X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মিয়ানমার সেনাদের টাকা দিয়ে টিকে থাকা বিত্তশালীরাও আসছে এবার

উদিসা ইসলাম ও নাসিরুল ইসলাম
১৯ অক্টোবর ২০১৭, ১৬:০০আপডেট : ১৯ অক্টোবর ২০১৭, ২২:৫০

রাখাইন থেকে আসা আজহুরুল হকের দুই আত্মীয় গত সেপ্টেম্বরে মিয়ানমারের রাখাইন থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন ৪২ বছর বয়সী আব্দুল গফুর। তিনি জানান, তার কিছু বড়লোক আত্মীয়-স্বজন মিয়ানমারের সেনাবাহিনী, পুলিশ ও স্থানীয় ক্ষমতাবানদের টাকা দিয়ে এতদিন নিজেদের এলাকায় থেকে গিয়েছিলেন। তবে এখন আর টাকা দিয়েও লাভ হচ্ছে না। তাদেরও দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হচ্ছে। তারা এখন বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন।

আব্দুল গফুর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সেখানে আমাদের দোতলা, তিনতলা পাকা বাড়ি রয়েছে। ভাইয়ের মেয়েদের সেনাবাহিনীর অত্যাচার থেকে বাঁচাতে তাদের নিয়ে বাংলাদেশে আগেই চলে আসেন গফুর। আর ভাইকে সম্পত্তি দেখাশোনার দায়িত্বে রেখে আসেন। তবে এখন তার ভাইও পালিয়ে আসছেন।

বসতি নির্মাণে ব্যস্ত আজহুরুল হকের এক আত্মীয় কেবল গফুর নন, রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে আসার অপেক্ষায় রয়েছেন আরও অনেক বিত্তশালী রোহিঙ্গা। সেখানে তাদের অনেকেরই প্রচুর জমি,অঢেল অর্থ, কারও কারও কারখানা, গাড়ির ওয়ার্কশপও রয়েছে। গত ২৫ আগস্ট সহিংসতা শুরুর পর নিজেদের বাড়িতে থেকে যেতে তারা সেনা সদস্য, পুলিশ ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের মোটা অংকের অর্থ ঢেলেছিলেন। তারপরও তাদের অধিকাংশেরই ব্যবসা লুট করা হয়েছে। এভাবে দুই মাস কোনোমতে পার করার পর নিজ ভিটা ছেড়ে শহরের দিকে গিয়ে সেখানেও আর থাকতে না পেরে বাংলাদেশই তাদের শেষ গন্তব্য হতে চলেছে।

আব্দুল গফুর আব্দুল গফুর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘মিয়ানমারে আর থাকতে না পেরে আমার ভাই বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। জঙ্গল দিয়ে ঘুরে ঘুরে আসতে সময় লাগবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘নিজ এলাকা ছেড়ে যে বিত্তশালীরা শহরের দিকে চলে গিয়েছিল, তারা আর না টিকতে পেরে বাংলাদেশের দিকে রওনা দিয়েছে।’

কক্সবাজারে আসা আব্দুল গফুরের কয়েকজন আত্মীয় কেবল ভাইয়ের মেয়েদের সেনাসদস্যদের হাত থেকে বাঁচাতে আগেভাগে চলে আসা গফুর বলেন, গ্রামে এসে তারা রোজ তালিকা দিয়ে যে, কতজন নারী লাগবে তাদের। এরপর তারা তাদের তুলে নিয়ে যেত। যাদের তুলে নিয়ে যেত, তাদের খুব কমই ফেরত পাওয়া গেছে জানিয়ে গফুর বলেন, শরীর ছিন্নভিন্ন করে তাদের হত্যা করা হয়েছে।

রাখাইন থেকে আসা বিত্তশালী পরিবারের সদস্যরা আজহুরুল হক (৪৪) রাখাইনের রাশিঢং এলাকা থেকে এসেছেন। স্ত্রী ও ৬ সন্তান নিয়ে পরিবারের সদস্য আটজন। তিনি বলেন, ‘এই ৬ জনের মধ্যে একটি আমার সন্তান। বাকিরা বোন ও ভাইয়ের সন্তান। আমি এসেছি কিন্তু ভাইয়ের পরিবার ব্যবসার কারণে আসেনি।’ আজহারুল বলেন, ‘আমাদের ব্যবসা মোবাইল সেটের। পরিস্থিতি ঠিক হলে ফেরত যেতে পারি কিনা এটা ভেবে ব্যবসা ছেড়ে আসতে পারেনি ভাই। চলে আসার পর খবর পেয়েছি দোকানে হামলা হয়েছে। দোকানে আগুন দেয়নি কিন্তু মোবাইল সেট লুট করে নিয়ে গেছে।’

রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় চেয়ারম্যান ছিলেন জোহার। এখন আছেন ক্যাম্পে একটা ছাপড়া ঘরে। নিজের বাড়ি, জমি, ক্ষমতা ছেড়ে শরণার্থী জীবনযাপন করতে হবে ভাবেননি কোনোদিন। জোহারের পরিবারের পোশাক দেখেও সাধারণ রোহিঙ্গাদের থেকে আলাদা করা যায় তাদের। তিনি বলেন, ‘আমাদের গ্রামের বড়লোকেরা শহরের দিকে গিয়ে জীবন বাঁচাতে চেয়েছে। কিন্তু পারেনি। এখন তারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এদেশে ঢোকার পথ খুঁজছে। সবাই সব হারিয়েছে। কারোর কিছু নেই।’

কক্সবাজারে গড়ে ওঠা রোহিঙ্গা ক্যাম্প জাতিসংঘের তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত এবারের সহিংসতার শিকার পাঁচ লাখ ৮২ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। পালংখালী এলাকায় প্রবেশের জন্য অপেক্ষা করছে আরও ১৫ হাজার।

ছবি: নাসিরুল ইসলাম

আরও পড়ুন: সু চি-সেনাপ্রধানের সঙ্গে জাতিসংঘের ‘নিস্ফল’ বৈঠক, শূন্য হাতে ফিরলেন কর্মকর্তা

 

/এএম/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা