X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

নির্যাতিত নারীদের ঘুরে দাঁড়ানোর প্রতীক পূর্ণিমা শীল

এস এম আববাস
১৮ জানুয়ারি ২০১৮, ২২:৩৬আপডেট : ১৯ জানুয়ারি ২০১৮, ১০:০২


পূর্ণিমা শীল লজ্জা আর সংকোচের শৃঙ্খল ভেঙে নারীদের ঘুরে দাঁড়ানোর প্রতীক হিসেবেই নিজেকে উপস্থাপন করলেন কৈশোরে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের  শিকার পূর্ণিমা শীল। নির্যাতিত নারীরা সংকোচের কারণে নিজেকে গুটিয়ে রাখতে চাইলেও এ বিষয়ে তার অবস্থান ভিন্ন। তিনি মনে করেন, এমন ঘটনা নারীর জন্য নয় বরং পুরুষের জন্য লজ্জার। তাই সংকোচ ভেঙে সবাইকে এর প্রতিবাদ করতে হবে, বেরিয়ে আসতে হবে।

পূর্ণিমা শীলের এমন সাহসের তারিফ করেছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমও। পূর্ণিমাকে নিজের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাসও দিয়েছেন তিনি। আজ বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটায় এই পদে যোগ দিতে এসে তিনি মন খুলে কথা বলেছেন বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে। এসময় পূর্ণিমা প্রধানমন্ত্রী ও তথ্য প্রতিমন্ত্রীকে এজন্য কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান। তবে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে সরকারি চাকরি করার ইচ্ছা আছে তার। বলেন,‘মামুনির (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) দেখানো আলোতে পথ চলতে চাই। নিজের যোগ্যতায় সরকারি চাকরি করতে চাই।’

পূর্ণিমা বলেন,‘ ধর্ষণসহ যে কোনও নির্যাতনই যে কারও মন ভেঙে দেয়। নিজেকে অপরাধী বলে মনে হয়। কিন্তু, সবাইকে বিশেষ করে নারীদের বুঝতে হবে এমন ধরনের ঘটনায় তার কোনও দোষ নেই। তার কোনও দায় নেই, অপরাধ নেই। তাই মুখ বুঁজে এই ঘটনা সহ্য করা বা চেপে যাওয়ার প্রবণতা ছেড়ে তাকেই ঘুরে দাঁড়াতে হবে। অন্যায় সহ্য করার সাধারণ নিয়ম ভেঙে নারীরা সাহস নিয়ে এগুবে। নজরবন্দি হয়ে থাকবে না। এটাই আমি চাই।’       

গণমাধ্যমে তার ছবি ছাপার অনুমতি দিয়ে পূর্ণিমা জানান,‘নারী নির্যাতিত হলে তা পুরুষের জন্যই লজ্জার, সমাজের জন্য লজ্জার, তার জন্য নয়।’

তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমের ব্যাক্তিগত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পাওয়া পূর্ণিমা শীল নির্যাতিত নারীদের জন্য কাজ করতে চান। লেখাপড়ার পাশাপাশি এজন্য গড়ে তুলেছেন ‘পূর্ণিমা ফাউন্ডেশন’ নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। নির্যাতিত নারীদের পাশে দাঁড়াতে এই ফাউন্ডেশনে সহায়তার জন্য সমাজের বিত্তবানদের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।

নির্যাতিত নারীদের জন্য কাজ করার প্রত্যয় জানিয়ে পূর্ণিমা বলেন,‘দরিদ্র নারী শিশুদের লেখাপড়া শেখানো, নির্যাতনের শিকার নারীদের আইন সহায়তা দেওয়াসহ বিভিন্ন কাজ করতে চাই। এ পর্যন্ত বেশ কিছু নারীকে সহায়তা দিয়েছি। তবে আমার একার পক্ষে সমাজের নির্যাতিত নারীদের সহায়তা দেওয়া সম্ভব নয়। এজন্য বিত্তবানদেরও এগিয়ে আসা প্রয়োজন।’

‘আগে প্রাইভেট জব করেছি। আমার ইচ্ছা ছিল না। মায়ের ইচ্ছায় করেছি। এখানে আমি যদি ভালোভাবে কাজ করতে পারি তাহলে নিজের যোগ্যতায় আমি যেকোনও লেভেলে সরকারি চাকরি করতে চাই। প্রতিমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পেয়ে আমি খুশি। আমি প্রথমেই কৃতজ্ঞতা জানাই প্রতিমন্ত্রীকে, দ্বিতীয়ত আমার মামুনি প্রধানমন্ত্রীকে।’

মানুষের সেবা করার জন্য পরবর্তীতে রাজনীতিতে জড়াতে চান, এজন্য রাজনীতি শিখতে চান পূর্ণিমা।

পূর্ণিমা শীল সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া থানার দেলুয়া গ্রামের অনিল কুমার শীলের পরিবারের ওপর ২০০১ সালের নির্বাচন পরবর্তী ৮ অক্টোবর রাতে বর্বর অত্যাচার-নির্যাতন চালায় বিএনপি-জামায়াত জোটের সন্ত্রাসীরা। এক পর্যায়ে তারা অনিল শীলের ছোট মেয়ে পূর্ণিমা শীলকে সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণ করে। দশম শ্রেণির ছাত্রী পূর্ণিমা নির্যাতনের শিকার হয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছিলেন। কৈশোরের সেই ঘটনায় ভেঙে পড়ার অবস্থা হয়েছিল। কিন্তু,বাবা-মার আদেশ ছিল আমি যেন ভয় না পাই। এই নারকীয় নির্যাতনের পর হিন্দু পরিবারের সন্তান হিসেবে, সংখ্যালঘু হিসেবে বিচার চেয়েছিলাম। পুলিশের সহায়তার কথাও পেয়েছি।তবে আমাকে সামনে আনতে, সাহস জোগাতে সহায়তা করেছেন তদানীন্তন বিরোধীদলীয় সদস্য ও বর্তমানের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

পূর্ণিমা বলেন,‘নির্যাতনের পর প্রথম সহায়তা পাই প্রধানমন্ত্রীর বান্ধবী ও প্রয়াত সাংবাদিক বেবী মওদুদের কাছ থেকে। এরপর ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কাছে আমি সব রকম সহায়তা পেয়েছিলাম। ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি শাহরিয়ার কবির আমাকে সহায়তা করেছেন।’  

পূর্ণিমা বলেন,‘ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার পর আমার মামুনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে প্রথম দেখা করার সুযোগ হয়।’

বুধবার (১৭ জানুয়ারি) বিকেলে তারানা হালিম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বলেন,‘মনে পড়ে সেই পূর্ণিমাকে? ২০০১ এর ১ অক্টোবর নির্বাচন-পরবর্তী বিএনপি-জামায়াতের পৈশাচিক নির্যাতনের শিকার হয়েছিল ১৪ বছরের মেয়েটি। হ্যাঁ, আমি সিরাজগঞ্জের সেই পূর্ণিমা শীলের কথা বলছি। আজ আমি গর্বিত আমি পূর্ণিমাকে আমার ‘পার্সোনাল অফিসার’ হিসাবে নিয়োগ দিলাম। পূর্ণিমা, তোমাকে আমরা ভুলে যাইনি।’

/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
উত্তর কোরিয়া সফর করলেন রুশ গোয়েন্দা প্রধান
উত্তর কোরিয়া সফর করলেন রুশ গোয়েন্দা প্রধান
ঈদে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে চলবে ১৫ ফেরি, ২০ লঞ্চ
ঈদে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে চলবে ১৫ ফেরি, ২০ লঞ্চ
ট্রলারের ইঞ্জিন বিস্ফোরণে চার জন অগ্নিদগ্ধ
ট্রলারের ইঞ্জিন বিস্ফোরণে চার জন অগ্নিদগ্ধ
সর্বাধিক পঠিত
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
এবার চীনে আগ্রহ বিএনপির
এবার চীনে আগ্রহ বিএনপির
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
গাজীপুর থেকে বিমানবন্দর যেতে সময় লাগবে ৪৪ মিনিট
গাজীপুর থেকে বিমানবন্দর যেতে সময় লাগবে ৪৪ মিনিট