পাবনার চাটমহরের ১৬ মাস বয়সী দুই শিশু রাবেয়া-রোকাইয়া। পরিচয় আলাদা হলেও জোড়া মাথার কারণে তাদের নাম একসঙ্গে উচ্চারিত হয়। জন্মের পর থেকেই তাদের চিকিৎসা চলছে, কিন্তু কেউ তাদের আলাদা করার ভরসা দেননি। এই দুই শিশুকে নিয়ে মা-বাবা হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরে বার বার ফিরে গেছেন গ্রামে। এরইমধ্যে শিশুদের বাবা রফিকুল ইসলামের জানতে পারেন ঢাকা মেডিক্যালের কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে আলাদা হওয়া শিশু তোফা ও তহুরার চিকিৎসার খবর। জানতে পারেন, কিভাবে পরম যত্নে তাদের আলাদা করেন ইউনিটের চিকিৎসকরা। আশার আলো যেন দেখতে পান তারা। স্থানীয় সংসদ সদস্য এমপি মকবুল হোসেনের সহায়তায় সোমবার (২০ নভেম্বর) সকালে ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করান এই দুই শিশুকে।
তবে তোফা-তহুরার মতো বিষয়টি সহজ হবে না বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা। আর বাবা-মা মনে করছেন, যে বার্ন ইউনিটের চিকিৎসকরা তোফা-তহুরা, মুক্তা-মনি ও আবুল বাজানদারকে সুস্থ করে তুলেছেন, তারা রাবেয়া-রোকাইয়াকেও নতুন জীবন দিতে পারবেন।
এই শিশুদের বাবা রফিকুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আজই তাদের ভর্তি করিয়েছি। চিকিৎসকরা বলেছেন, তারা আবারও সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবেন। এরপর একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করে করণীয় ঠিক করবেন। আমি মেয়েদের নিয়ে একাধিকবার ঢাকায় এসেছি। কিন্তু চিকিৎসা করানো সম্ভব হয়নি। তেফা-তহুরার খবর পড়ে মনে হলো, আমার শিশুদের যদি বার্নে নেওয়া যায়, তাহলে তারা হয়তো নতুন জীবন পাবে। এরপর স্থানীয় এমপি মকবুল হোসেনের কাছে আবেদন করি। তিনি কাল আমাদের জানান, ঢাকা মেডিক্যালের বার্ন ইউনিটে নিয়ে আসতে। আজ সকালে মেয়েদের ভর্তি করিয়েছি। আমরা তাদের নিয়ে স্বপ্ন দেখছি। আশা করি, তারা সুস্থ জীবন পাবে। আমাদের আরও একটি কন্যা সন্তান আছে।’
শিশুদের মা স্কুলশিক্ষক তাসলিমা খাতুন বাংলা ট্রিবিউনকে জন্মের সময়ে কথা জানাতে গিয়ে বলেন, ‘ওদের জন্ম গত বছরের ১৬ জুলাই। বিকাল চারটায় অপারেশন থিয়েটারে ঢোকার পর আমাকে পুরো অজ্ঞান না করে শুধু কোমর থেকে অবশ করা হয় বলে সবকিছু দেখতে পাচ্ছিলাম। কিন্তু অপারেশনে পেট কাটার পর বাচ্চা যখন বের করতে পারছিল না, তখন চিকিৎসক পেটের আরও অংশ কেটে যখন বাচ্চা বের করেন, তখন সেখানে উপস্থিত থাকা নার্স ও চিকিৎসকদের মুখ দেখে বুঝতে পারি, কিছু একটা হয়েছে। পরে যখন ট্রেতে রাখা হয়, তখন দেখি, সেখানে একটি নয়, দু’টি বাচ্চা। আর তাদের মাথা জোড়া লাগানো।’
বার্ন ইউনিটের প্রধান সামন্ত লাল সেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই শিশুদের ভর্তি করা হয়েছে।পরবর্তী পদক্ষপ কী হবে, আমরা জানি না। ওদের ব্রেন এই জোড়া মাথার সঙ্গে কতটুকু জড়িয়ে আছে, সেটা বোঝা যাবে সিটি স্ক্যান ও এমআরআই করার পর। আমরা এখনই বলতে পারছি না, কতটুকু কী করতে পারব বা আদৌ কতটুকু করা যাবে। তবে এটুকু বলব, ওদের প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট যতজনকে দরকার মনে হবে, সবাইকে সম্পৃক্ত করা হবে।’
এর আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. রুহুল আমিনের অধীনে এই দুই শিশুর চিকিৎসা চলছিল। এই চিকিৎসক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জোড়া শিশু আমরা এর আগেও পেয়েছি, কিন্তু মাথা এমনভাবে জোড়া লাগানো শিশু এই প্রথম। এই শিশুদের এমআরআর করার মতো যে যন্ত্র দরকার, সেটা আমাদের নেই। সিটিস্ক্যান, এমআরআই করার জন্য একটি মাথার মেশিন রয়েছে দুই মাথার সিটিস্ক্যানসহ অন্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করার মেশিন আমাদের নেই।’