এ বছর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) ও জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষার ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র ফেসবুকের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল সারাদেশে। শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা আশঙ্কা জানিয়েছিলেন, আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হতে যাওয়া এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষাতেও একইভাবে ফাঁস হতে পারে প্রশ্নপত্র। তাদের সেই আশঙ্কাকে সত্যি প্রমাণ করতেই প্রশ্নপত্র দেওয়ার ঘোষণা মিলতে শুরু করেছে ফেসবুকে। তবে এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর কোনও তৎপরতা চোখে পড়েনি। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, কোনোভাবেই প্রশ্ন ফাঁস হতে দেব্নে না তারা। আর ফেসবুকে যারা ‘গুজব’ তৈরি করবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যব্স্থা নিতে বলা হয়েছে টেলিযোগাযোগ কর্তৃপক্ষ বিটিআরসিকে।
গত কয়েকদিনে সামাজিক যোগাযোগের জনপ্রিয় মাধ্যম ফেসবুকে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘোষণা ঘুরতে দেখা গেছে। ফেসবুকে প্রশ্ন দেওয়া হবে— এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে পোস্ট করা হচ্ছে। PSC JSC SSC HSC Question Suggestion, All Board Examinee, SSC 2018+2019+20+21 BD— এমন বিভিন্ন নামে ফেসবুকে দেখা যাচ্ছে গ্রুপ। একটি ফেসবুক গ্রুপের এক পোস্টে বলা হয়েছে, এসএসসি (SSC) 2018 ব্যাচ সব বিভাগের সব বোর্ডের শিক্ষার্থীদের প্রাণঢালা শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। যেকোনও বিভাগের প্রশ্নের জন্য এখনই যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। লেখা হয়েছে, যাদের প্রশ্ন লাগবে, তারা ‘request diya msg korba’।
একই গ্রুপে অন্য একটি ফেসবুক আইডি থেকে আরেকটি পোস্ট করে বলা হয়েছে, ‘## NO ADVANCE ## SSC/HSC-2018-এর সব বোর্ডের প্রশ্ন লাগলে মেসেজ দাও’। এরই মধ্যে এসব পোস্টের নিচে প্রশ্ন চেয়ে কমেন্ট পড়তেও শুরু করেছে।
অন্য এক গ্রুপে অ্যাডমিন ও অন্য কয়েকটি আইডি থেকে পোস্ট করে বলা হয়েছে, ‘S.S.C EXAM 2018, যারা এবার S.S.C এক্সাম দেবে, শুধু তারা আমাকে ইনবক্সে মেসেজ দাও। সব বোর্ডের প্রশ্ন এক।’ আবার এই গ্রুপে কোনও কোনও পোস্টে বলা হয়েছে, ‘এবার এসএসসি পরীক্ষার সময় ফেসবুক বন্ধ থাকতে পারে। তবে টেনশন নেবে না। কারণ ফেসবুক বন্ধ থাকলেও ইউটিউবে প্রশ্ন দেওয়া হবে।’
প্রশ্নপত্র তারা কিভাবে পাবেন কিংবা শিক্ষার্থীদের কাছে কিভাবে প্রশ্ন বিক্রি করা হবে, জানতে চেয়ে বেশ কয়েকটি ফেসবুক গ্রুপের অ্যাডমিনদের সঙ্গে ফেসবুকে মেসেজ দিয়ে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন এ প্রতিবেদক। তবে তারা কেউই এ ধরনের মেসেজে সাড়া দেননি। বরং বেশ কয়েকটি আইডি থেকে এই প্রতিবেদকের ফেসবুক আইডি ব্লক করে দেওয়া হয়েছে।
এর আগে, পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষার প্রশ্নও ফেসবুকের মাধ্যমে ফাঁস হয়েছে। পরীক্ষা শুরুর আগে ফেসবুকে ফাঁস করা প্রশ্নের সঙ্গে পরীক্ষার মূল প্রশ্নের হুবহু মিল পাওয়া গেছে। প্রথম দিকে টাকার বিনিময়ে ফেসবুক মেসেঞ্জারে প্রশ্ন বিক্রি করা হয়েছে শিক্ষার্থীদের কাছে। পরে অব্শ্য এক পর্যায়ে বিনামূল্যেই ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপ ও পেজে উত্তরসহ প্রশ্ন তুলে দেওয়া হয়। এ নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে অসন্তোষ জানানো হয়।
এদিকে, প্রশ্নফাঁস রুখতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় আরও কঠোর ভূমিকা নিতে যাচ্ছে বলে সোমবার (৮ জানুয়ারি) মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠক থেকে জানানো হয়েছে। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, পরীক্ষা কেন্দ্রে কেবল পরীক্ষার্থী নয়, কোনও শিক্ষককেও মোবাইল নিয়ে ঢুকতে দেওয়া হবে না। কেবল কেন্দ্রসচিব একটি মোবাইল ব্যবহার করতে পারবেন। তবে সেই মোবাইলেও কোনও ক্যামেরা থাকতে পারবে না। পরীক্ষা শুরুর তিন দিন আগে থেকে পরীক্ষা শেষ হওয়া পর্যন্ত দেশে সব ধরনের কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে। পরীক্ষার্থীকে পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগেই কেন্দ্রে প্রবেশ বাধ্যতামূলকও করা হয়েছে। এছাড়া পরীক্ষা শুরুর আগে থেকে পরীক্ষা চলার সময় দেশে ইন্টারনেট ও ফেসবুক বন্ধ রাখার ব্যাপারেও আলোচনা হয়।
পরীক্ষা শুরুর আগেই ফেসবুকে প্রশ্ন দেওয়া বিষয়ক প্রচারণার বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রণালয়ের ওই বৈঠকে উপস্থিত মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. মাহাবুবুর রহমান বাংলা ট্র্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে বিটিআরসি’র সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা তাদের জানিয়েছি, ফেসবুকে কেউ এমন গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করলে সঙ্গে সঙ্গে তার ফেসবুক আইডি বিটিআরসি বন্ধ করে দেবে।’
পরীক্ষার সময় ফেসবুক বন্ধ রাখার বিষয়ে প্রফেসর মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘বৈঠকে ফেসবুক বন্ধ রাখার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা বিটিআরসিকে অনুরোধ করব, ফেসবুক বন্ধ রাখা যায় কিনা। তারা যদি রাজি হয়, তবে পরীক্ষা চলাকালে ফেসবুক বন্ধই রাখা হবে।’
আরও পড়ুন-
শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণের দাবি শিক্ষকদের ১৬ সংগঠনের
ঢাবিতে সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন