দেশি-বিদেশি সাহিত্যিকদের মিলনমেলা ‘ঢাকা লিট ফেস্ট’-এর সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ১৬ নভেম্বর বাংলা একাডেমি চত্বরে বসবে এ উৎসব। ২৪ দেশের দুই শতাধিক সাহিত্যিক অংশ নিচ্ছেন এই আয়োজনে। এটি চলবে ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত। রবিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান ঢাকা লিট ফেস্ট- এর আয়োজকরা।
বাংলা একাডেমির শহীদ মুনীর চৌধুরী সভাকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, ঢাকা লিট ফেস্টের পরিচালক সাদাফ সায্, আহসান আকবর। সে সময় আরও উপস্থিত ছিলেন, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মসিউর রহমান, টাইটেল স্পন্সর বাংলা ট্রিবিউনের সম্পাদক জুলফিকার রাসেল, ঢাকা ট্রিবিউনের সাহিত্য সম্পাদক রিফাত মুনেম, কি স্পন্সর ব্র্যাক ব্যাংকের হেড অব কমিউনিকেশন জারা মাহবুব প্রমুখ।
ঢাকা লিট ফেস্টের পরিচালক সাদাফ সায্ সবাইকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, এবার দেশের বাইরে থেকে ৭৫ জন লেখক, গবেষক এবং চিন্তাবিদ অংশ নিচ্ছেন। বাংলাদেশ থেকে অংশ নিচ্ছেন দেড় শতাধিক লেখক, গবেষক, শিক্ষক, পারফরমার। সবার জন্য উন্মুক্ত এই আয়োজনে তিনি সবাইকে আমন্ত্রণ জানান। তিনি বলেন, ‘আমাদের বরাবরের প্রচেষ্টা ছিল দেশীয় ঐতিহ্যকে তুলে ধরা। এরই অংশ হিসেবে এবার থাকছে মেয়েদের লাঠি খেলা, কবি গান, মনিপুরী ঢোলসহ নানা আয়োজন। লিট ফেস্ট যেমন একদিকে বিশ্ব সাহিত্যের সঙ্গে বাংলাদেশকে পরিচয় করে দেওয়া, তেমনি নিজেদের ঐতিহ্যকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরা।’
তিনি আরও বলেন, এবারের লিট ফেস্টে আলোচনা, পারফরম্যান্সসহ নানা আয়োজনে সেশন থাকছে ৯০টির বেশি।
সাদাফ বলেন, ‘এই উৎসব শুধু বড়দের জন্য নয়। শিশুদের জন্যও রয়েছে নানা সেশন। শিশুদের স্বপ্ন দেখানোর একটি জায়গা তৈরির লক্ষ্যেই লিট ফেস্ট কাজ করে যাচ্ছে।’
ঢাকা লিট ফেস্টের আরেক পরিচালক আহসান আকবর বলেন, ‘বিদেশি অতিথিদের প্রায় সবারই বাংলাদেশে আসার আগ্রহ রয়েছে। কিন্তু উপলক্ষ ছিল না। ঢাকা লিট ফেস্টকে তারা একটি সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করেছেন। তারা এখানে বাংলাদেশের সাহিত্যিক ও লেখকদের সঙ্গে নিজেদের মনের কথা বলবেন।’
তিনি উল্লেখ করেন, বিশ্বখ্যাত আরব কবি সিরিয়ান বংশোদ্ভূত আদোনিস আসছেন তার কবিতা নিয়ে একটি সেশনে অংশ নিতে। ঢাকা লিটফেস্টের উদ্বোধনে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের সঙ্গে তিনিও থাকছেন। উইলিয়াম ডালরিম্পল আসছেন কোহিনূর নিয়ে একটি সেশন করতে। অস্কার বিজয়ী অভিনেত্রী টিলডা সুইন্টোন আসছেন লেখক বন্ধু জন বার্জারকে স্মরণ করতে। আহসান আকবর আরও জানান, বিশ্বখ্যাত সাহিত্য ম্যাগাজিন গ্রান্টার সম্পাদক আসছেন তাদের পত্রিকার একটি মোড়ক উন্মোচন করতে। তিনি আরও বলেন, পদ্মশ্রী পুরস্কার প্রাপ্ত নবনীতা দেবসেন আসছেন তার সাহিত্য জীবন নিয়ে আলোচনা করতে। উপন্যাসিক ডেভিড হেয়ার, বুকার জয়ী বেন ওক্রিসহ অসংখ্য ব্যক্তি আসছেন বাংলাদেশের সঙ্গে নিজেদের সাহিত্যকর্ম তুলে ধরতে।
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ঢাকা লিট ফেস্টের আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান এ ধরনের বিশাল আয়োজন করার জন্য। বাংলাদেশের সংস্কৃতির সঙ্গে বিশ্বের লেখক, অভিনেতা, গবেষকদের পরিচয় করিয়ে দেওয়ার যে প্রয়াস তার জন্য তিনি লিট ফেস্টের তরুণ পরিচালকদের সাধুবাদ জানান। তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান, দেশ-বিদেশের জন্য খবর প্রকাশের পাশাপাশি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের লোকদেরও এই উৎসবের কথা জানিয়ে দিতে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের গবেষণা, সাহিত্যকর্মের প্রচার-প্রসারের ঘাটতি রয়েছে। এ ধরনের আয়োজনে সেই ঘাটতি পূরণ হতে পারে।’
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মসিউর রহমান বলেন, ‘ঢাকা লিট ফেস্ট বাংলদেশের সংস্কৃতির সঙ্গে বৈশ্বিক সংস্কৃতির একটি যোগসূত্র তৈরি করেছে। অপরাধমুক্ত দেশ গড়তে সংস্কৃতির প্রসারের কোনও বিকল্প নেই।’ তিনি এই আয়োজনের জন্য বাংলা একাডেমি এবং আয়োজকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
বাংলা ট্রিবিউনের সম্পাদক জুলফিকার রাসেল সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘এরইমধ্যে লিট ফেস্টের ব্যাপ্তি সম্পর্কে আপনাদের ধারণা হয়েছে। এ ধরনের আয়োজনে টাইটেল স্পন্সর হিসেবে যুক্ত হতে পেরে বাংলা ট্রিবিউন গর্বিত।’
ঢাকা ট্রিবিউনের সাহিত্য সম্পাদক রিফাত মুনিম বলেন, ‘এটিকে শুধু ইংরেজি ভাষা-ভাষীদের বা বিদেশি সাহিত্যিকদের আয়োজন ভাবার কোনও কারণ নেই। এটি বাংলাকে তুলে ধরারও একটি আয়োজন।’
এই ব্যস্ত নগরে এরকম একটি শান্তিপূর্ণ আয়োজনের জন্য আয়োজকদের অভিনন্দন জানান কি স্পন্সর ব্র্যাক ব্যাংকের কমিউনিকেশন হেড জারা মাহবুব। তিনি বলেন, ‘ব্র্যাক ব্যাংক সবসময় এ ধরনের আয়োজনের সঙ্গে থাকে। ব্র্যাক ব্যাংক এই আয়োজনে থাকতে পেরে সবার প্রতি কৃতজ্ঞ।’
উল্লেখ্য, ঢাকা লিট ফেস্ট-২০১৭ এ অংশগ্রহণকারীদের তালিকা ইতোমধ্যে লিট ফেস্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। বিদেশি অতিথিদের মধ্যে এবার অংশ নেবেন সিরিয়ার কবি আদোনিস, নাইজেরিয়ার সাহিত্যিক বেন ওক্রি, অভিনেত্রী টিল্ডা সুইন্টন, মার্কিন সাহিত্যিক লিওনেল শ্রিভার, পদ্মশ্রী পুরস্কারপ্রাপ্ত ভারতীয় কথাসাহিত্যিক নবনীতা দেব সেন, কথাসাহিত্যিক উইলিয়াম ড্যালরিম্পেল, লেখক এসথার ফ্রয়েড প্রমুখ।
বাংলাদেশ থেকে সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, মঈনুল আহসান সাবের, আলী যাকের, সেলিনা হোসেন, শামসুজ্জামান খান, আনোয়ারা সৈয়দ হক, আসাদ চৌধুরী, আনিসুল হক, সলিমুল্লাহ খান, কায়সার হক, খাদেমুল ইসলামসহ দেড় শতাধিক সাহিত্য ব্যক্তিত্ব থাকবেন।
এবার প্রথমবারের মতো ব্রিটিশ সাহিত্য জার্নাল গ্রান্টার মোড়ক উন্মোচন হবে লিট ফেস্ট প্রাঙ্গণে।
সম্ভাব্য সেশনের আনুষ্ঠানিক তালিকা ইতোমধ্যেই লিট ফেস্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ ও এসব দেশের লেখকদের ইংরেজি ভাষায় লেখা বা অনুবাদ করা সাহিত্যের সম্মানজনক ডিএসসি পুরস্কার ঘোষণা করা হবে লিট ফেস্ট প্রাঙ্গণে। বাংলাদেশে সাহিত্য জগতে স্বনামধন্য ‘জেমকন সাহিত্য পুরস্কার’ লিট ফেস্টের প্রথম দিনে ঘোষণা করা হবে।
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় এই আয়োজন পরিচালনা করছেন কথাসাহিত্যিক এবং বাংলা ট্রিবিউন ও ঢাকা ট্রিবিউনের প্রকাশক কাজী আনিস আহমেদ, কবি সাদাফ সায্ সিদ্দিকী ও কবি আহসান আকবর। ঢাকা লিট ফেস্টের টাইটেল স্পন্সর হিসেবে থাকছে বাংলা ট্রিবিউন ও ঢাকা ট্রিবিউন, কি স্পন্সর হিসেবে থাকছে ব্র্যাক ব্যাংক। প্লাটিনাম স্পন্সর হিসেবে থাকছে এনার্জিস, গোল্ড স্পন্সর মীনা বাজার, প্রিমিয়ার পার্টনার ইন্ডিয়ান হাইকমিশন, স্ট্রাটেজিক পার্টনার ব্রিটিশ কাউন্সিল এবং পুরো আয়োজনের দায়িত্বে রয়েছে যাত্রিক। ঢাকা লিট ফেস্টে অংশগ্রহণের জন্য রেজিস্ট্রেশন চলছে এই ঠিকানায় www.dhakalitfest.com.
