X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

রক্তের গ্রুপ ভুল লিখে রোগীর স্বজনদেরও আটকে রাখা হলো হাসপাতালে

জাকিয়া আহমেদ
২৫ অক্টোবর ২০১৭, ১৮:৪২আপডেট : ২৫ অক্টোবর ২০১৭, ২২:৪৩

রোগীর স্বজনদের ভেতরে রেখে ইউনিহেলথ হাসপাতালের প্রধান ফটকে তালা রোগীর রক্তের গ্রুপ ‘এ পজিটিভ’, কিন্তু হাসপাতাল থেকে পরীক্ষা করে কাগজে লেখা হলো ‘ও পজিটিভ’। ক্রস ম্যাচিংয়ে গিয়ে বিষয়টি জানতে পেরে রোগীর স্বজন ও সহকর্মীরা ভিড় করলে তাদের ভেতরে রেখে হাসপাতালের প্রধান ফটকে তালা আটকে দেয় কর্তৃপক্ষ। আর চিকিৎসক না থাকার পরও সড়ক দুর্ঘটনায় মারাত্মক আহত রোগীকে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ফেলে রাখা হয় আইসিইউতে। বুধবার (২৫ অক্টোবর) আয়েশা বেগম নামের এক রোগী ও তার স্বজনদের সঙ্গে এমন আচরণ করে রাজধানীর পান্থপথের গ্রিনরোডের ইউনিহেলথ স্পেশালাইজড হাসপাতাল। স্থানীয়রা বলছেন, হাসপাতালটির বিরুদ্ধে চিকিৎসায় অবহেলা ও দুর্ব্যবহারের অভিযোগ এটিই প্রথম নয়।

রক্তের গ্রুপ প্রথমে লেখা হয় ‘ও পজিটিভ’ (বাঁয়ে), পরে সংশোধন করে লেখা হয় ‘এ পজিটিভ’ হাসপাতালটির বিরুদ্ধে আটকে রাখাসহ চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ করেছেন ওই রোগীর স্বজনরা। রক্তের গ্রুপ নির্ণয়ে ভুল সম্পর্কে জানতে চাইলে হাসপাতালটির জেনারেল ম্যানেজার বিশ্বজিৎ বৈদ্য বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এটি টাইপিং মিসটেক’। আইসিইউর দায়িত্বে থাকা মেডিক্যাল অফিসার ডা. কৌশিক দেব বলেন, ‘রোগীর রক্তের গ্রুপ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে আমাদের হাসপাতালেরই ভুল হয়েছে। আমরা তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছি। আমাদের কনসালট্যান্ট আসতে দেরি করেছেন।’

বুধবার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে সিটি করপোরেশনের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের পরিচ্ছন্নতাকর্মী আয়েশা বেগম মাইক্রোবাসের ধাক্কায় মাথা ও পায়ে গুরুতর আঘাত পান। তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল নেওয়া হলেও সেখানে আইসিইউতে সিট খালি না থাকায় নিয়ে আসা হয় পান্থপথের ইউনিহেলথ স্পেশালাইজড হাসপাতালে। রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, সকাল সাতটার দিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও আয়েশা বেগমকে আইসিইউতে বিনা চিকিৎসায় ফেলে রাখা হয় দুপুর প্রায় ১২টা পর্যন্ত। স্বজনদের এই অভিযোগ স্বীকার করে হাসপাতালের জেনারেল ম্যানেজার বলেন, ‘ফেলে রাখার অভিযোগ ঠিক না হলেও আমাদের কিছুটা গাফিলতি হয়েছেই।’

তালাবদ্ধ প্রধান ফটক দুপুর পৌনে বারোটার দিকে খবর পেয়ে হাসপাতালটিতে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের ছোট-বড় দুটি ফটকেই তালা ঝুলছে, ভেতরে আটকে রয়েছেন সিটি করপোরেশনের আয়েশা বেগমের অনেক সহকর্মী ও স্বজনরা। গেটে তালা দেওয়া হয়েছে কেন জানতে চাইলে হাসপাতালের জসিম মণ্ডল নামের এক কর্মী বলেন, ‘আমাকে  অফিস থেকে তালা দিতে বলা হয়েছে।’

এ বিষয়ে বিশ্বজিৎ বৈদ্য বলেন, ‘তালা হয়তো লাগানো হয়েছিল কিন্তু আমি জানার পর খুলে দিতে বলেছি। সেটি সকালেই সঙ্গে সঙ্গে খুলে দেওয়া হয়েছে।’ কিন্তু দুপুর পৌনে ১২টায়ও স্বজনদের ভেতরে রেখে গেটে তালা আটকে রাখা হয়েছিল এবং তাদের বেরোতে দেওয়া হচ্ছিলো না বলে জানালেও তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেন। পরে এ প্রতিবেদকের কাছে ১২টার সময়ে তোলা ছবি রয়েছে জানালে তিনি ‘বিষয়টি এমন হওয়ার কথা নয়’ বলে মন্তব্য করেন।

রোগী আয়েশা বেগমের ভাতিজা মো. মোতালেব হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মানুষ সরকারি হাসপাতালে না গিয়ে বেসরকারি হাসপাতালে আসে তাড়াতাড়ি চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সকালে রোগীকে এখানে নিয়ে আসার পর কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে আইসিইউতে নিয়ে ফেলে রাখেন। সেখানে তাকে কেবল একটি অক্সিজেন মাস্ক পরানো ছাড়া আর কিছুই করেননি  চিকিৎসকরা। তিনি আরও বলেন, চিকিৎসকরা বলছিলেন, আধাঘণ্টার মধ্যে সিটি স্ক্যান করবো। কিন্তু বারবার একই কথা বললেও দুপুর দেড়টা পর্যন্ত কোনও পদক্ষেপ নেননি ওই চিকিৎসকরা।

রোগীকে কেন ফেলে রাখা হয়েছিল জানতে চাইলে জেনারেল ম্যানেজার বিশ্বজিৎ বৈদ্য বলেন, ‘আমাদের এখানে দুজন মেডিক্যাল অফিসার ছিলেন, যারা রোগী রিসিভ করেছেন। সব সময় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থাকেন না, তারা কল করলে আসেন। যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের আজ সকাল সাতটায় আসার কথা ছিল, তার কোথাও ক্লাস থাকাতে তিনি এসেছেন দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে। এ জন্যই এ রোগীর সবকিছু ঠিকমতো করা হয়নি।’

স্বজনদের অভিযোগ, ইউনিহেলথে ভর্তির পর রোগীর রক্ত লাগবে জানিয়ে গ্রুপ ‘ও পজিটিভ’ বলা হয়। আয়েশা বেগমের ভাতিজা মোতালেব হোসেন বলেন,  ‘আমরা আগে থেকেই জানতাম তার ব্লাড গ্রুপ এটা নয়। মনে সন্দেহ থাকলেও ওই মুহূর্তে এ নিয়ে মাথা ঘামানোর সুযোগ ছিল না, ডোনার হিসেবে আমি পাশের মুক্তি ব্লাড ব্যাংকে যাই ক্রস ম্যাচিংয়ের জন্য। কিন্তু সেখানে বলা হয়, রোগীর রক্তের গ্রুপ ‘এ পজিটিভ’। বিষয়টি এখানে এসে জানাতেই আমাদের ভেতরে রেখে প্রধান ফটকে তালা আটকে দেওয়া হয়।’

রক্তের ভুল গ্রুপ লেখার বিষয়টি স্বীকার করেছেন হাসপাতালের জেনারেল ম্যানেজার। তিনি বলেন, ‍‘যিনি এ কাজে ছিলেন, তার সঙ্গে আমি কথা বলেছি। তিনি জানিয়েছেন, এটা টাইপিং মিসটেক, কম্পিউটারে লেখার সময় তিনি ভুল করেছেন।’

আয়েশা বেগমের স্বজনদের আটকে রাখার খবর পেয়ে সিটি করপোরেশনের অন্য কর্মীরা হাসপাতালে যান। তাদেরও সেখানে আটকে রাখা হয়। তাদের অভিযোগের বিষয়ে কোনও সদুত্তর না দিয়ে উল্টো দুর্ব্যবহার করা হয়। এ প্রতিবেদক সেখানে উপস্থিত হলে কর্তৃপক্ষ প্রধান ফটক খুলে দেয়। এরপর দুপুর ২টার দিকে আয়েশা বেগমকে রাজধানীর আরেকটি হাসপাতালে নিয়ে যান তার সহকর্মীরা। আয়েশা বেগমের সঙ্গে থাকা স্বজনরা বলেন, তারা গরিব এবং পরিচ্ছন্নতাকর্মী বলেই রোগীকে এভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেলে রাখা হয়েছে।

ইউনিহেলথ স্পেশালাইজড হাসপাতালের সামনের একটি হোটেল এবং পাশের দোকানিরা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এই হাসপাতালে রোগীদের অবহেলা এবং স্বজনদের হেনস্তা করার ঘটনা এটিই প্রথম নয়। দু’দিন পরপরই আমরা এ চিত্র দেখতে পাই। এটা আমাদের অভ্যাস হয়ে গেছে।

 

/এএম/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ডিভোর্স দেওয়ায় স্ত্রীকে কুপিয়ে নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন স্বামী
ডিভোর্স দেওয়ায় স্ত্রীকে কুপিয়ে নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন স্বামী
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!