‘বাংলাদেশের ডিবি পুলিশের কাছ থেকে এই সতর্কবার্তা পাওয়া গেছে— আগামী সাত দিন কোকাকোলা জাতীয় কোনও পানীয় খাবেন না। কারণ, এতে এইচআইভি এইডস মিশিয়ে দিয়েছে।’ ‘ডাক্তাররা নতুন একটি ক্যানসার খুঁজে পেয়েছেন যার নাম সিলভার নিট্রো অক্সাইড, যদি তুমি নখ দিয়ে মোবাইল কার্ড ঘষে তোলো তখন তা স্কিনে ছড়াতে পারে।’
এই ধরনের বিভিন্ন ম্যাসেজ ফেসবুকের ওয়ালে এবং ইনবক্সে ঘুরছে। আর এগুলোর উপরে ও নিচে লেখা রয়েছে ‘বাংলাদেশ পুলিশ’ বা ‘ডিবি পুলিশ’। অর্থাৎ তাদের পক্ষ থেকে এসব বার্তা পাঠানো হয়েছে। তবে পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, তারা এ ধরনের কোনও মেসেজ পাঠাননি। আর এমন ভয়ঙ্কর স্বাস্থ্যবার্তা ফেসবুকে দেখে আতঙ্কিত না হওয়ার কথা বলছেন চিকিৎসকরা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ট্রেজারার অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আলী আসগর মোড়ল বলেন, ‘মিথ্যা প্রোপাগান্ডা সমাজের জন্য ক্ষতিকর। এর মাধ্যমে সমাজে বিভ্রান্তি ছড়ায়। ধর্মীয় দিক থেকে চিন্তা করলেও জঘন্যতম অপরাধ।’ তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী সভ্যতার ভালো দিক যেমন আছে তেমনি খারাপ দিকও আছে। সভ্যতার অন্যতম অভিশাপ হচ্ছে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা। আমাদের বাংলাদেশেও আমরা এই প্রভাব দেখতে পাচ্ছি। ভুয়া সোশ্যাল প্রোপাগান্ডা চিকিৎসা বিষয়ে ছড়ানোটা আমাদের জন্য ক্ষতিকর।’
বিএসএমএমইউ’র প্রক্টর অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলাল বলেন, ‘ফেসবুক মেসেজ বক্সে বা ফেসবুক ওয়ালে কোনও চিকিৎসকের ব্যক্তিগতভাবে কোনও জাতীয় ইস্যুতে ঢালাওভাবে বলার অধিকার নেই। কেউ যদি কোনও তথ্য প্রচার করতে থাকে এবং তা জনমতে আতঙ্ক ছড়ায় তাহলে তার বিরুদ্ধে আইসিটি আইনে মামলা পর্যন্ত হতে পারে। জাতীয় কোনও ইস্যুতে কথা বলার জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতর রয়েছে, স্বাস্থ্য চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র রয়েছে, বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) রয়েছে। বিএসএমএমইউ নিজে বলতে পারে। স্বাস্থ্য বিষয়ক কোনও স্বাস্থ্যবার্তা দিতে চাইলে তা দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনও ফোরাম থেকেই দিতে হয়।’
তিনি বলেন, ‘কোনও চিকিৎসক যদি কোনও ইস্যুতে ফেসবুকে স্বাস্থ্যবার্তা দিতে চায়, তাহলে তার নিজস্ব এ সংক্রান্ত গবেষণা থাকতে হবে। সেই গবেষণা ভেরিফায়েডও হতে হবে। তাহলে সেই চিকিৎসক সেই বিষয় নিয়ে ফেসবুকে প্রচার চালাতে পারেন।’
ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলাল বলেন, ‘সাধারণ মানুষের এই ধরনের ম্যাসেজ দেখে আতঙ্কিত বা ভীত হওয়া উচিত হবে না। কেউ যদি ফেসবুক ইনবক্সে বা ওয়ালে কাউকে স্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্য দিয়ে ভয় দেখায় তাহলে ওই ব্যক্তি স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যুরো, স্বাস্থ্য অধিদফতরে গিয়ে সরাসরি এই সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করে নিজের ভয় দূর করতে পারেন। সেখান থেকে তিনি সবচেয়ে ভালো ইনফরমেশনগুলো পাবেন।’
ঢাকা মহানগর পুলিশের জনসংযোগ শাখার উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান বলেন, ‘এরকম কোনও মেসেজ আমরা দিইনি।’ এ ধরনের মেসেজ তার চোখে পড়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি এ পর্যন্ত এ ব্যাপারে অবগত নই।’