X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

হানিফ ফ্লাইওভারের নিচে ময়লার ভাগাড়

আদিত্য রিমন
২২ মার্চ ২০১৮, ১০:৩৬আপডেট : ২২ মার্চ ২০১৮, ১১:০৮

হানিফ ফ্লাইওভারের নিচে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ রাজধানীর মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের (গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ি ফ্লাইওভার) ওপরের অংশের সঙ্গে নিচের চিত্র মেলানো যায় না কোনোভাবে। নিচের সড়ক খানাখন্দে ভরা,আবর্জনার স্তূপ। যেখানে সেখানে গাড়ি পার্কিং করে রাখা। হকার বসে যত্রতত্র। কোনও কোনও অংশ পরিণত হয়েছে ঘোড়ার আস্তাবলে। গাড়ি চলাচলের অনুপযোগী এসব সড়কের ফুটপাতের অবস্থা আরও শোচনীয়। সেখানে দখলবাজ ব্যবসায়ীরা গড়ে তুলেছেন মালপত্র রাখার গুদাম ঘর। রাত হলেই শুরু হয় মাদকসেবীদের আড্ডা। অনেকে আবার প্রাকৃতিক কাজও সারেন এসব সড়ক ও ফুটপাতে।  ফ্লাইওভারের নিচের সড়ক দেখার যেন কেউ নেই।

শনিবার (১৭ মার্চ) যাত্রাবাড়ী-ডেমরা সড়ক অংশে যাত্রাবাড়ী থেকে মাতুয়াইলের ব্যস্ততম সড়কটিতে গিয়ে দেখা যায়, সড়কের অধিকাংশ স্থানে রাস্তার পিচ উঠে গিয়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। একই অবস্থা যাত্রাবাড়ী-ডেমরা সড়কের কাজলা এলাকার বাম পাশের অংশের। রাস্তার পিচ উঠে যাওয়ায় খানাখন্দে চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। আবার কোথাও কোথাও সংস্কার কাজের জন্য ফেলে রাখা যানবাহনের কারণে যানজট দেখা দিয়েছে।  কোনও কোনও অংশে ঢিমে তালে চলছে সংস্কার কাজ।

হানিফ ফ্লাইওভারের নিচে ময়লার ভাগাড় সরেজমিনে দেখা গেছে, ফুলবাড়িয়া থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত ফ্লাইওভারের নিচে ঘোড়া পালন করা হয়। রয়েছে কিছু উন্মুক্ত ভাতের হোটেল। এতে ফ্লাইওভারের পিলারের ও মাঝখানের আইলাইনের অনেক জায়গার মাটি ধসে পড়েছে।

স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, এ সড়কে বিভিন্ন সময়ে গাড়ি নষ্ট হয়ে পড়ে থাকে। এতে যাত্রীরা যেমন দুর্ভোগে পড়েন, তেমনি যানবাহনের মেরামত খরচও বেড়ে যায়।

এ পথেই লেগুনা চালান হাফিজ। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘রাস্তার অবস্থা এত খারাপ যে প্রায় সব গাড়িতে সমস্যা হয়। এ কারণে গাড়ি মেরামতে বাড়তি টাকা খরচ করতে হয়। যাত্রীদেরও সমস্যা হয় যাতায়াতে।’

হানিফ ফ্লাইওভারের পাশের রাস্তায় খানাখন্দ শুধু মাতুয়াইল বা কাজলা সড়ক নয়, হানিফ ফ্লাইওভারের নিচের বিভিন্ন সড়কে শুকনো মাটি জমে আছে। গর্তে ভরা সড়কে যানবাহনের কারণে পুরো এলাকা ধুলাচ্ছন্ন হয়ে পড়ছে। এছাড়া রাস্তার ডিভাইডারের মধ্যে রাখা হয়েছে বালি। ধুলাবালি থেকে বাঁচতে যাত্রী ও পথচারীরা মাস্ক পরেন, আবার কেউ হাত দিয়ে নাক চেপে ধরে ধুলা থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করছেন। সাময়িকভাবে এতে রক্ষা হলেও ধুলা থেকে বাঁচার কোনও উপায় নেই। কারণ, একটি পর একটি গাড়ি ধুলা উড়িয়েই এ পথ দিয়ে চলে যাচ্ছে।

একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম বলেন,‘বাসা থেকে পরিপাটি হয়ে বের হলেও অফিস পর্যন্ত পৌঁছাতে তা আর ঠিক থাকে না। কারণ, রাস্তায় এত ধুলাবালি যে এর থেকে বাঁচার কোনও উপায় নেই। এ কারণে প্রায় সর্দি-কাশি লেগেই থাকে। অফিস পাশে হওয়ার কারণে বাসাও পরিবর্তন করতে পারছি না।’

হানিফ ফ্লাইওভারের নিচে ময়লা- আবর্জনার স্তূপ জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ফ্লাইওভারের নিচের সড়ক এখন আগের মতো নেই। অনেক সড়ক সংস্কার করা হয়েছে, আবার অনেকগুলোতে কাজ চলছে। শুষ্ক মৌসুমের মধ্যে সব কাজ শেষ হয়ে যাবে।’

শুধু খানাখন্দ নয়, পুরো ফ্লাইওভারের নিচের বিভিন্ন স্থানে ময়লার স্তূপও দেখা গেছে। এসব স্তূপ থেকে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। জন্ম নিচ্ছে মশাসহ বিভিন্ন কীটপ্রতঙ্গ। ছড়াচ্ছে রোগ। স্থানীয়দের অভিযোগ, সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের দেখা মিলছে না। প্রতিদিন ময়লার স্তূপ বাড়তে থাকলেও সিটি করপোরেশন কোনও তদারকি করছে না।

এ বিষয়ে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা খন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এসব স্থানে রাতে ময়লা জমে। আমরা প্রতিদিন ময়লা অপসারণ করে থাকি। এরপরও যদি কোথাও ময়লার স্তূপ জমে থাকে আমরা সেগুলো অপসারণ করবো।’

হানিফ ফ্লাইওভারের নিচের দৃশ্য

ভাঙাচোরা সড়কের পাশাপাশি সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী সড়কের বিভিন্ন স্থানে অবৈধ পার্কিংয়ের ফলে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। রাস্তার ওপর আর্বজনা থাকায় যত্রতত্র প্রস্রাব করছেন ভাসমান লোকজন। ফলে দুর্গন্ধের কারণে নাক চেপে হাঁটতে হয় এ সড়কে। এ পথ দিয়ে নাক চেপে হেঁটে যাচ্ছিলেন ব্যবসায়ী রফিক জামান। তিনি বলেন, ‘পাবলিক টয়লেট থাকলেও ভাসমান লোকজন রাস্তায় প্রস্রাব করছেন। দুর্গন্ধের কারণে নাক চেপে যেতে হয়।’

এদিকে, রাস্তা সিটি করপোরেশনের হলেও সুযোগ বুঝে পার্কিংয়ের নামে দাপটধারীদের চাঁদাবাজিও চলছে সেখানে। মূলত ক্ষমতাসীন দলের নাম ভাঙিয়ে অবৈধ এই কাজটি করছেন স্থানীয় কিছু ব্যক্তি। এদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড ও থানা পর্যায়ের কিছু সুবিধাভোগী নেতা ও স্থানীয় থানার কিছু কর্মকর্তাও জড়িত। কিন্তু তারা এমন ভয় দেখিয়ে কাজটি করেন যে তাদের নাম মুখে আনার সাহস পায় না সেখানে গাড়ি পার্কিংকারী চালকরা। এমনই একজন চালক হচ্ছেন সোহেল মামুন। এই মাইক্রোবাস ড্রাইভার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘আমরা তো বিনা পয়সায় পার্কিং করি না। এ জন্য নির্দিষ্ট একটা চাঁদা পরিশোধ করতে হয়।’ তবে কারা চাঁদা নেয় এবং কত টাকা দিতে হয়, তা বলতে রাজি হননি তিনি।

এছাড়া ফ্লাইওভারের নিচের সড়কে বিভিন্ন স্থানে হকাররাও বসছে যত্রতত্র। তাদের দখলে থাকে সড়কের বড় অংশ। আর তাদের অনেকেই জানিয়েছেন,এখানে বসার জন্য প্রতিদিন তাদের একটি চাঁদা পরিশোধ করতে হয়। তবে এই চাঁদা কারা নেন সে তথ্য প্রকাশ করতে চাননি হকাররাও। আর এসব কারণেই গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী বিস্তৃত মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের নিচের সড়কে প্রতিদিন যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে।

 

 

/এইচআই/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বেচাকেনা জমজমাট, কম দামে ভালো পাঞ্জাবিতে আগ্রহ ক্রেতাদের
বেচাকেনা জমজমাট, কম দামে ভালো পাঞ্জাবিতে আগ্রহ ক্রেতাদের
‘মাঝেমধ্যে ভাবি, আইপিএল কি আদৌ ক্রিকেট’
‘মাঝেমধ্যে ভাবি, আইপিএল কি আদৌ ক্রিকেট’
ঈদে আরিয়ানের একমাত্র নির্মাণ ‘তখন যখন’
ঈদে আরিয়ানের একমাত্র নির্মাণ ‘তখন যখন’
করোনার পর মাধ্যমিকে ১০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী কমেছে
করোনার পর মাধ্যমিকে ১০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী কমেছে
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়