X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘পোশাক খাতের কর্মপরিবেশ এখনও নারীবান্ধব ও নিরাপদ নয়’

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২৩ নভেম্বর ২০১৭, ২১:১৪আপডেট : ২৩ নভেম্বর ২০১৭, ২১:২০

 ‘নারীবান্ধব ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ সম্মিলন’ শীর্ষক সেমিনার

‘পোশাক খাতে শ্রমিকদের নিরাপদ ও নারীবান্ধব কর্মপরিবেশের বিষয়টি এখনও প্রশ্নবিদ্ধ। কারণ- মজুরি, নিরাপত্তা, ছুটি, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, মাতৃত্বকালীন ছুটি, কর্মক্ষেত্রে আচরণ ও ক্ষতিপূরণের মতো বিষয় নিয়ে সমস্যায় পড়ছেন শ্রমিকরা।’ বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ আয়োজিত ‘নারীবান্ধব ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ সম্মিলন’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব কথা বলেছেন গবেষক, উন্নয়নকর্মী, শ্রমিক নেতা ও শ্রমিকরা।

তাজরীন অগ্নিকাণ্ডের পাঁচ বছর উপলক্ষে ‘সবার হোক অঙ্গীকার নিরাপদ ও নারীবান্ধব কর্মপরিবেশ গড়ার’ স্লোগানকে সামনে রেখে এ সেমিনারের আয়োজন করে অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ।

সেমিনারে আলোচকরা বলেন, ‘প্রধান রফতানি খাত আর বিশাল সস্তা শ্রমবাজারের কারণে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প সারা বিশ্বেই খুব পরিচিত। কিন্তু তাজরীন অগ্নিকাণ্ড ও রানা প্লাজার মতো দুর্ঘটনার কারণে শ্রমিকদের নিরাপত্তাহীনতার ক্ষেত্রে বিশ্বের উদাহরণ হতে হয়েছে বাংলাদেশকে। নিহত শত শত মানুষ, আহত শ্রমিক ও নিঃস্ব পরিবারের হাহাকার এবং পেশাগত নিরাপত্তার বিষয়টি বার বার সামনে এসেছে।’

আলোচকরা আরও বলেন, ‘গুণগতমানের দিক থেকে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত যথেষ্ট সুনাম অর্জন করলেও, কারখানার ভেতরে ও যাতায়াতের পথে নারী শ্রমিকদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের ক্ষেত্রে এখনও অনেকটাই পিছিয়ে আছে। কর্মক্ষেত্রে এখনও নারী শ্রমিকদের যৌন হয়রানি ও লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্যসহ নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।’

এসময় তাজরীন দুর্ঘটনার শিকার আহত শ্রমিক সবিতা রানী বলেন, ‘২৪ নভেম্বর তাজরীনের তৃতীয় তলায় কাজ করছিলাম। কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ফায়ার অ্যালার্ম বাজার পরেও কাজ চলছিল। আগুন লাগার পর নিচে এসে দেখি গেটে তালা দেওয়া। আগুন থেকে বাঁচতে ওপরে উঠতে অনেকের পায়ের নিচে পড়লাম। মনে হচ্ছিল মারা যাচ্ছি। একটা ছেলের শার্ট ধরে কোনমতে প্রাণে বেঁচেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখন আমি মৃত-জীবন যাপন করছি। শুয়ে শুয়ে দিন কাটে আমার। সারা শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা। ঠিকভাবে হাঁটতে পারি না। তিনটা মেয়েসহ আট জনের সংসার নিয়ে অনিশ্চিৎ ভবিষ্যত। আমি চলতে পারি না। কোনও কাজ করতে পারি না। আমার দায়িত্ব কে নেবে?’ তিন মেয়েকে পড়াতে পারছেন না বলেও জানিয়েছেন তিনি।

অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি ইউরোপিয় ইউনিয়নের কর্মসূচি ব্যবস্থাপক লাইলা জেসমিন বানু বলেন, ‘সবিতা রানীর মত আহত শ্রমিকের দুর্বিষহ যন্ত্রণা আমাদের ভাবিয়ে তুলছে। আমরা চাইনা কোনও শ্রমিক নির্মম দুর্ঘটনার শিকার হন। তাই শ্রমিকদের নিরাপত্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নারী যদি নিরাপত্তা না পায়, ভাল খাবার না পায়, ভাল পরিবেশ না পায় তবে তার পরবর্তী প্রজন্ম খারাপ পরিস্থিতিতে পড়বে। ’

মানবাধিকার কর্মী হামিদা হোসেন বলেন, ‘দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করতে গিয়ে আমরা দেখেছি, দেশে আইন ও নিয়ম থাকলেও মালিকরা তা মানেন না। আবার যে সমস্ত মালিকরা শ্রমিকদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন, তাদের বিচার হচ্ছে না। ফলে নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। শ্রমিকদের নিরাপত্তায় যারা কাজ করছেন তাদের সবাইকে আন্তরিক হতে হবে।’

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘তাজরীন বা রানা প্লাজার দুর্ঘটনার পর সরকারসহ বিভিন্ন পক্ষ নানা উদ্যোগ নিয়েছেন। তবে বাস্তবতা হলো এখনও শ্রমিকরা, বিশেষ করে নারী শ্রমিকরা, নিরাপদে কাজ করতে পারেন না। হয়রানির শিকার হন। অভিযোগ করে সমাধান না পাওয়ায় এখন কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছেন অনেক নারী শ্রমিক।’

আওয়াজ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক নাজমা আক্তার বলেন, ‘কারখানার একজন শ্রমিকও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ পান না। ঘরে ভাল খাবার পান না। নারীবান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এজন্য শ্রম আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন দরকার।’

অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের কয়েকটি গবেষণা ও ২০১৫ সালে হিউম্যান রাইট্স ওয়াচ-এর করা একটি প্রতিবেদন বলছে, ‘সময়মতো মজুরি না পাওয়া, কাজের সময় ঠিক না থাকা, ছুটি জটিলতা, ক্ষতিপূরণ নিয়ে ঝামেলা, মাতৃত্বকালীন ছুটি না পাওয়া, নিরাপদ পানি ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার অভাব, শারীরিক ও মৌখিক দুর্ব্যবহার এবং হুমকিসহ বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখী হচ্ছেন শ্রমিকরা।

অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের পরিচালক আসগর আলী সাবরী বলেন, ‘নারীবান্ধব কর্মক্ষেত্র নিশ্চিত করা গেলে পোশাক খাতে নারীর অংশগ্রহণ আরও বাড়বে। নারীবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করা গেলে শ্রমিকদের কর্মক্ষমতা যেমন বাড়বে, তেমনি বৃদ্ধি পাবে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। এ কারণে নারী শ্রমিকদের সব রকম বৈষম্য থেকে রক্ষা করার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিতকরণে সুনির্দিষ্ট ও রক্ষামূলক ব্যবস্থা থাকা দরকার। যেখানে মালিক-শ্রমিকসহ সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। ’

বাংলাদেশ শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মুহাম্মদ তাইয়েবুল ইসলাম বলেন, ‘একজন নারী শ্রমিক যদি মানসিক শান্তিতে কাজ করতে পারেন এবং তাকে যদি ভাল পরিবেশ দেওয়া যায়, তবে আমাদের শিল্পের উন্নতি হবে। আসলে বিষয়টি অনেক কঠিন। কারণ এর সঙ্গে নানা সামাজিক বিষয় জড়িত।’ সরকার আন্তরিকভাবে শ্রমিকেদের নিরাপত্তা পরিস্থিতি উন্নয়নে কাজ করছে বলেও জানান তিনি।

আলোচকরা বলেন, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন কনভেনশনের আলোকে নারী শ্রমিকের স্বার্থ রক্ষার উদ্দেশ্যে যে আইনগুলো প্রণয়ন করা হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। একই সঙ্গে বর্তমান সময়ের আলোকে নারী শ্রমিকের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানা তারা। 

 

এসএস/এএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা সীমান্তরক্ষীদের নিতে জাহাজ আসবে এ সপ্তাহেই
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা সীমান্তরক্ষীদের নিতে জাহাজ আসবে এ সপ্তাহেই
শিল্পী সমিতির নির্বাচন: কড়া নিরাপত্তায় চলছে ভোটগ্রহণ
শিল্পী সমিতির নির্বাচন: কড়া নিরাপত্তায় চলছে ভোটগ্রহণ
পাকিস্তানে জাপানি নাগরিকদের লক্ষ্য করে জঙ্গি হামলা
পাকিস্তানে জাপানি নাগরিকদের লক্ষ্য করে জঙ্গি হামলা
মাদারীপুরে কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা
মাদারীপুরে কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন