X
মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪
৫ চৈত্র ১৪৩০

ছয় মহিয়সী নারীর স্বপ্নপূরণে নতুন উদ্যোগ সরকারের

রশিদ আল রুহানী
১৭ অক্টোবর ২০১৭, ০২:৫২আপডেট : ১৭ অক্টোবর ২০১৭, ১২:১০

উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী সুরাইয়া আক্তার রিশা, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ছাত্রী সোহাগী জাহান তনুর মতো দেশের অনেক ছাত্রীই প্রতিনিয়ত বখাটেদের হাতে নিহত বা ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। নারীর উন্নয়ন ও তাদের অধিকার শতভাগ নিশ্চিত করতে কঠোর আইন প্রয়োগসহ নানামুখী কার্যক্রম থাকার পরও হত্যা, ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধরনের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার থেকে রেহাই পাচ্ছেন না রিশা, তনুর মতো ছাত্রীসহ নারীরা। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে ‘জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০’-এর আলোকে নারীদের শিক্ষা ও জ্ঞানের সমৃদ্ধির জন্য নতুন প্রকল্প হাতে নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

ছয় মহিয়সী নারী প্রকল্পের আওতায় বেগম রোকেয়া, শেখ ফজিলাতুন্নেছা, সুফিয়া কামাল, প্রীতিলতা, নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী এবং সারদা সুন্দরী– এই ছয় মহিয়সী নারীর নামে গড়ে ওঠা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় একাডেমিক ও আবাসিক ভবন নির্মাণ করে ছাত্রীদের শারীরিক ও মানসিক দক্ষতা বাড়াতে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাধারণ কর্মকাণ্ডের বাইরে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রীদের জন্য থাকবে আলাদা প্রশিক্ষণ। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নারী শিক্ষার যুগান্তকারী পরিবর্তন হবে।’

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের উদ্যোগে নতুন এই প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে ‘নারী শিক্ষার স্বপ্নভূমি স্থাপন’। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পর্যালোচনা পাঠানোর জন্য প্রস্তাবনা তৈরি করা হচ্ছে। মন্ত্রণালয় থেকে ছাড় পেলে সর্বশেষ একনেক থেকে অর্থ পাস হবে। একনেক থেকে বাজেট বরাদ্দ পাওয়ার পর ২০১৮ সাল থেকে এর কার্যক্রম শুরু হবে।

প্রকল্পটির প্রাথমিক প্রস্তাবনায় দেখা গেছে, ওই ছয় মহিয়সী নারীর নামে যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, সেগুলোকে নারী শিক্ষার আদর্শ প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা হবে। তবে প্রকল্পের মেয়াদ তিন বছর নির্ধারিত হলেও বাজেট এখনও নির্ধারিত হয়নি।

প্রকল্পের প্রেক্ষাপটে বলা হয়েছে, দেশের জনগোষ্ঠীর অর্ধেকেরও বেশি নারী। এ অবস্থায় নারীর উন্নয়ন ছাড়া দেশে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। আবার নারী এখনও নিরাপদ নয়। তাই নারীকে শারীরিক ও মানসিকভাবে আরও শক্তিশালী করা গেলে অনেক সমস্যার সমাধান নারী নিজেই করতে পারবে। নির্যাতনের শিকার নারীদের স্বাস্থ্যসেবা, মানসিক সেবা ও আইন সেবা দিলেই দীর্ঘমেয়াদে সুফল ভোগ করবে সমাজ।

প্রকল্পের উদ্দেশ্যে দু’টি বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রথম বিষয়টি হলো— নারী শিক্ষার্থীদের সুস্থ শারীরিক গঠন, মনের বিকাশ ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন নিশ্চিত করা। এর মাধ্যমে একজন নারী শিক্ষার্থী যেন তার পারিপার্শ্বিক অবস্থার সঙ্গে খাপ খাইয়ে আগামী দিনের যোগ্য নাগরিক, যোগ্য মাতা হিসেবে জাতি গঠনে অবদান রাখতে পারেন। প্রকল্পের দ্বিতীয় বিষয়টি হলো— মহিয়সী নারীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে তাদের ইচ্ছাকে মর্যাদা দেওয়া ও তাদের স্মৃতি সংরক্ষণ।

প্রকল্পের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, সেখানে বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান ও মিটিংয়ের জন্য অডিটোরিয়াম, খেলাধুলার সামগ্রী এবং কনফারেন্স রুমও তৈরি করা হবে। এছাড়া ওই প্রতিষ্ঠানগুলোয় নারীবান্ধব শিক্ষা কমপ্লেক্স, অডিটরিয়াম, একাডেমিক ভবন ও আবাসনের ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া, লাইফ স্কিল ট্রেনিং বিষয়ে আন্তর্জাতিক মানের পরামর্শকের সাহায্যে প্রশিক্ষণ মডিউল তৈরি, লাইফ স্কিল ট্রেনিংয়ের জন্য দক্ষ মানবশক্তি, ডিজিটাল লাইব্রেরি ও মহিয়সী নারীদের স্মৃতি সংরক্ষণ কর্নার, ল্যাঙ্গুয়েজ ও আইটিসি ল্যাব, কাউন্সিলিং কর্নার, শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্র, ইনডোর গেমস ও রিক্রিয়েশন রুম, যাতায়াতের সুবিধাসহ গবেষণা কেন্দ্র প্রভৃতি স্থাপন ও নির্মাণ নিশ্চিত করা হবে।

জানা গেছে, যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কেন্দ্র করা হবে, সেসব প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে পরিদর্শন করা শুরু হয়েছে। পরিদর্শনে প্রতিষ্ঠানটিতে কার্যক্রম শুরুর কোনও সীমাবদ্ধতা আছে কিনা তা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। যেমন, ভবন নির্মাণে পর্যাপ্ত জায়গাসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান করার মতো সুযোগ রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এরই মধ্যে নবাব ফয়জুন্নেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি কলেজ, পায়রাবন্দ বেগম রোকেয়া মেমোরিয়াল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি বেগম রোকেয়া কলেজ, সরকারি সারদা সুন্দরী মহিলা সরকারি কলেজ ও সারদা সুন্দরী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় পরিদর্শন করেছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। ক্রমান্বয়ে বাকি প্রতিষ্ঠানগুলো পরিদর্শন ও পর্যালোচনা করে কার্যক্রম শুরুর জন্য চূড়ান্তভাবে প্রতিষ্ঠান নির্ধারণ করা হবে।

প্রকল্পটির তত্ত্বাবধায়নকারী হিসেবে রয়েছেন সরকারের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদফতরের উপ-পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) খুরশীদ আলম, ফোকাল পয়েন্টের দায়িত্ব রয়েছেন গবেষণা কর্মকর্তা কামরুন্নাহার এবং ফোকাল পয়েন্ট সহায়তাকারী হিসেবে আছেন গবেষণা কর্মকর্তা মো. মুকিম মিয়া।

প্রকল্প সম্পর্কে গবেষণা কর্মকর্তা কামরুন্নাহার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা আশা করছি প্রকল্পটি নারী শিক্ষায় একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন আনবে। এর যেসব গুরুত্বপূর্ণ কম্পোনেন্ট রয়েছে, তার সবগুলো ঠিকমতো প্রয়োগ করতে পারলে বাস্তবায়ন সফল হবে। মানসিক দক্ষতা বৃদ্ধিসহ নারীদের নিজেকে রক্ষা করার জন্য অন্যান্য কার্যক্রমের মধ্যে দক্ষ কারাতে প্রশিক্ষক দিয়ে নারীদের কারাতেও শেখানো হবে।’

এ প্রসঙ্গে মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. ওয়াহেদুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দেশে বেশ কয়েকজন মহিয়সী নারী রয়েছেন, যারা নারীর অগ্রযাত্রায় কাজ করেছেন। নারীর উন্নয়নসহ সব ক্ষেত্রে নারীর অবদান রয়েছে চোখে পড়ার মতো। তারই ধারাবাহিকতায় ওইসব নারীদের অবদান তুলে ধরে নারী শিক্ষাকে এগিয়ে নেওয়া জরুরি বলে মনে করি। এতে শুধু নারী শিক্ষার উন্নয়ন নয়, নারী শিক্ষার্থীদের আরও স্বাবলম্বী করে তোলা সম্ভব হবে।’

/এমও/টিআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
দোয়া চেয়ে আইপিএল খেলতে গেলেন মোস্তাফিজ
দোয়া চেয়ে আইপিএল খেলতে গেলেন মোস্তাফিজ
‘চোখের পানি ফেলে বাজার থেকে ফিরতে হয়’
‘চোখের পানি ফেলে বাজার থেকে ফিরতে হয়’
ওয়ালটন ফ্রিজ কিনে মিলিয়নিয়ার হলেন কুমিল্লার হুমায়ুন
ওয়ালটন ফ্রিজ কিনে মিলিয়নিয়ার হলেন কুমিল্লার হুমায়ুন
কলেজ চত্বর থেকে অসুস্থ ভুবন চিল উদ্ধার
কলেজ চত্বর থেকে অসুস্থ ভুবন চিল উদ্ধার
সর্বাধিক পঠিত
সুইডেনের রাজকন্যার জন্য দুটি হেলিপ্যাড নির্মাণ, ৫০০ স্থানে থাকবে পুলিশ
সুইডেনের রাজকন্যার জন্য দুটি হেলিপ্যাড নির্মাণ, ৫০০ স্থানে থাকবে পুলিশ
পদ্মার গ্রাহকরা এক্সিম ব্যাংক থেকে আমানত তুলতে পারবেন
একীভূত হলো দুই ব্যাংকপদ্মার গ্রাহকরা এক্সিম ব্যাংক থেকে আমানত তুলতে পারবেন
দিন দিন নাবিকদের সঙ্গে কঠোর আচরণ করছে দস্যুরা
দিন দিন নাবিকদের সঙ্গে কঠোর আচরণ করছে দস্যুরা
সঞ্চয়ী হিসাবের অর্ধকোটি টাকা লোপাট করে আত্মগোপনে পোস্ট মাস্টার
সঞ্চয়ী হিসাবের অর্ধকোটি টাকা লোপাট করে আত্মগোপনে পোস্ট মাস্টার
‘সরলতার প্রতিমা’ খ্যাত গায়ক খালিদ আর নেই
‘সরলতার প্রতিমা’ খ্যাত গায়ক খালিদ আর নেই