X
মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪
৩ বৈশাখ ১৪৩১

কোহিনূরের সন্ধানে!

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১৮ নভেম্বর ২০১৭, ২০:০৯আপডেট : ১৮ নভেম্বর ২০১৭, ২০:১৫

চলছে কোহিনূর নিয়ে আলোচনা শিরোনাম দেখে আঁতকে উঠতে পারেন! কোহিনূর হীরা যে টাওয়ার অব লন্ডনে রানি ভিক্টোরিয়ার মুকুটে স্বমহিমায় জ্বলজ্বল করছে- তা সবাই জানেন। তবে কেন আবার খোঁজাখুঁজি। কিন্তু এ সন্ধানযাত্রা কোহিনূরের আদি ইতিহাস জানার। সে পথে হেঁটেছেন ব্রিটিশ ইতিহাসবিদ ও সাহিত্যিক উইলিয়াম ডালরিম্পল। সাংবাদিক, উপস্থাপক অনিতা আনন্দের সঙ্গে লেখা ‘কোহিনূর: দ্য স্টোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ডস মোস্ট ইনফেমাস ডায়মন্ড’ বইয়ে তিনি তুলে ধরেছেন এই কোহিনূর হীরার ইতিহাস।

‘ঢাকা লিট ফেস্ট ২০১৭’-এর শেষ দিনে দর্শকদের কাছে কোহিনূরের আদি ইতিহাস বর্ণনা করেন ডালরিম্পল। বাংলা একাডেমির আব্দুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে সকাল সোয়া ১১টায় অনুষ্ঠিত সেশনটির সঞ্চালনায় ছিলেন উৎসবের পরিচালক সাদাফ সায্।

কোহিনুরের দাবিদার দেশগুলো হলো- ভারত, পাকিস্তান, ইরান ও আফগানিস্তান। একটিমাত্র রত্নখণ্ড এতগুলো রাষ্ট্রের হতে পারে না- তা ছেলেবুড়ো সবাই বোঝে। আসল সত্য জানা যায় কোহিনূরের অতীত ঘাঁটলে। জানা যায়, এই চার দেশের কারও দাবিই একেবারেই ফেলনা নয়।

ডালরিম্পল জানান, অষ্টাদশ শতকে ব্রাজিল বা আফ্রিকায় খনি আবিষ্কারের আগে পৃথিবীর সব মূল্যবান রত্ন পাওয়া যেত দক্ষিণ এশিয়ায়। মোঘলরা রত্নালঙ্কারের প্রতি বিশেষভাবে দুর্বল ছিল। এক ব্রিটিশ প্রতিনিধির ভাষ্য, সম্রাট জাহাঙ্গীরের পরনে রত্ন ও স্বর্ণালঙ্কারের এত আধিক্য ছিল যে তার মূল পোশাকই দৃশ্যমান হতো না।

মোঘলরা রাজ্যবিস্তার করে লুট ও উপহার হিসেবে প্রচুর রত্নভাণ্ডারের অধিকারী হয়। এ ভাণ্ডারকে ব্যবহার করে সম্রাট শাহজাহান তৈরি করেন রত্নখচিত ‘ময়ূর সিংহাসন’। ডালরিম্পলের মতো আমাদেরও অবাক হতে হয় এটা জেনে যে, ময়ূর সিংহাসন তৈরিতে তাজমহলের চেয়ে চারগুণ বেশি খরচ হয়েছিল।

সম্রাট শাহজাহানের সেই ময়ূর সিংহাসনের ঔজ্জ্বল্য বাড়িয়ে দিয়েছিল এর ওপর বসানো কোহিনূর। সেই সাক্ষ্য দিয়েছেন পারস্যের সেনাপতি নাদির শাহের ইতিহাসবিদ কাজিম মারউই। মোঘলদের শেষ সময়ে দিল্লি আক্রমণ করে নিজাম-উল-মুলকের কাছ থেকে এই ময়ূর সিংহাসন অধিগ্রহণ করেছিলেন নাদির শাহ।

ডালরিম্পল জানান, নাদির শাহের হাত ধরে ভারত ছেড়ে ইরানে যায় কোহিনূর। সঙ্গে ছিল আরও অন্তত দুই হাজার মূল্যবান হীরা। এর মধ্যে কোহিনূরের সঙ্গে থাকা আলোচিত আরেকটি হীরার নাম ‘তিমুর রুবি’। সেটা ১৭৩৯ সালের দিককার ঘটনা।

নাদির শাহের পোশাক সাধারণ হলেও কোহিনূর ও তিমুর রুবি অলঙ্কার হিসেবে পরতেন তিনি। তার নিজ বংশের আত্মীয়দের হাতে মারা যাওয়ার পর স্ত্রী চুকি এ দু’টি হীরা নিয়ে নাদিরের সেনাপতি আহমেদ শাহ আবদালির সঙ্গে জীবন বাঁচিয়ে পালিয়ে আসেন কান্দাহারে। এখান থেকে কোহিনূরের আফগান পর্বের যাত্রা শুরু।

আবদালির মাধ্যমে দুররানি বংশের প্রতিষ্ঠা হয়। ১৮১৩ সালে তার দৌহিত্র শাহ সুজা দুররানি নিজেদের সাম্রাজ্য ফেরত পাওয়ার আশায় কোহিনূরের বিনিময়ে পাঞ্জাবের রাজা রঞ্জিত সিংয়ের সঙ্গে সন্ধি করেন। কোহিনূর আবার ভারত ফেরত আসে।

এরপর দৃশ্যপটে হাজির হন লর্ড ডালহৌসি। ১৮৪৯ সালে পাঞ্জাব দখলের সঙ্গে সঙ্গে কোহিনূরের মালিকানা বদল হয়। সে সময় রঞ্জিত সিংয়ের সর্বকনিষ্ঠ সন্তান দুলীপ সিং এটি পরতেন। এর দুই বছর পর রানি ভিক্টোরিয়ার উপহার হিসেবে ভারতবর্ষ ছেড়ে ইউরোপে পাড়ি দেয় কোহিনূর।

সেমান্টিকা রত্নের মতো কোহিনূরেরও একটি কালো ইতিহাস উন্মোচন করেন ডালরিম্পল। ময়ূর সিংহাসন তৈরির পর নিজ সন্তানের হাতে বন্দি হন শাহজাহান। নাদির শাহও প্রাণ হারান কোহিনূর ইরানে নিয়ে যাওয়ার পরপরই। রঞ্জিত সিংয়ের পরিবারেরও বিপদ নেমে আসে। রানি ভিক্টোরিয়ার স্বামী অ্যালবার্ট হীরাটি কাটাতে দেন। কোহিনূর প্রথম কাটতে বসেন যে রত্নাকর, তিনিও দুই দিনের মাথায় প্রাণ হারান।

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় হীরার তালিকায় প্রথম একশর ভেতরেও নেই কোহিনূর। তারপরও আলোচনায় এই হীরকখণ্ডটি হার মানিয়েছে অন্য সব হীরাকে। এর ইতিহাস নিয়ে এত আলোচনা হলেও জানা যায়নি, মোঘল আমলের আগে এটি কোথায় ছিল। নিজের মধ্যে এ সত্যটুকু লুকিয়ে রেখে লন্ডনেই রানির মুকুটে জ্বলজ্বল করছে কোহিনূর।

/টিআর/
সম্পর্কিত
রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান ঢাকা লিট ফেস্টের
পর্দা নামলো ঢাকা লিট ফেস্টের
ডিএসসি দক্ষিণ এশীয় সাহিত্য পুরস্কার পেলেন শ্রীলঙ্কার আনুক আরুদপ্রাগাসাম
সর্বশেষ খবর
মুজিবনগর দিবসে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী
মুজিবনগর দিবসে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী
আইইউবিতে অনুষ্ঠিত হলো জলবায়ু বিজ্ঞানী সালিমুল হক স্মারক বক্তৃতা
আইইউবিতে অনুষ্ঠিত হলো জলবায়ু বিজ্ঞানী সালিমুল হক স্মারক বক্তৃতা
আগামী সপ্তাহে থাইল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী
আগামী সপ্তাহে থাইল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণ: ২ আসামির স্বীকারোক্তি
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণ: ২ আসামির স্বীকারোক্তি
সর্বাধিক পঠিত
ঘরে বসে আয়ের প্রলোভন: সবাই সব জেনেও ‘চুপ’
ঘরে বসে আয়ের প্রলোভন: সবাই সব জেনেও ‘চুপ’
ডাবের পানি খাওয়ার ১৫ উপকারিতা
ডাবের পানি খাওয়ার ১৫ উপকারিতা
ফরিদপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেলো ১৩ জনের
ফরিদপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেলো ১৩ জনের
প্রকৃতির লীলাভূমি সিলেটে পর্যটকদের ভিড়
প্রকৃতির লীলাভূমি সিলেটে পর্যটকদের ভিড়
চুরি ও ভেজাল প্রতিরোধে ট্যাংক লরিতে নতুন ব্যবস্থা আসছে
চুরি ও ভেজাল প্রতিরোধে ট্যাংক লরিতে নতুন ব্যবস্থা আসছে