X
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

উড়োজাহাজেই অফিস করেন এভিয়েশন প্রকৌশলী নারীরা

চৌধুরী আকবর হোসেন
০৮ মার্চ ২০১৮, ২২:৪৩আপডেট : ০৯ মার্চ ২০১৮, ১০:০৩

উড়োজাহাজ প্রকৌশলী পেশায় সফলতা পাচ্ছেন নারীরা

সবাই যখন চার দেয়াল ঘেরা ভবনে অফিস করেন, তখন তাদের অফিস করতে হয় উড়োজাহাজের ভেতরে। রোমাঞ্চকর এক পেশা। আকাশে ওড়ার আগে উড়োজাহাজের প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণ ও চেক সম্পন্ন করেন তারা। নারী উড়োজাহাজ প্রকৌশলীদের নিয়মিত কাজ এটা। দেশে নারী পাইলট যেমন রয়েছেন, তেমনি রয়েছেন নারী উড়োজাহাজ প্রকৌশলী। পেশাগত ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে আজ  তারা আস্থা অর্জন করেছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, প্রতিটি উড়োজাহাজে নির্দিষ্ট সময় পর পর এ-চেক, সি-চেকসহ প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণ করতে হয়। বিমান প্রকৌশল বিভাগ নিজস্ব বহরের উড়োজাহাজের লাইন মেইন্টেন্যান্স, বেজ মেইন্টেনেন্স, রুটিন ও নন-রুটিন সার্ভিসসহ যাবতীয় রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকে। নিজ উড়োজাহাজে মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের পাশাপাশি বিমান প্রকৌশল বিভাগ বিভিন্ন দেশি ও বিদেশি এয়ারলাইন্সকে প্রকৌশল সেবা দেয়। আর এসব কাজে পুরুষের সঙ্গে সমান তালে কাজে করে যাচ্ছেন নারীরাও।

বিমান সূত্র জানায়, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের প্রকৌশল বিভাগে প্রায় ৬১১ জন কর্মী রয়েছেন। এরমধ্যে নারী কর্মী রয়েছেন প্রায় ১০ জন।

এসব ব্যাপারে বিস্তারিত কথা হয় বিমান প্রকৌশল বিভাগের কয়েজন নারীর সঙ্গে। বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করেছেন বিমানের প্রকৌশল বিভাগের জুনিয়র ইন্সপেকশন অফিসার সামিয়া হালিমা কবির, জান্নাতুল ফেরদৌস রিক্তা, আফসানা আহমদ, ইসমত কিবরিয়া, শিক্ষানবিশ ইফফাত জাহান শায়লা, নাফিস মোসতাক তাজিন, নূরী জাহান আরবী, শায়লা আক্তার মৌ।

জানা যায়- সামিয়া হালিমা কবির, জান্নাতুল ফেরদৌস রিক্তা, আফসানা আহমদ ২০০৮ সালে বিমানের প্রকৌশল বিভাগে যোগ দেন। সামিয়া হালিমা কবির বলেন, ‘এইচএসসি পাস করার পর প্রায় চার বছরের প্রশিক্ষণ শেষে আমরা যখন জয়েন করি তখন আমাদের বয়স এতো বেশি না। এই অল্প বয়সের মেয়েরা উড়োজাহাজের মেরামত করবে- এটা অনেকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারেনি।’

কর্মপরিবেশ নিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘কর্মপরিবেশ নিয়ে খুব বেশি সমস্যা না হলেও অন্যদের মেনে না নেওয়ার প্রতিবন্ধকতা দূর করে এগুতে হয়েছে। এখন আমরা আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি, আমরাও পারি। সাধারণ ফ্লাইট থেকে ভিভিআইপি ফ্লাইটের সব ধরনের দায়িত্ব পালন করছি।’

উড়োজাহাজের প্রতি ভালোবাসা থেকেই এ পেশায় এসেছেন বলে জানিয়েছেন আফসানা আহমদ। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অন্যরকম একটা ভালো লাগা, সবাই ঘুরে বেড়াতে উড়োজাহাজে চড়ে। কিন্তু আমরা অফিস করি উড়োজাহাজের মধ্যে।’

উড়োজাহাজ প্রকৌশলী পেশায় সফলতা পাচ্ছেন নারীরা

উড়োজাহাজ প্রকৌশল পেশায় যুক্ত প্রসঙ্গে সামিয়া হালিমা কবির বলেন, ‘ছোট বেলায় সবার আগ্রহের জায়গাগুলো কিন্তু প্রায় কাছাকাছি। উড়োজাহাজ নিয়ে অনেকের আগ্রহ থাকে, আমারও ছিল। আমরা কাজটা চ্যালেঞ্জিং, ধরা-বাঁধা ৯টা-৫টা অফিস করার মতো না। প্রতিদিনই নতুন নতুন কাজ, প্রতিদিনই চ্যালেঞ্জ। আমি এটা এনজয় করি।’

এ ব্যাপারে আফসানা আহমদ বলেন, ‘আমরা যখন প্রথম জয়েন করি, তখন আমরা সুপারভাইজরের অধীনে কাজ করেছি। দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতার পর এখন আমরা একাই কাজ করি। আমাদের প্রমাণ করতে হয়েছে- আমরাও উড়োজাহাজের মেরামতের কাজ করতে সক্ষম। এখন আমাদের ওপর আস্থা রাখছেন সিনিয়ররা।’  

তবে উড়োজাহাজ প্রকৌশলী হওয়া সহজ নয় বলে জানান জান্নাতুল ফেরদৌস রিক্তা। তিনি বলেন, ‘সায়েন্স ব্যাকগ্রাউন্ডের একজন শিক্ষার্থী এইচএসসি পাস করার পর প্রায় ৪ বছরের প্রশিক্ষণ নিতে হয়। কিন্তু তখনও কাজের সুযোগ মিলবে না। এরপর কোনও এয়ারলাইন্সে শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করে সিভিল এভিয়েশন পরীক্ষা দিয়ে লাইসেন্স পেলে কাজের স্বীকৃতি মিলবে। অনেকগুলো ধাপ পার হয়ে আসতে হয়।’

কাজের স্বীকৃতি প্রসঙ্গে সামিয়া হালিমা কবির বলেন, ‘কিছু দিন আগে প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজারে গেলেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে চড়ে। সেই ফ্লাইটে অন বোর্ড আমার ডিউটি ছিল। আমার প্রতি প্রতিষ্ঠানের আস্থা ছিল বলেই একটা ভিভিআইপি ফ্লাইটে ডিউটি করার সুযোগ পেয়েছি।’

বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজের ইঞ্জিন বিল্ডআপ করার সময় কাজের সুযোগ পেয়েছিলেন আফসানা আহমদ। তিনি বলেন, ‘অনেক বড় বড় কাজের সময় আমরা সুযোগ পেয়েছি। মেয়ে হিসেবে এ পেশায় আসার পর শুরুতে যেসব প্রতিবন্ধকতা ছিল, এখন আর এসব প্রতিবন্ধকতা নেই।’

ইসমত কিবরিয়া বলেন, ‘আমাদের দেখাদেখি অনেক মেয়েরা এখন এ পেশায় আসতে চায়। আমরা এখন চাই আরও মেয়েরা আসুক। আরও বেশি মেয়েরা আসলে প্রতিবন্ধকতা যতটুকুই থাকুক তাও দূর হবে।’

নারীদের উড়োজাহাজ প্রকৌশলে কাজ করা প্রসঙ্গে বিমান বাংলাদেশ এয়ালাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোসাদ্দিক আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নারীদের নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করে বিমান। নারী কর্মীরা কোনও অংশেই পিছিয়ে নেই। আমরা চাই নারীরা আরও বেশি এভিয়েশন খাতে আসুক।’

নারীদের আরও বেশি এভিয়েশন খাতে কাজের সুযোগ আছে বলে মনে করেন সিভিল এভিয়েশন অথরিটির সদস্য (পরিচালনা ও পরিকল্পনা) এ মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আগের চেয়ে নারীদের অংশগ্রহণ বেড়েছে। শুধু বেড়েছে এমন নয়, নারীরা অনেক ভালো কাজ করছেন। দেশি এয়ারলাইন্সগুলোতে যেমন আমাদের দেশের নারীরা কাজ করছেন তেমনি বিদেশি এয়রালাইন্সেও করছেন।’ 

 

/সিএ/এএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
তীব্র গরমে যেসব অসুস্থতার ঝুঁকি বাড়ে
তীব্র গরমে যেসব অসুস্থতার ঝুঁকি বাড়ে
চেয়ারম্যান-ভাইস চেয়ারম্যানসহ ২৬ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত
উপজেলা নির্বাচনচেয়ারম্যান-ভাইস চেয়ারম্যানসহ ২৬ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেন অপহরণের শিকার সেই প্রার্থী
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেন অপহরণের শিকার সেই প্রার্থী
‘হোম অব ক্রিকেটে’ বাংলাদেশের স্পিন কোচ মুশতাক
‘হোম অব ক্রিকেটে’ বাংলাদেশের স্পিন কোচ মুশতাক
সর্বাধিক পঠিত
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
মাতারবাড়ি ঘিরে নতুন স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ
মাতারবাড়ি ঘিরে নতুন স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ
অতিরিক্ত সচিব হলেন ১২৭ কর্মকর্তা
অতিরিক্ত সচিব হলেন ১২৭ কর্মকর্তা
উৎপাদন খরচ হিসাব করেই ধানের দাম নির্ধারণ হয়েছে: কৃষিমন্ত্রী 
উৎপাদন খরচ হিসাব করেই ধানের দাম নির্ধারণ হয়েছে: কৃষিমন্ত্রী 
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ