সাত কলেজের অধিভুক্তির বিরোধিতাকারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীরা গত সপ্তাহে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ তোলেন। এর প্রতিবাদ জানান ‘নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দ’। ছাত্রী নিপীড়নে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতাদের বহিষ্কারসহ চার দফা দাবিতে তারা ঢাবি উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামানের কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি করতে যান। সেখানে ছাত্রলীগের হামলার শিকার হলেন তারা। তবে ছাত্রলীগের দাবি— ছাত্রদল, শিবির ও বাম নেতাকর্মীদের হাতে অবরুদ্ধ ভিসিকে উদ্ধার করতে গিয়েছিলেন তারা।
দাবি আদায়ে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করলে নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীদের রড ও কাঠ দিয়ে পিটিয়ে সরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। যদিও এ ঘটনার পরপরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আনুষ্ঠানিকভাবে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনটি।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সকাল থেকে উপাচার্য কার্যালয় ঘেরাও আন্দোলনে থাকা শিক্ষার্থীদের ওপর বিকালে অতর্কিতে হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ। একদল পরিচিত মুখ ভিসি অফিসে আসেন। এরপরই সেখানে উপস্থিত আন্দোলনকারীদের পেটাতে থাকেন। সেই হামলায় আহত অনেকেই ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের মধ্যে সাধারণ শিক্ষার্থী ছাড়াও ছাত্র ইউনিয়ন আর ছাত্র ফেডারেশনের কর্মীরা ছিলেন।
যদিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সভাপতি আবিদ আল হাসানের দাবি, আন্দোলনকারীদের মধ্যে বহিরাগতরা ছিলেন, তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘ছাত্রদল, শিবির ও বাম নেতারা ভিসিকে অবরুদ্ধ করে রেখেছিল। আমরা সেখানে যাই। কারণ আমরা মনে করি, ভিসি আমাদের পিতৃতুল্য। তাকে যথাযথ সম্মান করা উচিত।’
ছাত্র ইউনিয়নের ঢাবি শাখার সভাপতি তুহিন কান্তি দাস বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছিলাম। ছাত্রলীগ রড নিয়ে অতর্কিতে হামলা চালায় আমাদের ওপর। অস্বীকার করার সুযোগই নেই, সেখানে গণমাধ্যমকর্মীরা ছিলেন। আমাদের মধ্যে অনেকে আহত হয়ে এখন ঢামেকে চিকিৎসাধীন। আন্দোলনকারীদের ওপর এ ধরনের হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। এ ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে বহিষ্কার দাবি জানাই আমরা।’
ছাত্রফ্রন্টের ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক রাজীব কান্তি রায় বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা উপাচার্যের কাছে দাবি নিয়ে গিয়েছিলাম। আমাদের কর্মসূচি ছিল আগে থেকেই। বিকাল ৪টার দিকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সেখানে উপস্থিত হয়ে আমাদের অবরুদ্ধ করে ফেলে। এরপর ইট-রডসহ বিভিন্ন হাতিয়ার দিয়ে আমাদের ওপর হামলা চালায় ও আহত করে।’
রাজীব কান্তি রায়ের অভিযোগ, দ্বিতীয়বারের মতো ছাত্রলীগ নারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। একজন নারী শিক্ষার্থীকেও ঘটনাস্থল থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ তোলেন তিনি। তার ভাষ্য, ‘আমরা এখনও তার কোনও খোঁজ জানি না।’
ছাত্র ফেডারেশন ঢাবি শাখার নারীকর্মীদেরও হয়রানি করা হয় বলে অভিযোগ করেছেন সংগঠনটির সদস্য ইমরান হোসেন। ঘটনার বিবরণ দিয়ে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দুপুরের পর উপাচার্য আমাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে দাবির বিষয়ে কথা বলেন। তার বক্তব্য স্পষ্ট না হওয়ায় আমরা তার পথ রোধ করে থাকি ও দাবি আদায় না করে ফিরবো না জানাই। এ সময় তিনি চলে যাচ্ছিলেন। পথ রোধ করা হলে ভিসি ছাত্রলীগকে ঘটনাস্থলে ডাকেন। তারা এসে আমাদের পিটিয়ে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে।’