X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যাগ ছেড়ে দিয়েও ছিনতাইকারীর হাত থেকে সন্তানকে বাঁচাতে পারলেন না মা

আমানুর রহমান রনি
১৯ ডিসেম্বর ২০১৭, ০১:১৬আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০১৭, ০১:৪১

ঢামেক হাসপাতালের মর্গের সামনে আকলিমা বেগমের আহাজারি, পাশেই তার বড় বোনের কোলে আরেক ছেলে ব্যাগ ছেড়ে দিয়েও সাত মাস বয়সী সন্তানকে ছিনতাইকারীর হাত থেকে বাঁচাতে পারেননি মা আকলিমা বেগম। তাই এখনও থামেনি তার আহাজারি। ঢাকার পথে এমন মৃত্যুর ফাঁদ আগে আঁচ করতে পারলে সন্তানের চিকিৎসার জন্য ঢাকায় আসতেন না— এমনই বিলাপ এখন আকলিমা বেগমের মুখে।
সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) ভোর সাড়ে ৫টার দিকে রাজধানীর দয়াগঞ্জ এলাকায় দিয়ে রিকশায় শনিরআখড়া যাওয়ার পথে ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন শাহ আলম গাজী ও আকলিমা বেগম দম্পতি। এসময় আকলিমা বেগম ও তাদের সাত মাস বয়সী সন্তান আরাফাত রিকশা থেকে পড়ে যান। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় শিশু আরাফাতের। মুহূর্তের মধ্যেই সন্তান হারানোর সেই দৃশ্যের কথা কিছুতেই ভুলে থাকতে পারছেন না মা আকলিমা।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গের সামনে বসে বিলাপ করছিলেন আকলিমা। তিনি বলতে থাকেন, ‘আমি কেন ঢাকায় আসলাম? ঢাকায় না আসলে আমার বাবার কিছু হতো না। আমি কিছুই বুঝলাম না।’
একই কথা বারবার আওড়াচ্ছিলেন আকলিমা। কিছুক্ষণ পর পর সংজ্ঞাও হারিয়ে ফেলছিলেন তিনি। তার বড় ছেলে আল-আমিনকে নিয়ে পাশেই বসেছিলেন আকলিমার বড় বোন। আকলিমার স্বামী শাহ আলম তখন সন্তান হারানোর শোকে নিশ্চল-নিশ্চুপ।
সন্তান হারানোর শোকে কিছুক্ষণ পরপরই সংজ্ঞা হারাচ্ছিলেন আকলিমা বেগম কাছে গিয়ে বসতেই আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেন না শাহ আলম। অঝোর ধারায় কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘আমরা ভোর সাড়ে ৪টার দিকে ময়ূরী ২ লঞ্চে করে শরীয়তপুর থেকে এসে সদরঘাটে নামি। বাইরে অন্ধকার ও কুয়াশা দেখে লঞ্চেই বসেছিলাম। সাড়ে ৫টার দিকে লালকুটির ঘাটে নেমে ১৩০ টাকায় শানিরআখড়া যাওয়ার জন্য রিকশা ভাড়া করি। দুই ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে রিকশায় উঠি। আমার বাম পাশে ছোট ছেলে আরাফতাকে নিয়ে বসে ছিল আকলিমা। ছেলেকে তোয়ালে দিয়ে জড়িয়ে বুকের ভেতরে রেখেছিল আকলিমা। তার বাম কাঁধেই ছিল ভ্যানিটি ব্যাগ। ডান পাশে আমি বসা বড় ছেলেকে নিয়ে। আমার পায়ের নিচেও বড় ব্যাগ।’
একটু থেমে শাহ আলম আবার বলেন, ‘রিকশা দয়াগঞ্জ ফুটওভার ব্রিজের কাছাকাছি এলাকায় পৌঁছালে এক ছিনতাইকারী ব্যাগ ধরে টান দেয়। আমি এ পাশ থেকে কিছু খেয়াল করিনি। শুধু দেখলাম আকলিমা পড়ে গেল। ওর বুকেই তো ছিল ছোট ছেলে। এরপর শুধু একটা চিৎকারের শুনলাম, আর কোনও শব্দ হলো না। তাড়াতাড়ি রিকশা থেকে নেমেই ছেলেটাকে কোলে নিলাম। দেখি একদম নিস্তেজ। রিকশাওয়ালা একটা সিএনজি ঠিক করে দিলো, ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে এলাম। দেখে ডাক্তার বললো, আমার ছেলে আর বেঁচে নেই।’
শাহ আলম জানান, তার বড় ছেলে আল-আমিন অসুস্থ। মাস দেড়েক আগে রাজধানীর শিশু হাসপাতালে চিকিৎসককে দেখিয়েছেন ছেলেকে। কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আবার আসতে বলেছিলেন ওই চিকিৎসক। সে কারণেই আবার ঢাকায় আসছিলেন তারা। তিনি আরও জানান, শনিরআখড়ায় তার স্ত্রী আকলিমার বড় বোন থাকেন পরিবারসহ। সেখানে থেকেই বড় ছেলের চিকিৎসা করানোর কথা ছিল।
নিহত শিশু আরাফাতের বাবা শাহ আলমও শোকে মূহ্যমান সন্তান হারানোর শোকে মূহ্যমান শাহ আলম বলেন, ‘ছোট ছেলেটার শরীরও ভালো যাচ্ছিল না। ভাবছিলাম, ওকেও ডাক্তার দেখাবো। কিন্তু কী থেকে কী হয়ে গেল! আকলিমার ব্যাগে মাত্র হাজার দেড়েক টাকা ছিল। দুই ছেলের কিছু ওষুধ ছিল। আর কিছু ছিল না। মাত্র এই কয়টা টাকার জন্য আজ আমার ছেলেকে হারাতে হলো!’
আকলিমা বেগম কাঁদতে কাঁদতেই বললেন, ‘আমার ব্যাগ নিতে চেয়েছিল ওরা, ব্যাগ তো ছেড়েই দিয়েছিলাম। কিন্তু আমার বাবাকে তো আর বাঁচাতে পারলাম না। আমার বুকের ধনকে আমার কাছ থেকে ওরা কেড়ে নিলো।’
ঘটনার পর যাত্রাবাড়ী থানায় একটি মামলা হয়েছে। নিহত শিশুর বাবা নিজেই বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন। তবে এই মামলার কোনও আসামিকে এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
এদিকে, ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে শিশুটির লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিছুর রহমান। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঘটনাটি সকাল সাড়ে ৬টার দিকে ঘটে। এর পরপরই আমরা ঘটনাস্থল ও ঢামেক হাসপাতালে যাই। সেখানে পরিবার সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছি। জড়িতদের ধরতে আমরা এরই মধ্যে আইনি প্রক্রিয়ার পাশাপাশি এলাকায় অভিযান শুরু করেছি।’

/টিআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ ডিসি ও এসপিদের
উপজেলা নির্বাচনমন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ ডিসি ও এসপিদের
জিম্মিদের মুক্তির জন্য হামাসকে ১৮ দেশের আহ্বান
জিম্মিদের মুক্তির জন্য হামাসকে ১৮ দেশের আহ্বান
অডিও ফাঁস, নারীর কাছে ডিবি পুলিশ সদস্যের ‘হেরোইন বিক্রি’
অডিও ফাঁস, নারীর কাছে ডিবি পুলিশ সদস্যের ‘হেরোইন বিক্রি’
উপজেলা নির্বাচনে নেই বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল
উপজেলা নির্বাচনে নেই বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা