X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

আইডিয়ালে নিয়োগ: নিজের প্রশ্নে পরীক্ষা নিতে বাধ্য করেন ডিজির প্রতিনিধি

এস এম আববাস
১১ নভেম্বর ২০১৭, ২১:১৭আপডেট : ১২ নভেম্বর ২০১৭, ০৩:৫৩

বিতর্কিত নিয়োগ পরীক্ষার পর অধ্যক্ষ ও অভিভাবকদের দুটি আবেদন রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগে এককভাবে নিজের তৈরি করা প্রশ্নে পরীক্ষা নিতে বাধ্য করেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) মহাপরিচালকের (ডিজি) প্রতিনিধি। নিয়োগ উপকমিটির আপত্তি সত্ত্বেও পছন্দের প্রার্থীকে নিতেই এ কাজ করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এ বিষয়ে মাউশির ডিজি ড. এস এম ওয়াহিদুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ দুর্নীতিবাজ শিক্ষককে কেন প্রতিনিধি নিয়োগ দেওয়া হলো জানতে চাইলে ডিজি বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানের চাহিদামতোই প্রতিনিধি নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে। বিষয়টি আমি দেখছি।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ২৮ অক্টোবর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেন ৩৫ জন প্রার্থী। কিন্তু পরীক্ষা শুরুর আগে প্রশ্নপত্র নিয়ে অভিযোগ ওঠে। ডিজির প্রতিনিধি বাসা থেকে একটি প্রশ্নপত্র তৈরি করে এনে তা দিয়ে পরীক্ষা নিতে নিয়োগ উপকমিটিকে চাপ দিলে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

৩১ অক্টোবর ‘মতিঝিল আইডিয়ালের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা হয়েছে ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই’ শিরোনামে একটি খবর প্রকাশিত হয়।

এ ঘটনায় পরীক্ষার দিনই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ড. শাহান আরা ওইদিনই গভর্নিং বডির সভাপতির কাছে লিখিত আবেদন করেন। প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ ও বিতর্কের বিষয়টি জানিয়ে নতুন করে পরীক্ষা নেওয়ারও প্রস্তাব করেন তিনি।

আবেদনে বলা হয়, ‘সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগের জন্য গভর্নিং বডির সভা অনুষ্ঠিত হয় গত ১৪ অক্টোবর। ওইদিন লিখিত পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করা হয়। ডিজির প্রতিনিধি হিসেবে মতিঝিল সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাজমুন নাহার শাহীনকে চাওয়া হয়। পরদিন ১৫ অক্টোবর নাজমুন নাহার শাহীন অপারগতা প্রকাশ করেন। এরপর প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে চাওয়া হয় মাধ্যমিক থানা শিক্ষা কর্মকর্তাকে। কিন্তু মাউশির পক্ষ থেকে প্রতিনিধি নিয়োগ দেওয়া হয় ধানমন্ডি গভঃ বয়েজ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. ইনছান আলীকে।’

সূত্র জানায়, ইনছান আলীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় এই নিয়োগ পরীক্ষার কয়েকদিন আগেই বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেয় মন্ত্রণালয়। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের উপসচিব আবু আলী মো. সাজ্জাদ হোসেন স্বাক্ষরিত পত্রে গত ১৮ অক্টোবর তাকে ঢাকার বাইরে বদলিরও নির্দেশ দেওয়া হয়।

পরীক্ষা প্রশ্নবিদ্ধ উল্লেখ করে আবারও পরীক্ষা নিতে অধ্যক্ষের দেওয়া লিখিত প্রস্তাবে জানানো হয়, ‘নিয়োগ উপ-কমিটির এক সভায় সিদ্ধান্ত হয়, পরীক্ষার দিন সকালে সবার মোবাইল ফোন বন্ধ রেখে সমন্বিতভাবে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করা হবে।’

পরীক্ষার নির্ধারিত দিন ২৮ অক্টোবর গভর্নিং বডির সভাপতি ও নিয়োগ উপ-কমিটির আহ্বায়ক যৌথভাবে প্রশ্ন তৈরির উদ্যোগ নিলে ডিজির প্রতিনিধি মো. ইনছান আলী আপত্তি জানান। তিনি জানান, একটি প্রশ্ন তৈরি করে আনা হয়েছে, ওই প্রশ্নেই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এই প্রস্তাব নাকচ করে দেন নিয়োগ উপ-কমিটির আহ্বায়ক ও সদস্য থানা শিক্ষা অফিসারসহ অন্যরা সদস্যরা। আহ্বায়ক বলেন, ‘বাসা থেকে তৈরি করে আনা প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নেওয়া গ্রহণযোগ্য নয়।’

এ অবস্থায় ডিজির প্রতিনিধি মো. ইনছান আলী কমিটির অন্য সদস্যদের বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তাকে এভাবে প্রশ্ন করতে বলেছেন। এ প্রশ্নে পরীক্ষা না নিলে তিনি চলে যাবেন।’ এ সময় তিনি নিয়োগ উপ-কমিটির আহ্বায়ক, প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ও সদস্য সচিব, থানা শিক্ষা অফিসারসহ অন্যদের সঙ্গে ‘অসঙ্গত আচরণ’ করেন বলে উল্লেখ করেন অধ্যক্ষ ড. শাহান আরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, পরীক্ষার দিন সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে প্রার্থীদের পরীক্ষা হলে পাঠানো হলেও তখনও নতুন প্রশ্ন তৈরি করা সম্ভব হয়নি। এ অবস্থায় বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। বিশৃঙ্খল অবস্থা, উত্তেজনা ও পরীক্ষার প্রশ্নপত্র নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দিতে ডিজির প্রতিনিধির প্রশ্নপত্রেই পরীক্ষা শুরু হয়।

এসব কারণে পরীক্ষার পর নতুন করে পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে গভর্নিং বডিকে লিখিত প্রস্তাব দেন অধ্যক্ষ। তার প্রস্তাবে জানানো হয়, ‘কলেজ কর্তৃপক্ষকে বাধ্য করা, সরকারের সিনিয়র কর্মকর্তা, অধ্যক্ষ, প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র সদস্যের মনে সন্দেহ তৈরি করেছে যে, তার (ডিজির প্রতিনিধি) আচরণ অভিসন্ধিমূলক এবং পরীক্ষা গ্রহণ প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।’

অভিযোগের বিষয়ে ধানমন্ডি গভঃ বয়েজ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ইনছান আলী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি এককভাবে প্রশ্ন করিনি। মিথ্যা বলে সম্মানহানি করা হচ্ছে। আমি, অধ্যক্ষ ও শিক্ষা অফিসারসহ তিনজনের প্রশ্ন সমন্বয় করে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। সেই পরীক্ষার পর এখনও মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়নি। এই পরীক্ষাকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগে অধ্যক্ষ, কমিটির একটি অংশ এবং ডিজির প্রতিনিধির পছন্দ আলাদা। নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি নিয়েই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

 আরও পড়ুন:

মতিঝিল আইডিয়ালের ভুয়া শিক্ষকের তালিকা চেয়েছে মন্ত্রণালয়

/এএম/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
কাপ্তাই হ্রদে পানি স্বল্পতায় কমেছে বিদ্যুৎ উৎপাদন
কাপ্তাই হ্রদে পানি স্বল্পতায় কমেছে বিদ্যুৎ উৎপাদন
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
মৌলভীবাজারে ৬ জনের মৃত্যুর ঘটনা মর্মান্তিক: মানবাধিকার কমিশন
মৌলভীবাজারে ৬ জনের মৃত্যুর ঘটনা মর্মান্তিক: মানবাধিকার কমিশন
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে শ্রমিকদের বিক্ষোভ
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে শ্রমিকদের বিক্ষোভ
সর্বাধিক পঠিত
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি