X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

এক ছিনতাইকারীর কাছে পাওয়া গেলো ৬০ ভ্যানিটি ব্যাগ!

নুরুজ্জামান লাবু
০২ জানুয়ারি ২০১৮, ২২:৫৮আপডেট : ০৩ জানুয়ারি ২০১৮, ১৩:৩৪

সোহেলের বাসা থেকে জব্দ করা ভ্যানিটি ব্যাগ নতুন বছরের প্রথম দিন, সোমবার সন্ধ্যা। মিরপুরের বিআরটিএ’র সামনে হঠাৎ এক রিকশাযাত্রীর ব্যাগ ধরে টান দেয় এক মোটরসাইকেল আরোহী। যদিও ব্যাগটা নিতে পারেনি, শেষ রক্ষাও হয়নি তার। পথচারীদের ধাওয়া  খেয়ে মোটরসাইকেল থেকে পড়ে যায় সেই আরোহী। স্থানীয় লোকেরা গণপিটুনী দেয় তাকে। পাশেই দায়িত্ব পালন করছিল কাফরুল থানা পুলিশের একটি টহল টিম। তারা এগিয়ে গিয়ে সেই মোটরসাইকেল আরোহীকে পাকড়াও করে নিয়ে যায় থানায়। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে জানায় সে পেশায় একজন ছিনতাইকারী। কাফরুল এলাকাতেই তার বাসা। সেই বাসায় তল্লাশি চালিয়ে উদ্ধার করা হয় ৬০টি ভ্যানিটি ব্যাগ ও পার্স। সঙ্গে বিভিন্ন মালামাল। ছিনতাই করে আনা এই ব্যাগগুলো সে বাসায়ই রেখেছিল।

পুলিশের হাতে আটক  হওয়া এই ছিনতাইকারীর নাম ফয়সাল রহমান সোহেল (৩০)। পেশাদার ছিনতাইকারী সে। মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) তার বিরুদ্ধে কাফরুল থানায় মামলা দায়ের করেছেন এএসআই  মাহফুজুর রহমান। বুধবার তাকে আদালতে পাঠানো হবে। সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, সোহেল মূলত টানা পার্টির সদস্য। রাস্তায় মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুরতো আর সুযোগ বুঝে রিকশা আরোহীর ব্যাগ টান দিয়ে নিয়ে যেত।

পুলিশের হাতে গ্রেফতার সোহেল সম্প্রতি রাজধানী ঢাকায় টানা পার্টির কর্মকাণ্ড অনেক বেশি বেড়ে গেছে। দিনেরাতে ২৪ ঘণ্টাই টানা পার্টির হাতে সবকিছু খোয়াচ্ছে সাধারণ মানুষ। গত ১৮ ডিসেম্বর যাত্রাবাড়ীর দয়াগঞ্জে এক রিকশা আরোহী দম্পতির ব্যাগ টান দিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় আরাফাত নামে তাদের কোলের শিশু ছিটকে রাস্তায় পড়ে গিয়ে মারা যায়। এ ঘটনায় তোলপাড় শুরু হলে ছিনতাইকারী ও টানা পার্টির সদস্যদের ধরতে বিশেষ অভিযানে নামে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। এরপর থেকে টানা অভিযানে অন্তত দেড় শতাধিক ছিনতাইকারী ও টানা পার্টির সদস্যদের গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ২৬ ডিসেম্বর এক রাতেই গ্রেফতার করা হয় ৫৬ জনকে।

তবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের বিশেষ অভিযান চললেও থেমে নেই ছিনতাই ও টানা পার্টির সদস্যদের কর্মকাণ্ড। মঙ্গলবার রাত একটার দিকে ঢাকার বাইরে থেকে ফিরে সেন্ট্রাল রোডের বাসায় যাওয়ার পথে টানা পার্টির সদস্যরা ব্যাগ নিয়ে যায় ল্যাব এইডের গণসংযোগ শাখার ব্যবস্থাপক মেজবাহ য়াযাদের। তিনি বলেন, ‘রাত একটার দিকে সেন্ট্রাল রোডের মুখে গাড়ি থেকে নেমে রিকশায় উঠতে যাচ্ছি। এসময় একটি সাদা রঙের প্রাইভেটকার পেছন দিয়ে যাওয়ার সময় ভেতর থেকে কেউ একজন হাত বাড়িয়ে ছোঁ মেরে আমার কাঁধে থাকা ব্যাগটি নিয়ে যায়।’

গণধোলাইয়ের শিকার পেশাদার ছিনতাইকারী ফয়সাল রহমান সোহেল ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সূত্রগুলো বলছে, টানা পার্টির সদস্য ও ছিনতাইকারীরা সাধারণত সন্ধ্যার পর থেকে ভোর পর্যন্ত সক্রিয় থাকে। সন্ধ্যার পর ঘরে ফেরা মানুষ ও মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত ঢাকার বাইরে থেকে আসা লোকজনের কাছ থেকে ব্যাগ ছিনিয়ে নেয় তারা। ছিনতাই ও টানা পার্টির সদস্যরা সাধারণত প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেল ব্যবহার করে থাকে ব্যাগ টান দেওয়ার সময়। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার আব্দুল বাতেন বলেন, ‘আমরা সম্প্রতি অনেক ছিনতাইকারী ও টানা পার্টির সদস্যদের গ্রেফতার করেছি। আমাদের অভিযান এখনও অব্যাহত রয়েছে।’ আমাদের অভিযানের কারণে ছিনতাইকারী ও টানা পার্টির সদস্যদের উৎপাত কমে এসেছে বলেও দাবি করেন তিনি।

কাফরুল থানায় আটক হওয়া টানা পার্টির সদস্য সোহেল প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, সে সাধারণত মিরপুর ১০ থেকে মিরপুর ১৪ নম্বর পর্যন্ত সড়কে ব্যাগ ছিনিয়ে নেওয়ার কাজ করে। সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত চলতো তার ব্যাগ ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযান। তার সঙ্গে আরও কয়েকজন ছিনতাইয়ের কাজে জড়িত বলেও সন্দেহ করছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।

কাফরুল থানার এসআই ওয়াহিদুল হাসান সুমন জানান, তারা সোহেলকে আটক করার পর থানায় এনে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করেন। কিন্তু প্রথম দিকে সে ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকারই করছিল না। এসময় তার ব্যাগের ভেতরে একটি স্কুলের ভর্তির কাগজপত্র পাওয়া যায়। ওই কাগজপত্রে থাকা ঠিকানায় গিয়ে পুলিশ জানতে পারে, কয়েকদিন আগে এই কাগজসহ ব্যাগটি টানা পার্টির এক সদস্য ছিনিয়ে নিয়ে যায়।

ছিনতাই করা ভ্যানিটি ব্যাগসহ পুলিশের হাতে গ্রেফতার সোহেল পুলিশ কর্মকর্তা ওয়াহিদুল হাসান সুমন বলেন,  ‘আমরা এরপর সোহেলকে নিয়ে তার উত্তর কাফরুলের মিতালী হাউজিংয়ের ১৬ নম্বর বাসায় অভিযান চালাই। তার বাসা থেকে ৬০টি ভ্যানিটি ব্যাগ ও পার্স উদ্ধার করা হয়। এসব ব্যাগের মধ্যে স্বর্ণালঙ্কার, ২৫০টি চাবি, নগদ প্রায় ২৪ হাজার টাকা, বিভিন্ন মানুষের জাতীয় পরিচয়পত্র, অনেকগুলো ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড, ৫০-৬০টি সিম পাওয়া যায়। বিভিন্ন সময়ে ছিনিয়ে নেওয়ার পর ব্যাগসহ এসব জিনিসপত্র বাসায় রেখে দেয় সে।’

থানা পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, গ্রেফতার সোহেলের গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর থানাধীন বসনিটোলায়। তার বাবার নাম মজিবর রহমান। তবে তার নিজের জাতীয় পরিচয়পত্রে রাজশাহীর ঠিকানা রয়েছে। কাফরুলের বাসায় সে স্ত্রীসহ থাকতো। স্ত্রী সন্তান সম্ভবা হওয়ায় তাকে গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে ।

পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সোহেল ২-৩ বছর ধরে পেশাদার ছিনতাইকারী হিসেবে কাজ করে আসছে বলে স্বীকার করেছে। তবে সে তার সহযোগীদের নাম বলতে গড়িমসি করছে। তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে জানান কাফরুল থানা পুলিশের একজন কর্মকর্তা।

 

 

 

/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী: ওয়াশিংটনে অর্থমন্ত্রী
ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী: ওয়াশিংটনে অর্থমন্ত্রী
ইউরোপা লিগ থেকে বিদায়ের ভালো দিক দেখছেন লিভারপুল কোচ
ইউরোপা লিগ থেকে বিদায়ের ভালো দিক দেখছেন লিভারপুল কোচ
রাশিয়ায় বোমারু বিমান বিধ্বস্ত
রাশিয়ায় বোমারু বিমান বিধ্বস্ত
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা সীমান্তরক্ষীদের নিতে জাহাজ আসবে এ সপ্তাহেই
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা সীমান্তরক্ষীদের নিতে জাহাজ আসবে এ সপ্তাহেই
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন