X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

চিকিৎসকদের প্রতিপক্ষ না বানানোর আহ্বান

জাকিয়া আহমেদ
৩০ অক্টোবর ২০১৭, ২৩:৪০আপডেট : ০১ নভেম্বর ২০১৭, ১৭:৪২

আহত ডা. শামীমকে দেখতে যান বিএমএ ও স্বাচিপ নেতারা চিকিৎসকদের নিরাপত্তা ও রোগী সুরক্ষা আইন দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন চিকিৎসক নেতারা। চিকিৎসকদের প্রতিপক্ষ না বানানোরও আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

গত রবিবার এক রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসকদের ওপর চড়াও হন ওই রোগীর স্বজনরা। এতে এক চিকিৎসক ও দুই আনসার সদস্য আহত হন। তারা এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সোমবার (৩০ অক্টোবর) আহত চিকিৎসক শামীমুর রহমানকে দেখতে হাসপাতালে যান বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি ডা. ইকবাল আর্সলান।

সেখানে ডা. ইকবাল আর্সলান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ওই ঘটনায় যে মামলা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেন যথাযথভাবে বিষয়টি দেখেন আমি তাদের সেই অনুরোধ করব। অপরাধীদের যদি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া যায় তাহলে ভবিষ্যতে চিকিৎসকদের ওপর হামলার মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না এবং এর প্রতিকার হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘চিকিৎসকদের নিরাপত্তা এবং রোগী সুরক্ষা আইন– যেটি স্বাস্থ্যসেবা কিংবা চিকিৎসাসেবা আইন হিসেবে করার উদ্যোগ সরকার নিয়েছিল, আমরা চাই সেই আইনের পরিমার্জন করে দ্রুত বাস্তবায়ন করা হোক।’

ঢামেকে চিকিৎসাধীন আহত ডা. শামীম ওই ঘটনায় রোগীর স্বজনদের মধ্যে দুজন আহত হন। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া, আরও দুজনকে শাহবাগ থানা পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

আহত চিকিৎসক শামীমুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, আগামী বুধবার তার ডান হাতে অস্ত্রোপচার করা হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা রোগীদের সেবা দেই–এটাই আমাদের ধর্ম। কিন্তু তারা যদি এভাবে আমাদের ওপর হামলা করে তাহলে আমাদের ডেডিকেশন নষ্ট হয়ে যাবে। রোগী মৃত্যুর ঘটনায় যা হয়েছে তাতে আমি এবং আমার পুরো পরিবার ভুক্তভোগী। অথচ সেদিন আমাদের কোনও দোষ ছিল না। চিকিৎসকরা জনগণের প্রতিপক্ষ নয়।’

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসিরুদ্দিন বলেন, ‘চিকিৎসকরা রোগীর জীবন-মৃত্যু নিয়ে কাজ করেন। এখন তারা যদি নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন  বা এ ধরনের পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়, তাহলে চিকিৎসকদের কাজ বাধাগ্রস্ত হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘মনে রাখতে হবে, সব রোগীকে বাঁচানোর ক্ষমতা আমাদের নেই, সব রোগও আমরা সারাতে পারব না–এটিই নিয়ম। রোগীর স্বজনদের যদি কোনও অভিযোগ থাকে তাহলে তারা লিখিত অভিযোগ করতে পারেন, আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবো। কিন্তু ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মতো দেশের সবচেয়ে বড় হাসপাতালে যদি চিকিৎসকরা এভাবে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন– তার দায় কে নেবে? আমি মনে করি এটি (হামলা) অকৃতজ্ঞতার পরিচয়।’

ডা. একেএম নাসিরুদ্দিন আরও বলেন, ‘এগুলোর বিচার যদি না হয় তাহলে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা আরও ঘটবে এবং আমাদের জন্য সে পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করবে। কারণ, রিস্কি রোগীদের তখন অ্যাভয়েড করার প্রবণতা তৈরি হবে চিকিৎসকদের মধ্যে। আর তেমনটি হলে সামগ্রিকভাবে একটি বিপজ্জনক অবস্থায় তৈরি হবে। এজন্য আমরা মনে করি, চিকিৎসক-রোগী-রোগীর স্বজন সবাইকে সচেতন ও সর্তক থাকতে হবে।’ তার মতে, নিরাপত্তাহীনতার পরিস্থিতি তৈরি হলে অনেকেই তাদের সন্তানদের চিকিৎসাবিজ্ঞানে পড়তে নিরুৎসাহিত করতে পারেন।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চিকিৎসকরা এখনও মানুষের সবচেয়ে বড় ভরসার জায়গা। ভরসার জায়গা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালও। আমরা ফ্লোরে রেখে হলেও রোগীর চিকিৎসা করি, চিকিৎসকরা নিজেদের পকেট থেকে টাকা দিয়ে দরিদ্র রোগীদের চিকিৎসা দেন। অথচ সেই চিকিৎসকদের ওপর হামলা হলো, চেয়ার দিয়ে পেটানো হলো, চিকিৎসকের হাত ভেঙে দেওয়া হলো। তাহলে ভবিষ্যত চিকিৎসকরা কী ম্যাসেজ পাচ্ছেন এখান থেকে? রবিবার ওই ঘটনার সময় আমাদের চিকিৎসকরাই সবচেয়ে ‘ইনসিকিউরড’ ছিলেন।’

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. ওয়াদুদ চৌধুরী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘মারা যাওয়া ওই রোগীর বয়স ছিল ৫২ বছর। হাসপাতালের ভর্তির তিন দিন আগে তার হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল। তিন দিন পর তিনি আউটডোরে আসেন। আসার পর আমাদের চিকিৎসকরা দেখেন, তার ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। তখন তাকে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। একইসঙ্গে তার ফুসফুসে সমস্যা এবং ডায়াবেটিস ছিল। ঘটনার দিন রাউন্ড দিতে গিয়ে ১৫-২০ জন চিকিৎসক নিয়ে আমি ঘটনাক্রমে এই রোগীর পাশেই বেশি সময় দিয়েছি। কারণ রোগীর অবস্থা বেশি খারাপ ছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘রাউন্ড শেষে আমি ক্লাস নিতে যাই। কিছুক্ষণ পর রোগীর স্বজনরা আমার ক্লাসরুমে হামলা করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ওই রোগীর ছেলেদের কথা সিসিইউতে তাদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তাদের কেন ঢুকতে দেওয়া হবে–তারা তো চিকিৎসক নন। এছাড়া, এটি একটি সংরক্ষিত এলাকা।’

ডা. ওয়াদুদ চৌধুরী বলেন, ‘রোগীর মৃত্যুর পর তার স্বজনরা আনসারদের মারধর করেন। চিকিৎসকরা আনসারদের বাঁচাতে গেলে তাদের ওপরও হামলা করে। ওখান থেকেই তারা পাশের ক্লাসরুমে হামলা করে। যেখানে আমি ক্লাস নিচ্ছিলাম। তারা চেয়ার ছুড়ে মারে। আলমারির কাচ ভাঙে। তখন ডা. শামীমুর রহমান আহত হন। তাদের ছোড়া চেয়ারে তার হাত ভেঙে যায়। এরপর সেখান থেকে বের হয়ে তারা জরুরি বিভাগে তাণ্ডব চালিয়েছে।’ ডা. ওয়াদুদ দাবি করেন, ওই রোগীর চিকিৎসায় কোনও অবহেলা ছিল না। বরং হার্ট অ্যাটাক হওয়ার পরও চিকিৎসা না দিয়ে রোগীকে তিন দিন বাসায় রেখে দেওয়ায় তখনই তার  অবস্থা খারাপ হয়ে গিয়েছিল।

 

/এনআই/এএম/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
প্রস্তুত বলী খেলার মঞ্চ, বসেছে মেলা
প্রস্তুত বলী খেলার মঞ্চ, বসেছে মেলা
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
দুই মাসে ব্র্যাক ব্যাংকে আড়াই হাজার কোটি টাকা নিট ডিপোজিট প্রবৃদ্ধি অর্জন 
দুই মাসে ব্র্যাক ব্যাংকে আড়াই হাজার কোটি টাকা নিট ডিপোজিট প্রবৃদ্ধি অর্জন 
গ্যাটকো দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন শুনানি হয়নি
গ্যাটকো দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন শুনানি হয়নি
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
হংকং ও সিঙ্গাপুরে নিষিদ্ধ হলো ভারতের কয়েকটি মসলা
হংকং ও সিঙ্গাপুরে নিষিদ্ধ হলো ভারতের কয়েকটি মসলা