X
শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫
১৪ আষাঢ় ১৪৩২

ফুকোর নিবন্ধ থেকে ৫ পৃষ্ঠা লেখা চুরির অভিযোগ, সামিয়ার অস্বীকার

রশিদ আল রুহানী
২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ২৩:০৭আপডেট : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৪:০৬

সামিয়া রহমান ও মাহফুজুল হক মারজান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক সামিয়া রহমান ও একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের শিক্ষক মাহফুজুল হক মারজানের বিরুদ্ধে মিশেল ফুকোর ‘দ্য সাবজেক্ট অ্যান্ড পাওয়ার’ নামের একটি নিবন্ধ থেকে ৫ পৃষ্ঠা লেখা হুবহু চুরির অভিযোগ ওঠেছে। যদিও সামিয়া তা অস্বীকার করে এর সম্পূর্ণ দোষ চাপিয়েছেন শিক্ষক মারজানের ওপর। আর মারজান বলছেন, তার ওপর দায় চাপাতে চাচ্ছেন সামিয়া। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
এদিকে, ঢাবি ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে লেখা চুরির অভিযোগে আরও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়। বিভাগের শিক্ষক রুহুল আমিন ও নুসরাত জাহান এবং বদরুজ্জামান ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, সামিয়া রহমান ও মাহফুজুল হক মারজানের গবেষণা নিবন্ধ ‘আ নিউ ডাইমেনশন অব কলোনিয়ালিজম অ্যান্ড পপ কালচার: এ কেস স্টাডি অব দ্য কালচারাল ইমপেরিয়ালিজম’ গত বছরের ডিসেম্বর মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সোস্যাল সায়েন্স রিভিউ জার্নালে প্রকাশিত হয়। এই নিবন্ধে ফরাসি দার্শনিক মিশেল ফুকোর ‘দ্য সাবজেক্ট অ্যান্ড পাওয়ার’ নামের একটি নিবন্ধ থেকে পাঁচ পৃষ্ঠা হুবহু চুরি করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ১৯৮২ সালে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নাল ‘ক্রিটিক্যাল ইনকোয়ারি’র ৪নং ভলিউমে ফুকোর ওই নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছিল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সিন্ডিকেট মেম্বার মাকসুদ কামাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সামিয়া রহমান ও মারজানের বিরুদ্ধে শিকাগো প্রেসের সম্পাদক ফুকোর একটি বই থেকে পাঁচ পৃষ্ঠা হুবহু কপি করার অভিযোগ করেছে। এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিই তাদের কাজ করে প্রতিবেদন জমা দেবে।’
এই চার পৃষ্ঠার নির্বাচিত অংশগুলো মিশেল ফুকোর নিবন্ধ থেকে নেওয়া লেখা চুরির বিষয়ে সামিয়া রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘‘মারজান আমার কাছে কয়েকবছর আগে চাকরির জন্য অনুরোধ করেছিল। আমি তাকে বেসরকারি টিভিতে চাকরি দেওয়ার চেষ্টা করেছি। তার সঙ্গে আর্টিকেল লিখতেও অনুরোধ করে আমাকে। আমি রাজি হয়েছিলাম, কিছু আইডিয়াও দিয়েছিলাম। পরে সে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হলো। শিক্ষক হওয়ার পরে তার বিরুদ্ধে প্রায়ই অভিযোগ আসত আমার কাছে। তাদের সবার সাধারণ অভিযোগ ছিল, ‘সে একটা বেয়াদব।’ পরে আমিও অনেকদিন তার সঙ্গে আর যোগাযোগ করিনি।’’
সামিয়া রহমান বলেন, ‘‘পারিবারিক সমস্যার কারণে আমি অনেকদিন বিদেশে ছিলাম। এরই মধ্যে সে আমার নাম বসিয়ে আমাকে না জানিয়ে একটি লেখা ডিন অফিসে রিভিউয়ের জন্য জমা দেয়। সেটা আমাকে জানায় ডিন অফিস। শুনে আমি অবাক হয়েছিলাম। মারজানকে ফোন করলে সে বলে, ‘ম্যাডাম, আপনাকে দেখাতে পারিনি। ভুল হয়ে গেছে, মাফ করে দেন।’ ততদিনে রিভিউ কমিটি লেখা ছাপার অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু আমি বিদেশে থাকার কারণে লেখাটির কোনও কপিও আমার কাছে ছিল না। লেখা ছাপার পরে দেখলাম, অত্যন্ত নিম্নমানের একটি লেখা। সঙ্গে সঙ্গে আমি ডিন অফিসকে জানাই, এই লেখা আমার না। আমি এই লেখার দায়িত্ব নেবো না। চিঠির কপিও আমার কাছে আছে। তদন্ত কমিটি আমাকে ডাকলে আমি সবই দেখাব।’
তবে শিক্ষক মাহফুজুল হল মারজান দাবি করছেন, নিবন্ধের বড় একটি অংশই সামিয়া রহমানের লেখা। তিনি বলেন, ‘সামিয়া রহমান মিথ্যা বলছেন। তিনি ওই আর্টিকেলের প্রথম লেখক। আর্টিকেলটির একটি বড় অংশ তিনি লিখেছেন। আর তার লেখা অংশেই অভিযোগ এসেছে। তিনি কোন অংশটি লিখেছেন, তার প্রমাণ আমার কাছে আছে। মোট কথা, তিনি তো আমার সরাসরি শিক্ষক। ফলে তিনি নিজের দায় আমার ওপর চাপাতে চাইছেন।’
এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে কর্মরত থাকা অবস্থায় সামিয়া রহমানের একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের শীর্ষ একটি পদে চাকরি করা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যদিও সামিয়া রহমান বলছেন, তিনি ফ্রিল্যান্স হিসেবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি নিয়েই ওই চ্যানেলে কাজ করছেন।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সিন্ডিকেট সদস্য বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘একটি টিভি চ্যানেলের হেড অব কারেন্ট অ্যাফেয়ার্সের মতো একটি বড় পদে ফ্রিল্যান্স হিসেবে কাজ করাটা অবিশ্বাস্য, যদিও সেটা হতে পারে। নিয়ম অনুযায়ী, কোনও শিক্ষক অনুমতি নিয়ে আরও দু’টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে মোট ৬ ঘণ্টা সময় খণ্ডকালীন কাজ করতে পারেন। সেখান থেকে পাওয়া বেতনের ১০ শতাংশ তাকে নিজের প্রতিষ্ঠানে দিতে হয়। তিনি আদৌ এসব নিয়ম মানেন কিনা, তা অবশ্যই কর্তৃপক্ষের খতিয়ে দেখা উচিত।’
সিন্ডিকেটের ওই সদস্য আরও বলেন, ‘ভাষা ইনস্টিটিউটের একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধেও এমনই একটি চাকরি করার অভিযোগে তদন্ত চলছে। তাহলে কেন সামিয়ার রহমানের বেলায় হবে না?’
তদন্তে এ বিষয়টিও খতিয়ে দেখবেন কিনা, জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির সদস্য মাকসুদ কামাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগ যদি এ বিষয়ে অভিযোগ দেয় অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দফতর যদি মনে করে যে বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার, তাহলে অবশ্যই তা করব।’
অন্যদিকে, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষক রুহুল আমিন ও নুসরাত জাহান এবং বদরুজ্জামান ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে লেখা চুরির অভিযোগ নিয়ে তদন্ত করছে একটি কমিটি।
এ বিষয়ে শিক্ষক বদরুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, ‘আমার বিভাগের একজন সিনিয়র শিক্ষক রুহুল আমিন ও নুসরাত জাহানের বিরুদ্ধে লেখা চুরির অভিযোগ দিয়েছেন। এর পরপরই আমার বিরুদ্ধে তারা অভিযোগ দিয়েছেন।’ বিভাগের প্রমোশনের ভাইভার পরের দিন এই অভিযোগ করে তার প্রমোশন ঠেকানোর জন্য তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
তবে রুহুল আমিন বলেন, ‘সিলেকশনের দিনই আমরা বুঝতে পারি যে সিলেকশন বোর্ড বদরুজ্জামানকে প্রমোশন দেবে, তিনিই আমাদের বিরুদ্ধে আফজাল স্যারকে দিয়েই চুরির অভিযোগ করিয়েছেন। কিন্তু তার নিজের পিএইচডির থিসিস পেপারেই অন্য নিবন্ধ থেকে নেওয়া অংশ আছে। ফলে নুসরাত জাহান শিক্ষক বদরুজ্জমানের বিরদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন। আমাদের বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। আমাদের প্রবন্ধের সবখানে রেফারেন্স ও কোটেশন যথাযথভাবে দেওয়া আছে। তদন্ত কমিটির কাছে আমরা তা উপস্থাপন করতে পারবো।’

/আরএআর/টিআর/
সম্পর্কিত
নামেই শুধু সরকারি কলেজ, নানা সংকটে ব্যাহত শিক্ষা কার্যক্রম
প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি কখনও পূরণ হয় না: ডা. বিধান রঞ্জন
নিকলীতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে অনুমোদনহীন কামাল ব্রিকস, স্বাস্থ্যঝুঁকিতে শিক্ষার্থীরা
সর্বশেষ খবর
টিভিতে আজকের খেলা (২৮ জুন, ২০২৫)
টিভিতে আজকের খেলা (২৮ জুন, ২০২৫)
কেন্দ্রে পদত্যাগপত্র পাঠালেন এনসিপির রাজশাহী জেলার প্রধান সমন্বয়কারী
কেন্দ্রে পদত্যাগপত্র পাঠালেন এনসিপির রাজশাহী জেলার প্রধান সমন্বয়কারী
পড়াশোনার জন্য শাসন করায় স্কুলশিক্ষার্থীর ‘আত্মহত্যা’
পড়াশোনার জন্য শাসন করায় স্কুলশিক্ষার্থীর ‘আত্মহত্যা’
চীন সফর ছিল রাজনৈতিক: দেশে ফিরে মির্জা ফখরুল
চীন সফর ছিল রাজনৈতিক: দেশে ফিরে মির্জা ফখরুল
সর্বাধিক পঠিত
বিরোধীদের নিষিদ্ধ করা বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের পথ নয়: দ্য ইকোনমিস্ট
বিরোধীদের নিষিদ্ধ করা বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের পথ নয়: দ্য ইকোনমিস্ট
ভাঙা হলো বিজয় সরণির ‘মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাঙ্গণ’, হবে জুলাই স্মরণে ‘গণমিনার’
ভাঙা হলো বিজয় সরণির ‘মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাঙ্গণ’, হবে জুলাই স্মরণে ‘গণমিনার’
যমুনা সেতু থেকে সরিয়ে ফেলা হচ্ছে রেলপথ
যমুনা সেতু থেকে সরিয়ে ফেলা হচ্ছে রেলপথ
মিরপুরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়ক বিভাজকে উঠে গেলো বাস, একজন নিহত
মিরপুরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়ক বিভাজকে উঠে গেলো বাস, একজন নিহত
এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজ দফতরে উপস্থিতি ও সেবা নিশ্চিতের নির্দেশ
এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজ দফতরে উপস্থিতি ও সেবা নিশ্চিতের নির্দেশ