X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

আনিসুল হকের কুলখানি ও একটি চিঠি

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
০৬ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৯:২৪আপডেট : ০৬ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৯:৩৩

আনিসুল হক (ছবি: সংগৃহীত) এক মায়ের চিঠি হাতে চট্টগ্রাম থেকে ছুটে এসেছেন এক সন্তান। সেই চিঠি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের কুলখানির অনুষ্ঠানে পড়ে শোনান তার ছোট ভাই তৌহিদুল হক। বুধবার (৬ ডিসেম্বর) বাদ আসর রাজধানীর গুলশানে আজাদ মসজিদে তিনিই উপস্থিত স্বজনদের ঘটনাটি জানান।

আনিসুল হকের ছোট ভাই তৌহিদুল হক বলেন, ‘তিন দিন আগে কবর জিয়ারত করতে গিয়েছিলাম। তখন পেছন থেকে একটি ছেলে ডাক দিয়ে আমাদের বলে— সে চট্টগ্রাম থেকে এসেছে। তার মা পাঠিয়েছে আনিসুল হকের কবর জিয়ারত করতে। তার মা অসুস্থ থাকার কারণে আসতে পারেননি। তিনি আনিসুল হকের পরিবারকে দেওয়ার জন্য একটি চিঠিও দিয়েছেন।

আনিসুল হকের কুলখানিতে পরিবার, স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা (ছবি: নাসিরুল ইসলাম) চিঠিটির খামে লেখা— রেজাউল করিম, দক্ষিণ মাধ্যম, হালিশহর, চট্টগ্রাম। চিঠিটি তার মা নিজের হাতেই লিখেছেন। চিঠিটি পড়ছি জানিয়েছে তৌহিদুল হক হুবহু পাঠ করেন। চিঠিতে লেখা—

‘প্রিয় আনিসুল হক। জানি না কেমন আছেন। তবে ভালো আছেন বলে মনে হচ্ছে। কারণ মানুষের দোয়া তো সবসময়ই আছে। আচ্ছা আমাদের সঙ্গে তো আপনার কোনও সম্পর্ক নেই। কোনও দেখা পর্যন্ত হয়নি। তাহলে আপনার জন্য এই অনুভূতি কেন। আসলে একজন মানুষকে ভালো না লাগার অনেক কারণ থাকতে পারে। কিন্তু কী কারণে যে ভালো লাগে বা মানুষকে ভালোবাসে তা হয়তো মানুষের পক্ষে ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়।

আপনি মেয়র হওয়ার অনেক আগে থেকেই আপনার ভক্ত আমরা। আপনি মেয়রের দায়িত্ব পাওয়ার পর যে স্বপ্ন ঢাকা শহরের সাধারণ মানুষ ও গরিব জনগোষ্ঠী দেখেছিল তা হয়তো আর দেখা হবে না। কারণ আনিসুল হকরা বারবার জন্মায় না। তাঁরা হঠাৎ আসেন, আমাদের মনে জায়গা করে নেন, আবার হঠাৎ চলে যান। আর আমাদের মনে হয়, আল্লাহ আমাদের জন্য তার কোনও ফেরেস্তা পাঠিয়েছেন।

শৈশবে ও কৈশোরে আপনাকে দেখেছিলাম বিটিভির পর্দায়। যৌবনে আপনার মুখ এঁকেছিলাম আমাদের ডায়েরির পাতায়। হঠাৎ মুছে যাবে ভাবতেও পারিনি। আমার বন্ধুরা প্রায় সবসময় বলতো, কষ্ট যদি সাধারণ মানুষের হাতে থাকতো তাহলে মানুষের কোনও কষ্টই থাকতো না। জানি আমার কথাগুলো পৌঁছাবে না আপনার কাছে। এটাই জানি আমাদের ভালোবাসার অনুভূতি কোনোদিন ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। শুধু বলবো, উই লাভ ইউ মোর দ্যান আওয়ার লাইফ। ভালো থাকবেন স্যার।’
আনিসুল হকের কুলখানিতে পরিবার, স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা (ছবি: আদিত্য রিমন) লন্ডনে সাড়ে চার মাসেরও বেশি সময় ধরে চিকিৎসাধীন থাকার পর ৩০ নভেম্বর বাংলাদেশ সময় রাত ১০টা ২৩ মিনিটে (লন্ডন সময় বিকাল ৪টা ২৩ মিনিট) লন্ডনের ওয়েলিংটন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আনিসুল হকের মৃত্যু হয়। তার বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর।

আনিসুল হকের বাড়ি নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলায়। ১৯৫২ সালের ২৭ অক্টোবর ফেনীর সোনাগাজীর আমিরাবাদ ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামে নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক সম্পন্ন করেন তিনি। বর্তমান সেনাপ্রধান আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক তার ছোট ভাই।

আশির দশকে উপস্থাপক হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন আনিসুল হক। পরে তৈরি পোশাক খাতের সফল ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন তিনি। এরপর বিভিন্ন সময়ে বিজিএমইএ, এফবিসিসিআই ও সার্ক চেম্বারের সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন। ২০১৫ সালে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন তিনি।

আনিসুল হকের স্ত্রী রুবানা হক তাদের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান মোহাম্মদী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তাদের সংসারে এসেছে চার সন্তান। ছোট ছেলে মো. শারাফুল হক ২০০২ সালের ৭ এপ্রিল মারা যান। বাকি তিন সন্তানের মধ্যে ছেলে নাভিদুল হক মোহাম্মদী গ্রুপের পরিচালক, মেয়ে ওয়ামিক উমায়রা ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশনে কাজ করছেন। তানিশা হক সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করেছেন।

/এএইচআর/ইউআই/জেএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
পথের পাশের বাহারি শরবতে স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটা?
পথের পাশের বাহারি শরবতে স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটা?
মন্ত্রণালয়ে সভা করে ধানের দাম নির্ধারণ করা হবে: কৃষিমন্ত্রী
মন্ত্রণালয়ে সভা করে ধানের দাম নির্ধারণ করা হবে: কৃষিমন্ত্রী
জোভানের নতজানু বার্তা: আমার ওপর কষ্ট রাখবেন না
জোভানের নতজানু বার্তা: আমার ওপর কষ্ট রাখবেন না
লাগাতার তাপদাহে যশোরে জনজীবন দুর্ভোগে
লাগাতার তাপদাহে যশোরে জনজীবন দুর্ভোগে
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ