X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

প্রাথমিকের সমান মর্যাদা পেলো ইবতেদায়ি মাদ্রাসা

এস এম আববাস
১৫ মার্চ ২০১৮, ২১:৪৯আপডেট : ১৬ মার্চ ২০১৮, ১২:৪৮

শিক্ষা মন্ত্রণালয় দীর্ঘ ২৪ বছরের অপেক্ষার পর স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষকরা পেলেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সমান মর্যাদা। শিক্ষকদের যোগ্যতা স্নাতক বা সমমানের নির্ধারণ করে বৃহস্পতিবার (১৫ মার্চ) এ বিষয়ক খসড়া নীতিমালা চূড়ান্ত করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় গঠিত উচ্চ পর্যায়ের কমিটি। এ নীতিমালার ফলে এমপিওভুক্তির সুযোগ তৈরি হলো এসব ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষকদের। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
নীতিমালা প্রণয়ন কমিটির প্রধান এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাদ্রাসা) রওনক মাহমুদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নীতিমালায় স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষকদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সমান মর্যাদা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। শিক্ষকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা কী হবে, মাদ্রাসা কিভাবে পরিচালিত হবে এবং নতুন মাদ্রাসা স্থাপনের শর্ত কী হবে— তা নির্ধারণসহ যাবতীয় বিষয় রাখা হয়েছে এই নীতিমালায়।’
কমিটির সদস্য এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বিভাগের সহকারী সচিব মো. আবদুল খালেক বলেন, ‘চূড়ান্ত খসড়াটি আমরা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিবের কাছে পেশ করবো। এরপর অর্থ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। দুই মন্ত্রণালয়ের মতামতের পর মন্ত্রিসভায় উত্থাপনের জন্য পাঠানো হবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে। মন্ত্রিসভা অনুমোদন দিলে তা গেজেট আকারে প্রকাশিত হবে।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৪ সালের একই পরিপত্র অনুযায়ী নিবন্ধিত বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও নিবন্ধিত স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষকরা ৫০০ টাকা করে ভাতা পেতেন। ২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি ২৬ হাজার ১৯৩টি বেসরকারি প্রাথমিক স্কুল সরকারি করা হয়। কিন্তু স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি শিক্ষকরা এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন। পরে মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষকদের বেতন আড়াই হাজার টাকা এবং সহকারী শিক্ষকদের বেতন দুই হাজার ৩০০ টাকা করা হয়। তবে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে সরকারি করার পর থেকেই জাতীয় স্কেলে বেতন দাবি করে আসছেন ইবতেদায়ি শিক্ষকরা। এ নিয়ে দফায় দফায় আন্দোলনও করেছেন তারা। তাদের দীর্ঘদিনের দাবি ও আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতেই এবার স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসাকে প্রাথমিকের সমান মর্যাদা দিয়ে নীতিমালা করার উদ্যোগ নেয় সরকার।
এর আগে, গত বছরের ৪ অক্টোবর মাদ্রাসা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব রওনক মাহমুদকে আহ্বায়ক করে ১১ সদস্যের একটি কমিটি গঠন কর হয়। কমিটিকে জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০-এর আলোকে মাদ্রাসা স্থাপন, মঞ্জুরি, কমিটি গঠন, শিক্ষক নিয়োগ, পরিচালনা ও এমপিওভুক্তিসহ মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থাকে যুগোপযোগী, আধুনিক ও কর্মমুখী করে গড়ে তুলতে একটি নীতিমালা করার দায়িত্ব দেওয়া হয়। কয়েক দফা বৈঠকের পর বৃহস্পতিবার এই খসড়া চূড়ান্ত করেছে কমিটি। তবে চূড়ান্ত খসড়ায় বেতন কাঠামো নির্ধারণ করা হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কমিটির একজন সদস্য বলেন, ‘এই নীতিমালায় বেতন কাঠামো কী হবে, তা উল্লেখ করা হয়নি। তবে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে, প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ইবতেদায়ি মাদ্রাসার মর্যাদা সমান হবে। শিক্ষা নীতি অনুযায়ী প্রাথমিক শিক্ষার স্তর পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত। আর প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক ও সর্বজনীন করা হয়েছে। ইবতেদায়িও পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত। তাই প্রাথমিক শিক্ষাকদের সমান মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। এতে মাদ্রসাগুলোর এমপিওভুক্তির সুযোগ তৈরি হলো।’
ইবতেদায়ি মাদ্রাসার মান নির্ধারণ করে খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, মহানগর, পৌরসভা ও শহর এলাকার মাদ্রাসায় কমপক্ষে দুইশ ও মফস্বল এলাকার মাদ্রাসায় কমপক্ষে দেড়শ শিক্ষার্থী থাকতে হবে। পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষায় ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে অংশ নিতে হবে। আর কমপক্ষে ২০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে পাস করতে হবে।
জনবল কাঠামোতে বলা হয়েছে, প্রতিটি মাদ্রাসায় একজন প্রধান শিক্ষক, চারজন সহকারী শিক্ষক ও একজন অফিস সহায়ক থাকবেন। প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের শিক্ষগত যোগ্যতা থাকতে হবে ফাজিল (স্নাতক)। সহকারী শিক্ষকদের মধ্যে আলিম (উচ্চ মাধ্যমিক) পাস একজন ক্বারী নিয়োগ দিতে হবে। নারী শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা উচ্চ মাধ্যমিক বা সমমানের হতে হবে। অফিস সহায়ককেও এসএসসি পাস করতে হবে। কোনও নিয়োগের ক্ষেত্রেই তৃতীয় বিভাগ গ্রহণযোগ্য হবে না।
শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি শিক্ষক নিয়োগ দেবে। এই কমিটির সভাপতি হবেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও মেট্রোপলিটন এলাকায় জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। সদস্য সচিব হবেন সংশ্লিষ্ট মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন— উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা বা থানা সদরের এমপিওভুক্ত একটি ইবতেদায়ি মাদ্রাসার প্রধানের প্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট মাদ্রাসার সভাপতি।
মাদ্রাসাগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি ‘উপজেলা ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষক’ কমিটি থাকতে হবে।
নতুন মাদ্রাসা স্থাপনের ক্ষেত্রে নীতিমালায় বলা হয়েছে, একটি মাদ্রাসা থেকে অন্য মাদ্রাসার দূরত্ব শহর এলাকার জন্য এক কিলোমিটার এবং মফস্বল এলাকার জন্য দুই কিলোমিটার। প্রাথমিক স্কুলের মতো মফস্বল এলাকায় মাদ্রাসার জন্য শূন্য দশমিক ৩৩ একর, পৌরসভা এলাকায় শূন্য দশমিক ২০ একর ও মেট্রোপলিটন এলাকায় শূন্য দশমিক ১০ একর জমি থাকতে হবে।
নীতিমালায় বলা আছে, মাদ্রাসার নামে রেজিস্ট্রি করা জমিতে অন্তত টিনের বেড়াসহ টিনশেড ভবন বা পাকা ভবন থাকতে হবে। শিক্ষার্থী প্রতি এক বর্গ মিটার হিসাবে শ্রেণিকক্ষের আয়তন নির্ধারিত হবে। প্রধান শিক্ষকের অফিস, শিক্ষক মিলনায়তনসহ অন্তত পাঁচটি কক্ষ থাকতে হবে। মাদ্রাসায় মানসম্মত টয়লেট, শৌচাগার, বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা থাকতে হবে। বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকলে পর্যায়ক্রমে সংযোগ নিতে হবে। শিক্ষার্থীদের জন্য খেলার মাঠ ও পাঠাগারও স্থাপন করতে হবে।
মাদ্রাসার স্থায়ী আমানত হিসেবে ব্যাংকে ২০ হাজার টাকা থাকতে হবে। মহান ব্যক্তির নামে নামকরণ করতে সরকারি তহবিলে কোনও অর্থ জমা দিতে হবে না। তবে কোনও ব্যক্তির নামে করতে হলে মাদ্রাসার তহবিলে পাঁচ লাখ টাকা জমা রাখতে হবে।
অনুমোদনের পর প্রাথমিক স্কুলের মতো ছয় সদস্য বিশিষ্ট ম্যানেজিং কমিটি গঠন করতে হবে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসাকে। প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হতে হলে অন্তত এক লাখ টাকা এবং দাতা সদস্য হতে হলে এককালীন ৫০ হাজার টাকা মাদ্রাসার তহবিলে জমা দিতে হবে। প্রতি পাঁচ বছর পর পর পাঠদানের স্বীকৃতি অনুমোদন করাতে হবে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ছয় হাজার ৯৬৮টি মাদ্রাসার মধ্যে মাত্র এক হাজার ৫১৯টি মাদ্রাসার সরকারি অনুদান পেয়ে থাকে। অনুদান পাওয়া মাদ্রাসায় ১৫ হাজার ২৪৩ জন শিক্ষক ও ৫১ হাজার ৯৯৭ শিক্ষার্থী রয়েছে। তবে এর বাইরেও আরও অনেক মাদ্রাসা রয়েছে বলে দাবি শিক্ষক নেতাদের।

/টিআর/
সম্পর্কিত
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের
এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের সময় বেড়েছে
দারুল ইহসানের বৈধ সনদধারীদের এমপিওতে বাধা নেই
সর্বশেষ খবর
ডিইউজে নির্বাচনে সভাপতি পদের মীমাংসা মামলার শুনানি ২৫ এপ্রিল
ডিইউজে নির্বাচনে সভাপতি পদের মীমাংসা মামলার শুনানি ২৫ এপ্রিল
জুড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে মারধরের অভিযোগ
জুড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে মারধরের অভিযোগ
দক্ষিণখানে ভবনের চার তলা থেকে পড়ে নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু
দক্ষিণখানে ভবনের চার তলা থেকে পড়ে নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু
ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল গ্র্যাজুয়েট হলেন ১৯ জ্যেষ্ঠ রাজনীতিক
ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল গ্র্যাজুয়েট হলেন ১৯ জ্যেষ্ঠ রাজনীতিক
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী