X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

দেশব্যাপী সহিংস কিশোর গ্যাংয়ের নেপথ্যে

উদিসা ইসলাম
২৩ জানুয়ারি ২০১৮, ০৯:৫৯আপডেট : ২৩ জানুয়ারি ২০১৮, ১৯:১৪

নাইন স্টার বয়েজ উত্তরার একটি ফেসবুক পোস্ট (ফাইল ছবি) বছর দুয়েক ধরে রাজধানীতে কিশোর গ্যাংয়ের সহিংসতা ও এর জের ধরে একাধিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পর এবার এসব গ্যাংয়ের সক্রিয়তা শুরু হয়েছে দেশজুড়ে। প্রথমে চট্টগ্রাম ও পরে খুলনায় দুই কিশোর নিহতের ঘটনায় সমাজ গবেষক ও আইন বিশ্লেষকরা বলছেন, সহনশীলতার শিক্ষা দেওয়া না হলে পারিবারিক-সামজিক নিয়ন্ত্রণ ভেঙে পড়েছে। এতে এই সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। আর অনলাইনে এই গ্যাংগুলোর সক্রিয়তার প্রসঙ্গে অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টরা বলছেন, গ্যাং কালচার নতুন না। কিন্তু এ ধরনের সহিংসতা ও হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে ফেলার বিষয়টি শঙ্কার। কিশোরদের জন্য খেলার মাঠ, সবুজ ঘাস, মুক্ত আকাশ না দিয়ে কেবল ভালো ফলের দৌড়ে বন্দি রাখলে তাদের কাছেই বা কীভাবে সংবেদনশীলতা আশা করা যায়— সেই প্রশ্নও করছেন তারা।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, রাজধানীর উত্তরা, ধানমন্ডি, গুলশানের বেশ কয়েকটি স্কুল ও কলেজগামী গ্রুপ রয়েছে। এদের নাম বিভিন্ন হরর ফিল্ম, ডব্লিউডব্লিউএফ ও ভিডিও গেমস থেকে নেওয়া। এদের ফেসবুক প্রোফাইলগুলো রেসট্রিক্টেড। কেবল ঢাকা নয়, সম্প্রতি চট্টগ্রাম মহানগরীতেও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বেশকিছু কিশোর গ্যাং। তারা জড়িয়ে পড়েছে দখলবাজি, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে। শুরুতে খেয়াল না করলেও ছুরিকাঘাতে কলেজিয়েট স্কুলের মেধাবী ছাত্র আদনান ইসফারকে (১৫) হত্যার পর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে অভিভাবকদের মধ্যে।

গ্যাং কালচারের শিকার আদনান (ফাইল ছবি)

এদিকে, খুলনায় নিহত হওয়া স্কুলছাত্র ফাওমিদ তানভীর রাজিমের (১২) মায়ের অভিযোগ, দুই সহপাঠীকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় তার ছেলেকে খুন করা হয়েছে। খুলনা পাবলিক কলেজে কনসার্ট চলাকালে শনিবার (২০ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ৯টার দিকে তাকে খুন করা হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আইন বিভাগের শিক্ষক হাফিসুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গ্যাং কালচার সবসময় ছিল, আছে, থাকবে। মূল কারণ মানুষের ভেতরের বিভিন্ন ধরনের দ্বন্দ্ব। জমি বিরোধ থেকে শুরু করে কেন সালাম দিলো না— এমন যেকোনও কারণেই এই পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।’

ঢাবির এই অধ্যাপক আরও বলেন, ‘সমাজে অপরাধের কিছু বিষয় মানুষের সহজাত। কিছু অপরাধ সমাজ ও রাষ্ট্রের ভেতরকার বৈষম্য ও দারিদ্র্য থেকে উঠে আসা। তাই এসব অপরাধের পেছনের কারণ নির্মূল করা গেলে এই পরিস্থিতি থেকে বের হওয়া যাবে।’ কারণগুলো উল্লেখ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘সহনশীলতার শিক্ষা না দেওয়া একটি বড় কারণ। এই শিক্ষা না দিলে পারিবারিক-সামজিক নিয়ন্ত্রণ ভেঙে পড়ে। তখন সমস্যাগুলো প্রকট আকার ধারণ করে। কার্টুন সিনেমায় যে হিরোইজম দেখায়, সেটাও তাকে প্রভাবিত করে। কারণগুলো না থাকলে এমন সহিংসতা থাকবে না, কিংবা থাকলেও সেটা সহনশীল মাত্রায় থাকবে।’

আদনান হত্যা মামলায় জামিনে মুক্ত ডনের ফেসবুক পোস্ট (ফাইল ছবি) কিশোরদের সহিংস মানসিকতাকে নিছক শিশু-কিশোরদের ফ্যান্টাসি বলে উড়িয়ে দিতে চান না অপরাধ বিশ্লেষক ড. জিয়া রহমান। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলছেন, ‘‘মনে রাখতে হবে, এই বয়সী ছেলেমেয়েরা প্রভাবিত হয় সহজে। জীবনের এই সময়টাতে যেভাবে আপনি ‘হিরোইজম’কে শেখাবেন, সেভাবেই তারা শিখবে। আমাদের সমাজ এর নিজের দুর্নীতিপরায়ণতার কারণে কিশোরদেরকে ইতিবাচক শিক্ষা দেওয়ার অধিকার হারিয়েছে। ফলে সে ‘ক্ষমতা’ বলতে যা শেখে, তা প্রকৃতপক্ষে তাকে সহিংসতার পথে নিয়ে যায়।’

অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট আরিফ জেবতিক মনে করেন, শিশুদের বেড়ে ওঠার যথাযথ পরিবেশ তৈরি করতে না পারা এবং অভিভাবকদের দায়িত্বশীলতার অভাবে কারণে পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গ্যাং কালচার আগেও ছিল, এখনও আছে। তবে এখন দুর্ঘটনা বেশি, সহিংসতাও বেশি। বাচ্চারা প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশে বেড়ে উঠছে। তাকে সবকিছুতে সেরা হতে হবে— এই তাগাদা অভিভাবকদের দিক থেকে দেওয়া হয়।’

এই প্রতিযোগিতা শিশু-কিশোরদের আগ্রাসী করে তুলছে উল্লেখ করে এই অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট বলেন, ‘এতে তার মধ্যে দেখিয়ে দেওয়ার প্রবণতা তৈরি হচ্ছে। কিন্তু যখন সে কিছু দেখিয়ে দিতে পারছে না, তখন তার সেই হতাশা মাস্তানি আকারে বের হচ্ছে। এই বয়সে আমাদের সময়ে খেলাধুলা, রাজনীতি নিয়ে গ্রুপে গ্রুপে মারামারি হতো না, তা নয়। কিন্তু এখন সেটি ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে। এ সমাজ ও প্রতিবেশ তাকে যেভাবে বিকৃত করে তুলছে, তার প্রতিক্রিয়ায় এটা হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়।’

ডিসকো বয়েজ উত্তরার ফেসবুক পোস্ট (ফাইল ছবি) এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের করণীয় সম্পর্কে জানতে চাইলে আরিফ জেবতিক বলেন, ‘অভিভাবকদের সচেতন হওয়া দরকার, তার শিশুর সঙ্গে আরও বেশি সম্পৃক্ত হওয়া দরকার। পাড়া-মহল্লার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। একটি শিশু বা কিশোরের তার বয়সের যে বৈশিষ্ট্য, সেটা ধারণ করার মতো পরিবেশ তাকে দিতে হবে।’

দেশের কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে কিশোর সংশোধন নিয়ে কাজ হয় না। এ ধরনের কিছু কেন্দ্র আছে, তবে সেগুলো কেবল নামেই কিশোরদের উন্নয়ন করে, কাজে নয়। সেখানে পরিবেশ এমনই যে, ছুরিকাঘাত করার অপরাধে এসব কেন্দ্রে কারও স্থান হলে সে বন্দুক চালানো শিখে বের হবে। এগুলোকে প্রকৃত অর্থে সংশোধনী কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।’

আরও পড়ুন:
উত্তরায় ফের সক্রিয় ‘কিশোর গ্যাং’

/টিআর/আপ-এসএনএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
নড়াইলে ‘সুলতান মেলা’ উপলক্ষে আর্ট ক্যাম্প
নড়াইলে ‘সুলতান মেলা’ উপলক্ষে আর্ট ক্যাম্প
লোকসভা নির্বাচন: রাস্তার দাবিতে ভোট বয়কট করলেন গ্রামবাসী
লোকসভা নির্বাচন: রাস্তার দাবিতে ভোট বয়কট করলেন গ্রামবাসী
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী স্মরণে কাল নাগরিক সভা
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী স্মরণে কাল নাগরিক সভা
শেষ ম্যাচে জিতে সুপার লিগে গাজী গ্রুপ
শেষ ম্যাচে জিতে সুপার লিগে গাজী গ্রুপ
সর্বাধিক পঠিত
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!