উপস্থিত তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী নুর আহমেদ মোস্তফা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবহেলা ও অনীহার কারণে আমরা আজ ভুক্তভোগী। কিন্তু আমাদের কী দোষ? আমরা কি চেয়েছিলাম আমাদের ঢাবি অধিভুক্ত করা হোক? এখন কেন এজন্য আমাদের ভুক্তভোগী হতে হবে? এই দায় সম্পূর্ণভাবে দুই বিশ্ববিদ্যালয়কে নিতে হবে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অন্য এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা আট মাস ধরে শিক্ষা কার্যক্রমের বাইরে। ঢাকায় বসে বসে বাবার কষ্টের টাকা খরচ করছি। আট মাস ধরে কেন আমাকে রেজাল্টের আশায় বসে থাকতে হবে? প্রতি মাসে খাওয়া-দাওয়া ও ঘর ভাড়াসহ এত টাকা কোথা থেকে আসে? এই টাকা আমাদের পরিবার কত কষ্ট করে পাঠায়, তা কি কর্তৃপক্ষ জানেন?’
ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী হোসনে আরা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শিক্ষার কোনও বয়স নেই ঠিকই, কিন্তু চাকরির তো বয়সসীমা আছে। আট মাসেও আমরা ফল পাইনি। কবে পাবো, সেটাও জানি না। এভাবেই তো একবছর গেলো। আমাদের চাকরি পাওয়ার বয়সও একবছর কমে গেলো। সরকার কি আমাদেরকে চাকরির বয়সসীমা একবছর বাড়িয়ে দেবে? তা তো দেবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনেই তো সবাই একসঙ্গে পরীক্ষা দিয়েছি। ওরা (জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজের শিক্ষার্থীরা) ফল পেয়েছে, সব নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে; আর আমরা হাত গুটিয়ে বসে আছি।’
শিক্ষার্থীদের প্রত্যয়নপত্র দেওয়ার বিষয়ে তিতুমীর কলেজের বিজ্ঞপ্তি শহীদ মিনারে অনশন চলা অবস্থায় ঢাবি কর্তৃপক্ষের দু’জন প্রতিনিধি সেখানে উপস্থিত হয়ে শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙান। পরে শিক্ষার্থীরা ঢাবির নতুন উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামানের সঙ্গে দেখা করেন। সেই সাক্ষাতের বিষয়ে তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী শরিফুল হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘উপাচার্য আমাদের বলেছেন, শিগগিরই ফল প্রকাশিত হবে। তবে কবে নাগাদ তা হতে পারে, তা নির্দিষ্ট করে জানাতে পারেননি তিনি।’
অধিভুক্ত সাত কলেজের পরীক্ষার ফল নিয়ে জানতে চাইলে ঢাবি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বাহালুল হক চৌধুরী রবিবার বলেন, ‘আমরা আজ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলাম। তবে এর বেশি আমি কিছুই বলতে পারব না।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নতুন দায়িত্ব নেওয়া ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা আমার কাছে এসেছিল। তাদের কথা শুনেছি। এতদিনেও তাদের পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়নি, আবার তাদের সঙ্গের শিক্ষার্থীরাই ফল পেয়ে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে— এটা দুঃখজনক।’
ঢাবি উপাচার্য আরও বলেন, ‘আমি উপাচার্য হওয়ার পর দেখতে পাচ্ছি, অনেক বিষয়েই মারাত্মক সমন্বয়হীনতা রয়েছে। সেগুলো দূর করার চেষ্টা করছি। শিক্ষার্থীদের ফল প্রকাশের বিষয়ে রবিবার একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করেছি। সেই কমিটির কয়েকজন সদস্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়েও গিয়েছিলেন। আমরা এখন চেষ্টা করছি যত তাড়াতাড়ি তাদের ফল প্রকাশ করা যায়।’ তবে এর জন্য নির্দিষ্ট কোনও সময়সীমার কথা জানাননি ঢাবি উপাচার্য।
চাকরি ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়ছেন— এ পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের সমস্যা কিছুটা লাঘবের জন্য পরীক্ষায় অবতীর্ণ হওয়ার সনদ বা প্রত্যয়নপত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাবি কর্তৃপক্ষ। এ সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করা হয়েছে আজ সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর)। এ বিষয়ে উপাচার্য বলেন, ‘আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আপাতত শিক্ষার্থীরা চাইলে তাদের পরীক্ষায় অবতীর্ণ হওয়ার প্রত্যয়নপত্র নিতে পারবে। এই প্রত্যয়নপত্র দিয়ে তারা চাকরির জন্যও আবেদন করতে পারবে। এতে কিছুটা হলেও তাদের সমস্যা লাঘব হবে।’
আরও পড়ুন-
সরকারি হলো ১২টি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়

/এএইচ/টিআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
মাদারীপুরে কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা
মাদারীপুরে কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা
বেসিস নির্বাচনে ওয়ান টিমের প্যানেল ঘোষণা
বেসিস নির্বাচনে ওয়ান টিমের প্যানেল ঘোষণা
ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি লিভারপুল, সেমিফাইনালে আটালান্টা
ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি লিভারপুল, সেমিফাইনালে আটালান্টা
ইরানের ওপর কোনও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়নি: ইরানি কর্মকর্তা   
ইরানের ওপর কোনও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়নি: ইরানি কর্মকর্তা  
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন