X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

ডাকসু ভবনে এখন যা হয়

আদিত্য রিমন
০৮ ডিসেম্বর ২০১৭, ২১:৩৯আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর ২০১৭, ০৮:৪৯

ডাকসু ভবনের বহির্ভাগ (ছবি-আদিত্য রিমন) ১৯৯০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নির্বাচন হওয়ার পর দীর্ঘ ২৭ বছর কেটে গেলেও আর নির্বাচন হয়নি। দীর্ঘদিন নির্বাচন না হওয়ায় এই সংসদের দ্বিতলবিশিষ্ট কার্যালয় ডাকসু ভবনও হয়ে পড়েছে কর্মচাঞ্চল্যহীন। এখানে নেই যেমন ছাত্রদের উল্লেযোগ্য কোনও কর্মসূচি, তেমনি স্থবির হয়ে পড়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাজনীতিও। ভবনটির সঠিক ব্যবহার না হওয়ার ক্ষোভ প্রকাশের পাশাপাশি দ্রুত ডাকসু নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন ছাত্র নেতারা।

সরেজমিনে দেখা যায়, ডাকসু ভবনের দ্বিতীয় তলায় আটটি কক্ষ রয়েছে। এর মধ্যে ৪টি বন্ধ। ডাকসু কার্যকর থাকার সময় একটি কক্ষে বসতেন ডাকসুর সহ-সভাপতি (ভিপি) ও আরেকটিতে সাধারণ সম্পাদক (জিএস)। বাকি দু’টি কক্ষের একটি ব্যবহার করতেন ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক ও পরিষদ সদস্যরা। একটি অফিস কক্ষ হিসেবে ব্যবহৃত হতো। বাকি কক্ষগুলো সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। এর মধ্যে একটি কক্ষ পত্রিকা পড়ার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। এসব কক্ষে বিভিন্ন সময় আলোচনা সভারও আয়োজন করে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন।

ভবনের নিচের তলায় রয়েছে ডাকসু সংগ্রহশালা ও ক্যাফেটেরিয়া। ক্যাফেটেরিয়া চালু থাকলেও সংগ্রহশালা সংস্কার কাজ চলছে। ভবনটির দুই পাশে রয়েছে ময়লা আবর্জনায় স্তূপ। পুরো ভবনের চার পাশে দেয়ালে ডাকসুর নির্বাচনের দাবিতে বামপন্থী সংগঠনগুলোর  দেয়াললিখন দেখা গেছে। ছাত্র ফেড়ারেশনের একটি দেয়াললিখন ছিল—‘রাষ্ট্রপতি চায়, ভিসিও নাকি চান, ছাত্ররা তো চায়ই, তাহলে ডাকসু নির্বাচন কে আটকায়?’   ডাকসুর ভবনের ভেতরের একটি কক্ষ

পত্রিকা পড়ার কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, মিউজিক ডিপাটমেন্টের ছাত্র মেহেদি হাছান পত্রিকা পড়ছেন। নোট নিচ্ছেন গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের। ভবনের ব্যবহার নিয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সবাই যে দিকে, আমিও সেই দিকে। এ নিয়ে তো অনেক কিছু দেখলাম। কিন্তু কোনও কিছুই তো হয়নি।’

আরেকটি কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, বেশ কয়েকটি পুরনো আলমারি, কিছু বই, পত্রিকা ও ফাইল রুমের মধ্যে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। দুই জন শিক্ষার্থীকে সেখানে বসে ল্যাপটপে কাজ করতে দেখা গেছে। তবে তারা কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। অন্যদিকে রাতে ডাকসু ভবন বন্ধ থাকলে এর সিঁড়িতে ও ছাদে মাদকসেবন করতেও দেখা গেছে অনেককে।   

ডাকসুর সাধারণ সম্পাদকের কক্ষ  

ভবনটির কার্যক্রম না থাকা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নতুন করে ডাকসু ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের। আমরাও মাঝে মাঝে ডাকসু ভবনে যাই। তবে, পরিবেশ খুব একটা ভালো না। আশা করি, নতুন ভবন না হওয়া পর্যন্তি এই ভবনটি কর্তৃপক্ষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে রাখবে।’

এদিকে, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজিব আহসান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হলেও চলে সরকারের ইশারায়। সরকারের কারণে ডাকসুর নির্বাচন হচ্ছে না।’ তিনি বলেন, ‘নির্বাচন না হওয়ার কারণে ডাকসু ভবন তার ঐতিহ্য হারিয়েছে। ভবনের অবস্থা খুবই বেহাল। দেয়ালের চুনসুরকি খসে পড়ছে। আর্বজনায় ভরে আছে পুরো ভবন।’

এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ছাত্র ফেড়ারেশনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি উম্মে হাবিবা বেনজির বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে ডাকসু তার পুরাতন ঐতিহ্য হারাচ্ছে। ভবনের দ্বিতীয় তলার বেশিরভাগ রুমই বন্ধ থাকে। যে কয়টি খোলা আছে, সেগুলোর অবস্থাও ভালো না। এদিকে ময়লা পরিবেশ, অন্যদিকে আসবাবপত্রের অবস্থাও ভালো নয়। চেয়ার-টেবিল ভাঙা।’

ডাকসু ভবনের বাইরের দেয়ালে খসে পড়া পলেস্তারা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আখতারুজ্জামান বলেন, ‘নির্বাচন না হওয়ায় ডাকসু ভবনের সঠিক ব্যবহার হচ্ছে না, এটা ঠিক। নির্বাচন হলে আবারও ভবনের সঠিক ব্যবহার হবে। ২৭ বছর নির্বাচন না হওয়ার যে অপসংস্কৃতি সেখান থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে চায়। আমরা নির্বাচনের উদ্যোগ নেবো। নির্বাচন হলে বর্তমান ভবন দিয়ে কাজ পরিচালানা করা সম্ভব হবে না, আরও বড় ভবনের দরকার। কারণ আগে ছাত্র ছিল ৬ থেকে ৮ হাজার। আর এখন ছাত্র হচ্ছে ৪০ হাজারের ওপরে।  এ ভবন সম্প্রসারণ করারও চিন্তা আছে আমাদের।’

ডাকসুর সর্বশেষ (১৯৯০) ভিপি ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান বলেন, ‘সরকারের কর্তৃত্ব হারানোর ভয় ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদাসীনতার কারণে সচল হচ্ছে না ডাকসু নির্বাচন। ফলে স্থবিরতা বিরাজ করছে ছাত্র রাজনীতিতে। গড়ে উঠছে না মেধাবী ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব। এ ছাড়া শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছেন তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে।’

প্রসঙ্গত, ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে ২৫ নভেম্বর থেকে অনশন করে যাচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সান্ধ্যকালীন স্নাতকোত্তর কোর্সের ছাত্র ওয়ালিদ আশরাফ। তার এ দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়েছে প্রগতিশীল ছাত্রজোট।

ডাকসু ভবনের ভেতরের একটি কক্ষ

উল্লেখ্য, ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ১৯২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সৃষ্টি হয়। এই সংসদ প্রতিষ্ঠার পর থেকে মোট ৩৬ বার ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। প্রথম ভিপি নির্বাচিত হন মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক হন যোগেন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত। ডাকসুর সর্বশেষ ভিপি ও জিএস ছিলেন আমানউল্লাহ আমান ও খায়রুল কবির খোকন।

১৯৯০ সালের ৬ জুনের নির্বাচনের এক বছর পর ১৯৯১ সালের ১২ জুন তখনকার ভিসি অধ্যাপক মনিরুজ্জামান মিঞা ডাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। কিন্তু নির্বাচন হয়নি। এরপর ১৯৯৪ সালের এপ্রিল মাসে তৎকালীন ভিসি অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমদ ডাকসুর তফসিল ঘোষণা করেন। পরিবেশ না থাকার অভিযোগে ছাত্রলীগের বাধার মুখে নির্বাচন স্থগিত হয়ে যায়। একইভাবে ১৯৯৫ সালেও ডাকসুর তফসিল ঘোষণা করা হয়। তবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। ১৯৯৬ সালে অধ্যাপক একে আজাদ চৌধুরী ভিসির দায়িত্ব নেওয়ার পর একাধিকবার ডাকসু নির্বাচনের সময়সীমার কথা জানান। কিন্তু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণায় ব্যর্থ হন। ১৯৯৭ সালে বঙ্গবন্ধু হলে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে ছাত্রদল নেতা আরিফ হোসেন তাজ খুন হন। ওই ঘটনা তদন্তে গঠিত তদন্ত কমিটি ১৯৯৮ সালের ২৩ মে রিপোর্ট দেয়। রিপোর্টে ডাকসু ভেঙে দেওয়াসহ ৬ মাসের মধ্যে নির্বাচনের সুপারিশ করা হয়। এরপর ২৭ মে সিন্ডিকেট সভায় ডাকসু ভেঙে দেওয়া হয়। এরপরও অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরী দু’বার নির্বাচনের উদ্যোগ নিয়েও সফল হননি। দীর্ঘদিন পর ২০০৫ সালের মে মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ভিসি অধ্যাপক এসএমএ ফায়েজ ডাকসু নির্বাচনের ঘোষণা দেন, কিন্তু তখনও নির্বাচন হয়নি। সর্বশেষ ২০১৫ সালে ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটি গঠন হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কমিটিও ভিসির কাছে ডাকসু নির্বাচনসহ ১৯ দফা দাবি জানায়। 

 

/এমএনএইচ/ আপ-/এসএসএ/
সম্পর্কিত
প্রতি শ্রেণিতে ৫৫ শিক্ষার্থী ভর্তির নির্দেশ প্রতিমন্ত্রীর
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের
এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের সময় বেড়েছে
সর্বশেষ খবর
সাদি মহম্মদ স্মরণে ‘রবিরাগ’র বিশেষ আয়োজন
সাদি মহম্মদ স্মরণে ‘রবিরাগ’র বিশেষ আয়োজন
‘নীরব এলাকা’, তবু হর্নের শব্দে টেকা দায়
‘নীরব এলাকা’, তবু হর্নের শব্দে টেকা দায়
নির্দেশের পরও হল ত্যাগ করছেন না চুয়েট শিক্ষার্থীরা, বাসে আগুন
নির্দেশের পরও হল ত্যাগ করছেন না চুয়েট শিক্ষার্থীরা, বাসে আগুন
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা