X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকার ২৪ স্কুলের ৫২২ শিক্ষকের বদলি হয় না, নেপথ্যে কোচিং বাণিজ্য

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
০১ নভেম্বর ২০১৭, ১৮:২৪আপডেট : ০১ নভেম্বর ২০১৭, ১৮:৩৭

ঢাকার ২৪ স্কুলের ৫২২ শিক্ষকের বদলি হয় না, নেপথ্যে কোচিং বাণিজ্য রাজধানীর ২৪টি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ৫২২ জন শিক্ষক ১০ থেকে সর্বোচ্চ ৩৩ বছর পর্যন্ত একই বিদ্যালয়ে কর্মরত আছেন। সরকারি নিয়মে এক কর্মস্থলে তিন বছরের বেশি সময় হলে অন্যত্র বদলির নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু চাপ প্রয়োগ, তদবির ও অনৈতিক আর্থিক লেনদেন করে ওই শিক্ষকরা একই বিদ্যালয়ে থাকতে পারছেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
দুদক মনে করে, দীর্ঘদিন একই উচ্চ বিদ্যালয়ে থাকার ফলে এসব শিক্ষক প্রাইভেট পড়ানোর নামে গড়ে তুলেছেন কোচিং বাণিজ্য। ছাত্রছাত্রীরা প্রাইভেট পড়তে বাধ্য হয় এমন পরিস্থিতি তৈরি করেছেন তারা।


২০১৬ সালের শেষের দিকে ঢাকার নামি-দামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি, কোচিং ও নিয়োগ বাণিজ্যের নামে কোটি কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ আসে দুদকে। এ বিষয়ে তদন্তের জন্য দুদক পরিচালক মীর মো. জয়নুল আবেদীন শিবলীর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি বিশেষ টিম গঠন করা হয়। এ বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেদন জমা দেন তারা। যদিও ভর্তি বাণিজ্যের কোনও তথ্য পায়নি দুদক টিম।
এরই মধ্যে অন্য আরেকটি অভিযোগ আসে দুদকে। এতে বলা হয়, বিভিন্ন সরকারি স্কুলে কতিপয় শিক্ষক সিন্ডিকেট বানিয়ে সরকারি নীতিমালার তোয়াক্কা না করে ২০-২৫ বছর একই স্থানে কর্মরত আছেন। এমনকি সেখানে প্রাইভেট পড়ানোর নামে কোচিং বাণিজ্য পরিচালনা করছেন তারা।
এই অভিযোগেরও তদন্ত করার দায়িত্ব পায় দুদক পরিচালক মীর মো. জয়নুল আবেদীন শিবলীর একই টিম। কোচিং বাণিজ্য ও শিক্ষকদের বদলি না হওয়া নিয়ে তাদের প্রতিবেদন কমিশনে জমা দেওয়া হয় বুধবার (১ নভেম্বর)। এতে উঠে এসেছে এসব অনিয়মের চিত্র।


অভিযোগ প্রসঙ্গে দুদকের তদন্ত দলকে শিক্ষা প্রশাসন জানিয়েছে— সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী একই কর্মস্থলে তিন বছরের বেশি সময় থাকলে অন্যত্র বদলির নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু তদবির ও অনৈতিক আর্থিক লেনদেনের কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। কিছু শিক্ষক কোচিং বা প্রাইভেট বাণিজ্যের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের অনৈতিক সুবিধা দিয়ে বছরের পর বছর ঢাকার একই বিদ্যালয়ে অবস্থান করছেন। একই কর্মস্থলে থাকতে পারায় প্রাইভেট পড়ানোর নামে এসব শিক্ষকের হাত ধরে গড়ে উঠেছে কোচিং বাণিজ্য।
দুদক কর্মকর্তাদের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে— রাজধানীর গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুল, মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়, ধানমন্ডি গভর্নমেন্ট বয়েজ হাইস্কুল, শেরে বাংলা সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়, গণভবন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, ধানমন্ডি কামরুন্নেসা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, খিলগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়সহ ২৪টি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ৫২২ জন শিক্ষক রয়েছেন, যারা ১০ থেকে সর্বোচ্চ ৩৩ বছর পর্যন্ত একই বিদ্যালয়ে কর্মরত আছেন। এসব শিক্ষককে সরকারি নীতিমালা/নির্দেশিকা অনুযায়ী বদলি করা হয়নি বা হচ্ছে না।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, কোনও কোনও বিদ্যালয়ে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ইংরেজি ও গণিত শিক্ষক আছে। আবার কোনও কোনও বিদ্যালয়ে এ দুটি বিষয়ে শিক্ষক ঘাটতি রয়েছে। কোনও ধরনের সমন্বয় না থাকায় এমন হচ্ছে। এর মূলে রয়েছে কোচিং বাণিজ্য ও সিন্ডিকেট। এই প্রাইভেট বা কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করার জন্য দুদক তদন্ত দলের প্রতিবেদনে বেশকিছু সুপারিশ করা হয়েছে।

সুপারিশের মধ্যে রয়েছে:
* যেসব শিক্ষক ১০ বছর বা ততধিক সময় একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন তাদেরকে বিভাগের বাইরে বদলি করা।
* পাঁচ বছরের বেশি সময় কর্মরত শিক্ষকদের ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরে বদলি নিশ্চিত করা।
* যেসব শিক্ষক তিন বছরের বেশি সময় একই বিদ্যালয়ে কর্মরত আছেন তাদের অন্যত্র বদলি নিশ্চিত করা ইত্যাদি।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, দেশের সাত জন জেলা শিক্ষা অফিসারকে বিভিন্ন বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পদে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাদের বদলি করে জেলা শিক্ষা অফিসার হিসেবে বদলি নিশ্চিতের পাশাপাশি ভবিষ্যতে এ জাতীয় কর্মকর্তাদের প্রধান শিক্ষক হিসেবে পদায়ন না করতে সুপারিশ রাখা হয়।

এ প্রসঙ্গে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের ভাষ্য, ‘প্রতিবেদনটি কমিশনের কর্মকর্তা পর্যায়ে জমা হয়েছে বলে শুনেছি। এটি এখনও কমিশনে আসেনি। কমিশনে উপস্থাপিত হলে পূর্ণাঙ্গ পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

মেধাবী শিক্ষক থাকতেও কেন শ্রেণিকক্ষের শিক্ষা চলে যাচ্ছে কোচিং সেন্টারে, এমন প্রশ্ন তুলেছেন দুদক চেয়ারম্যান। তার মতে, শ্রেণিকক্ষের শিক্ষা শ্রেণিকক্ষেই নিশ্চিত করা প্রয়োজন। তিনি বলেছেন, ‘ঢাকার প্রায় প্রতিটি বিদ্যালয়ে সুন্দর ভবন আছে। বছরের শুরুতেই শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছে যাচ্ছে। আছে অন্যান্য শিক্ষা উপকরণ। সুতরাং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শিক্ষা নিয়ে খেলার অধিকার নেই কারও। এক্ষেত্রে আমাদের সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।’

/আরজে/জেএইচ/
সম্পর্কিত
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের
এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের সময় বেড়েছে
দারুল ইহসানের বৈধ সনদধারীদের এমপিওতে বাধা নেই
সর্বশেষ খবর
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
টিভিতে আজকের খেলা (২৫ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২৫ এপ্রিল, ২০২৪)
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী