X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

যক্ষ্মায় আক্রান্তদের ৮০ শতাংশই শনাক্তের বাইরে: ব্র্যাক

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২২ মার্চ ২০১৮, ২২:১২আপডেট : ২২ মার্চ ২০১৮, ২২:১৪

বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস উপলক্ষে ব্র্যাকের সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা (ছবি: সংগৃহীত) দেশে যক্ষ্মা চিকিৎসার ক্ষেত্রে সরকারের সাফল্য আশাব্যঞ্জক হলেও ডায়াগনসিস সংক্রান্ত জটিলতার কারণে এই রোগ নিয়ন্ত্রণ এখনও বড় চ্যালেঞ্জের মুখে। এ ধরনের রোগীদের ৮০ শতাংশই রয়েছেন শনাক্তের বাইরে। আর সব ধরনের যক্ষ্মায় চিকিৎসার বৃত্তে নেই ৩৩ শতাংশ রোগী। তবে শনাক্তকরণের ক্ষেত্রে সমস্যা থাকলেও ফুসফুসের যক্ষ্মার চিকিৎসার ক্ষেত্রে সাফল্যের হার ৯৫ শতাংশ। বৃহস্পতিবার (২২ মার্চ) সকালে ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরে ব্র্যাক।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্র্যাকের যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সিনিয়র সেক্টর স্পেশালিস্ট ডা. মো. আবুল খায়ের বাশার। কর্মসূচি সংক্রান্ত উপস্থাপনা তুলে ধরেন জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির মেডিক্যাল অফিসার ড. নাজিস আরেফিন সাকি।

মূল প্রবন্ধে বলা হয়— বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী দেশে প্রতি বছর প্রতি লাখে যক্ষ্মায় আক্রান্ত হচ্ছেন ২২১ জন, মৃত্যু হচ্ছে ৪০ জনের। তাই যক্ষ্মা চিকিৎসায় সচেতনতার পাশাপাশি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন জরুরি।

বক্তারা জানান, যক্ষ্মা রোগী শনাক্তকরণের ক্ষেত্রে বড় সমস্যা হচ্ছে যে সংখ্যক জিনএক্সপার্ট মেশিন থাকার কথা, তা দেশে নেই। তাছাড়া সচেতনতার অভাব ও চিকিৎসা ব্যবস্থা দীর্ঘমেয়াদী বলে অনেকের পক্ষে নিয়মিত ওষুধ খাওয়া সম্ভব হয় না। এসব কারণে এর সফলতা তুলনামূলকভাবে কম।

জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির (এনটিপি) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে এনটিপির মাধ্যমে দেশে ২ লাখ ৪৪ হাজার ২০১ জন যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত করা ও চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। ১৫ বছরের কম বয়সী শিশু যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত হয়েছে ১০ হাজার ১৮৯ জন। দেশে এখন এক্সটেনসিভলি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট রোগীর সংখ্যা ১২ জন।

সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. সামিউল ইসলাম। তার মন্তব্য, বাংলাদেশ ১৯৯৩ সাল থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে যক্ষ্মা নির্ণয় ও নিরাময়ের ক্ষেত্রে যেসব সাফল্য অর্জন করেছে, তা জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিরই সাফল্য। এই কর্মসূচির মাধ্যমে রোগ নির্ণয়ের হার প্রতি ১ লাখ জনসংখ্যায় ৭৭ জন ও আরোগ্যের হার ৯৫ শতাংশ।

যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে সমন্বিতভাবে কাজ করার তাগিদ দেন এই অধ্যাপক। তার ভাষ্য, ‘এত সাফল্য সত্ত্বেও বিশ্বে যক্ষ্মার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ৩০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এ ঝুঁকি মোকাবিলা ও যক্ষ্মামুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।’

শহরে যক্ষ্মা রোগী শনাক্তকরণের ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে বলে মনে করেন ব্র্যাকের পরিচালক ড. মো. আকরামুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘শহরে ও বয়ষ্ক জনগোষ্ঠীর মধ্যে যক্ষ্মার প্রাদুর্ভাব বেশি। তাছাড়া বস্তি এলাকা, ভাসমান জনগোষ্ঠী, কলকারখানা, কারাগার ও বেসরকারি খাতে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি আরও সম্প্রসারণ করতে হবে।’

যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে গণমাধ্যমের সহযোগিতা কামনা করেন ব্র্যাকের পরিচালক। তার মন্তব্য, ‘যক্ষ্মা রোগীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি ও এই রোগ নিয়ন্ত্রণে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে যেসব কার্যক্রম রয়েছে তা গণমাধ্যমে তুলে ধরে সংবাদকর্মীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন।’

যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করা হয়েছে বৃহস্পতিবারের সংবাদ সম্মেলনে। এগুলো হলো— শিশু যক্ষ্মা শনাক্তকরণে জটিলতা, নগরে যক্ষ্মা রোগ শনাক্তকরণের হার, বয়ষ্ক জনগোষ্ঠী, কর্মজীবী পুরুষ, আধুনিক ডায়াগনসিসের ক্ষেত্রে জিনএক্সপার্ট মেশিনের স্বল্পতা, পরীক্ষা-নিরীক্ষার ক্ষেত্রে জনবল সংকট, বেসরকারি পর্যায়ে সম্পৃক্ততার অভাব, শনাক্তকরণকে বাধ্যতামূলক না করা।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি ও ব্র্যাক যৌথভাবে এই সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে। সেখানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের বিশেষজ্ঞ ডা. আহমাদুল হাসান খান।

অনুষ্ঠানে আরও ছিলেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মেডিক্যাল অফিসার মিয়া সাপোল, ইউএইসএইড-এর সংক্রামক রোগ সংক্রান্ত জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা ড. চার্লস লারম্যান, ন্যাশনাল অ্যান্টি টিউবারকিউলোসিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (নাটাব) সভাপতি মোজাফফর হোসেন পল্টু, আইসিডিডিআরবি’র বিজ্ঞানী ডা. সায়রা বানু।

/এসএস/জেএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ভারতের একটি হোটেলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত ৬
ভারতের একটি হোটেলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত ৬
কুষ্টিয়ার তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস
কুষ্টিয়ার তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস
‘গাজার গণকবরে অন্তত ২০ জনকে জীবন্ত দাফন’
‘গাজার গণকবরে অন্তত ২০ জনকে জীবন্ত দাফন’
‘বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে সামাজিক আন্দোলন গড়তে হবে’
‘বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে সামাজিক আন্দোলন গড়তে হবে’
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা