X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

টাইম ম্যাগাজিনের চোখে ঢাকা লিট ফেস্ট

বিদেশ ডেস্ক
১৮ নভেম্বর ২০১৭, ১৮:৩৩আপডেট : ১৮ নভেম্বর ২০১৭, ১৯:১৬

ঢাকা লিট ফেস্ট নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিশ্ববিখ্যাত টাইম ম্যাগাজিন। ‘রাইটার্স বিলিভ ইন অ্যা মডার্ন, ফ্রি সোসাইটি’, হাউ অ্যা লিটারারি ফেস্টিভ্যাল এইমস টু ট্রান্সফর্ম বাংলাদেশ (‘লেখকরা আধুনিক ও মুক্তসমাজে বিশ্বাসী’, একটি সাহিত্য উৎসব যেভাবে  বদলে দিচ্ছে বাংলাদেশকে) শিরোনামের প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয় ১৭ নভেম্বর। বাংলা ট্রিবিউন পাঠকদের জন্য ভাষান্তর করে তুলে ধরা হলো এই প্রতিবেদন।

  লিট ফেস্ট ২০১৭-তে কাজী আনিসের সঙ্গে আলাপচারিতায় লিওনেল শ্রিভার

বাংলাদেশে বিজ্ঞানমনস্ক ব্লগার ও সাংবাদিকরা যখন ক্রমাগত সহিংসতার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছেন, তখন প্রতিরোধশক্তির এক প্রতীক হয়ে উঠেছে ঢাকা লিটারারি ফেস্টিভ্যাল (ঢাকা লিট ফেস্ট)। এ উৎসব যেমন ন্যায় ও শিল্পশক্তির বার্তা দিচ্ছে, তেমনই বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখে থাকা দক্ষিণ এশিয়ার এ দেশটির সাময়িক বিরামও মিলছে এর মাধ্যমে। দারিদ্র্যের বোঝা কাঁধে নিয়েও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের বিস্তৃতি মোকাবিলায় লড়াই করে যাওয়া বাংলাদেশ আশ্রয়কেন্দ্র হয়ে উঠেছে প্রতিবেশী মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা শরণার্থীদের জন্যও।

বাংলাদেশের ১৬ কোটি ৩০ লাখ জনসংখ্যার মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠই মুসলমান। যদিও এ দেশ রাষ্ট্রীয়ভাবে ধর্মনিরপেক্ষ দেশ। এরপরও এখানে সেক্যুলার লেখক ও বুদ্ধিজীবীদের ওপর হামলার ঘটনা বাড়ছে উদ্বেগজনক হারে। মাঝেমধ্যে ইসলামিক স্টেট (আইএস) ও আল কায়েদা সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো এসব হামলার দায় স্বীকার করে।

কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) তথ্য অনুযায়ী, ২০১২ সাল থেকে বাংলাদেশে অন্তত ৯ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। ২০১৬ সালের এপ্রিলে কুরিয়ার সার্ভিসের কর্মীর বেশে একদল লোক সমকামীদের পক্ষে সোচ্চার জুলহাস মান্নানকে (৩৫) হত্যা করে। দেশের প্রথম সমকামী ম্যাগাজিনের সম্পাদক ছিলেন তিনি। এ ঘটনার দুই মাস পর বাংলাদেশের কূটনৈতিক এলাকায় অবস্থিত একটি ক্যাফেতে (হলি আর্টিজান) হামলা চালিয়ে ২০ জিম্মিকে হত্যা করে জঙ্গিরা। তাদের প্রায় সবাই ছিলেন বিদেশি।   

মুক্তভাবে মতপ্রকাশের ঝুঁকি থাকার পরও চলতি সপ্তাহে কাজী আনিস আহমেদ, সাদাফ সায্ ও আহসান আকবর ঢাকা লিট ফেস্টের ষষ্ঠ আসর আয়োজন করেছেন। তারা নির্ভয়ে বাংলাদেশের সমৃদ্ধ সাহিত্য ঐতিহ্য উদযাপন করছেন। ২৪ দেশের ৭০ জনেরও বেশি বক্তা অংশ নিচ্ছেন এ উৎসবে। এ উৎসবে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার বলে আশা করা হচ্ছে।  লিট ফেস্টের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও বাংলা ট্রিবিউন-ঢাকা ট্রিবিউন-এর প্রকাশক কাজী আনিস আহমেদের সঙ্গে কথা বলেছে টাইম। কঠিন পরিস্থিতিতে এ ধরনের বড় একটি সাহিত্য উৎসব আয়োজন নিয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে তার কাছে।

টাইম: পাঁচ বছর আগে ঢাকায় প্রথমবার একটি সাহিত্য উৎসব আয়োজনে আপনার অনুপ্রেরণা কী ছিল?

কাজী আনিস আহমেদ: বাংলাদেশের সাহিত্যের ঐতিহ্য অনেক সমৃদ্ধ। কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরে আমাদের সাহিত্য-সংস্কৃতি ওই অবস্থান থেকে কিছুটা হলেও বিচ্যুত হয়েছে। অন্যান্য সংস্কৃতির সঙ্গে আদান-প্রদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটাই ছিল আমাদের সত্যিকারের অনুপ্রেরণা। কারণ একে অন্যের সঙ্গে ভাবনাবিনিময়ের জন্য  ভালো উপলক্ষ হতে পারে সাহিত্য উৎসব। এতে সৃজনশীলতার নতুন দিগন্ত উন্মোচনের প্রত্যাশার সুযোগ থাকে।

টাইম: বাংলাদেশের সাহিত্যিকদের আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করেন?

কাজী আনিস আহমেদ: সাধারণত বাংলাদেশের মূলধারার লেখকরা  প্রগতিশীল ও সেক্যুলার। একইসঙ্গে তারা মুক্তমত ও মুক্তচিন্তার সমর্থকও। এ কারণেই তারা যা করেন, তা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ঢাকা লিট ফেস্ট তাদের নতুন শক্তি ও অনুপ্রেরণ জোগাবে। এই মূল্যবোধ পৃথিবীর একটি বৃহৎ অংশের সঙ্গে বিনিময়ের যোগসূত্র স্থাপন করবে।

টাইম: বাংলাদেশে এ ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন কী অর্থ বহন করে? যেখানে আপনার কাজের প্রধান ক্ষেত্র যেমন সেক্যুলারিজম ও মুক্তমত ক্রমাগত হামলার মুখে পড়ছে।

কাজী আনিস আহমেদ: আমাদের এ লড়াই দীর্ঘদিনের। দেশের প্রগতিশীল অংশ হিসেবে আমরা সমাজে দীর্ঘদিন ধরে, প্রায় সত্তর দশক থেকে চরমপন্থী মনোভাবের বিরুদ্ধে লড়ছি। (ওই সময় বাংলাদেশ স্বাধীনতার জন্য পাকিস্তানের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করে)। কিন্তু আমাদের লেখকরা কখনোই হার মানেননি। তারা নিজেদের অবস্থান ধরে রেখেছেন। বাংলাদেশি হওয়ার প্রকৃত মূল্যবোধকে ধারণ করেছেন তারা। সেক্যুলারিজমনীতির ওপর ভিত্তি করেই ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। বাংলাদেশি লেখকরা একটি আধুনিক ও মুক্তসমাজে বিশ্বাসী। জনগণের কাছ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা তাদের প্রাপ্য। এই উৎসব বড় আকারে তাদের সহযোগিতা করার একটি মাধ্যম।

টাইম: উৎসবের আলোচনায় স্বাধীন মতপ্রকাশের ওপর সাম্প্রতিক হামলাগুলো কিভাবে দেখা হচ্ছে?

কাজী আনিস আহমেদ: এখানে দু’টি বিষয় রয়েছে– উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা। ২০১৫ সালে পাঁচ জন সাহিত্যকর্মীকে হত্যা করা হয়। মতপ্রকাশের কথা বললে ওই বছরও নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে আমাদের এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। তখন আয়োজনের একমাস আগে ১৯টি বিষয় বাতিল করতে হয়েছে। এটা আমাদের জন্য ছিল কঠিন সময়। কিন্তু আমরা দৃঢ়ভাবে এগিয়ে যাই। আমাদের অনেক  লেখক ছিলেন, যারা ভয় পাননি। ঘোষণা দিয়ে উৎসব আয়োজন অনেককেই সাহস যোগায়। এরপর থেকে প্রতি বছর এ আয়োজনের ব্যাপ্তি বাড়তে থাকে।

টাইম: রোহিঙ্গা সংকট কি শিল্পীদের ওপর কোনও প্রভাব ফেলছে?

কাজী আনিস আহমেদ: অবশ্যই। বিষয়টি আমাদের ভাবনার অনেকাংশে আছে। সীমান্ত খুলে দেওয়ার পর থেকে আমরা সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় দেখছি। তাই এ বছর বিভিন্নভাবে বিষয়টি সামনে এনেছি। আমরা অনেক সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। এই সংকটে বিশ্বনেতাদের মনোযোগ আকর্ষণ ও সহায়তার আহ্বান জানিয়ে আমরা বিবৃতি দেবো।

টাইম: যেসব ব্লগার, আন্দোলনকর্মী ও লেখক মতপ্রকাশে ভয় পাচ্ছেন, তাদের জন্য আপনার কোনও বার্তা আছে?

কাজী আনিস আহমেদ: যেসব লেখক ও ব্লগারকে হুমকি দেওয়া হয়েছে বা তালিকায় রাখা হয়েছে, তাদের জন্য আমাদের মঞ্চ উন্মুক্ত। আমরা তাদের আমন্ত্রণ জানানো অব্যাহত রেখেছি। তাদের অনেকেই দেশত্যাগ করেছেন, অনেকে আত্মগোপনে আছেন। তবু আমরা তাদের প্রকাশ্যে আসতে সহযোগিতা করছি। বোঝাচ্ছি যে, তাদের লুকিয়ে থাকা উচিত নয়।  তাদের বলছি, আপনাদের বলার অনেক কিছু আছে এবং তা বলতে পারার অধিকারও আছে।  আমি মনে করি, এই ব্যাপারটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। লেখা অব্যাহত রাখতে এটা তাদের উৎসাহিত করছে।

অনেক স্পষ্টভাষী তরুণ লেখক আছে, যারা বিভিন্ন প্রগতিশীল পত্রিকার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। তারা সবসময় মতপ্রকাশ ও অবস্থান নিতে পারে, যা আগে ঘটেনি। তাই আমি বলবো, এই উৎসব লেখকদের সংহতি প্রকাশের জন্য একটি আলাদা মঞ্চ তৈরি করেছে। আর এসবই মানুষকে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে সহযোগিতা করেছে।

/আরএ/এফইউ/এএ/জেএইচ/
সম্পর্কিত
রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান ঢাকা লিট ফেস্টের
পর্দা নামলো ঢাকা লিট ফেস্টের
ডিএসসি দক্ষিণ এশীয় সাহিত্য পুরস্কার পেলেন শ্রীলঙ্কার আনুক আরুদপ্রাগাসাম
সর্বশেষ খবর
নায়কের জন্মদিনে নায়িকারা...
নায়কের জন্মদিনে নায়িকারা...
মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র আধুনিকায়নে কাজ করবে জাইকা ও বিএফডিসি
মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র আধুনিকায়নে কাজ করবে জাইকা ও বিএফডিসি
ট্রেনের ৪৫ হাজার টিকিট কিনতে দেড় কোটির বেশি হিট
ট্রেনের ৪৫ হাজার টিকিট কিনতে দেড় কোটির বেশি হিট
নোয়াখালীতে সনি স্মার্ট-এর শোরুম উদ্বোধন
নোয়াখালীতে সনি স্মার্ট-এর শোরুম উদ্বোধন
সর্বাধিক পঠিত
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের