X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

শীতের যত বিপদ

তাসকিনা ইয়াসমিন
০৯ জানুয়ারি ২০১৮, ০৭:৫৯আপডেট : ০৯ জানুয়ারি ২০১৮, ০৮:০৩

আগুন জ্বালিয়ে শীত তাড়ানোর চেষ্টা

‘ঘর-দুয়ার আজ বাউল যেন শীতের উদাস মাঠের মতো/ ঝরছে গাছে সবুজ পাতা আমার মনের-বনের যত- উন্মনা’–কাজী নজরুল ইসলাম।

শীতকাল যেমন আনন্দময়, তেমনি এটি নিয়ে আসে নানা বিপদ-বালাই। এ সময়ে একদিকে শীত এলে জমে বাহারি পিঠাপুলির উৎসব, বনভোজনের আয়োজন, শীতের রঙিন পোশাক তো আছেই।  সেইসঙ্গে শীত এলেই বেড়ে যায় রোগ ব্যাধি। শিশু থেকে বৃদ্ধ– সবার জন্য শীতের সঙ্গে সঙ্গে আসে সর্দি, কাশি, হাঁচির মতো নানা রোগ। শ্বাসকষ্ট, অ্যালার্জিজনিত রোগেরও প্রকোপ বাড়ে শীতে। এই অবস্থা সামাল দিতে শীতের সময় গরম কাপড় পরা, শীতের বাতাস এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা।  আগুন পোহাতেও সতকর্তা অবলম্বন প্রয়োজন।

হাজারীবাগ সরকারি বহিঃবিভাগ সেবাকেন্দ্রের মেডিক্যাল অফিসার ডা. নুশরাত মোমেনা বলেন, ‘শীতের সময় শিশুদের ব্রংকিওলাইটিস রোগের প্রকোপ বাড়ে। নিউমোনিয়ার ঝুঁকি বাড়ে। বড়দের কমন রোগ হচ্ছে সর্দি, হাঁচি, কাশি, জ্বর জ্বর ভাব। এসময় ডায়রিয়ার সমস্যাটা প্রকট হয়ে দেখা দেয়। বড়দের ক্ষেত্রে রেসপিরেটরি ইনফেকশনগুলো বেড়ে যায়। শরীরে অ্যালার্জিজনিত সমস্যা অনেক বাড়ে।’

শীতকালীন সতর্কতা হিসেবে তিনি বলেন, ‘এসময় ঠাণ্ডার কারণে অনেকেই কম গোসল করে থাকে। এটা একেবারেই উচিত নয়। গরম পানি মিশিয়ে গোসল করতে হবে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি প্রতিদিন খেয়াল রাখতে হবে। শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচতে গরম কাপড় গায়ে দিতে হবে। শীতের বাতাস বইলে সেক্ষেত্রে কম যাতায়াত করতে হবে। অ্যালার্জিজনিত অসুবিধা থেকে বাঁচতে নিয়মিত গোসল করার ওপর জোর দিতে হবে।’

হাজারীবাগ নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ডা. মাহমুদা আখতার বলেন, ‘শীতকালে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। এ কারণে সামান্যতেই রোগ বেড়ে যায়। এই সময় অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের ঠাণ্ডা লেগে যায়। হাঁপানির প্রকোপ বেশি হয়। ফলে, তাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ে।’ তিনি প্রসূতি মায়েদের সম্পর্কে বলেন, ‘প্রসূতি মায়েদের এমনিতেই ডেলিভারির জন্য দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়। তার ওপর এদের সবসময় টেনশনে থাকতে হয় সন্তানের যেন ঠাণ্ডা না লাগে। নিউমোনিয়া অ্যাটাক না করে। নিউমোনিয়ায় পেটে পানি জমে যায়। ডায়রিয়ার প্রবলেমও দেখা দেয়। শীতকালে অন্তঃসত্ত্বা ও প্রসূতি মায়েদের সব ধরনের রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এক্ষেত্রে ঠাণ্ডা না লাগার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘শীতের দিনে পোড়া রোগীর সংখ্যা খুব বেশি বেড়ে যায়। আমাদের এখানে রোগীর সংখ্যা চারশ ছাড়িয়ে গেছে।’

এই সময় পুড়ে যাওয়া রোগী বেড়ে যাওয়ার প্রধান দুটি কারণ হচ্ছে, আগুন পোহানো ও পানি গরম করা। বিশেষ করে শিশুরা শীতের সময় বেশি পুড়ে।

ডা. সামন্ত লাল আরও বলেন, ‘শীতকালে আগুনে পোড়া থেকে রক্ষা পেতে রান্নার সময় অবশ্যই নারীদের শাড়ি ও ওড়না টাইট করে পেঁচিয়ে নিয়ে রান্না করতে হবে। যেন পরনের কাপড় কোনোভাবেই আগুনের সংস্পর্শে না আসে। আর গোসলের জন্য গরম পানি বালতিতে নিয়ে গোসলখানায় যেতে হবে। গোসলের জন্য গরম পানি ডেকচিতে নেওয়া উচিত নয়। এতে গরম পানি গায়ে পড়ে মানুষ পুড়ে যেতে পারে। আমাদের কাছে এই ধরনের প্রচুর রোগী আসছে।’

ঢাকা জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. এহসানুল করিম বলেন, ‘শীতকালীন যেসব রোগ হয় এগুলো এড়িয়ে চলতে শীতের মধ্যে মানুষজন বাইরে যেন বেশি না যায়। ঢাকা জেলায় আমাদের যেসব স্বাস্থ্যকর্মী আছেন তাদের আমরা মানুষকে সচেতন করার জন্য বলেছি। তারা মানুষজনকে শীতজনিত রোগের ব্যাপারে সচেতন করছেন। একইসঙ্গে অসুস্থ হলে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে যাওয়ার জন্য উৎসাহিত করছেন। শিশু ও বৃদ্ধরা এসময় বেশি অসুস্থ হতে পারে। তাই তাদের সতর্কভাবে রাখার জন্য সচেতন করা হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের কাছে শীতকালীন রোগের জন্য যেসব ওষুধ প্রয়োজন সেগুলো পর্যাপ্ত পরিমাণে আছে। এসময় যে ডায়রিয়া হয়, সেটি প্রতিরোধে অন্য কোনও ওষুধ লাগে না। শুধু ওরস্যালাইন লাগে। সেটা পর্যাপ্ত পরিমাণে আছে।’

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমরা এরইমধ্যে সার্কুলার দিয়েছি। গতকাল আমাদের সিভিল সার্জনদের সঙ্গে মিটিং ছিল, সেখানে নির্দেশনা দিয়েছি যেন সবাই সতর্ক থাকে। প্রথমত হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে যে রোগী ভর্তি আছে তাদের যেন কোনও অসুবিধা না হয়। হয়ত দেখা যেতে পারে যে ওয়ার্ডে রোগী ভর্তি আছে জানালার কাঁচ ভাঙা। বাইরে থেকে বাতাস আসছে। এক্ষেত্রে কাঁচটি ঠিক করা, মেরামতের উপায় না থাকলে সেখানে মোটা কাগজ দিয়ে বাতাস আটকানোর ব্যবস্থা করা। অনেক সময় দেখা যায়, আলমারিতে কম্বল জমা আছে কিন্তু রোগীরা কষ্ট পাচ্ছে। সেখানে যেন কম্বলগুলো রোগীকে ব্যবহারের জন্য দেওয়া হয়। বিশেষ করে শিশু ওয়ার্ডে রুম গরম রাখার জন্য যেন প্রয়োজনে রুম হিটার ব্যবহার করা হয়। এই বিষয়গুলো খেয়াল রাখার জন্য বলেছি। দ্বিতীয়ত, আমরা ডাটা কালেকশন করি। তবে, অনেক সময় প্রকোপ কমে গেলে কালেকশনও কমে যায়। এখন ডাটা কালেকশনের জন্য সবাইকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘মানুষ যেন ঠাণ্ডা না লাগায়, এই সতর্কতা প্রচারের জন্য কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে এবং মসজিদের ইমামদের বলা হয়েছে তারা যেন মানুষকে সচেতন করে। এমনিতে শীতকালীন কিছু রোগ এইসময় হয়। এগুলোর জন্য আমাদের পর্যাপ্ত ওষুধ মজুদ রাখা আছে। তারপরও বলা হয়েছে, কোথাও যদি ওষুধের প্রয়োজন দেখা দেয়, আমাদের তারা যেন চাহিদা পাঠায়। চাহিদা পাঠানোর সঙ্গে সঙ্গে আমরা তাদের ওষুধ সরবরাহ করব। পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য আমাদের কাছে পর্যাপ্ত ওষুধ আছে। আমরা স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে সার্বিক পরিস্থিতির দিকে খেয়াল রাখছি।’

 

/এএম/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
বাসের পেছনের অংশ খোয়া যাচ্ছে কেন?
বাসের পেছনের অংশ খোয়া যাচ্ছে কেন?
বিরল সূর্যগ্রহণ দেখতে নায়াগ্রা জলপ্রপাতে জড়ো হবেন ১০ লাখ দর্শনার্থী
বিরল সূর্যগ্রহণ দেখতে নায়াগ্রা জলপ্রপাতে জড়ো হবেন ১০ লাখ দর্শনার্থী
সর্বাধিক পঠিত
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি