বাঙালির বিদেশমুখী প্রবণতায় নতুন মাত্রা যোগ করলো যুক্তরাজ্যের সাউথ ইস্ট লন্ডনের সাটন ট্রাস্ট পরিচালিত জরিপ। এ জরিপের ফল বলছে, বিভিন্ন কারণ আর বাস্তবতায় যুক্তরাজ্যে জন্ম নেওয়া বাংলাদেশি প্রজন্মের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ যুক্তরাজ্যের বাইরে থিতু হতে আগ্রহী।
এ সপ্তাহে প্রকাশিত এ জরিপের ফলে দেখা গেছে, সাধারণের চেয়ে তিন গুণ বেশি দেশ ছাড়ার প্রবণতায় রয়েছেন সুবিধাবঞ্চিত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা। এদের একটি বড় অংশ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ।
ব্রিটেন থেকে ডিগ্রি নেওয়ার চেয়ে দেশ ছেড়ে স্বচ্ছ্বল হওয়ায় আগ্রহী বিশ্ববিদ্যালয়গামী তরুণ-তরুণীরা।
জরিপের ফল বলছে, ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে ৫৫.৮ শতাংশ শিক্ষার্থী নিজেদের এলাকা থেকে প্রায় ৫৫ মাইল দূরে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত যাতায়াত করে পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন।
সমীক্ষায় পাওয়া যায়, সরকারি স্কুলের চেয়ে স্বায়ত্তশাসিত স্কুল-পড়ুয়ারা প্রায় আড়াই গুণ বেশি বিদেশমুখী হচ্ছে। ব্রিটিশ-বাংলাদেশিদের মধ্যে এ হার শেতাঙ্গদের চেয়ে প্রায় ছয় গুণ বেশি।
জরিপের সহযোগী বাথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ড. মাইকেল ডনেলি বলেন, ‘দেশ ছাড়ার সুযোগ আসলে ঠিক সবার হাতে নেই, সেক্ষেত্রে তুলনামূলক সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের তাই বিভিন্ন ব্যবহারিক শিক্ষায় দক্ষ করে অর্থনৈতিক স্বাধীন জীবনযাপনে অভ্যস্ত করে বিদেশমুখী প্রবণতা কমানো যেতে পারে।’
উল্লেখ্য, গত এক দশকে বহু বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ তরুণ মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে চাকরি নিয়ে স্থায়ী হয়েছেন।
ব্রিটেন ছাড়ার এ প্রবণতার ব্যাপারে ব্রিটিশ-বাংলাদেশি শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা অবশ্য বলছেন ভিন্ন কথা। লন্ডনের কলেজ শিক্ষিকা ও সাহিত্যিক ড. রেনু লুৎফা বুধবার (৭ মার্চ) বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বেকারত্ব একটি বড় কারণ। এখানে মাস্টার্স শেষ করেও উপযুক্ত চাকরি পাচ্ছেন না এমন শিক্ষার্থীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। অনেকে ডিগ্রি নিয়েও তিন-চার বছর ধরে বেকার।’
দুবাইয়ের আল কুসালস এলাকার আমিতি স্কুল দুবাইয়ে শিক্ষক মোহাম্মদ আলমগীর মিয়া। ব্রিটিশ-বাংলাদেশি এই শিক্ষক বলেন, ‘ভালো সুযোগ-সুবিধার পাশাপাশি কাজের অভিজ্ঞতা অর্জন, নতুন একটি দেশের অভিজ্ঞতা— অনেকগুলো বিষয় এখানে জড়িত।’
ব্রিটেনের লেবার পার্টি নেতা মো. লোকমান উদ্দীন বলেন, ‘আসলে বিশ্বায়নের যুগে তরুণদের দেশ ছাড়ার কারণ নানামুখী। তরুণদের মানসিকতা, চাহিদা পাল্টাচ্ছে। তারা চ্যালেঞ্জ নিতে চাইছেন।’