X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় র‌্যাংকিং: গবেষকদের চোখে সময়োপযোগী ও ইতিবাচক

রশিদ আল রুহানী
১৪ নভেম্বর ২০১৭, ১৪:০০আপডেট : ১৪ নভেম্বর ২০১৭, ১৫:৪৭

(বাঁ থেকে) ড. খুরশিদ আলম, আব্দুল মান্নান, ড. এম সেকান্দার হায়াত খান, ড. মো. অহিদুজ্জামান ও সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউন ও ঢাকা ট্রিবিউনের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর র‌্যাংকিংয়ের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন দেশের প্রখ্যাত গবেষকরা। তারা এ উদ্যোগকে সময়োপযোগী ও ইতিবাচক মন্তব্য করে সাধুবাদ জানিয়েছেন।

র‌্যাংকিংটি তৈরিতে সহায়তা করেছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওআরজি কোয়েস্ট রিসার্চ লিমিটেড। কিছু ভুল-ত্রুটি বাদ দিলে সার্বিকভাবে এই গবেষণা সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ হয়েছে বলে মন্তব্য গবেষকদের। তাদের মতে, যে কোনও গবেষণাই শতভাগ নির্ভুল হয় না।

দেশে এ ধরনের উদ্যোগ শুরু হওয়ায় সাধু্বাদ জানানো উচিত বলে মন্তব্য করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক এবং নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. অহিদুজ্জামান। বাংলা ট্রিবিউন ও ঢাকা ট্রিবিউনকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘একটি দেশের উন্নয়নে গণমাধ্যমের অনেক ভূমিকা থাকে। আমি মনে করি, বাংলা ট্রিবিউন ও ঢাকা ট্রিবিউন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের র‌্যাংকিং প্রকাশ করে এক যুগান্তকরী কাজ করেছে। আর এটি এত সহজও নয়।’

এই অধ্যাপকের আশা, আগামীতে এমন আরও ভালো গবেষণা হবে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপরও র‌্যাংকিং করার উদ্যোগ নিতে পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। গবেষণার মেথড ও এর ফাইন্ডিংস প্রসঙ্গে ড. মো. অহিদুজ্জামান বলেছেন, ‘গবেষণার প্রধান যে দুটি সূচক ব্যবহার করা হয়েছে, অনেকাংশেই এর পদ্ধতিগত দিক সঠিক আছে। ফ্যাকচুয়াল ও পারসেপচুয়াল ডাটাগুলোর ক্ষেত্রে স্কোরিংও সঠিক বলে মনে হয়েছে আমার। তবে যে কোনও গবেষণার ক্ষেত্রেই কিছু না কিছু ত্রুটি থাকে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর চালানো এই গবেষণায়ও ত্রুটি থাকা অস্বাভাবিক নয়।’

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নানও এ উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন। তার কথায়, ‘বাংলাদেশে এবারই প্রথম কেউ এ ধরনের র‌্যাংকিং করলো। তাই আশা করি সবাই এটাকে ইতিবাচকভাবে নেবেন। এটা ভালো একটি কাজ। আমরা আশা করি, এই উদ্যোগ প্রশংসিত হবে। কিছু জায়গায় ভুল-ত্রুটি থাকবেই। তারপরও এ ধরনের কাজ বারবার হওয়া দরকার। এতে করে দেশে শিক্ষার মান যেমন বাড়তে পারে, তেমনই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশকে আরও উঁচুতে তুলে ধরতে তা সহায়ক হবে।’

চাকরিদাতারা এখন নিয়োগের সময় এ ধরনের র‌্যাংকিংও বিবেচনায় নেবে বলে আশা ইউজিসি চেয়ারম্যানের। তিনি আরও বলেন, ‘অনেক দেশেই এমন হয়ে থাকে। এই র‌্যাংকিংয়ে দেশের সবচেয়ে পুরনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি রয়েছে ওপরের দিকে। আবার নর্থ সাউথের অনেক পরে প্রতিষ্ঠিত হলেও ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি র‌্যাংকিংয়ে ওপরের দিকে উঠে এসেছে। এটাকে আমার কাছে ইতিবাচক মনে হয়েছে। বয়সের দিক দিয়ে নতুন হলেও বেশকিছু বিশ্ববিদ্যালয় দেখাতে সক্ষম হয়েছে যে তারাও ভালো করছে। দেশে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ই অনেক আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমার মনে হয়, তারাও এখন উপলব্ধি করবে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠিত হয়ে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা করানোই যথেষ্ট নয়।’

এমন গবেষণাকে যুগান্তকারী উদ্যোগ হিসেবে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান গবেষণা ও শিক্ষণ ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক ড. এম সেকান্দার হায়াত খান। তিনি বলেন, ‘যে কোনও গবেষণা শতভাগ নির্ভুল করা কঠিন। এজন্য সময়, অর্থ ও অভিজ্ঞ জনবল প্রয়োজন।’

ড. এম সেকান্দার হায়াত খান আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের র‌্যাংকিং করা হয় সাধারণত শিক্ষার গুণগত মানের কথা ভেবে। আর এটি নির্ভর করে বেশকিছু বিষয়ের ওপর। প্রথমত যে দুটি সূচক নিয়ে গবেষণাটি এগিয়ে গেছে তা হলো ফ্যাকচুয়াল ডাটা ও পারসেপচুয়াল ডাটা। এই দুটি সূচক নির্ধারণের কারণেই একটি গবেষণার ফলে অনেক পার্থক্য এসে যেতে পারে। ফ্যাকচুয়াল ডাটা নেওয়া হয়েছে ইউজিসির বার্ষিক রিপোর্ট থেকে। কিন্তু যতদূর জানি, ইউজিসির এই ডাটা অনেক ক্ষেত্রেই সঠিক নয়। কারণ ইউজিসিকে সঠিক তথ্য দিতে চায় না বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। তবে গবেষণায় সেটা পরীক্ষা করা হলে আরও ভালো তথ্য পাওয়া সম্ভব হতো। এছাড়া পারসেপচুয়ালের ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের মন্তব্য নেওয়া যেতো। কারণ আমরাও বুঝি কোন বিশ্ববিদ্যালয় ভালো, কোনটা মন্দ।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান নির্ধারণে বেশকিছু বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে জানিয়েছেন ঢাবি পরিসংখ্যান গবেষণা ও শিক্ষণ ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক। যেমন, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ও অস্থায়ী ক্যাম্পাস, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সংখ্যা ও তাদের অনুপাত, শিক্ষার্থীদের ভর্তি পরীক্ষা ও গ্র্যাজুয়েশনের ফল, শিক্ষকদের পিএইচডি ডিগ্রী। এমন অনেক কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের গুণগত মান নির্ধারণ করে দেয় বলে মন্তব্য তার। তিনি বলেন, ‘গবেষণায় যদি এ বিষয়গুলো ঠিকঠাক এসে থাকে তাহলে এটি সঠিক হয়েছে বলেই মনে করি।’

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল রিসার্চ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ও গবেষক অধ্যাপক ড. খুরশিদ আলম বলেন, ‘দেশে এমন গবেষণা বারবার হওয়া প্রয়োজন। এতে করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা তৈরি হবে। তারা শিক্ষার মানকে আরও উঁচুতে নেওয়ার জন্য চেষ্টা করবে। পাশাপাশি এ ধরনের গবেষণার সুবাদে সাধারণ পাঠকের কাছে বাংলা ট্রিবিউন ও ঢাকা ট্রিবিউনের গ্রহণযোগ্যতা আরও বেড়ে যাবে।’

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর র‌্যাংকিং করতে গবেষণায় যেসব সূচক ও মেথড নির্ধারণ করা হয়েছে তা সঠিক মনে করছেন এই গবেষক। তার কথায়, ‘সূচক ও উপসূচকগুলোতে স্কোরিং করার বিষয়ে সতর্ক থাকা প্রয়োজন ছিল। যেমন গবেষণায় পারসেপশনকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পারসেপশনকে একটু কম গুরুত্ব দিয়ে ফ্যাকচুয়ালকে প্রাধান্য দেওয়া প্রয়োজন।’

একই বিশ্ববিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক ও স্থায়ী শিক্ষকের স্কোরিংয়ের ক্ষেত্রে পার্থক্যটা আরেকটু বেশি হতে পারতো বলে মন্তব্য অধ্যাপক ড. খুরশিদ আলমের। তার ভাষ্য, ‘শিক্ষার্থী-শিক্ষকের সংখ্যা ও বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত, পিএইচডি ও নন পিএইচডি শিক্ষকের স্কোরিংটাও ভাবার সুযোগ করে দেয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গবেষণার মান কেমন তার ওপর স্কোরিংটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। যেমন আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পর্যায়ের গবেষণায় কখনও একই স্কোরিং করা যাবে না। এভাবে আরও সুক্ষভাবে স্কোরিংটা করলে হয়তো আগামীতে আরও ভালো ফল পাওয়া যাবে।’
এই র‌্যাংকিং প্রজেক্ট পরিচালিত হয়েছে একটি উপদেষ্টা কমিটির তত্ত্বাবধানে। এর অন্যতম সদস্য ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘দেশের বাইরে কিভাবে কোন সূচকে র‌্যাংকিং করা হয় ও স্কোরিংটা কেমন রাখা হয়, সেগুলো মাথায় রেখে আমরা এই গবেষণা করেছি। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। তাদের নিয়ে কয়েকটি ওয়ার্কশপও হয়েছে। তারপর আমরা গবেষণাটি পরিচালনা করেছি। তবে কিছু ভুল-ত্রুটি থাকবেই। তারপরও বাংলাদেশে এমন একটি উদ্যোগ এটাই প্রথম। এই গবেষণার ফল সবার সামনে আনতে পেরে আমরা সত্যি আনন্দিত।’

র‌্যাংকিং প্রজেক্ট পরিচালনা কমিটিতে আরও ছিলেন ওআরজি কোয়েস্টের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনজুরুল হক, বাংলা ট্রিবিউনের সম্পাদক জুলফিকার রাসেল, প্রথম আলোর বার্তা সম্পাদক শরিফুজ্জামান পিন্টু, ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেটিক্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সাঈদ আহমেদ।

/আরএআর/জেএইচ/
সম্পর্কিত
প্রতি শ্রেণিতে ৫৫ শিক্ষার্থী ভর্তির নির্দেশ প্রতিমন্ত্রীর
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের
এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের সময় বেড়েছে
সর্বশেষ খবর
‘ডে আফটার টুমরো’ নয়, টুডে
‘ডে আফটার টুমরো’ নয়, টুডে
জিম্মি মুক্তির বিষয়ে আন্তরিক হলেও গাজায় আগে যুদ্ধবিরতি চায় হামাস
জিম্মি মুক্তির বিষয়ে আন্তরিক হলেও গাজায় আগে যুদ্ধবিরতি চায় হামাস
হাসিনা-তাভিসিন আন্তরিক বৈঠক, থাইল্যান্ডের সঙ্গে ৫ দলিল স্বাক্ষর
হাসিনা-তাভিসিন আন্তরিক বৈঠক, থাইল্যান্ডের সঙ্গে ৫ দলিল স্বাক্ষর
৯ মে পর্যন্ত বন্ধ থাকবে চুয়েট, হলে থাকতে পারবেন শিক্ষার্থীরা
৯ মে পর্যন্ত বন্ধ থাকবে চুয়েট, হলে থাকতে পারবেন শিক্ষার্থীরা
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় প্রকাশ
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় প্রকাশ