X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

‘শিশু আদালতে বয়স্কদের মামলাই বেশি’

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ২২:৩২আপডেট : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ২৩:১৩





‘শিশু আইন ও এর প্রয়োগ’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তরা

‘শিশু আইন-২০১৩’-এর কয়েকটি ধারার অস্পষ্টতার কারণে দেশের শিশু আদালতে বয়স্কদের মামলাই বেশি পরিচালিত হচ্ছে। এছাড়া শিশুর অপরাধের বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনার আগে ও পরে শিশুদের যে প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়, তা এখনও শিশুবান্ধব নয়।
শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে সুপ্রিম কোর্ট অডিটরিয়ামে ‘সুপ্রিম কোর্ট স্পেশাল কমিটি অন চাইল্ড রাইটস’ আয়োজিত ‘শিশু আইন ও এর প্রয়োগ’ শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তরা এমন মত দেন।
সেমিনারে বিচারপতি, পুলিশ, সমাজসেবা অধিদফতরের কর্মকর্তা ও ইউনিসেফ বাংলাদেশের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
শিশু আইন অনুযায়ী শিশুদের অপরাধের অভিযোগের বিষয়ে মামলা গ্রহণ, মামলার তদন্ত, তাদের থানায় রাখা, বিচার কার্যক্রম শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সেমিনারে আলোচনা হয়। এসময় পুলিশ, বিচারপতি, নিম্ন আদালতের বিচারক, শিশু আদালতের বিচারক, সমাজসেবা অধিদফতরের কর্মকর্তারা মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন।
সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. ইমান আলী। তিনি বলেন, ‘শিশুদের সুরক্ষা ও সঠিক বিচার কার্যক্রম পরিচালনার জন্যই শিশু আইন। এই আইনের মাধ্যমেই শিশুদের অপরাদের বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।’
হাইকোর্টে বিভাগের বিচারপতি এম এনায়েতুর রহিম বলেন, ‘আমার অভিজ্ঞতায় দেখেছি, শিশু আদালতে যতগুলো না শিশুদের বিচার হচ্ছে, তার চেয়ে অনেক বেশি প্রাপ্তবয়স্কদের বিচার হচ্ছে। কারণ, অধিকাংশ মামলার ক্ষেত্রে দেখা গেছে, শিশু হচ্ছে ভিকটিম। আসামি হচ্ছে প্রাপ্তবয়স্ক। তাদের বিচার হচ্ছে শিশু আদালতে। মামলায় যদি একজন শিশু সাক্ষীও থাকে তাহলেও ওই মামলা শিশু আদালতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। যেহেতু আইনে বলা আছে, শিশুর সংস্পর্শে আসা মামলার কার্যক্রম শিশু আদালতে পরিচালিত হবে। একারণেই প্রাপ্তবয়স্কদের মামলা শিশু আদালেত চলে যাচ্ছে।’
এবিষয়ে আইনের অস্পষ্টতা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দ্রুত এবিষয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয় ও সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’
হাইকোর্ট বিভাগের আরেক বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ বলেন, ‘শিশুর জবানবন্দি গ্রহণের সময়ে তার মা-বাবা ও সমাজকল্যাণ অধিদফতরের প্রবেশন কর্মকর্তা উপস্থিত থাকবেন। তাদের ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশ করা যাবে না। তাদের গোপনীয়তা রক্ষা করতে হবে। কারণ, তাদের ভবিষ্যত রয়েছে।’
তিনি বলেন,‘শিশুদের বিচার কার্যক্রমের সময় আদালতে কেবল সংশ্লিষ্ট আইনজীবী ছাড়া আর কেউ থাকতে পারবে না। এটা স্পেশাল আইন। এই আদালতে অন্য কেউ থাকতে পারবে না। এটা আইনে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে।’
শিশু অপরাধীদের জামিনের বিষয়ে শিশু আইনে জামিন দিতে বলা হয়েছে উল্লেখ করে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ বলেন, ‘শিশুদের জামিন দিতে বলা হয়েছে। জামিন না দিলে তার কারণ লিখতে বলা হয়েছে অর্ডারে। তবে নিরাপত্তার কারণে যদি শিশুকে জামিন না দেওয়া যায়, তখন পারিবারিকভাবে বা পুলিশের সহায়তায় তাকে নির্দিষ্ট নিরাপত্তা স্থানে রাখতে হবে।’
শিশু অপরাধীদের বিচার কার্যক্রম ৪২০ দিনের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে। এই সময়ের মধ্যে বিচার শেষ না হলে তাকে অব্যাহতি দিতে হবে বলেও জানান তিনি।
বিচারপতি হাসান আরিফ বলেন, ‘শিশুদের শাস্তির বিষয়ে নিরুৎসাহী করা হয়েছে। তাদের যাবজ্জীবন ও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া যাবে না। আইনে তা-ই বলা হয়েছে। তাদের গুরুতর অপরাধে সর্বোচ্চ তিন থেকে ১০ বছর সাজার কথা বলা হয়েছে। শিশুদের কারাগারে রাখা যাবে না। আইনে “কারাগার” বলে কিছু নেই। আইনে “আটকাদেশ” আছে।’
বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার বলেন, ‘কোনও বিচারক যদি কোনও শিশুকে শাস্তি দিয়ে থাকেন, তবে পরবর্তীতে ওই বিচারক যদি মনে করেন, শাস্তির মাত্রা বেশি হয়েছে, তাহলে তিনি শাস্তি কমিয়ে দিতে পারেন। এমনকি শিশুটির আচার-আচরণ যদি পরিবর্তন হয়, তাহলে প্রবেশন কর্মকর্তার কাছ থেকে রিপোর্ট নিয়ে শিশুটিকে তিনি মুক্তিও দিতে পারেন।’
বিচারপতি খিজির আহম্মেদ চৌধুরী বলেন, ‘আইন অনুযায়ী শিশুদের বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে, যাতে শিশুদের অধিকার নিশ্চিত হয়।’
উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, শিশুদের রাখার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা নেই। অনেক সময় তাদের থানায় রাখতে হয়। তবে থানা কখনও শিশুদের জন্য উপযুক্ত জায়গা নয়। সমাজসেবা অধিদফতরের প্রবেশন কর্মকর্তাদের সব সময় পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ করেন তারা।
নরসিংদীর পুলিশ সুপার আমেনা বেগম বলেন, ‘থানার পরিবেশ শিশু উপযোগী নয়। সেখানে শিশুদের রাখা যায় না। শিশুদের জন্য আলাদা একটি ভবন থানা কম্পাউন্ডে করা দরকার। আমি আমার এলাকার থানাগুলোতে আলাদা কক্ষ করেছি।’ তবে সব জায়গায় এটা করা সম্ভব নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সমাজসেবা অধিদফতরের কর্মকর্তারা অভিযোগ করেন, আদালতে তাদের বসার জায়গা নেই। তাদের এদিক-সেদিক বসতে হয়। জনবল সংকট আছে।
এর আগে সুপ্রিম কোর্টের ‘স্পেশাল কমিটি অন চাইল্ড রাইটস’ দেশের বিভিন্ন থানা ও শিশু আদালত পরিদর্শন করেছে। তারা দেখেছে, শিশুদের বিচার কার্যক্রম কিভাবে পরিচালিত হয়। পাশাপাশি ‘শিশু আইন-২০১৩’-এর সংশ্লিষ্ট ধারাগুলো মেনে চলার নির্দেশনা দেয়।
সেমিনারে প্রত্যেক থানায় উপপরিদর্শকের (সাব-ইন্সপেক্টর)নিচে নন, এমন একজন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিয়ে একটি শিশু বিষয়ক ডেস্ক গঠন করার কথা বলা হয়। যদি নারী উপপরিদর্শক থানায় কর্মরত থাকেন তাহলে ওই ডেস্কের দায়িত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে তাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। তবে নারী কর্মকর্তার সংকটের কথা বলেন পুলিশ কর্মকর্তারা।
সেমিনারে ইউনিসেফ বাংলাদেশে ডেপুটি রিপেজেন্টটিভ শিমা সেনগুপ্ত উপস্থিত ছিলেন।

 

/এআরআর/এইচআই/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
রুশ বিদ্যুৎকেন্দ্রে ইউক্রেনের হামলা, ৫০টি ড্রোন ভূপাতিতের দাবি মস্কোর
রুশ বিদ্যুৎকেন্দ্রে ইউক্রেনের হামলা, ৫০টি ড্রোন ভূপাতিতের দাবি মস্কোর
বিয়েবাড়ির খাসির মাংস খেয়ে ১৬ জন হাসপাতালে
বিয়েবাড়ির খাসির মাংস খেয়ে ১৬ জন হাসপাতালে
সরকারি প্রতিষ্ঠানে একাধিক পদে চাকরি
সরকারি প্রতিষ্ঠানে একাধিক পদে চাকরি
এখনই হচ্ছে না হকির শিরোপা নিষ্পত্তি, তাহলে কবে?
এখনই হচ্ছে না হকির শিরোপা নিষ্পত্তি, তাহলে কবে?
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ছুটি ঘোষণা
সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ছুটি ঘোষণা
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি