X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘গারো মা-মেয়েকে হত্যার পর ছুরি ধুয়ে রেখে যায় খুনিরা’

আমানুর রহমান রনি
২১ মার্চ ২০১৮, ২৩:৪৭আপডেট : ২২ মার্চ ২০১৮, ১১:৩৯

রাজধানীর গুলশানের কালাচাঁদপুরে নিজ বাসায় গারো মা-মেয়েকে হত্যার পর হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি ধুয়ে রেখে যায় খুনিরা। প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছে এই হত্যাকাণ্ড পরিকল্পিত মনে হয়েছে। এর সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারে পুলিশ এরইমধ্যে রাজধানী ও ময়মনসিংহে অভিযান শুরু করেছে।

সুজাতা ও তার মা বেসেথ মঙ্গলবার (২০ মার্চ) গুলশানের কালাচাঁদপুরের ক-৫৮/২ নম্বর ছয়তলা বাসার চতুর্থ তলায় খুন হন বেসেথ চিরান (৬৫) ও তার মেয়ে সুজাত চিরান (৪২)। তারা দুই বছরের বেশি সময় ধরে ওই বাসায় ভাড়া থাকতেন। নিহতদের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

বুধবার সরেজমিন দেখা গেছে, ভবনটির চতুর্থতলার ওই ফ্ল্যাটটি তালাবদ্ধ। চতুর্থতলায় চারটি ইউনিট। বাড়ির কেয়ারটেকার আব্দুল আজিজ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রতিটি ইউনিটে দুটি করে কক্ষ, সাড়ে দশ হাজার টাকা ভাড়া। সুজাতা, তার স্বামী আশিস মানকিন, তাদের দুই মেয়ে মাধুরী চিরান, সুরভী চিরান এবং তার মা বেসেথ চিরান থাকতেন। ছেলে সোহাগ চিরান ময়মনসিংহের গ্রামের বাড়িতে থাকে। তার বড় মেয়ে মায়াবী চিরানের বিয়ে হয়েছে, তার স্বামীর নাম পেলেস্তার চিরান। তারা আলাদা বাসায় থাকেন। তাদের দেড় বছর বয়সী একুশে নামে এক মেয়ে রয়েছে।’

ঘটনার দিনের বর্ণনা দিয়ে কেয়ারটেকার আব্দুল আজিজ বলেন, ‘আমি বিকালে বালুর মাঠের ওদিকে পানির পাম্প দেখতে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে ঘুরে বাড়ির ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এ সময় সুজাতার বড় মেয়ের স্বামী পেলেস্তা চিরান তার শিশুকন্যাকে নিয়ে নিচে নেমে আসে। সে চিৎকার দিয়ে বলতেছিল, ‘আমার শাশুড়িকে জবাই দিছে। এরপর আমি সামনের দোকানে গিয়ে মালিককে ফোন দেই। মালিক এসে পুলিশকে ফোন দেয়। এরপর পুলিশ রাতে লাশ নিয়ে যায়।’

আরও পড়ুন: গারো মাকে শ্বাসরোধে হত্যা, মেয়ের শরীরে ১৪টি কাটা জখম

আব্দুল আজিজ চার মাস ধরে এই বাড়ির কেয়ারটেকার হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি বাসায় কাউকে ঢুকতে দেখেননি বলেও জানিয়েছেন। পাশের বাড়ির নিচতলার একটি ফার্মেসির মালিক বাঁধন চিরান। ঘটনার পরপরই তিনি ওই বাসায় যান। লাশ উদ্ধার পর্যন্ত তিনি পুলিশের সঙ্গেই ছিলেন।

বাঁধন চিরান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঘটনার পর আমরা ওই বাসায় যাই। ভেতরের কক্ষে খাটের ওপর সুজাতের রক্তাক্ত লাশ পড়েছিল। তার পরনে কাপড় ছিল না। পেটে ও গলায় ছুরিকাঘাত ছিল। পরবর্তীতে একটি কম্বল দিয়ে তার শরীর ঢেকে দেওয়া হয়।’

এই রুমে মা-মেয়েকে খুন করা হয় তিনি বলেন, ‘সুজাতার লাশ আমরা দেখতে পেলেও তার মা বেসেথের লাশ একঘণ্টার মধ্যে পাইনি। তখন ভাবছিলাম তিনি হয়তো বাইরে কোথাও হাঁটতে গেছেন। যখন সে দীর্ঘক্ষণ ধরে আসতেছিল না, তখন আমরা বাসায় তাকে খুঁজি। খোঁজাখুঁজির পর ফ্ল্যাটের সামনের কক্ষের খাটের নিচে তার লাশ দেখতে পাই।’

বাঁধন চিরান বলেন, ‘ঘটনার পর ফ্ল্যাটের বাথরুমের স্টোর স্পেসের ভেতর থেকে দুটি ছুরি উদ্ধার করেছে। সেগুলো ধোয়া ছিল। কোনও রক্ত নেই, পরিষ্কার।’ তার ধারণা, খুনিরা হয়তো তাদের হাতের ছাপ যাতে ছুরিতে না থাকে সেজন্য ছুরি ধুয়ে রেখে গেছে। ছুরিগুলো তারা নিয়ে এসেছিল।

নিহত সুজাতার স্বামী আশিষ মানকিন বলেন, ‘দুপুরে আমার স্ত্রী সুজাতা আমাকে ফোন দিয়ে জানতে চেয়েছিল কি বাজার করবো? আমি তাকে বললাম, তোমার যা পছন্দ তাই করো। আমি যেখানে চাকরি করি সেখানে অনেক কাজের চাপ ছিল, তাই ভালো করে কথা বলতে পারিনি। এরপর আরও ফোন পাই, তবে রিসিভ করতে পারিনি। বিকালে আমার বড় মেয়ের জামাই আমাকে দ্রুত বাসায় আসতে বলে। আমি বাসায় এসে দেখতে পাই এই অবস্থা। আমার স্ত্রীর পেটে ও গলায় ছুরিকাঘাত। সে খাটের ওপর পড়ে আছে, তার পরনে কাপড় নেই।’ 

আরও পড়ুন: গুলশানে নিজ বাসায় গারো মা-মেয়ে খুন

বাসায় ওইদিন কেউ এসেছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার বড় মেয়ে মায়াবী বিবাহিত। সে মঙ্গলবার দুপুরে তার মেয়েকে নিয়ে আমাদের বাসায় ছিল। ঘটনার পর আমাকে সে বলেছে, ‘দুপুরে আমার স্ত্রীর বড় বোন নির্জলা চিরানের ছেলে সঞ্জীব চিরান তার তিনকে বন্ধু নিয়ে বাসায় এসেছিল। তাদের চা-বিস্কুট খেতে দেওয়া হয়। মায়াবীর অফিসের সময় হওয়ায় তার শিশু সন্তানকে আমার স্ত্রীর কাছে রেখে চলে যায়। এ সময় সঞ্জীব ও তার বন্ধুরা আমার বাসায় ছিল। এরপর কি হয়েছে আর বলতে পারি না।’

কালাচান্দপুরের বাড়ি, যেখানে সুজাতা খুন হন এই হত্যাকাণ্ডে পরিবার ও পুলিশ সঞ্জীবকে সন্দেহ করছে। ময়নাতদন্ত শেষে বুধবার বিকালে নিহত দুই নারীর লাশ কালাচাঁদপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় তাদের স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পরেন। সেখানে প্রার্থনা শেষে তাদের লাশ ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের জয়রামপুরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

জোড়া খুনের ঘটনায় নিহত সুজাতার স্বামী বাদী হয়ে গুলশান থানায় মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নম্বর-২৫। মামলায় সঞ্জীবের নাম উল্লেখ করে আরও ৩/৪ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। 

আরও পড়ুন: পারিবারিক কোন্দলে গারো মা-মেয়ে খুন?

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানিয়েছে, নিহত বেসেথের দুই মেয়ে। বড় মেয়ে নির্জলা চিরান ও ছোট মেয়ে সুজাত চিরান। ছোট মেয়ের সঙ্গেই তিনি থাকতেন। বড় মেয়ে নির্জলা গাজীপুরে থাকে। তার ছেলে সঞ্জীব। সে শেরপুরে বিয়ে করেছে। এক বছর আগে এই পরিবারের সঙ্গেই সঞ্জীব ছিল। এরপর সে চট্টগ্রামে চলে যায়। কিছুদিন আগে সে অসুস্থ ছিল। তখন তার খালা সুজাত ও খালাতো বোনদের ফোন করে জানিয়েছিল, সে ঢাকায় বেড়াতে আসবে। সেই কথা অনুযায়ী সে বেড়াতেও আসে। তবে তার সঙ্গে আরও তিনজন কারা ছিল, তাদের কেউ এই পরিবার চিনতে পারেনি। ঘটনার পর সুজাতের বড় মেয়ের স্বামী পেলেস্তাকে নিয়ে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। বাড়িটি থেকে সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজও উদ্ধার করা হয়েছে।

গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মোস্তাক আহমেদ জানান, পুলিশ দু’জনের লাশ পেয়েছে। তাদের দু’জনকেই হত্যা করা হয়েছে। তাদের শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ঘটনাটি তদন্ত করে বলা যাবে এর পেছনের কারণ কী এবং কারা হত্যা করেছে।

/এমও/চেক-এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখলে আমাদের লজ্জা হয়: শাহবাজ
বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখলে আমাদের লজ্জা হয়: শাহবাজ
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা