X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

‘আমাদের কান্না দেখবে কে?’

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১৮ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৮:৫৪আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৮:৫৬

দালালের প্রতারণার শিকার হয়ে সৌদি আরব থেকে ফিরে আসা ইয়াসমিন

রাজধানীর ডেমরা এলাকায় থাকেন ইয়াসমিন। বছরখানেক আগে দালালের হাত ধরে পাড়ি দিয়েছিলেন সৌদি আরবে। ঋণ করে দালালকে একলাখেরও বেশি টাকা দিয়ে ভাগ্য পরিবর্তন করতে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু আড়াই মাসের মাথায় তার স্বামী আবারও টাকা ঋণ করে তাকে দেশে ফেরত নিয়ে আসেন। কারণ, ইয়াসমিনের ওপর চালানো হয়নির্মম নির্যাতন।

সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) সকালে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবসের আলোচনায় মর্মন্তুদ এ ঘটনা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন ইয়াসমিনসহ দেশে ফিরে আসা কয়েকজন নারী শ্রমিক।

ইয়াসমিন জানান, সে দেশে কাজ করতে গিয়ে তার হাতের সমস্যা এবং কোমরের হাড় ক্ষয় হয়ে গেছে। নিজের চিকিৎসা আর  ঋণের টাকা দুটোই তার জীবনে ভর করেছে অভিশাপের মতো।

আরেক নারী শ্রমিক সেলিনা বেগম। কাজ দেওয়ার কথা বলে দালাল তাকে কাতারে পাঠিয়েছিল। এজন্য দালালকে দিতে হয়েছে একলাখ টাকা। অথচ সেখানে গিয়ে তিনি জানতে পারেন, মালিক ২০০ ডলার এবং প্লেনের ভাড়া দিয়ে তাকে কাতারে নিয়ে গেছেন। সেখানে প্রায় আট মাস কাজ করেছেন সেলিনা। কিন্তু দেশে ফেরার সময় এক টাকাও নিয়ে আসতে পারেননি। দেশে ফিরে সেলিনা দালালের বিরুদ্ধে  এলাকার মুরুব্বিদের কাছে এ নিয়ে অভিযোগ করেন। কিন্তু কেউই তার কথায় কর্ণপাত করেনি।  তার অভিযোগ, এলাকার মাস্তানদের কাছ থেকে টাকা খেয়ে সবাই এখন চুপ।  সবার কাছে তার প্রশ্ন , ‘আমার কান্না দেখবে কে?’

এভাবেই অবর্ণনীয় ঘটনার কথা তুলে ধরেন নির্যাতিত নারী গৃহ শ্রমিকরা। আইএলও কনভেনশন ১৮৯ অনুসমর্থন করে ‘গৃহ শ্রম আইন’-এর দাবিতে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে জাতীয় গৃহ নারী শ্রমিক ইউনিয়ন। আলোচনায় বক্তারা বলেন, বিদেশে শ্রমিক নির্যাতনের আলোচনা আজকে নতুন না। যে তথ্য আমাদের জানা আছে, দীর্ঘদিন ধরে সেটা নিয়ে আর আলোচনা করা যাবে না।  কিভাবে আলোচনা বন্ধ করে জাতীয় বিতর্ক তৈরির সুযোগ সৃষ্টি করা যায়, সেটা আমাদের ভাবতে হবে। যে দেশের মানুষ হাজার বছর ধরে দাস প্রথায় বিশ্বাসী, সে দেশে আমরা নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে কিভাবে শ্রমিক পাঠাই বলে প্রশ্ন করেন বক্তারা।

নারী অভিবাসীদের পুনর্বাসনের কোনও প্রক্রিয়া আছে কিনা, কিংবা তাদের অভিযোগ জানানোর কোনও জায়গা আছে কিনা প্রশ্নে অভিবাসী শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করা সংস্থা ওয়ারবি উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুল হক জানান, অভিযোগ শোনানোর জায়গা আছে। কাকরাইলের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আট তলায় একটি সেল আছে। সেখানে একজন আইনজীবীও আছেন। কিন্তু প্রচার প্রচারণার অভাবে আমরা এই বার্তা পৌঁছাতে পারছি না। পুনর্বাসন করার আগে জরুরি হলো- নির্যাতিত শ্রমিকদের একটি ডেটাবেজ তৈরি করা। তাদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে তারপর পুনর্বাসন প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করা যায়। কারণ, সরকার বলছে- তাদের কাছে কোনও অভিযোগ নেই। তাই আগে তথ্য সংগ্রহ করা জরুরি।

 

/এসও/ এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
বাসের পেছনের অংশ খোয়া যাচ্ছে কেন?
বাসের পেছনের অংশ খোয়া যাচ্ছে কেন?
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!
মন্ত্রীর অপেক্ষায় তরমুজ বিক্রিতে দেরি, ক্ষুব্ধ ক্রেতারা
মন্ত্রীর অপেক্ষায় তরমুজ বিক্রিতে দেরি, ক্ষুব্ধ ক্রেতারা