X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

শিক্ষামন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তার ঘুষ কেলেঙ্কারি নিয়ে দিনভর নাটকীয়তা

নুরুজ্জামান লাবু
২২ জানুয়ারি ২০১৮, ২১:৫৪আপডেট : ২৩ জানুয়ারি ২০১৮, ০৩:০০

মোতালেব হোসেন ও নাসিরউদ্দিন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিও) মো. মোতালেব হোসেন ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের (প্রেষণে) উচ্চমান সহকারী নাসিরউদ্দিনের ঘুষ কেলেঙ্কারি নিয়ে সোমবার (২২ জানুয়ারি) দিনভর নাটকীয়তা দেখা গেছে। এদিন বিষয়টি নিয়ে স্বরাষ্ট্র ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং একটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার কার্যালয়ে দফায় দফায় বৈঠক হয়। গ্রেফতারের বিষয়টি আগে না জানানোয় মন্ত্রী ক্ষুব্ধ হন। এ কারণে পুলিশের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সোমবার দুপুরে সচিবালয়ে গিয়ে শিক্ষামন্ত্রীকে পুরো বিষয়টি অবহিত করেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকেও বিষয়টি জানান তারা।

রবিবার রাতে ওই দুজনসহ জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ততার অভিযোগে কিছুদিন বন্ধ থাকা গুলশানের লেকহেড গ্রামার স্কুলের পরিচালক খালেদ হাসান মতিনকে গুলশান ও বছিলা এলাকা থেকে গ্রেফতার করার কথা জানায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তাদের মধ্যে দুজন শনিবার ও একজন গত বৃহস্পতিবার থেকে নিখোঁজ ছিলেন বলে অভিযোগ তাদের পরিবারের।

সোমবার সন্ধ্যায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা জানান, গ্রেফতার তিন জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। মতিনের কাছ থেকে মন্ত্রীর পিও এবং মন্ত্রণালয়ের উচ্চমান সহকারীর ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে মামলাটি হবে। এর পাশাপাশি জঙ্গি তৎপরতায় অর্থায়নের অভিযোগে দায়ের আগের একটি মামলায় মতিনকে গ্রেফতার দেখানো হবে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বলেন, ‘গ্রেফতার হওয়া দুজনের বিরুদ্ধে মামলার প্রক্রিয়া চলছে। মামলার পর মঙ্গলবার তাদের আদালতে সোপর্দ করা হবে।’

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, জঙ্গি অর্থায়ন ও জঙ্গিবাদে মদদ দেওয়ার অভিযোগে লেকহেড গ্রামার স্কুলের বিরুদ্ধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একাধিক প্রতিবেদন দেয় একটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থা। ওই স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ থেকে শুরু করে শিক্ষক-কর্মকর্তা মিলে অন্তত ৩০ জনের বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। যাদের মধ্যে কেউ কেউ আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনসহ দেশে-বিদেশে সক্রিয় ছিল। সবশেষ গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলার ঘটনায় নিহত জঙ্গিদের প্রশিক্ষক হিসেবে যার নাম পেয়েছিলেন তদন্ত কর্মকর্তা, সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেওয়া সেই মেজর জাহিদুল ইসলামও একসময় লেকহেডের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ছিলেন।

সূত্র বলছে, বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের ভিত্তিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অনুসন্ধান চালিয়ে লেকহেড স্কুলের বিরুদ্ধে জঙ্গি সম্পৃক্ততার প্রমাণ মেলে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ৭ নভেম্বর স্কুলটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু মালিকানা পরিবর্তন করে আবারও স্কুলটি খোলার পাঁয়তারা শুরু করে গ্রেফতার হওয়া খালেদ হাসান মতিন। এজন্য মতিন শিক্ষামন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মোতালেব হোসেন এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচ্চমান সহকারী নাসিরউদ্দিনকে বিপুল পরিমাণ অর্থ ঘুষ দেয়। এরপর তারা পরিকল্পনা অনুযায়ী রিটের মাধ্যমে উচ্চ আদালত থেকে স্কুলটি আবারও খোলার নির্দেশনা পায়। এ মাসের ১২ তারিখ উচ্চ আদালতের নির্দেশে লেকহেড স্কুল আবারও তাদের কার্যক্রম শুরু করে। স্কুলটি খোলার পুরো প্রক্রিয়ায় মতিনকে অর্থের বিনিময়ে সার্বিক সহযোগিতা করে মোতালেব ও নাসির। এ কারণে তাদের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, মোতালেব হোসেন ও নাসিরউদ্দিন দুজনই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন নিয়োগ ও তদবির ছাড়াও টেন্ডার সংক্রান্ত দুর্নীতিতেও এই দুজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া, প্রশ্নফাঁসের সঙ্গেও তাদের জড়িত থাকার কথা জানিয়েছেন একজন পুলিশ কর্মকর্তা। গত কয়েক বছরে দুর্নীতি করে তারা বিপুল অর্থের মালিক হয়েছেন। গোয়েন্দারা ইতোমধ্যে তাদের অবৈধ আয়ের উৎস ও বিপুল সম্পত্তির খোঁজ পেয়েছেন। অন্যদিকে, খালেদ হাসান মতিনের বিরুদ্ধে আগে থেকেই জঙ্গিবাদে অর্থায়নের অভিযোগে মামলা রয়েছে।

ডিএমপির একজন কর্মকর্তা জানান, আইন অনুযায়ী ঘুষ দেওয়া-নেওয়ায় জড়িত সবাই অপরাধী। এজন্য ওই তিন জনের বিরুদ্ধেই বনানী থানায় একটি মামলা হবে। ডিএমপির আরেক কর্মকর্তা জানান, ডিবি দক্ষিণের একজন পরিদর্শক মামলার বাদী হবেন। ঘুষ লেনদেনের মামলা দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের তফসিলভুক্ত হওয়ায় এটি দুদক তদন্ত করবে। তবে জঙ্গি অর্থায়নের মামলাটি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ বা কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট তদন্ত করতে পারে।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, পিও এবং উচ্চমান সহকারীকে গ্রেফতারের বিষয়টি আগে না জানানোয় কিছুটা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এদিন সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘(কেউ) কোনও অন্যায়, দুর্নীতি বা ঘুষের মধ্যে জড়াবে না (চাকরিবিধিতে) এরকম তো বলা আছেই। কিন্তু তারা এ ধরনের কাজে জড়িত, এমন রিপোর্ট কেউ আমাদের দেয় নাই।’ অবশ্য রবিবার রাতে ওই দুজনকে গ্রেফতারের পরপরই বাংলা ট্রিবিউনের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে মন্ত্রী বলেছিলেন, ‘যদি কারও দুর্নীতি ও অন্যায় থাকে, তাহলে ভিন্ন কথা। পুলিশ যা করার তাই করবে। আমি এখনও জানি না, তারা দুর্নীতির দায়ে গ্রেফতার হয়েছে কিনা।’ এ বিষয়ে এর বেশি মন্তব্য করবেন না বলেও তখন জানিয়েছিলেন তিনি।

মন্ত্রীর ক্ষোভের কারণে পুলিশের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সোমবার দুপুরে সচিবালয়ে গিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে পুরো বিষয়টি অবহিত করেন। যদিও এর আগেই সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘যেহেতু গোয়েন্দারা তাদের (মোতালেব ও নাসিরউদ্দিন) গ্রেফতার করেছে, তার মানে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।’

আরও পড়ুন:

ব্যক্তিগত কর্মকর্তা দুর্নীতিবাজ কিনা জানেন না শিক্ষামন্ত্রী!

শিক্ষামন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তাসহ ‘নিখোঁজ’ তিন জন গ্রেফতার

 

/এএম/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সীমান্তে কোনও ধরনের হত্যাকাণ্ড চায় না বাংলাদেশ
সীমান্তে কোনও ধরনের হত্যাকাণ্ড চায় না বাংলাদেশ
দুর্নীতির মামলায় মেজর মান্নান কারাগারে
দুর্নীতির মামলায় মেজর মান্নান কারাগারে
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আমাদের অবশ্যই জেতা উচিত: সাকিব
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আমাদের অবশ্যই জেতা উচিত: সাকিব
মন্ত্রীর অপেক্ষায় তরমুজ বিক্রিতে দেরি, ক্ষুব্ধ ক্রেতারা
মন্ত্রীর অপেক্ষায় তরমুজ বিক্রিতে দেরি, ক্ষুব্ধ ক্রেতারা
সর্বাধিক পঠিত
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
এবার চীনে আগ্রহ বিএনপির
এবার চীনে আগ্রহ বিএনপির
কারাগারে যেভাবে সেহরি-ইফতার করেন কয়েদিরা
কারাগারে যেভাবে সেহরি-ইফতার করেন কয়েদিরা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
‘বউদের ভারতীয় শাড়ি পোড়ালে বর্জনের কথা বিশ্বাস করবো’
বিএনপির নেতাদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী‘বউদের ভারতীয় শাড়ি পোড়ালে বর্জনের কথা বিশ্বাস করবো’