X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ওষুধ শিল্প পার্ক স্থাপনে তিন দফা সংশোধন

শফিকুল ইসলাম
১৯ জানুয়ারি ২০১৮, ২৩:৫৬আপডেট : ১৯ জানুয়ারি ২০১৮, ২৩:৫৯

 

ওষুধ শিল্প পার্কের মডেল  (ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত) আবারও মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়ায় নির্মিতব্য ওষুধ শিল্প পার্ক প্রকল্প বাস্তবায়নে সংশোধনী এনেছে সরকার। এ লক্ষ্যে একটি নতুন প্রকল্পও হাতে নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি সরকারের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদন হয়েছে। ‘অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্ট (এপিআই) শিল্প পার্ক (৩য় সংশোধিত)’ নামের এই প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৮১ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৩০১ কোটি টাকা এবং উদ্যোক্তা তহবিল থেকে ৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হবে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এ প্রকল্পটি শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতায় বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) বাস্তবায়ন করবে। ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে শুরু হওয়া প্রকল্পটি ২০২০ সালের ৩০ জুনের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের দ্রুত অগ্রসরমান শিল্পের মধ্যে ওষুধ শিল্প অন্যতম। ওষুধ শিল্পের কাঁচামাল উৎপাদনের লক্ষ্যে একটি পরিবেশবান্ধব আধুনিক অবকাঠামো সুবিধাসহ শিল্প পার্ক স্থাপনের মাধ্যমে ওষুধ শিল্পের কাঁচামাল ও ওষুধ উৎপাদনে স্বনির্ভরতা অর্জন করে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ের লক্ষ্যে এ প্রকল্পটি হাতে নেয় সরকার। প্রকল্পটি ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে শুরু হয়ে ২০১০ সালের ডিসেম্বরে শেষ করার জন্য ২১৩ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। এ লক্ষ্যে ২০০৮ সালের ২২ মে একনেকের বৈঠকে অনুমোদিত হয়।

কিন্তু যে স্থানে শিল্প পার্কটি স্থাপিত হবে সেই স্থানের অধিগ্রহণ করা জমির মূল্য বেড়ে যাওয়ায় গত ২০০৯ সালের ১৫ অক্টোবর প্রকল্পটি মূল্যায়ন কমিটির সভায় এর প্রাক্কলিত ব্যয় ২৩৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা ও মেয়াদ ১ বছর বাড়িয়ে ডিপিপি’র প্রথম সংশোধী আনা হয। পরবর্তী সময়ে ব্যয় না বাড়িয়েই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য ২০১২ সালের ডিসেম্বর নির্ধারণ করা হয়।

কিন্তু এ প্রকল্পের নির্মাণ কাজের ধর-সিডিউল পরিবর্তনসহ মাটি ভরাটের পরিমাণ বাড়ানো ও প্রশাসনিক ভবনের ডিজাইন পরিবর্তনের কারণে সংশোধিত ব্যয় বাড়িয়ে ৩৩১ কোটি ৮৫ লাখ টাকা ধরা হয়। পাশাপাশি ২০১৫ সালের জুন মাসে শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করে এ প্রকল্পটির ২য় সংশোধন ২০১৪ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি একনেকে  অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব ও আইএমইডির সুপারিশে ব্যয় না বাড়িয়ে এ প্রকল্পের মেয়াদ দুই দফায় (প্রতি দফায় ১ বছর করে) বাড়িয়ে ২০১৭ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করে পরিকল্পনা কমিশন।

প্রকল্পটির ওপর গত ২০১৭ সালের ১২ জুলাই প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রকল্পটির ৩য় সংশোধন প্রস্তাব ৩৮১ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে তা বাস্তবায়নের জন্য ২০২০ সালের ৩০ জুন নির্ধারণ করা হয়।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ওষুধ শিল্পের কাঁচামাল উৎপাদনের লক্ষ্যে একটি পরিবেশবান্ধব শিল্প পার্ক স্থাপন, একটি নির্দিষ্ট স্থানে ৪২টি কাঁচামাল উৎপাদনকারী ওষুধ শিল্পের জন্য সব ধরনের অবকাঠামো যেমন-উন্নত প্লট, মাটি ভরাট, অভ্যন্তরীণ রাস্তা নির্মাণ, ড্রেনের অবকাঠামো, বৈদ্যুতিক ট্রান্সমিশন লাইন, বিদ্যুৎ বিতরণ লাইন, বিদ্যুৎ সাব-স্টেশন, পানি সরবরাহের প্রধান ও সাব লাইন নির্মাণের মাধ্যমে শিল্প পার্ক স্থাপনের সুবিধা সৃষ্টি করা, ওষুধ শিল্পের কাঁচামাল উৎপাদনের মাধ্যমে দেশে ওষুধে স্বনির্ভরতা অর্জন, ওষুধ আমদানির বিকল্প ব্যবস্থা সৃষ্টিসহ বৈদেশিক মুদ্র সাশ্রয় ও শিল্পায়নের মাধ্যমে দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতেই এ প্রকল্পটি গ্রহণ করেছে সরকার।

বিসিক সূত্রে জানা গেছে, এ প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রমের আওতায় ইতোমধ্যেই ২০ দশমিক ১৬ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। যার ওপর ভূমির উন্নয়ন করা হয়েছে। তৈরি করা হয়েছে ৪২টি প্লট।  (এর মধ্যে ‘এ’ টাইপ ৩০টি, ‘বি’ টাইপ ৫টি, ‘এস’ টাইপ ৭টি)। নির্মাণ করা হবে সিইটিপি। ১২ হাজার ৯৩২ রানিং মিটার ড্রেন, ১৬টি কালভার্ট ও ২টি বক্স কালভার্ট নির্মাণ, ১টি স্লুইচ গেট নির্মাণ করা হবে। থাকবে পানি সরবরাহ লাইন (৫ হাজার ৮৬৫ রানিং মিটার), গভীর নলকূপ (২টি)। অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা স্থাপন নির্মাণ করা হবে। স্থাপিত হবে ৩৩ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন ও ১১/০.৪ কেভি বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন, বিদ্যুৎ সাব স্টেশন, স্ট্রিট লাইট। গ্যাস লাইন স্থাপন করা হবে। সমগ্র প্রকল্প এলাকায় ৭৫ হাজার ৪২ বর্গ মিটার রাস্তা নির্মিত হবে। প্রশাসনিক ভবনসহ শিল্পনগরীর সীমানাপ্রাচীর ও শিল্প পার্কের প্রধান গেট নির্মাণ করা হবে ১টি।

জানা গেছে, মুন্সীগঞ্জের বাউশিয়ায় ওষুধ শিল্প মালিকদের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সেসব প্লটে অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শুরু করেছেন মালিকরা। শিল্পনগরীর জন্য কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার (সিইপিটি) নির্মাণের কাজও শুরু হয়েছে। তবে শেষ হয়নি। ওষুধ শিল্প মালিকরা বলছেন, অবকাঠামো নির্মাণের জন্য ব্যাংক ঋণের প্রয়োজন। আর ব্যাংক ঋণ পেতে হলে প্রয়োজন বরাদ্দ পাওয়া জমির দলিল। তাই জমির দলিল হাতে না আসা পর্যন্ত ওষুধ শিল্পনগরী পুরোপুরি কার্যকর করার বিষয়ে অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে। যদিও ওষুধ শিল্প মালিক সমিতি বলছে, আগামী দুই বছরের মধ্যেই পুরোপুরি কার্যকর হবে এই শিল্পনগরী।

২০০৮ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ওষুধ শিল্পের জন্য মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন বাউশিয়ার ও লক্ষ্মীপুর মৌজায় দুই শ’ একর জায়গাজুড়ে একটি অ্যাক্টিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্ট (এপিআই) গড়ে তোলার প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। দেশীয় ওষুধ কোম্পানিগুলোর নিজেদের ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডের প্রসার ঘটানো, প্রতিযোগিতামূলক বাজার ধরতে পণ্যে বৈচিত্র্য সৃষ্টি ও পণ্যের মানোন্নয়নে গবেষণা করাই এই পার্কের প্রধান উদ্দেশ্য।

এছাড়াও ওষুধ উৎপাদনে যেসব কাঁচামাল প্রয়োজন আগামী ১০ বছরের মধ্যে দেশেই সেগুলো উৎপাদন করা ও কাঁচামাল আমদানি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমানোও এই প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারলে বছরে সাশ্রয় হবে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা।

জানা গেছে, ওষুধ শিল্প মালিক সমিতির পক্ষ থেকে মোট ২৭টি কোম্পানির তালিকা দেওয়া হয়েছে। সেই তালিকা অনুযায়ী প্রতিটি কোম্পানির জন্য সর্বোচ্চ ১০ একর ও সর্বনিম্ন ৫ একর জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওষুধ শিল্প মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এস এম শফিউজ্জামান। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে জমি বরাদ্দ পেয়েছি।’ এখনও বরাদ্দ না হওয়া প্লটগুলো প্রয়োজনে পরবর্তী সময়ে নতুন কোনও কোম্পানির নামে বরাদ্দ দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

শফিউজ্জামান জানান, ‘এই শিল্পনগরীতে প্রতি একর জমির মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে এক কোটি টাকা, যা স্থানীয় দরের চেয়ে অনেক বেশি। তবে মালিকরা সবাই আন্তরিক বলেই এরই মধ্যে তারা তাদের নামে বরাদ্দ দেওয়া প্লটের দামের একাংশ পরিশোধ করেছেন।’

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে ওষুধ শিল্প মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘সরকারি অর্থে নয়, শিল্প মালিকদের নিজেদের টাকায় শিল্প নগরীতে নির্মিত হবে কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার। আমরা প্রস্তুত। তবে অবকাঠামো নির্মাণে অবশ্যই ব্যাংক ঋণের প্রয়োজন হবে। এর জন্য প্রয়োজন হবে বরাদ্দ পাওয়া জমির দলিল। সবকিছু ঠিক থাকলে, আগামী দুই বছরের মধ্যে, অর্থাৎ ২০২০ সালের মধ্যেই নতুন শিল্প নগরীতে কাজ শুরু করতে পারবে দেশের ওষুধ কারখানাগুলো।’

বিসিক সূত্রে জানা গেছে, এই পার্কে ওষুধ শিল্পের বিভিন্ন কাঁচামাল উৎপাদনের জন্য স্থাপিত কারখানায় প্রায় ২৫ হাজার মানুষের সরাসরি কর্মসংস্থান হবে। এর প্রতি শতাংশ জমির মূল্য ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৯ হাজার টাকা। ৪২টি প্লটের মধ্যে ১০ বিঘা আয়তনের প্লট ৩৮টি, ৮ বিঘা আয়তনের প্লট চারটি। এখন পর্যন্ত মোট ২৭টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

ওষুধ শিল্প নগরী সম্পর্কে জানতে চাইলে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মালিকদের প্লট বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বাকি সব কাজও শেষ। সেখানকার কাজ এখন মালিকদের।’ প্লট বরাদ্দ দেওয়ার পরপরই ওষুধের কাঁচামাল উৎপাদনের কারখানা স্থাপন শুরু হবে বলে জানান তিনি।

এপিআই শিল্প পার্ক প্রকল্প পরিচালক মো. আবদুল বাছেত বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মালিকদের প্লট বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানে অবকাঠামো নির্মাণের কাজ এখন তাদের। সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। আশা করছি, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।’

শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশে উৎপাদিত ওষুধ বর্তমানে বিশ্বের ১৩৩টি দেশে রফতানি হচ্ছে। স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ প্যাটেন্টেড ওষুধ উৎপাদনের জন্য বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা থেকে ২০৩৩ সাল পর্যন্ত ছাড় পেয়েছে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে শিগগিরই এপিআই শিল্প পার্ক বাস্তবায়ন করা গেলে এই খাতে আমদানি ব্যয় সাশ্রয়ের পাশাপাশি রফতানি আয় বাড়বে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

 

/এমএনএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
টিভিতে আজকের খেলা (২৬ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২৬ এপ্রিল, ২০২৪)
ট্রাকেই পচে যাচ্ছে ভারত থেকে আনা আলু, বাজারে ৫৫ টাকা কেজি
ট্রাকেই পচে যাচ্ছে ভারত থেকে আনা আলু, বাজারে ৫৫ টাকা কেজি
দুর্বৃত্তের হামলায় গুরুতর আহত যুবলীগ নেতা
দুর্বৃত্তের হামলায় গুরুতর আহত যুবলীগ নেতা
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা