X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা না হলে জনগণকে ভুগতে হবে’

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১৭:৩৮আপডেট : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১৭:৫৬

গোলটেবিল বৈঠকে আলোচনা করছেন বক্তারা জাতি হিসেবে আমাদের অনেক অর্জন রয়েছে। অথচ দেশের ব্যাংকগুলোতে ঋণ কেলেঙ্কারি ও প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটছে। সদিচ্ছার অভাবে তাদের বিচার হচ্ছে না। পাশাপাশি গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা না গেলে দেশের জনগণকে এর জন্য ভুক্তভোগী হতে হবে।
শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে দ্য ঢাকা ফোরাম আয়োজিত ‘অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ও গণতন্ত্র’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন।
বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমাদের অনেক অর্জনের কথা বলা হয়েছে। এসব অর্জন ব্যর্থ হবে যদি আমরা গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে না পারি। আমাদের দুর্বল হয়ে পড়া শিক্ষা, চিকিৎসা ও ব্যাংক খাতগুলোর সঙ্গে সুশাসনও দুর্বল হয়ে পড়লে জনগণকে ভুক্তভোগী হতে হবে।’
সাবেক এই গভর্নর বলেন, ‘ঋণ কেলেঙ্কারি ও প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি দেওয়া কোনও কঠিন কাজ না, অভাব কেবল সদিচ্ছার। এই শাস্তি নিশ্চিত করা গেলেই ব্যাংক কেলেঙ্কারি ও প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা কমে আসবে।’
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন বলেন, ‘আজ দেশে অনেক অর্জনের কথা বলা হচ্ছে, এটা ধোঁকাবাজি। যে জাতির সরকার গঠনের অধিকার থাকে না, সে জাতি গোলাম। আমাদের বড় ব্যর্থতা, আমাদের দেশে সরকার আছে কিন্তু জনগণ ভোট দিতে পারছে না। আমাদের দাবির ভিত্তি কী? জনগণের কাছে সরকারের জবাবদিহিতার সুযোগ থাকতে হবে।’
ব্যারিস্টার মইনুল বলেন, ‘আমার খুব কষ্ট হয়— যারা দেশ শাসন করছে, তারা মনে করে না আমাদের-আপনাদের মতো মানুষের প্রয়োজন আছে। সবাইকে বোকা মনে করা এটা তো একটা লজ্জ্বার কথা। আমাদের মতো শিক্ষিত মানুষদের গাধার সঙ্গেও তুলনা করা হয়। স্যুট-টাই পরি, কিন্তু লজ্জায় গামছা পরতে ইচ্ছা করে।’
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক এই উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘যেখানে জনগণের ভোটের অধিকার থাকে না সেখানে চাটুকারিতা থাকে, দুর্নীতি থাকে। নির্বাচনে চুরি বা দুর্নীতিই সব দুর্নীতির জন্মদাতা। আজ বাংলাদেশে দুইটি শ্রেণির মানুষ আছে— চাটুকার-দুর্নীতিপরায়ণদের একটি শ্রেণি আর বাকি নাগরিকদের একটি শ্রেণি।’
ব্যারিস্টার মইনুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা এমন একটি পদ্ধতি চাই, যার মাধ্যমে জনগণের সংসদ গঠিত হবে। কিন্তু এখনকার সংসদ জনগণের ভোটে নির্বাচিত না। এটা জনগণের সরকার না। কেউ কেউ সমর্থন করলেও জনগণের বড় একটি অংশ এই সরকারকে সমর্থন করছে না। আমরা চাচ্ছি চেক অ্যান্ড ব্যালান্স, আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার। অথচ দেশে ভয়ভীতি আর হতাশার পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে। এটাই বাস্তবতা।’
সাবেক রাষ্ট্রদূত এম সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘২০১৮ সালে নির্বাচন হবে। এটা যে সমঝোতার ভিত্তিতে হবে, এর কোনও আশা নেই। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের প্রেক্ষাপট ছিল ভিন্ন। নির্বাচনের পরদিন ৬ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, সেটি ছিল সংবিধান রক্ষার নির্বাচন, আরেকটি নির্বাচন হবে। কিন্তু সেই নির্বাচন আর আমরা দেখিনি। তাই ২০১৮ সালের নির্বাচন খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমি ধারণা করছি, দেশের ৬০ শতাংশ ভোট ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে পড়বে।’
গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ড. জাফর উল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের প্রথম অন্তরায় ভারত, দ্বিতীয় অন্তরায় দেশের শিক্ষাব্যবস্থা। দেশে যে ক’টি নির্বাচন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হয়েছে, প্রতিটি নির্বাচনেই বিরোধী দল জয় পেয়েছে। ভারতের কথা এজন্য বলছি যে ভারত তার নিজের স্বার্থেই চায় না, আমাদের দেশে সুষ্ঠু গণতন্ত্রের চর্চা হোক।’
ড. জাফর উল্লাহ আরও বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়াটা ভালো কাজ। কিন্তু তাদের নিজ দেশে ফেরত যেতে হবে। আমরা রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে কূটনৈতিকভাবে ব্যার্থতার পরিচয় দিয়েছি। পৃথিবী যখন রোহিঙ্গাদের সমস্যায় এগিয়ে এসেছিল, তখন আমরা নিশ্চুপ ছিলাম। বাংলাদেশ আসলেই রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে চায় কি না, এখন সেটাই আসল প্রশ্ন। কারণ, তাদের স্থায়ীভাবে ভাসানচরে রাখার চেষ্টা হচ্ছে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘এ মুহূর্তে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের কাছে কোনও প্রত্যাশা নেই। সুষ্ঠু নির্বাচনেরও কোনও আলামতও দেখা যাচ্ছে না। ক্ষমতাসীনরা রাষ্ট্রীয় খরচে নির্বাচনি প্রচারণা চালাচ্ছে। নির্বাচন কমিশন কি তাদের কোনও বার্তা দিয়েছে? এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন চুপ কেন? তাদের ভূমিকা কী? তাদের কাছ থেকে কোনও পদক্ষেপ আসবে, এমন বিশ্বাস নেই। এ অবস্থায় আমাদের হয় গণতন্ত্রের পথে হাঁটতে হবে, না হলে যারা ক্ষমতা দখল করে আছে তাদের রোধ করতে হবে। এসব ব্যাপারে আমাদের কী পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, তা বিবেচনা করতে হবে।’
গোলটেবিল বৈঠকে আরও বক্তব্য রাখেন জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী, সাবেক মন্ত্রী পরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, বিমান বাহিনীর সাবেক প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল ফখরুল আলম, সুপ্রিম কোর্টের সাবেক রেজিস্ট্রার জেনারেল ইকতেদার আহমেদ, ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা প্রমুখ। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন সাবেক রাষ্ট্রদূত এম সিরাজুল ইসলাম।
আরও পড়ুন-
পিলখানা ট্র্যাজেডি দিবস কাল
সোমবার সারাদেশে বিক্ষোভ করবে বিএনপি

/বিআই/টিআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
‘হিট ইমারজেন্সি’ জারির আহ্বান সাইফুল হকের
‘হিট ইমারজেন্সি’ জারির আহ্বান সাইফুল হকের
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
শনিবার গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায়
শনিবার গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায়
জলবায়ু অভিযোজনে সহায়তা দ্বিগুণের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের আহ্বান পরিবেশমন্ত্রীর
জলবায়ু অভিযোজনে সহায়তা দ্বিগুণের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের আহ্বান পরিবেশমন্ত্রীর
সর্বাধিক পঠিত
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়