ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) সদ্য নিযুক্ত প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানীকে শারীরিকভাবে আক্রমণ করেছেন সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জামাল উদ্দীন। এই অভিযোগে তার শাস্তির দাবিতে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমাজ’ এর ব্যানারে সোমবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে মানববন্ধন করেছেন ঢাবি শিক্ষকরা। অন্যদিকে, জামাল উদ্দীনকে আঘাত করার ঘটনায় গোলাম রব্বানীকে দোষী অভিযোগ করে রবিবার (৫ নভেম্বর) শাস্তির দাবিতে মানবন্ধন করেছেন ঢাবি শিক্ষকদের আরেক অংশ ।
দুটি মানবন্ধনই বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে অনুষ্ঠিত হয়।
সোমবারের মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সরকার সমর্থক সংগঠন (নীল দল) এর সাবেক আহ্বায়ক অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ। তিনি বলেন,‘বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর রাষ্ট্রপতি উপাচার্য হিসেবে অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামানকে নিয়োগ দিয়েছেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়কে সঠিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডও ঠিকঠাক চলছে। কিন্তু একটি মহল পরিকল্পিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষকদের মধ্যে দ্বিমত থাকবে তবে শিক্ষার উন্নয়নে মান সমুন্নত রাখতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’
শিক্ষক রব্বানীকে যারা আঘাত করেছেন এবং ওই দিনের ঘটনায় যারা মিথ্যাচার করেছেন, তাদের প্রতি নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘রব্বানীকে যারা আঘাত করেছেন তাদের শাস্তির দাবি করছি। এছাড়া, গণমাধ্যমে সব বিষয়ে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করার আহ্বান করছি।’
কিছু কিছু গণমাধ্যম ঘটনাটি নিয়ে মিথ্যাচার করছে উল্লেখ করে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলেন,‘নীল দলের সভায় যে ঘটনাটি ঘটেছে তা অনাকাঙ্ক্ষিত। সভায় বির্তক থাকবেই এটি স্বাভাবিক। কিন্তু সেটিকে সুন্দরভাবে পরিবেশন করতে হবে। কিন্তু সেদিনের ঘটনা নিয়ে মিথ্যাচার করা হচ্ছে।’
মানববন্ধন সঞ্চালনা করেন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির।
অন্যদিকে গতকাল রবিবার অধ্যাপক জামাল উদ্দিনের ওপর হামলার প্রতিবাদে গোলাম রব্বানীর শাস্তির দাবিতে মানববন্ধনে অংশ নেন আরেক দল শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন নীল দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. আবদুল আজিজ, শিক্ষক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক ড. এ জে এম শফিউল আলম ভুঁইয়া, সিনেট সদস্য অধ্যাপক ড. এ কে এম জামাল উদ্দিন, সাবেক প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ এম আমজাদ প্রমুখ।
প্রক্টর গোলাম রব্বানীকে দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়ে অধ্যাপক জামাল উদ্দীন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বশীল পদে থেকে প্রক্টর অধ্যাপক রব্বানী এ ধরনের প্রোগ্রামে অংশ নিয়ে বক্তব্য রাখতে পারেন না। তাকে এ ঘটনার দায়িত্ব নিয়ে পদত্যাগ করার আহ্বান করছি। না হলে আমরা আন্দোলন অব্যাহত রাখব।’
ঢাবিতে সাবেক ও বর্তমান উপাচার্যপন্থী বলতে কিছু নেই বলে মনে করেন অধ্যাপক ড. এ জে এম শফিউল আলম ভূঁইয়া। তিনি বলেন,‘উপাচার্য আসবেন আবার যাবেন। এটি সরকারের ওপর নির্ভর করে যে, কাকে নিয়োগ দেবে। উপাচার্য পরিবর্তনকে কেন্দ্র করে একটি পক্ষ যেভাবে ক্ষমতার আস্ফালন ও ক্ষমতা বিস্তারের চেষ্টা করছে, তা জাতিকে লজ্জিত করছে।’
নীল দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক আবদুল আজিজ বলেন, ‘এ ধরনের মানববন্ধনে দাঁড়ানো আমাদের জন্য লজ্জার ব্যাপার। সমাজ আমাদের (শিক্ষক) সম্মানের স্থানে বসিয়েছে। কিন্তু আমরাই একে প্রশ্নবিদ্ধ করছি। তাই উপাচার্যকে বলবো, যাতে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনও অপরাধীদের আশ্রয় না দেন।’ তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ারও আহ্বান জানান তিনি।