X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

উত্তরায় ফের সক্রিয় ‘কিশোর গ্যাং’

রাফসান জানি
৩১ অক্টোবর ২০১৭, ২০:৪৫আপডেট : ৩১ অক্টোবর ২০১৭, ২০:৫১

নাইন স্টার বয়েজ উত্তরার একটি ফেসবুক পোস্ট রাজধানীর উত্তরায় আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে কিশোরদের গ্যাং। ফেসবুকে চলছে তাদের পাল্টাপাল্টি হুমকি-ধমকি। চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি কিশোর গ্যাং কালাচারের শিকার হয়ে আদনান কবির (১৩) নিহত হওয়ার পর বেশ কয়েক মাস গ্যাংগুলো অনেকটাই নিষ্ক্রিয় ছিল। কিন্তু আগস্টের শেষের দিক থেকে বেশ কয়েকটি গ্রুপ আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে।  নতুনভাবে এই কিশোর গ্যাংগুলো সক্রিয় হলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে এমন কোনও তথ্য নেই। তারা বলছেন, কেউ তাদের কাছে এমন কোনও অভিযোগ করেনি। কেউ অভিযোগ করলে খতিয়ে দেখা হবে।

আদনান হত্যা মামলায় জামিনে মুক্ত ডনের ফেসবুক পোস্ট উত্তরাকেন্দ্রিক ওই গ্যাংগুলোর ফেসবুক গ্রুপে দেখা গেছে, নিজেদের উপস্থিতি জানান দেওয়ার জন্য তারা গ্রুপ ছবি পোস্ট করছে। নিজেদের সমর্থনে ও অন্যদের উদ্দেশ করে ফেসবুক পোস্ট দিচ্ছে। আবার কেউ কেউ ফেসবুক কমেন্টে ‘হুঙ্কার না ছেড়ে সামনাসামনি এসে কথা বলার’ আহ্বান জানাচ্ছে। গত ২৫ সেপ্টেম্বর ‘ডিসকো বয়েজ’ গ্রুপের ফেসবুক পাতায় এক স্ট্যাটাসে বলা হয়েছে, ‘ডিসকো বয়েজ ইজ ইন উত্তরা অ্যাগেইন!!’ স্ট্যাটাসের শেষে চশমা, পিস্তল, ছুরি, হাতবোমা ও সিগারেটের ইমোজি দেওয়া হয়েছে।

১০ অক্টোবর ‘নাইন স্টার বয়েজ উত্তরা’র পেজ থেকে স্ট্যাটাস দেওয়া হয়েছে, ‘হোয়াটস আপ পিপল? গেজ হোয়াট, নাইন স্টার (উই) আর ব্যাক অ্যাগেইন! অল উই ওয়ান্ট ইজ পিস, পিস অলওভার উত্তরা। সো, অলওয়েজ সাপোর্ট দ্যা ট্রুথ অ্যান্ড প্রটেস্ট অ্যাগেইনস্ট দ্যা রং। বি সেফ, স্টে ব্লেসড।’ নিজেদের উপস্থিতি জানান দেওয়া স্ট্যাটাসে শান্তির কথা বললেও এটার কমেন্টে ‘ভি’ চিহ্ন দিয়ে রবিন নামে একজন লিখেছে ‘খেলা হপ্পে’। এর উত্তরে ‘নাইন স্টার বয়েজ উত্তরা’ লিখেছে ‘পুরা দমেই চলবে’।

ডিসকো বয়েজ উত্তরার ফেসবুক পোস্ট
আবার ১০ অক্টোবর আদনান হত্যাকাণ্ডে আটকদের ছবি প্রকাশ করে ‘নাইন স্টার বয়েজ উত্তরা’। ক্যাপশনে লেখা রয়েছে, ‘ইয়ে দোস্তি হাম নেহি তোড়েঙ্গে; ছোড়েঙ্গে দম মাগার তেরা সাথ না ছোড়েঙ্গে’। ১৬ অক্টোবর একই গ্রুপের পেজ থেকে ‘ডিসকো বয়েজ উত্তরা’ গ্রুপকে উদ্দেশ করে লেখা হয়েছে, ‘এলাকার গোলির কুত্তারা মিল্লা বানাইছে এক গ্যাং, তার নাম নাকি আবার Disco।’

১ সেপ্টেম্বর ‘ডিসকো বয়েজ উত্তরা’ তাদের ফেসবুক পেজে একটি স্ট্যাটাসে লিখেছে, ‘**** অ্যান্ড রিপ নাইনস্টার বস্তিবাসিনী। অনলি ডিসকো বয়েজ ইজ কিং।’ ২৪ সেপ্টেম্বর কয়েকটি জাতীয় দৈনিককে ট্যাগ করে একই পেজ থেকে তারা লিখেছে, ‘যেখানে প্রশাসন চুপ-টাকার বিনিময়ে কিনা যায় Police, অন্যায় এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে আসে না কেউ, সেখানে আমরা বাধ্য হয়ে আইন নিজের হাতে তুলে নিলে হয়ে যায় দোষ?’

আদনান হত্যা মামলার আসামি নাফিজ আলম ডন জামিনে রয়েছে। ২৩ সেপ্টেম্বর সে তার ফেসবুক পেজে এক স্ট্যাটাসে লিখেছে, ‘আই ডোন্ট টক মাচ, আই জাস্ট পুল দ্যা ট্রিগার’।

গ্যাং কালচারের শিকার আদনান আদনান হত্যা মামলায় তদন্তের দায়িত্বে থাকা উত্তরা পশ্চিম থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুর রাজ্জাক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জড়িতদের গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না হয় সে লক্ষ্যে আমরা স্কুল কলেজগুলোতে সচেতনতামূলক প্রোগ্রাম নিয়মিত করছি। আশা করি এতে সুফল পাওয়া যাবে।’ উত্তরায় নতুন করে কিশোররা গ্যাং কালচার শুরু করেছে এমন কোনও তথ্য তার কাছে নেই বলেও জানান এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে এমন কোনও তথ্য নেই।’

একই কথা বলেন ডিএমপি উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার জয়দেব কৃষ্ণ ভদ্র। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘উত্তরায় ফের কোনও কিশোর গ্যাং সক্রিয় হচ্ছে কিনা তা আমার জানা নেই। ফেসবুকে এক গ্রুপ আরেক গ্রুপের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক কিছু বলছে বা হুমকি দিচ্ছে বলে কেউ আমার কাছে অভিযোগ করেনি। অভিযোগ করলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেবো।’

জানা গেছে, মূলত কিশোরদের গ্রুপ হলেও এগুলোয় ১৬ থেকে ২৫ বছর বয়সীরাও যুক্ত রয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের র‌্যাগিং, ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করা, মাদক সেবন, ছিনতাইসহ নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িত এসব গ্রুপের সদস্যরা। আধিপত্য বজায় রাখতে প্রায়ই ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া আর মারামারিতে জড়িয়ে পড়তো তারা।

গত ৬ জানুয়ারি প্রতিপক্ষ গ্রুপের সদস্যদের হামলায় মারা যায় আদনান কবির। এ হত্যা মামলায় গ্রেফতারদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, আদনান হত্যাকাণ্ডের আাগে উত্তরার গ্যাংগুলোর মধ্যে কিছু বিষয়ে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৩ জানুয়ারি ডিস্কো বয়েজ গ্রুপ ও বিগবস গ্রুপের সদস্যরা নাইনস্টার গ্রুপের গ্যাং লিডার রাজুকে মারধর করে। দু’দিন পর আজমপুর ফুটওভার ব্রিজের নীচে নাইনস্টার গ্রুপের সদস্যরা বিগবস গ্রুপের গ্যাং লিডার ছোটনকে আক্রমণ করে।

৬ জানুয়ারি সন্ধ্যায় ১৩ নম্বর সেক্টরের ১৭ নম্বর রোডের ১৫ নম্বর বাড়ির সামনে ডিস্কো বয়েজ গ্রুপ ও বিগবস গ্রুপের সদস্যরা নাইনস্টারের আদনান কবিরকে ধারালো অস্ত্র ও হকিস্টিক দিয়ে আঘাত করলে তার মৃত্যু হয়। আসামিদের দাবি, তাদের মূল লক্ষ্য ছিল নাইনস্টার গ্রুপের রাজু।

২০০১ সালের দিকে উত্তরা ও আশেপাশের এলাকায় গড়ে ওঠে ৩০টির মতো ছোট-বড় গ্যাং। এগুলোর মধ্যে কাকরা গ্রুপ, জি ইউনিট গ্রুপ, ব্ল্যাক রোজ গ্রুপ, রনো গ্রুপ, কে নাইট গ্রুপ, ফিফটিন গ্রুপ, ডিসকো বয়েজ গ্রুপ, নাইনস্টার গ্রুপ, নাইন এম এম বয়েজ গ্রুপ, পোটলা বাবু গ্রুপ, সুজন গ্রুপ, আলতাফ গ্রুপ, ক্যাসল বয়েজ গ্রুপ ও ভাইপার গ্রুপ সক্রিয় ছিল। ২০১৫ সালে এই গ্যাংগুলো সংগঠিত হয়ে বৃহৎ আকারে ‘ফিফটিন গ্রুপ’ নামে আত্মপ্রকাশ করে।

/আরজে/এএম/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী