X
বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪
৫ বৈশাখ ১৪৩১

‘ক্ষমতাধর’ কমিউনিটি পুলিশ ও এক রিকশাচালকের কান্না

শাহেদ শফিক
২১ জানুয়ারি ২০১৮, ০৪:১৪আপডেট : ২১ জানুয়ারি ২০১৮, ০৯:২০

‘আমি এহান দিয়া আইতে চাইনি স্যার। আমাকে ওই জায়গা থেকে জোর কইরা টাইনা নিয়া আইছে। এইটা আমার নিজের টেকার গাড়ি স্যার। আমারে ছাইড়া দেন। আমার রিকশা নিয়েন না স্যার’,  কাঁদতে কাঁদতেই কমিউনিটি পুলিশ সদস্যদের এসব কথা বলেন শরীয়তপুরের রিকশাচালক কামাল উদ্দিন। সম্প্রতি রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বর থেকে ১৪ নম্বরে যাওয়ার পথে কমিউনিটি পুলিশের কয়েকজন সদস্য কামাল উদ্দিনের রিকশাটি ডাম্পিংয়ের জন্য জোর করে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করে।

রিকশাচালক কামাল উদ্দিনের কান্না

রিকশাচালক কামাল উদ্দিনের অনুনয় বা কান্না কিছুতেই মন গলাতে পারেনি কমিউনিটি পুলিশ সদস্যদের। এসময় রিকশাচালকের কান্নাকাটি দেখে আশপাশের উৎসুক লোকজন এগিয়ে আসেন। তারাও রিকশাটি ফেরত দেওয়ার জন্য কমিউনিটি পুলিশের ওই সদস্যদের কাছে অনুরোধ করেন। তাতেও কাজ হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, কমিউনিটি পুলিশের সদস্যরা প্রায়ই রিকশাওয়ালাদের কাছ থেকে অবৈধভাবে টাকা আদায়ের জন্য এমন ডাম্পিংয়ের চেষ্টা করে।

রিকশাচালক কামাল উদ্দিন ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, কামাল উদ্দিন মিরপুরের ১০ নম্বর গোল চত্বর থেকে সড়কের বাম পাশ দিয়ে রিকশা চালিয়ে মিরপুর ১৪ নম্বরের দিকে যাচ্ছিলেন। কিছু দূর যাওয়ার পরই কমিউনিটি পুলিশের সদস্যরা তাকে থামান। জোর করে তার রিকশাটি ট্রাকে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করলে উচ্চস্বরে কান্নাকাটি করতে থাকেন  কামাল। এর মধ্যেই কমিউনিটি পুলিশের এক সদস্য তাকে কিল-ঘুষিও মারেন।

এরপর দূর থেকে একজন পুলিশ সদস্য এ ঘটনা দেখতে পেয়ে এগিয়ে আসেন। তিনি রিকশাটি ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করেন।  এবার কামাল উদ্দিন তার রিকশাটি ফেরত পেয়ে ওই এলাকা থেকে চলে যান।  কিন্তু একই সময়ে আরও কয়েকটি রিকশা ও ভ্যান গাড়ি আটক করতে দেখা গেছে কমিউনিটি পুলিশ সদস্যদের। কিন্তু কেউ জানেন না, তাদের রিকশা বা ভ্যান কী কারণে আটক করা হয়েছে।

রিকশা জব্দ করছে কমিউনিটি পুলিশ রিকশাচালক কামাল উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি সামনে থেকে যাত্রীসহ রিকশা নিয়ে আসতে ছিলাম। এসময় তারা (কমিউনিটি পুলিশ) জোর করে আমার রিকশাটি উল্টোদিকে নিয়ে ট্রাকে উঠায় দিছে। তারা আমাকে বলে এখান দিয়ে আসলি ক্যান? পাঁচ হাজার টাকা লাগবো। না হয় গাড়ি ছাড়বো না। পরে আমি এক হাজার টাকা দিতে রাজি হয়েছি। কিন্তু তারা রিকশা ফেরত দিতে রাজি হয়নি। পরে আমাকে মারধর করেছে। আমার কান্নাকাটি দেখে লোকজন জড়ো হয়।  তারাও দেখে যে,  আমার কোনও দোষ নেই। এরপর আমি গাড়ি (রিকশা) ট্রাকে উঠাতে দেই নাই।’

তিনি আরও বলেন,‘যিনি আমার গাড়ি ধরেছেন তিনি আমাকে বলেন, তোর কোন বাবা আইবো, বাবারে লইয়া আয়। সে কী করতে পারে দেখবো। পরে একজন আমারে দুই-তিনটা থাবড় (থাপ্পড়) দিছে।’

কামাল উদ্দিন বলেন, ‘তারা (কমিউনিটি পুলিশ) প্রায় সময়েই বিনা কারণে রিকশা ধরে নিয়ে টাকা আদায় করে। আমার রিকশাটি ত্রিশ হাজার টাকা খরচ করে বানিয়েছি। সিটি করপোরেশনের লাইসেন্স আছে। আমি কোনও আইন অমান্য করে চলি না। এর পরেও প্রায় সময় তাদেরকে টাকা পয়সা দিতে হয়। রিকশাটি যদি কোনও গ্যারেজের হতো চিন্তা করতাম না। মালিক এসে ছুটিয়ে নিতো। এটা আমার নিজের গাড়ি। এই গাড়ি চালিয়েই পরিবার ও ছেলেমেয়েদের পড়া লেখার খরচ চালাই।’

বিষয়টি নিয়ে কমিউনিটি পুলিশের  ওই সদস্যদের কাছে জানতে চাওয়া হলে তাদের কেউই নাম বলতে চাননি। তবে তারা বলেন, এই রাস্তায় রিকশা প্রবেশ নিষেধ। এটা ভিআইপি রাস্তা। কী কারণে মিরপুর ১০ নম্বর থেকে ১৪ নম্বর সড়কটি ভিআইপি তাও স্পষ্ট করে জানাতে পারেনি তারা। যদিও সড়কটির কোথাও রিকশা প্রবেশ নিষেধ বা ভিআইপি সড়ক এমন কোনও কিছু লেখাও নেই।

রিকশাচালক কামাল উদ্দিন পরে খোঁজ নিয়ে তাদের এই বক্তব্যের কোনও সত্যতাও পাওয়া যায়নি। কারণ,ওই সড়ক দিয়ে অনায়াসে রিকশা, ভ্যান, লেগুনাসহ সব ধরনের যানবাহন চলাচল করে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় রিকশা-ভ্যান মালিক শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক ইনসুর আলী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, কমিউনিটি পুলিশের সদস্যরা প্রায় সময়ই এরকম করে থাকে। তারা মিরপুর সড়ক থেকে বিভিন্ন সময়ে ১৫-২০টা রিকশা ধরে নিয়ে এক জায়গায় জড়ো করে। এগুলো কিন্তু ডাম্পিং করা হয় না। পরে চালকদের কাছ থেকে এক থেকে দুই হাজার টাকা নিয়ে ছেড়ে দেয়। এখন রিকশাচালকরা তো অবুঝ। তারা অনেক কিছু বুঝে না। কোনটা ভিআইপি আর কোনটা সাধারণ সড়ক সেটাও বোঝে না। তারা জানলে আইন অমান্য করে না। মিরপুরের ওই সড়কটি ভিআইপি হওয়ার কথা নয়। তারা প্রায় সময় এভাবেই রিকশাচালকদের নির্যাতন ও হয়রানি করে থাকে। কমিউনিটি পুলিশে এক শ্রেণির লোক আছে, যারা এর সঙ্গে জড়িত।

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে মিরপুর থানা ওসি নজরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ওই সড়কটি ভিআইপি হওয়ার কথা না। সব সময়ই ওই সড়কে রিকশা চলে। এছাড়া, রিকশা ট্রাকে তুলে নিয়ে ডাম্পিংয়ে পাঠানোর ক্ষমতা কমিউনিটি পুলিশের নেই ।’
আরও পড়ুন:

‘জঙ্গিরা ভালো ছেলেদের টার্গেট করে ভুল পথে নিয়ে যাচ্ছে’

 

/এমএইচ/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আর্সেনালকে হতাশায় ভাসিয়ে সেমিফাইনালে বায়ার্ন
চ্যাম্পিয়নস লিগআর্সেনালকে হতাশায় ভাসিয়ে সেমিফাইনালে বায়ার্ন
টাইব্রেকারে ম্যানসিটির শিরোপা স্বপ্ন ভাঙলো রিয়াল
চ্যাম্পিয়নস লিগটাইব্রেকারে ম্যানসিটির শিরোপা স্বপ্ন ভাঙলো রিয়াল
গলায় কই মাছ আটকে কৃষকের মৃত্যু
গলায় কই মাছ আটকে কৃষকের মৃত্যু
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন: কোন পদে লড়ছেন কে
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন: কোন পদে লড়ছেন কে
সর্বাধিক পঠিত
‘ভুয়া ৮ হাজার জনকে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে’
‘ভুয়া ৮ হাজার জনকে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে’
হজ নিয়ে শঙ্কা, ধর্ম মন্ত্রণালয়কে ‍দুষছে হাব
হজ নিয়ে শঙ্কা, ধর্ম মন্ত্রণালয়কে ‍দুষছে হাব
এএসপি বললেন ‌‘মদ নয়, রাতের খাবার খেতে গিয়েছিলাম’
রেস্তোরাঁয় ‘মদ না পেয়ে’ হামলার অভিযোগএএসপি বললেন ‌‘মদ নয়, রাতের খাবার খেতে গিয়েছিলাম’
এবার নায়িকার দেশে ‘রাজকুমার’ 
এবার নায়িকার দেশে ‘রাজকুমার’ 
‘আমি এএসপির বউ, মদ না দিলে রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেবো’ বলে হামলা, আহত ৫
‘আমি এএসপির বউ, মদ না দিলে রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেবো’ বলে হামলা, আহত ৫